রাফিউ হাসানঃ চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার টামটা ইউনিয়নের কাজিরকামতা গ্রামে মাদ্রাসার এক ছাত্রকে প্রহারের অভিযোগ উঠেছে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কবির নামক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। পরে আহত অবস্থায় ওই ছাত্রকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
আহত ছাত্রের নাম মোঃ নাঈম হোসেন। কাজিরকামতা আল-আমীন হাফেজিয়া মাদ্রাসার পড়াশুনা করে। মাদ্রাসাটি স্থাপিত হয়েছিলো ২০০৬ সালে। মাত্র ৩৫ জন ছাত্র নিয়ে বর্তমানে মাদ্রাসাটি পাঠদান করানো হয়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় যে, আহত ছাত্রটিকে নিজ বাসা হতে জোড় পূর্বক নিয়ে আসার সময় বেদম প্রহার করেন মাদ্রাসার কমিটির সদস্য কবির মাস্টার। তার সাথে মোটর সাইকেল যোগে ছাত্রটির বাসায় গিয়েছিলেন একই মাদ্রাসার সুপার মো রেজাউল করিম। তারা ২ জন ছাত্রের মা ঝর্ণা খাতুনের ফোন পেয়ে ছাত্রটিকে বাসা হতে নিয়ে আসতে যান। ছাত্রটি মাদ্রাসায় যেতে অপারগতা প্রকাশ করলে তখন কবির মাষ্টার তাকে বেদম প্রহার করেন এবং ছাত্রটির বুকে পা রেখে দাড়িয়েও থাকেন। এতে করে ছাত্রটি শ্বাসকষ্টের দেখা দিলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে দোষী ব্যক্তি ছাত্রটির চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন করলে পিতৃহারা ছাত্রটির পরিবার বিষয়টি কাউকে জানান নি। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন ব্যক্তি ছাত্রটির আঘাতের ছবিসহ প্রকাশ করলে তদন্ত সাপেক্ষে বেড়িয়ে আসে এর আসল রহস্য।
আহত ছাত্র নাঈম জানায়, ঘটনার দিন সন্ধায় মাদ্রাসার সুপার ও কবির মাষ্টার আমাদের বাড়িতে আসলে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য টানা-হেঁচড়া করেন। আমি যেতে অপারগতা দেখালে আমাকে কবির নামক ব্যক্তিটি মারতে থাকেন। বাড়ি হতে ১০০ গজ দূরে বাজারের দোকানগুলোর সামনে আমাকে সজোরে মাটিতে ফেলে দিয়ে বুকে আঘাত করেন। আমি চিৎকার করে কাদঁতে থাকলে স্থানীয় মানুষরা এগিয়ে এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
নাঈমের মা ঝর্ণা খাতুন বলেন, ছেলে আমার প্রচুর দুষ্টুমি করে এবং মাদ্রাসা হতে বার বার চলে আসে। তাই আমি মাদ্রাসার সুপারকে ফোন দিয়ে বাসায় এসে নাঈমকে নিয়ে যেতে বলি। তিনি ও কবির মাষ্টার আমার বাসা হতে ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় বেদম প্রহার করেন। আমি এই ঘটনাটি যেনো কাউকে না বলি সেজন্য মাদ্রাসার সভাপতি আমাকে ডেকে নিয়ে ছেলের চিকিৎসা করে দিবেন, এই মর্মে আমাকে চুপ থাকতে বলেন। পিতৃহারা ছেলেকে নিয়ে তাই আমি আর কারও কাছে যাই নি। আমি এ ঘটনার বিচার চাই বলেই তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদোষী স্থানীয় দোকানদার বলেন, এশার নামাজের ঠিক পরে বাইরে বাচ্চার চিৎকারের ডাক শুনে আমি দোকান হতে বের হই। বাইরে বের হয়ে দেখি একটি লোক বাচ্চাকে মাটিতে ফেলে তার বুকের উপর পা রেখে দাড়িয়ে আছে। তৎক্ষনাৎ আমি তাকে প্রতিহত করলে মোটর সাইকেল আরোহী দুইজন সটকে পড়ে। ছেলেটির পরিবারকে খবর দিলে তারা দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, মাদ্রাসার সুপার সন্ত্রাসী ভাড়া করে কি এভাবে বাসা হতে বাচ্চাদেরকে নিয়ে যান। অবুঝ বাচ্চাকে কেউ এভাবে মারতে পারে নাকি?
মাদ্রাসার সুপার মো রেজাউল করিম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন নি। বরং ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। কবির মাষ্টার ছেলেকে প্রহার করেন নি বলে তিনি দাবি করেন।
অভিযুক্ত কবির মাষ্টার বলেন, আমি মাদ্রাসার সুপারের সাথে ছেলেটির বাসায় গেলে ছেলেটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। নাঈম মাদ্রাসায় আসতে চায় না বিধায় আমি তাকে সামান্য মার দেই।
তবে কেনো তাকে চিকিৎসা খরচ দিচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছেলেটি পিতৃহারা গরীব সন্তান। তার অসুস্থতার কথা শুনে আমি সভাপতিসহ তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ছুটে যাই। আর চিকিৎসার খরচ নিজে একাই বহন করি।
মাদ্রাসার সভাপতি আলী আহমেদ মাষ্টার ঘটনাটি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কি আছে। আমি নাঈমের মাকে ডেকে এনে সমস্যার সমাধান করে দিয়েছি। ছেলেকে মাদ্রাসার সকল সুবিধা ফ্রি ঘোষণা করে তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থাও আমি করে দিয়েছি।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে আরও জানা যায়, মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার পর হতেই এর পড়ালেখার মান ভালো না। ছেলেরা ঠিকমতো লিখতেও পারে না। অথচ তাদেরকে দিয়ে মাদ্রাসার বাহিরে মাইক দিয়ে চাঁদা উঠানোর কাজ করায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। ছেলেটির ছবিসহ বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি সকলের নজরে আসলেও প্রশাসনের পক্ষ হতে কেউ বিষয়টি নিয়ে নাঈমের পরিবারের সাথে কথা বলেন নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিশ্চুপ থাকা ও ঘটনাটি প্রশাসন পর্যন্ত না জানানোর জন্য নাঈমের পরিবারকে চাপ দেওয়ার বিষয়টি কি প্রমাণ করে না একজন অসহায় পরিবারকে জিম্মি করে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে সমাজে হাজারো কবির মাষ্টারদের মতো কাপুরুষগুলো। সমাজ হতে সেই সব মানুষগুলোর বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নতুবা সমাজে আরও অসংগতি ধামাচাপা পড়বে অর্থের ঝনঝনানিতে এমনটাই মনে করেন এলাকাবাসী।