ঢাকা ০৯:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।। বরিশালে সুলভ মুল্যে বসুন্ধরা পন্য পেয়ে ক্রেতারা খুশী। বাবুগঞ্জে স্কুল ছুটির পরে বাড়ি যাওয়ার সময় দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজ। আমার বাবাও মায়ের দেওয়া উপদেশ বড়দের সম্মান কর ছোটদের স্নেহ করো। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখী নারী উদ্যোক্তা মেলা শুরু। টাঙ্গাইলে তিনদিন ব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা শুরু বাকেরগঞ্জে প্রধান মন্ত্রীর ছবি ব্যঙ্গক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট করায় হায়দর সিপাই গ্রেফতার। বাকেরগঞ্জে স্ত্রীর দায়ের কৃত মামলায় স্বামী পারভেজ খান গ্রেফতার।। বাকেরগঞ্জে তরমুজ চাষী হত্যা চেষ্টা মামলার আসামী রুদ্র গাজী গ্রেফতার টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড অনুষ্ঠিত

জীবন বাঁচাতে শিকলে বাঁধা কিশোর ইয়াকুব

জীবন বাঁচাতে শিকলে বাঁধা কিশোর ইয়াকুব

মোঃ কেফাইতুল ভুইয়া, বিজয়নগর, (ব্রহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃ

কিশোর ইয়াকুব বলেন, আমি নানার জন্য সন্ধ্যা বেলায় দোকানে বিড়ি আনতে গেছিলাম,ওই সময় কয়েকজন পুলাপাইন আমারে ধইরা জঙ্গলের কাছে নিয়া হাত-পাও বাইন্দা মারছে, যাওয়ার সময় কইয়া গেছে, তর নানীরে কইস, মামলাডা তুইলা নিতে, মামলা না তুললে তোরে জীবনে আর দেখবেনা। তোরে মাইরা জঙ্গলে ফালাইয়া দিমু, কাক পক্কিও জানবোনা। কথাগুলো বলেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের মেরাসানী গ্রামের মৃত মজলু ভূঁইয়ার ছেলে ১২ বছরের কিশোর ইয়াকুব। মেরাসানী গ্রামের প্রভাবশালীদের হাত থেকে কিশোর ইয়াকুবের প্রান বাঁচাতে পায়ে শিকল বেঁধে রেখেছে তার পরিবার। নিজের জীবন রক্ষা করতে শিকলে বাঁধা জীবন কাটাতে হচ্ছে ওই কিশোরের । কতদিন এভাবে চলতে থাকবে, নিশ্চিত করে বলতে পারছেনা তার পরিবার।
জানাযায়, বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের মেরাসানী গ্রামের মৃত মজলু ভূঁইয়ার ছেলে ইয়াকুব (১২),বাবা না থাকায় সে মেরাসানী গ্রামে তার নানার বাড়িতে থাকে। গত ১৫মে শনিবার মোবাইল চুরির ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে ইয়াকুবকে আম পারার কথা বলে কৌশলে একই গ্রামের আবদুল আলিমের ছেলে রুবেল বাড়িতে ডেকে নিয়ে মোবাইল চুরির অপবাদে চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখে বাবু, মান্না,বাবুল,মান্নান,কাউসার,এনামুল,রানা,ইরন মিয়া,উজ্জল ও রুবেলসহ আরোকয়েকজন মিলে মারধর করতে থাকে, সেই সাথে কারেন্টের শর্কও দেয়া হয়েছে। রাতভর তার উপর নির্যাতন করা হয়। ইয়াকুবের পরিবার বিভিন্ন জায়গাতে খোঁজাখুঁজি করেও তার কোন সন্ধান পায়নি। পরের দিন ১৬ মে রবিবার দুপুরে কিশোরটির কান্নার শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন তার পরিবারকে খবর দিলে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়।
কিশোরটিকে নির্যাতনের একটি ভিডিও রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক মিলে কিশোরটির হাত-পা বেঁধে মাটিতে ফেলে নির্যাতন করছে। এসময় সে আত্মচিৎকার করলেও থেমে থাকেনি নির্যাতন। এই কিশোর নির্যাতনের ঘটনাটি দেশের বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে।
এই ঘটনায় ১ মে রাতে বিজয়নগর থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিজয়নগর থানায় মামলা দায়ের করেন ইয়াকুবের নানী আরজা বেগম। এ ঘটনায় পুলিশ ১৭ মে মেরাসানী গ্রামের বাবুল মিয়া (৪৫), মান্নান (২৩) ও শাহীন ওরফে মান্নাকে (২১) গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানোর কয়েকদিন পর জামিনে বেড়িয়ে আসে। মামলার মুল আসামী রুবেল এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। সরেজমিনে,ইয়াকুবের নানার বাড়িতে প্রবেশ করতে চোখে পড়ে ১২ বছরের একটি কিশোর, পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় দরজার সামনে বসে আছে, প্রথমে ধারনা হয়, হয়তো ছেলেটি মানুষিকভাবে অসুস্থ। পরে জানাযায়, এই সেই ইয়াকুব। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে আসার পর ইয়াকুব বাড়ির পাশে একটি দোকান থেকে ফিরে আসার সময় কয়েকজন যুবক তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে হাত পা বেঁধে একটি নির্জনস্থানে ফেলে রেখে চলে যাওয়ার সময় বলে যায়,মামলা তুলে নিতে, নতুবা তাকে মেরে ফেলবে। এই ঘটনার পর থেকেই ইয়াকুবের পরিবার তার জীবন বাঁচাতে পায়ে শিকল বেঁধে ঘরে আটকিয়ে রেখেছে।
ইয়াকুবের মামা আলামিন জানান, আমরা এই গ্রামে নিরহ বলে অত্যাচারিত ও নির্যাতিত হচ্ছি। প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছিনা। আমার ভাগিনা এতিম, তার বাবা নেই, কখন কি হয়ে যায় সেই আতংকে আছি,তার জীবন বাঁচাতে আমরা বাধ্য হয়েই তাকে শিকলে বেঁধে রেখেছি।
মামলার বাদি আরজা বেগম বলেন, আমি গরীব বলে এতোটা নির্যাতিত হচ্ছি, আমার নাতিকে চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর ও কারেন্টের শর্ক দেওয়া হয়েছে, এই কারনে আমি মামলা করেছি, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আসামীরা আমাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দমকি দিচ্ছে। আমার নাতিকে মেরে ফেলতে চাইছে, সে কারনে তার পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে বাড়িতে আটকে রেখেছি। আরজা বেগম আরো বলেন, নির্যাতনকারী আসামীরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ার কারনে জামিনে বেড়িয়ে এসেছেন,চলছেন বীরদর্পে। আমি হতদরিদ্র ,নাতির চিকিৎসা ও মামলা চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। এলাকার চেয়ারম্যান সাহেব আমার নাতির এই অবস্থা দেখে তার চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করে গেছেন।
কিশোর ইয়াকুব চিকিৎসা শেষে বাড়িতে এসেও শান্তিতে নেই, পিতহীন ইয়াকুবের সময় কাটে নির্যাতনকারীদের ভয়ে চরম আতংক ও নিরাপত্তাহীনতায় । অন্যদিকে নির্যাতিত হওয়া স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন প্রতিটি মুহুর্ত। মাঝে মাঝে নির্যাতনের স্মৃতি রাতে ঘুমের মধ্যে দেখতে পেয়ে চিৎকার করতে থাকে ইয়াকুব। এই কোমল কিশোর বয়সে যেখানে খেলাধুলা করতে মাঠে ময়দানে ছুটে চলার কথা, তার বদলে কাটাতে হচ্ছে শিকলে বাঁধা জীবন।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।।

জীবন বাঁচাতে শিকলে বাঁধা কিশোর ইয়াকুব

আপডেট টাইম ১১:৪৮:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুন ২০২১

জীবন বাঁচাতে শিকলে বাঁধা কিশোর ইয়াকুব

মোঃ কেফাইতুল ভুইয়া, বিজয়নগর, (ব্রহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃ

কিশোর ইয়াকুব বলেন, আমি নানার জন্য সন্ধ্যা বেলায় দোকানে বিড়ি আনতে গেছিলাম,ওই সময় কয়েকজন পুলাপাইন আমারে ধইরা জঙ্গলের কাছে নিয়া হাত-পাও বাইন্দা মারছে, যাওয়ার সময় কইয়া গেছে, তর নানীরে কইস, মামলাডা তুইলা নিতে, মামলা না তুললে তোরে জীবনে আর দেখবেনা। তোরে মাইরা জঙ্গলে ফালাইয়া দিমু, কাক পক্কিও জানবোনা। কথাগুলো বলেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের মেরাসানী গ্রামের মৃত মজলু ভূঁইয়ার ছেলে ১২ বছরের কিশোর ইয়াকুব। মেরাসানী গ্রামের প্রভাবশালীদের হাত থেকে কিশোর ইয়াকুবের প্রান বাঁচাতে পায়ে শিকল বেঁধে রেখেছে তার পরিবার। নিজের জীবন রক্ষা করতে শিকলে বাঁধা জীবন কাটাতে হচ্ছে ওই কিশোরের । কতদিন এভাবে চলতে থাকবে, নিশ্চিত করে বলতে পারছেনা তার পরিবার।
জানাযায়, বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের মেরাসানী গ্রামের মৃত মজলু ভূঁইয়ার ছেলে ইয়াকুব (১২),বাবা না থাকায় সে মেরাসানী গ্রামে তার নানার বাড়িতে থাকে। গত ১৫মে শনিবার মোবাইল চুরির ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে ইয়াকুবকে আম পারার কথা বলে কৌশলে একই গ্রামের আবদুল আলিমের ছেলে রুবেল বাড়িতে ডেকে নিয়ে মোবাইল চুরির অপবাদে চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখে বাবু, মান্না,বাবুল,মান্নান,কাউসার,এনামুল,রানা,ইরন মিয়া,উজ্জল ও রুবেলসহ আরোকয়েকজন মিলে মারধর করতে থাকে, সেই সাথে কারেন্টের শর্কও দেয়া হয়েছে। রাতভর তার উপর নির্যাতন করা হয়। ইয়াকুবের পরিবার বিভিন্ন জায়গাতে খোঁজাখুঁজি করেও তার কোন সন্ধান পায়নি। পরের দিন ১৬ মে রবিবার দুপুরে কিশোরটির কান্নার শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন তার পরিবারকে খবর দিলে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়।
কিশোরটিকে নির্যাতনের একটি ভিডিও রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক মিলে কিশোরটির হাত-পা বেঁধে মাটিতে ফেলে নির্যাতন করছে। এসময় সে আত্মচিৎকার করলেও থেমে থাকেনি নির্যাতন। এই কিশোর নির্যাতনের ঘটনাটি দেশের বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে।
এই ঘটনায় ১ মে রাতে বিজয়নগর থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিজয়নগর থানায় মামলা দায়ের করেন ইয়াকুবের নানী আরজা বেগম। এ ঘটনায় পুলিশ ১৭ মে মেরাসানী গ্রামের বাবুল মিয়া (৪৫), মান্নান (২৩) ও শাহীন ওরফে মান্নাকে (২১) গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানোর কয়েকদিন পর জামিনে বেড়িয়ে আসে। মামলার মুল আসামী রুবেল এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। সরেজমিনে,ইয়াকুবের নানার বাড়িতে প্রবেশ করতে চোখে পড়ে ১২ বছরের একটি কিশোর, পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় দরজার সামনে বসে আছে, প্রথমে ধারনা হয়, হয়তো ছেলেটি মানুষিকভাবে অসুস্থ। পরে জানাযায়, এই সেই ইয়াকুব। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে আসার পর ইয়াকুব বাড়ির পাশে একটি দোকান থেকে ফিরে আসার সময় কয়েকজন যুবক তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে হাত পা বেঁধে একটি নির্জনস্থানে ফেলে রেখে চলে যাওয়ার সময় বলে যায়,মামলা তুলে নিতে, নতুবা তাকে মেরে ফেলবে। এই ঘটনার পর থেকেই ইয়াকুবের পরিবার তার জীবন বাঁচাতে পায়ে শিকল বেঁধে ঘরে আটকিয়ে রেখেছে।
ইয়াকুবের মামা আলামিন জানান, আমরা এই গ্রামে নিরহ বলে অত্যাচারিত ও নির্যাতিত হচ্ছি। প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছিনা। আমার ভাগিনা এতিম, তার বাবা নেই, কখন কি হয়ে যায় সেই আতংকে আছি,তার জীবন বাঁচাতে আমরা বাধ্য হয়েই তাকে শিকলে বেঁধে রেখেছি।
মামলার বাদি আরজা বেগম বলেন, আমি গরীব বলে এতোটা নির্যাতিত হচ্ছি, আমার নাতিকে চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর ও কারেন্টের শর্ক দেওয়া হয়েছে, এই কারনে আমি মামলা করেছি, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আসামীরা আমাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দমকি দিচ্ছে। আমার নাতিকে মেরে ফেলতে চাইছে, সে কারনে তার পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে বাড়িতে আটকে রেখেছি। আরজা বেগম আরো বলেন, নির্যাতনকারী আসামীরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ার কারনে জামিনে বেড়িয়ে এসেছেন,চলছেন বীরদর্পে। আমি হতদরিদ্র ,নাতির চিকিৎসা ও মামলা চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। এলাকার চেয়ারম্যান সাহেব আমার নাতির এই অবস্থা দেখে তার চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করে গেছেন।
কিশোর ইয়াকুব চিকিৎসা শেষে বাড়িতে এসেও শান্তিতে নেই, পিতহীন ইয়াকুবের সময় কাটে নির্যাতনকারীদের ভয়ে চরম আতংক ও নিরাপত্তাহীনতায় । অন্যদিকে নির্যাতিত হওয়া স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন প্রতিটি মুহুর্ত। মাঝে মাঝে নির্যাতনের স্মৃতি রাতে ঘুমের মধ্যে দেখতে পেয়ে চিৎকার করতে থাকে ইয়াকুব। এই কোমল কিশোর বয়সে যেখানে খেলাধুলা করতে মাঠে ময়দানে ছুটে চলার কথা, তার বদলে কাটাতে হচ্ছে শিকলে বাঁধা জীবন।