ঢাকা ০৫:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাকেরগঞ্জে যুবদল সভাপতি টুকুর মুক্তির দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল বাকেরগঞ্জে চারটি দোকান ভাংচুর, লুটপাটের অভিযোগ। গাছবাড়ীয়া সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের সমম্বয় সমিতি’র নির্বাচন অনুষ্ঠিত- সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ফখরু উদ্দিন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে খুলনার ফুলতলায় তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানসূচি। –চোরাইকৃত ১৪টি ইজিবাইক উদ্ধারসহ আটক চোর চক্রের পলাতক তিনজন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০; চোরাইকৃত আরো তিনটি ইজিবাইক এবং চুরির কাজে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল জব্দ। চট্টগ্রাম হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া … “বনের জমিতে দেড় শতাধিক কারখানা” টাঙ্গাইলে পাহাড়ি টিলা কাটছে মাটিখেকোরা, জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে “কুষ্টিয়ায় নকল আকিজ বিড়িসহ বিড়ি তৈরির উপকরণ জব্দ” চট্টগ্রামের উন্নয়নে তিন খাতে সিঙ্গাপুরের সহায়তা চাইলেন মেয়র রেজাউল

তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক বিরোধের কারণ

তুরস্ক উপকূলের ইযমির শহরের একটি সরু রাস্তার পাশে হলুদ ফটকের একটি চার্চ। পিয়ের ফেরিঘাট থেকে অল্প হাঁটলেই সেখানে যাওয়া যায়। শুধুমাত্র একটি বিবর্ণ সাইনবোর্ডে এই চার্চের পরিচয় বলা হয়েছে। অল্প কিছু মানুষই এই চার্চে নিয়মিত ধর্মসভায় যাতায়াত করতেন।

কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। রোববারের প্রার্থনা সভায় এখন অসংখ্য আন্তর্জাতিক প্রতিবেদকের ভিড় লেগে যায়। সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্র আর তুরস্কের মধ্যে যে তিক্ত কূটনৈতিক টানাপড়েন শুরু হয়েছে, তার কেন্দ্রে রয়েছে এই চার্চ। কারণ এখানে কর্মরত মার্কিন ধর্মযাজক অ্যান্ড্রু ব্রনসনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করার অভিযোগ এনেছে আঙ্কারা।

দু’বছর আগ পর্যন্ত অ্যান্ড্রু ব্রনসন শান্তিতেই চার্চে কাজ করতেন। তার এক বন্ধু জানিয়েছেন, ২০১০ সাল থেকে এখানে তৈরি করা ছোট্ট ধর্মসভা পরিচালনা করতেন ব্রনসন।

উত্তর ক্যারোলিনার ব্রনসন তার স্ত্রী নোরিনকে নিয়ে তুরস্কে আসেন ১৯৯৩ সালে। এখানেই তারা তাদের তিন সন্তানকে বড় করেছেন। ২০১৬ সালের ৭ অক্টোবর এই দম্পতিকে স্থানীয় থানা থেকে ডেকে পাঠানো হয়। তারা স্বেচ্ছায় সেখানে যান। কিন্তু মুক্তি দেয়ার বদলে তাদের দু’জনকেই পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়।

২০১৬ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যেপ এরদোয়ানের বিরুদ্ধে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার পর যে ৫০ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে ব্রনসন দম্পতিও রয়েছেন।

কয়েকদিন পরে নোরিন ব্রনসনকে মুক্তি দেয়া হয়। তবে ডিসেম্বর মাসে ধর্মযাজক ব্রনসনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে তুরস্ক। সেখানে অভিযোগ আনা হয়, তিনি সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য এবং তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

স্থানীয় কৌসুলিরা বলছেন, ব্রনসনের সঙ্গে দু’টি গ্রুপের যোগাযোগ রয়েছে, যাদের সন্ত্রাসী বলে মনে করে তুরস্ক। অপরাধ প্রমাণিত হলে তার ৩৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে, তিনি কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টিকে (পিকেকে) সাহায্য করছেন। এই দলের নেতা ফেতুল্লাহ গুলেন। তাকে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার জন্য দায়ী করে আসছে তুরস্ক।

গুলেন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় বসবাস করেন এবং অভ্যুত্থান চেষ্টার সঙ্গে কোনরকম জড়িত থাকার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। বিচারের মুখোমুখি করতে তাকে তুরস্কে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছে আঙ্কারা।

ব্রনসনের স্বজন এবং বন্ধুরা অভিযোগ করছেন, কূটনৈতিক দর কষাকষির হাতিয়ার হিসাবে এই ধর্মযাজককে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে তুরস্ক। গ্রেফতারের ঘটনা তাকে আরো মহান করে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসবাইটেরিয়ান সম্প্রদায়ের লোকজন তার জন্য প্রার্থনা করছে, এমনকি তার জন্য অনাহারেও থাকছে। তুরস্ক জানিয়েছে, আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে আদালতের কার্যক্রম চলছে।

বর্তমান সংকটের শুরু হয় গত ১৮ জুলাই থেকে। সে সময় শুনানির পর তুরস্কের একটি আদালত ব্রনসনকে কারাগারে রাখার আদেশ দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তকে অসম্মান বলে বর্ণনা করেছেন এবং তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

তাকে দীর্ঘদিন ধরে জিম্মি করে রাখা হয়েছে বলে একটি টুইট বার্তায় লিখেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, এরদোয়ানের উচিত এই চমৎকার ধর্মযাজক ও পিতার মুক্তির জন্য কিছু করা। তিনি অন্যায় কিছু করেননি, তার পরিবার তাকে পেতে চায়।

স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটার কারণে গত ২৫ জুলাই ব্রনসনকে কারাবন্দীর বদলে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। এই সিদ্ধান্ততে ওয়াশিংটন স্বাগত জানালেও পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছে। ব্রনসনকে মুক্তি না দেয়ায় সর্বশেষ গত ১ অগাস্ট তুরস্কের বিচার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে হোয়াইট হাউস।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সর্বশেষ একটি চেষ্টার পর শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, তুরস্ক থেকে আমদানি করা স্টিল আর অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করা হবে। ট্রাম্প এক টুইটে বলেন, তুরস্কের সঙ্গে এই মুহূর্তে আমাদের সম্পর্ক ততটা ভালো নেই।

গত সোমবারই মার্কিন নেতারা একটি প্রতিরক্ষা বিলে স্বাক্ষর করেছেন, যার ফলে একশোটি এফ-৩৫ ফাইটার জেট বিমান এই ন্যাটো সহযোগীর কাছে হস্তান্তর বিলম্বিত হবে।

এই পরিস্থিতি এখন পুরোমাত্রার একটি কূটনৈতিক সংকটে পরিণত হয়েছে। এর আগে ১৯৭৪ এবং ১৯৭৮ সালে তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৭৪ সালে তুরস্ক সাইপ্রাসে অভিযান চালায়।

সাম্প্রতিক এই নিষেধাজ্ঞার পর তুরস্কের লিরার মূল্যমান ২০ শতাংশ পড়ে গেছে। বিনিয়োগকারীরা বিক্রি বাড়িয়ে দেয়ায় আরো কয়েকটি উদীয়মান অর্থনীতির মুদ্রার মানও কমেছে। পাল্টা জবাব হিসাবে এরদোয়ান বলেছেন, মার্কিন ইলেকট্রনিক পণ্য বর্জন করবে তুরস্ক। মার্কিন সরবরাহকারীদের সঙ্গে ব্যবসা করা কোম্পানিগুলোকে বিকল্প খোঁজার জন্যও তিনি আহবান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি আমার জাতিকে আহবান জানাচ্ছি, বিশেষ করে আমাদের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে; এখন আমাদের সবচেয়ে ভালো জবাব হবে চালকের আসনে শক্তভাবে বসা। আমরা আরো বেশি উৎপাদন করবো, আরো বেশি রপ্তানি করবো।

টার্কিশ এয়ারলাইন্স এবং টার্ক টেলিকমের মতো বড় ব্যবসায়িক কোম্পানিগুলো ঘোষণা দিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোন মিডিয়ায় আর বিজ্ঞাপন দেবে না।

যখন দুই ন্যাটো সহযোগী দেশের মধ্যে সম্পর্ক খারাপের দিকে যাচ্ছে, তখন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লেভরভ তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বৈঠকের জন্য এসেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রকে এক হাত দেখে নেয়ার সুযোগের ব্যবহার করছেন মি. লাভরভ। রাশিয়া এবং তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা ‘অবৈধ’ এবং ‘বিশ্ব বাণিজ্যে অন্যায় সুবিধা নিতে’ ওয়াশিংটন এসব করছে বলে তাদের দাবি।
তুরস্ক আর যুক্তরাষ্ট্রের এই তিক্ত কূটনৈতিক বৈরিতার কোন সমাধানের আলো দেখা যাচ্ছে না- পাশাপাশি তুরস্কে মি. ব্রনসনের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।

টার্কিশ এয়ারলাইন্স এবং টার্ক টেলিকমের মতো বড় ব্যবসায়িক কোম্পানিগুলো ঘোষণা দিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কোন মিডিয়ায় আর বিজ্ঞাপন দেবে না।
বাকযুদ্ধ
যখন দুই নেটো সহযোগী দেশের মধ্যে সম্পর্ক খারাপের দিকে যাচ্ছে, তখন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বৈঠকের জন্য এসেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রকে এক হাত দেখে নেয়ার সুযোগের ব্যবহার করছেন লাভরভ। রাশিয়া এবং তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা অবৈধ এবং বিশ্ব বাণিজ্যে অন্যায় সুবিধা নিতে ওয়াশিংটন এসব করছে বলে তাদের দাবি। তুরস্ক আর যুক্তরাষ্ট্রের এই তিক্ত কূটনৈতিক বৈরিতার কোন সমাধানের আলো দেখা যাচ্ছে না। পাশাপাশি তুরস্কে ব্রনসনের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বাকেরগঞ্জে যুবদল সভাপতি টুকুর মুক্তির দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল

তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক বিরোধের কারণ

আপডেট টাইম ০৭:৪৬:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অগাস্ট ২০১৮

তুরস্ক উপকূলের ইযমির শহরের একটি সরু রাস্তার পাশে হলুদ ফটকের একটি চার্চ। পিয়ের ফেরিঘাট থেকে অল্প হাঁটলেই সেখানে যাওয়া যায়। শুধুমাত্র একটি বিবর্ণ সাইনবোর্ডে এই চার্চের পরিচয় বলা হয়েছে। অল্প কিছু মানুষই এই চার্চে নিয়মিত ধর্মসভায় যাতায়াত করতেন।

কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। রোববারের প্রার্থনা সভায় এখন অসংখ্য আন্তর্জাতিক প্রতিবেদকের ভিড় লেগে যায়। সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্র আর তুরস্কের মধ্যে যে তিক্ত কূটনৈতিক টানাপড়েন শুরু হয়েছে, তার কেন্দ্রে রয়েছে এই চার্চ। কারণ এখানে কর্মরত মার্কিন ধর্মযাজক অ্যান্ড্রু ব্রনসনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করার অভিযোগ এনেছে আঙ্কারা।

দু’বছর আগ পর্যন্ত অ্যান্ড্রু ব্রনসন শান্তিতেই চার্চে কাজ করতেন। তার এক বন্ধু জানিয়েছেন, ২০১০ সাল থেকে এখানে তৈরি করা ছোট্ট ধর্মসভা পরিচালনা করতেন ব্রনসন।

উত্তর ক্যারোলিনার ব্রনসন তার স্ত্রী নোরিনকে নিয়ে তুরস্কে আসেন ১৯৯৩ সালে। এখানেই তারা তাদের তিন সন্তানকে বড় করেছেন। ২০১৬ সালের ৭ অক্টোবর এই দম্পতিকে স্থানীয় থানা থেকে ডেকে পাঠানো হয়। তারা স্বেচ্ছায় সেখানে যান। কিন্তু মুক্তি দেয়ার বদলে তাদের দু’জনকেই পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়।

২০১৬ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যেপ এরদোয়ানের বিরুদ্ধে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার পর যে ৫০ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে ব্রনসন দম্পতিও রয়েছেন।

কয়েকদিন পরে নোরিন ব্রনসনকে মুক্তি দেয়া হয়। তবে ডিসেম্বর মাসে ধর্মযাজক ব্রনসনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে তুরস্ক। সেখানে অভিযোগ আনা হয়, তিনি সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য এবং তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

স্থানীয় কৌসুলিরা বলছেন, ব্রনসনের সঙ্গে দু’টি গ্রুপের যোগাযোগ রয়েছে, যাদের সন্ত্রাসী বলে মনে করে তুরস্ক। অপরাধ প্রমাণিত হলে তার ৩৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে, তিনি কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টিকে (পিকেকে) সাহায্য করছেন। এই দলের নেতা ফেতুল্লাহ গুলেন। তাকে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার জন্য দায়ী করে আসছে তুরস্ক।

গুলেন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় বসবাস করেন এবং অভ্যুত্থান চেষ্টার সঙ্গে কোনরকম জড়িত থাকার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। বিচারের মুখোমুখি করতে তাকে তুরস্কে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছে আঙ্কারা।

ব্রনসনের স্বজন এবং বন্ধুরা অভিযোগ করছেন, কূটনৈতিক দর কষাকষির হাতিয়ার হিসাবে এই ধর্মযাজককে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে তুরস্ক। গ্রেফতারের ঘটনা তাকে আরো মহান করে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসবাইটেরিয়ান সম্প্রদায়ের লোকজন তার জন্য প্রার্থনা করছে, এমনকি তার জন্য অনাহারেও থাকছে। তুরস্ক জানিয়েছে, আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে আদালতের কার্যক্রম চলছে।

বর্তমান সংকটের শুরু হয় গত ১৮ জুলাই থেকে। সে সময় শুনানির পর তুরস্কের একটি আদালত ব্রনসনকে কারাগারে রাখার আদেশ দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তকে অসম্মান বলে বর্ণনা করেছেন এবং তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

তাকে দীর্ঘদিন ধরে জিম্মি করে রাখা হয়েছে বলে একটি টুইট বার্তায় লিখেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, এরদোয়ানের উচিত এই চমৎকার ধর্মযাজক ও পিতার মুক্তির জন্য কিছু করা। তিনি অন্যায় কিছু করেননি, তার পরিবার তাকে পেতে চায়।

স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটার কারণে গত ২৫ জুলাই ব্রনসনকে কারাবন্দীর বদলে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। এই সিদ্ধান্ততে ওয়াশিংটন স্বাগত জানালেও পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছে। ব্রনসনকে মুক্তি না দেয়ায় সর্বশেষ গত ১ অগাস্ট তুরস্কের বিচার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে হোয়াইট হাউস।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সর্বশেষ একটি চেষ্টার পর শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, তুরস্ক থেকে আমদানি করা স্টিল আর অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করা হবে। ট্রাম্প এক টুইটে বলেন, তুরস্কের সঙ্গে এই মুহূর্তে আমাদের সম্পর্ক ততটা ভালো নেই।

গত সোমবারই মার্কিন নেতারা একটি প্রতিরক্ষা বিলে স্বাক্ষর করেছেন, যার ফলে একশোটি এফ-৩৫ ফাইটার জেট বিমান এই ন্যাটো সহযোগীর কাছে হস্তান্তর বিলম্বিত হবে।

এই পরিস্থিতি এখন পুরোমাত্রার একটি কূটনৈতিক সংকটে পরিণত হয়েছে। এর আগে ১৯৭৪ এবং ১৯৭৮ সালে তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৭৪ সালে তুরস্ক সাইপ্রাসে অভিযান চালায়।

সাম্প্রতিক এই নিষেধাজ্ঞার পর তুরস্কের লিরার মূল্যমান ২০ শতাংশ পড়ে গেছে। বিনিয়োগকারীরা বিক্রি বাড়িয়ে দেয়ায় আরো কয়েকটি উদীয়মান অর্থনীতির মুদ্রার মানও কমেছে। পাল্টা জবাব হিসাবে এরদোয়ান বলেছেন, মার্কিন ইলেকট্রনিক পণ্য বর্জন করবে তুরস্ক। মার্কিন সরবরাহকারীদের সঙ্গে ব্যবসা করা কোম্পানিগুলোকে বিকল্প খোঁজার জন্যও তিনি আহবান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি আমার জাতিকে আহবান জানাচ্ছি, বিশেষ করে আমাদের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে; এখন আমাদের সবচেয়ে ভালো জবাব হবে চালকের আসনে শক্তভাবে বসা। আমরা আরো বেশি উৎপাদন করবো, আরো বেশি রপ্তানি করবো।

টার্কিশ এয়ারলাইন্স এবং টার্ক টেলিকমের মতো বড় ব্যবসায়িক কোম্পানিগুলো ঘোষণা দিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোন মিডিয়ায় আর বিজ্ঞাপন দেবে না।

যখন দুই ন্যাটো সহযোগী দেশের মধ্যে সম্পর্ক খারাপের দিকে যাচ্ছে, তখন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লেভরভ তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বৈঠকের জন্য এসেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রকে এক হাত দেখে নেয়ার সুযোগের ব্যবহার করছেন মি. লাভরভ। রাশিয়া এবং তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা ‘অবৈধ’ এবং ‘বিশ্ব বাণিজ্যে অন্যায় সুবিধা নিতে’ ওয়াশিংটন এসব করছে বলে তাদের দাবি।
তুরস্ক আর যুক্তরাষ্ট্রের এই তিক্ত কূটনৈতিক বৈরিতার কোন সমাধানের আলো দেখা যাচ্ছে না- পাশাপাশি তুরস্কে মি. ব্রনসনের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।

টার্কিশ এয়ারলাইন্স এবং টার্ক টেলিকমের মতো বড় ব্যবসায়িক কোম্পানিগুলো ঘোষণা দিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কোন মিডিয়ায় আর বিজ্ঞাপন দেবে না।
বাকযুদ্ধ
যখন দুই নেটো সহযোগী দেশের মধ্যে সম্পর্ক খারাপের দিকে যাচ্ছে, তখন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বৈঠকের জন্য এসেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রকে এক হাত দেখে নেয়ার সুযোগের ব্যবহার করছেন লাভরভ। রাশিয়া এবং তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা অবৈধ এবং বিশ্ব বাণিজ্যে অন্যায় সুবিধা নিতে ওয়াশিংটন এসব করছে বলে তাদের দাবি। তুরস্ক আর যুক্তরাষ্ট্রের এই তিক্ত কূটনৈতিক বৈরিতার কোন সমাধানের আলো দেখা যাচ্ছে না। পাশাপাশি তুরস্কে ব্রনসনের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।