ঢাকা ০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।। বরিশালে সুলভ মুল্যে বসুন্ধরা পন্য পেয়ে ক্রেতারা খুশী। বাবুগঞ্জে স্কুল ছুটির পরে বাড়ি যাওয়ার সময় দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজ। আমার বাবাও মায়ের দেওয়া উপদেশ বড়দের সম্মান কর ছোটদের স্নেহ করো। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখী নারী উদ্যোক্তা মেলা শুরু। টাঙ্গাইলে তিনদিন ব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা শুরু বাকেরগঞ্জে প্রধান মন্ত্রীর ছবি ব্যঙ্গক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট করায় হায়দর সিপাই গ্রেফতার। বাকেরগঞ্জে স্ত্রীর দায়ের কৃত মামলায় স্বামী পারভেজ খান গ্রেফতার।। বাকেরগঞ্জে তরমুজ চাষী হত্যা চেষ্টা মামলার আসামী রুদ্র গাজী গ্রেফতার টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড অনুষ্ঠিত

১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৯০ নারী-পুরুষ

মো. মশিউর রহমান, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলে ১২০ টাকায় পুলিশে নিয়োগ পেল ৭৬ জন পুরুষ ও ১৪ জন নারী’সহ যোগ্য ৯০ প্রার্থী। বুধবার (১৩ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টায় টাঙ্গাইল পুলিশ লাইন্সের ডিল শেডে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও মিষ্টিমুখ করিয়ে অভিনন্দন জানান পুলিশ সুপার (অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) সরকার মোহাম্মদ কায়সার (বিপিএম)। নির্বাচিত প্রার্থীদের অভিব্যক্তি শুনতে চাইলে, প্রাথমিক ভাবে নির্বাচিত প্রার্থীরা আনন্দে আপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন। তারা তখনো বিশ্বাস করতে পারছেনা টাকা ছাড়াই পুলিশে চাকুরী পেয়েছে। অশ্রুশিক্ত নয়নে অনেকের কান্না উপস্থিত সকলের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এ সময় পুলিশ সুপার জানান যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে আপনারা সকলে আজ এই জায়গায়। মাননীয় ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম মহোদয় বাংলাদেশ পুলিশকে যুগপোযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ার লক্ষ্য হিসেবে আপনাদের এই নিয়োগ অন্যতম একটি ধাপ। আপনাদের সততা ও কর্মনিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্বল হবে। আমরা টাঙ্গাইল জেলাবাসীকে কথা দিয়েছিলাম একটি স্বচ্ছ ও সুন্দর নিয়োগ উপহার দেওয়ার, আমরা আমাদের কথা রেখেছি।
পুলিশ সুপার আরোও বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষায় টাঙ্গাইল জেলার প্রাথমিকভাবে যারা নির্বাচিত হয়েছে তারা সম্পূর্ণ তদবিরবিহীন, প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়েছে।
পুলিশ সুপার উত্তীর্ণ সকলকে আগামী দিনে ‘সেবার ব্র‌তে চাক‌রি’ এই মহান ব্রতে উজ্জীবিত হয়ে, সততা দেশপ্রেম এবং কর্মনিষ্ঠার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখার আহ্বান জানান। মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরির বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, স্মার্ট পুলিশ গঠন করার জন্য আমরা যোগ্য প্রার্থীদেরকে বাছাই করেছি। আর এই কার্যক্রম চালু হয়েছিল গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে। নিয়োগ বোর্ডের যে সদস্য ছিল সবাই একদম সচ্ছ ছিল। যারা চান্স পেয়েছে সবাই যোগ্য প্রার্থী। মাত্র ১২০ টাকায় নিয়োগ পেয়েছে। কোন প্রকার সুপারিশ ও লেনদেনের সুযোগ ছিলনা। তিনি আরও বলেন, প্রথমে ৪ হাজার ২’শ জন আবেদন করেছিল। পরে ৩ হাজার ৮’শ জন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। সেখান থেকে লিখিত পরীক্ষায় বাছাই হয়েছিল ১ হাজার ৫৮ জন। লিখিত পরীক্ষার ফলাফলে ৩০২ জন থেকে মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলে চান্স পাওয়া ৯০ জনকে মনোনীত করেছি। এখানে পুরুষ ৭৬ ও নারী ১৪ জন মোট ৯০ জন নিয়োগ পেয়েছেন। অপেক্ষমাণ তালিকায় ১৩ জন রয়েছে।
বাবা ইটভাটায় কাজ করে ৩০ বছর ধরে। কত কষ্ট করে বাবা দুই ভাইকে যে মানুষ করছে তা বলার মতো না! এবার মনে হচ্ছে বাবার কষ্টের ফল একটু হলেও দিতে পারব। বাবার কাছ থেকে ১২০ টাকা নিয়ে পুলিশের চাকরির জন্য আবেদন করেছিলাম। আর সেই ১২০ টাকায় আবেদন করে যে আমার নিজ যোগ্যতায় পুলিশের চাকরি হয়ে যাবে তা কখনো কল্পনাও করতে পারি নাই। আজ পুলিশের একজন সদস্য নির্বাচিত হয়ে গর্ববোধ করছি।’ কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার জামুরিয়া ইউনিয়নের ঝলক ইটভাটার শ্রমিক মোশারফ হোসেনের ছেলে সদ্য পুলিশে নিয়োগ পাওয়া বিপ্লব হোসেন। গোপালপুর উপজেলার অটোচালক আইয়ুব নবীর ছেলে নাজমুল হোসেনও পুলিশের চাকরি পেয়ে আনন্দে আত্মহারা।
নাজমুল বলেন, ‘জীবনের কষ্টগুলো হয়তো দূর হবে এখন। বাবা যখন অটো নিয়ে সকালে বের হয়ে যায় তখন মনে হয় যে এই কষ্টের শেষ হবে কবে। আজ পুলিশের একজন সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর মনে হচ্ছে বাবার কষ্টটা একটু হলেও কমাতে পারব।’ নাজমুলের বাবা আইয়ুব নবী বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলাম ছেলে পড়াশোনা করে কিছু করতে পারবেনা কি না এই ভয়ে। কারণ মানুষের কাছে শুনি এখন সরকারি চাকরি নিতে গেলেই টাকা লাগে। কিন্তু মাত্র ১২০ টাকা দিয়ে যে পুলিশে চাকরি হবে কখনো কল্পনাও করতে পারি নাই। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর স্বচ্ছভাবে চাকরির পরীক্ষার জন্য।’
টাঙ্গাইল পৌরসভার সাকরাইল চরপাড়ার মৃত পুলিশ সদস্য সুরমান আলীর মেয়ে সুমা আক্তার বলেন, ‘মায়ের ইচ্ছে ছিল বাবার মতো পুলিশ সদস্য হবো, তাই ছোটবেলা থেকে মায়ের কথা অনুযায়ী চলাফেরা করেছি। আজ বাবার মতো পুলিশ সদস্য হওয়ায় নিজেকে যোগ্য সন্তান মনে করছি। বাবার যেমন ইচ্ছে ছিল মানুষের সেবা করার তেমনি আমিও সেবা করবো।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।।

১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৯০ নারী-পুরুষ

আপডেট টাইম ০৬:৩৭:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪

মো. মশিউর রহমান, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলে ১২০ টাকায় পুলিশে নিয়োগ পেল ৭৬ জন পুরুষ ও ১৪ জন নারী’সহ যোগ্য ৯০ প্রার্থী। বুধবার (১৩ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টায় টাঙ্গাইল পুলিশ লাইন্সের ডিল শেডে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও মিষ্টিমুখ করিয়ে অভিনন্দন জানান পুলিশ সুপার (অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) সরকার মোহাম্মদ কায়সার (বিপিএম)। নির্বাচিত প্রার্থীদের অভিব্যক্তি শুনতে চাইলে, প্রাথমিক ভাবে নির্বাচিত প্রার্থীরা আনন্দে আপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন। তারা তখনো বিশ্বাস করতে পারছেনা টাকা ছাড়াই পুলিশে চাকুরী পেয়েছে। অশ্রুশিক্ত নয়নে অনেকের কান্না উপস্থিত সকলের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এ সময় পুলিশ সুপার জানান যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে আপনারা সকলে আজ এই জায়গায়। মাননীয় ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম মহোদয় বাংলাদেশ পুলিশকে যুগপোযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ার লক্ষ্য হিসেবে আপনাদের এই নিয়োগ অন্যতম একটি ধাপ। আপনাদের সততা ও কর্মনিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্বল হবে। আমরা টাঙ্গাইল জেলাবাসীকে কথা দিয়েছিলাম একটি স্বচ্ছ ও সুন্দর নিয়োগ উপহার দেওয়ার, আমরা আমাদের কথা রেখেছি।
পুলিশ সুপার আরোও বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষায় টাঙ্গাইল জেলার প্রাথমিকভাবে যারা নির্বাচিত হয়েছে তারা সম্পূর্ণ তদবিরবিহীন, প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়েছে।
পুলিশ সুপার উত্তীর্ণ সকলকে আগামী দিনে ‘সেবার ব্র‌তে চাক‌রি’ এই মহান ব্রতে উজ্জীবিত হয়ে, সততা দেশপ্রেম এবং কর্মনিষ্ঠার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখার আহ্বান জানান। মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরির বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, স্মার্ট পুলিশ গঠন করার জন্য আমরা যোগ্য প্রার্থীদেরকে বাছাই করেছি। আর এই কার্যক্রম চালু হয়েছিল গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে। নিয়োগ বোর্ডের যে সদস্য ছিল সবাই একদম সচ্ছ ছিল। যারা চান্স পেয়েছে সবাই যোগ্য প্রার্থী। মাত্র ১২০ টাকায় নিয়োগ পেয়েছে। কোন প্রকার সুপারিশ ও লেনদেনের সুযোগ ছিলনা। তিনি আরও বলেন, প্রথমে ৪ হাজার ২’শ জন আবেদন করেছিল। পরে ৩ হাজার ৮’শ জন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। সেখান থেকে লিখিত পরীক্ষায় বাছাই হয়েছিল ১ হাজার ৫৮ জন। লিখিত পরীক্ষার ফলাফলে ৩০২ জন থেকে মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলে চান্স পাওয়া ৯০ জনকে মনোনীত করেছি। এখানে পুরুষ ৭৬ ও নারী ১৪ জন মোট ৯০ জন নিয়োগ পেয়েছেন। অপেক্ষমাণ তালিকায় ১৩ জন রয়েছে।
বাবা ইটভাটায় কাজ করে ৩০ বছর ধরে। কত কষ্ট করে বাবা দুই ভাইকে যে মানুষ করছে তা বলার মতো না! এবার মনে হচ্ছে বাবার কষ্টের ফল একটু হলেও দিতে পারব। বাবার কাছ থেকে ১২০ টাকা নিয়ে পুলিশের চাকরির জন্য আবেদন করেছিলাম। আর সেই ১২০ টাকায় আবেদন করে যে আমার নিজ যোগ্যতায় পুলিশের চাকরি হয়ে যাবে তা কখনো কল্পনাও করতে পারি নাই। আজ পুলিশের একজন সদস্য নির্বাচিত হয়ে গর্ববোধ করছি।’ কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার জামুরিয়া ইউনিয়নের ঝলক ইটভাটার শ্রমিক মোশারফ হোসেনের ছেলে সদ্য পুলিশে নিয়োগ পাওয়া বিপ্লব হোসেন। গোপালপুর উপজেলার অটোচালক আইয়ুব নবীর ছেলে নাজমুল হোসেনও পুলিশের চাকরি পেয়ে আনন্দে আত্মহারা।
নাজমুল বলেন, ‘জীবনের কষ্টগুলো হয়তো দূর হবে এখন। বাবা যখন অটো নিয়ে সকালে বের হয়ে যায় তখন মনে হয় যে এই কষ্টের শেষ হবে কবে। আজ পুলিশের একজন সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর মনে হচ্ছে বাবার কষ্টটা একটু হলেও কমাতে পারব।’ নাজমুলের বাবা আইয়ুব নবী বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলাম ছেলে পড়াশোনা করে কিছু করতে পারবেনা কি না এই ভয়ে। কারণ মানুষের কাছে শুনি এখন সরকারি চাকরি নিতে গেলেই টাকা লাগে। কিন্তু মাত্র ১২০ টাকা দিয়ে যে পুলিশে চাকরি হবে কখনো কল্পনাও করতে পারি নাই। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর স্বচ্ছভাবে চাকরির পরীক্ষার জন্য।’
টাঙ্গাইল পৌরসভার সাকরাইল চরপাড়ার মৃত পুলিশ সদস্য সুরমান আলীর মেয়ে সুমা আক্তার বলেন, ‘মায়ের ইচ্ছে ছিল বাবার মতো পুলিশ সদস্য হবো, তাই ছোটবেলা থেকে মায়ের কথা অনুযায়ী চলাফেরা করেছি। আজ বাবার মতো পুলিশ সদস্য হওয়ায় নিজেকে যোগ্য সন্তান মনে করছি। বাবার যেমন ইচ্ছে ছিল মানুষের সেবা করার তেমনি আমিও সেবা করবো।