ঢাকা ১২:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
টাঙ্গাইলে পাহাড়ি টিলা কাটছে মাটিখেকোরা, জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে “কুষ্টিয়ায় নকল আকিজ বিড়িসহ বিড়ি তৈরির উপকরণ জব্দ” চট্টগ্রামের উন্নয়নে তিন খাতে সিঙ্গাপুরের সহায়তা চাইলেন মেয়র রেজাউল বরিশালে বাস শ্রমিককে মারধরের ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল অবরোধ করে শ্রমিকেরা। গজারিয়ায় কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় খাদে প্রাইভেটকার, নিহত ৩ সিলেটে আগাম বন্যার আশঙ্কায়!! হাওরজুড়ে কৃষকের ব্যস্ততা শিশুদের মনোবিকাশে প্রয়োজন সংস্কৃতি চর্চা: মেয়র রেজাউল উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হাতীবান্ধায় নির্বাচনী সংঘর্ষে চেয়ারম্যান প্রার্থী সহ আহত ১০ ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার, প্রতারক চক্রের এক সদস্য গ্রেপ্তার প্রথম দিনেই রোগী দেখে সবার মন জয় করেলেন ডাক্তার মোঃ হুমায়ুন রশিদ শাকিল

ওকসকে হিংসেই করবেন টেন্ডুলকার–লারারা

পাঁচ বছর আগে শচীন টেন্ডুলকার অবসর নেওয়ার সময় পরিসংখ্যানবিদেরা হামলে পড়েছিলেন। হিসেব কষে বের করছিলেন ক্রিকেটের ‘লিটল মাস্টারে’র নানা রেকর্ড। ভারতীয় কিংবদন্তির সম্ভব-অসম্ভব প্রায় সব অর্জন থাকলেও একটু ব্যাপারে তাঁর ক্যারিয়ারে অপূর্ণতা আছে। ক্রিকেটের চারণভূমি লর্ডসে তাঁর কোনো সেঞ্চুরি নেই। এত বড় ক্রিকেটার, এত অর্জন তাঁর কিন্তু লর্ডস তাঁকে ভালোবাসেনি—ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুতই। তবে সমসাময়িক তিন কিংবদন্তিকে দেখে টেন্ডুলকারের কষ্ট লাঘব হলেও হতে পারে। ব্রায়ান লারা, জ্যাক ক্যালিস ও রিকি পন্টিং—তাঁদের কাউকেই লর্ডস ‘তিন অঙ্ক’ উপহার দেয়নি। তবে গতকাল লর্ডসে ক্রিস ওকসের সেঞ্চুরির পর টেন্ডুলকার, লারা, পন্টিং, ক্যালিসদের আফসোস নতুন করে মাথাচাড়া দিতে পারে—‘আমরা যেটা করতে পারলাম না, সেটা ওকস করে দেখাল! ভাগ্য বোধ হয় একেই বলে।’

লর্ডসের মাঠে একটি সেঞ্চুরি অনেক বেশি মূল্যবান। অনেক বড় অর্জন। নইলে লর্ডসে ক্রিস ওকস সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর এমন হইচই পড়ে যাবে কেন? একজন বোলার সেখানে সেঞ্চুরি পেলেও পেলেও চারজন কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান কীভাবে খালি হাতে ফিরলেন, তা নিয়েই বা কেন ঘাঁটবেন পরিসংখ্যানবিদেরা।

টেন্ডুলকারের কথাই ধরুন, ১৯৯০ সালে প্রথম টেস্ট খেলেছেন লর্ডসে। ২০১১ সালে খেলেছেন সর্বশেষ টেস্ট। সব মিলিয়ে ৫ টেস্ট খেলেছেন লর্ডসে। ১০ ইনিংসে কোনো সেঞ্চুরি নেই। সর্বোচ্চ ৩৭ রানের ইনিংস (২০০৭, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে)। অথচ এই ব্যাটসম্যানই কি না, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক আর সর্বোচ্চসংখ্যক সেঞ্চুরিও। এর ব্যাখ্যা কী?

কোনো ব্যাখ্যা নেই। ক্রিকেট এমনই—গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। এখানে ‘গৌরব’টুকু শুধু ক্রিকেটের—যে খেলাটি লর্ডসের অনার্স বোর্ডে (সেঞ্চুরির) লারা-টেন্ডুলকারদের জায়গা না দিয়ে ওকস-আগারকারদের নাম তুলতে পারে! মানছি, সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ায় ওকস-আগারকারদের মতো বোলারদের ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রমাণ মোটেও কম নয়। কিন্তু ক্রিকেট সত্যিই রহস্যময়। নইলে লর্ডসে লারা-টেন্ডুলকারের ব্যাটিং গড় সমান হয় কীভাবে!

১৯৯৫ থেকে ২০০৪—এই নয় বছরে লর্ডসে ৩টি টেস্ট খেলেছেন রেকর্ডের বরপুত্র নামে খ্যাত এই ক্যারিবিয়ান। ৬ ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি খেলেছেন লর্ডসে নিজের প্রথম টেস্টে (১৯৯৫, ইংল্যান্ড)। দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেছিলেন ৫৪ রানের ইনিংস। লর্ডসে এ তিন টেস্টে লারার ব্যাটিং গড় কাটায় কাটায় ২১। আর টেন্ডুলকারেরও ২১, শুধু এই অঙ্কটার সঙ্গে দশমিক ৬৬ আছে। সেটি বোধ হয় টেন্ডুলকারের ক্যারিয়ারে পরিসংখ্যানে লারাকে ছাপিয়ে যাওয়ার রূপক-নজির।

লর্ডসে লারার মতো ৩ টেস্ট খেলেছেন জ্যাক ক্যালিস। সর্বকালের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার লর্ডসে তাঁর সর্বশেষ টেস্টে প্রোটিয়াদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১ রান করেছিলেন। এ মাঠে তাঁর সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অধিনায়ক পন্টিং এ মাঠে ৪ টেস্ট খেলে টেন্ডুলকার-ক্যালিসের মতো সেঞ্চুরি দূরে থাক ফিফটির দেখাও পাননি। সর্বোচ্চ ৪২ রানের ইনিংস (২০০৫, ইংল্যান্ড)।

অথচ এই লর্ডসেই কাল ২৩৭তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে সেঞ্চুরি তুলে নিলেন ওকস। ইংলিশ এই পেসারের সঙ্গে লর্ডসের মন দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক যে কাউকেই চমকে দেবে। কাল যেমন সেখানে তুলে নিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তেমনি প্রথম ফিফটিও এই লর্ডসেই (২০১৬, শ্রীলঙ্কা)। আবার বল হাতে এক ইনিংসে তাঁর প্রথম পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তিও এই লর্ডসেই, এক টেস্টে প্রথম ১০ উইকেট নেওয়াও এই একই মাঠে!

মাঠের সঙ্গে প্রেমের নমুনা এমন হলে নামটা চিরস্থায়ী হবেই। ওকসের নামটাও তাই চিরস্থায়ী হয়ে গেল লর্ডসের অনার্স বোর্ডে। কাল যেমন অনার্স বোর্ডে নাম তুলেছেন সেঞ্চুরির জন্য, যেখানে আছেন তামিম ইকবালও। এ ছাড়া এই মাঠে এক ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া আর সেঞ্চুরি করা যে নয়জন ভাগ্যবান ক্রিকেটার ছিলেন তাঁদের পাশেও যোগ হলো ওকসের নাম। পাশাপাশি এই মাঠে এক ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি তো আছেই। লর্ডসে পঞ্চম ক্রিকেটার হিসেবে এক ইনিংসে ৫ উইকেট, এক ম্যাচে ১০ উইকেট আর সেঞ্চুরি তুলে নিলেন ওকস।

ওকসকে দেখে লারা-টেন্ডুলকারদের কী তারপরেও হিংসে হবে না!

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

টাঙ্গাইলে পাহাড়ি টিলা কাটছে মাটিখেকোরা, জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে

ওকসকে হিংসেই করবেন টেন্ডুলকার–লারারা

আপডেট টাইম ০৬:৪১:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ অগাস্ট ২০১৮

পাঁচ বছর আগে শচীন টেন্ডুলকার অবসর নেওয়ার সময় পরিসংখ্যানবিদেরা হামলে পড়েছিলেন। হিসেব কষে বের করছিলেন ক্রিকেটের ‘লিটল মাস্টারে’র নানা রেকর্ড। ভারতীয় কিংবদন্তির সম্ভব-অসম্ভব প্রায় সব অর্জন থাকলেও একটু ব্যাপারে তাঁর ক্যারিয়ারে অপূর্ণতা আছে। ক্রিকেটের চারণভূমি লর্ডসে তাঁর কোনো সেঞ্চুরি নেই। এত বড় ক্রিকেটার, এত অর্জন তাঁর কিন্তু লর্ডস তাঁকে ভালোবাসেনি—ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুতই। তবে সমসাময়িক তিন কিংবদন্তিকে দেখে টেন্ডুলকারের কষ্ট লাঘব হলেও হতে পারে। ব্রায়ান লারা, জ্যাক ক্যালিস ও রিকি পন্টিং—তাঁদের কাউকেই লর্ডস ‘তিন অঙ্ক’ উপহার দেয়নি। তবে গতকাল লর্ডসে ক্রিস ওকসের সেঞ্চুরির পর টেন্ডুলকার, লারা, পন্টিং, ক্যালিসদের আফসোস নতুন করে মাথাচাড়া দিতে পারে—‘আমরা যেটা করতে পারলাম না, সেটা ওকস করে দেখাল! ভাগ্য বোধ হয় একেই বলে।’

লর্ডসের মাঠে একটি সেঞ্চুরি অনেক বেশি মূল্যবান। অনেক বড় অর্জন। নইলে লর্ডসে ক্রিস ওকস সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর এমন হইচই পড়ে যাবে কেন? একজন বোলার সেখানে সেঞ্চুরি পেলেও পেলেও চারজন কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান কীভাবে খালি হাতে ফিরলেন, তা নিয়েই বা কেন ঘাঁটবেন পরিসংখ্যানবিদেরা।

টেন্ডুলকারের কথাই ধরুন, ১৯৯০ সালে প্রথম টেস্ট খেলেছেন লর্ডসে। ২০১১ সালে খেলেছেন সর্বশেষ টেস্ট। সব মিলিয়ে ৫ টেস্ট খেলেছেন লর্ডসে। ১০ ইনিংসে কোনো সেঞ্চুরি নেই। সর্বোচ্চ ৩৭ রানের ইনিংস (২০০৭, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে)। অথচ এই ব্যাটসম্যানই কি না, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক আর সর্বোচ্চসংখ্যক সেঞ্চুরিও। এর ব্যাখ্যা কী?

কোনো ব্যাখ্যা নেই। ক্রিকেট এমনই—গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। এখানে ‘গৌরব’টুকু শুধু ক্রিকেটের—যে খেলাটি লর্ডসের অনার্স বোর্ডে (সেঞ্চুরির) লারা-টেন্ডুলকারদের জায়গা না দিয়ে ওকস-আগারকারদের নাম তুলতে পারে! মানছি, সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ায় ওকস-আগারকারদের মতো বোলারদের ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রমাণ মোটেও কম নয়। কিন্তু ক্রিকেট সত্যিই রহস্যময়। নইলে লর্ডসে লারা-টেন্ডুলকারের ব্যাটিং গড় সমান হয় কীভাবে!

১৯৯৫ থেকে ২০০৪—এই নয় বছরে লর্ডসে ৩টি টেস্ট খেলেছেন রেকর্ডের বরপুত্র নামে খ্যাত এই ক্যারিবিয়ান। ৬ ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি খেলেছেন লর্ডসে নিজের প্রথম টেস্টে (১৯৯৫, ইংল্যান্ড)। দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেছিলেন ৫৪ রানের ইনিংস। লর্ডসে এ তিন টেস্টে লারার ব্যাটিং গড় কাটায় কাটায় ২১। আর টেন্ডুলকারেরও ২১, শুধু এই অঙ্কটার সঙ্গে দশমিক ৬৬ আছে। সেটি বোধ হয় টেন্ডুলকারের ক্যারিয়ারে পরিসংখ্যানে লারাকে ছাপিয়ে যাওয়ার রূপক-নজির।

লর্ডসে লারার মতো ৩ টেস্ট খেলেছেন জ্যাক ক্যালিস। সর্বকালের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার লর্ডসে তাঁর সর্বশেষ টেস্টে প্রোটিয়াদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১ রান করেছিলেন। এ মাঠে তাঁর সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অধিনায়ক পন্টিং এ মাঠে ৪ টেস্ট খেলে টেন্ডুলকার-ক্যালিসের মতো সেঞ্চুরি দূরে থাক ফিফটির দেখাও পাননি। সর্বোচ্চ ৪২ রানের ইনিংস (২০০৫, ইংল্যান্ড)।

অথচ এই লর্ডসেই কাল ২৩৭তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে সেঞ্চুরি তুলে নিলেন ওকস। ইংলিশ এই পেসারের সঙ্গে লর্ডসের মন দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক যে কাউকেই চমকে দেবে। কাল যেমন সেখানে তুলে নিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তেমনি প্রথম ফিফটিও এই লর্ডসেই (২০১৬, শ্রীলঙ্কা)। আবার বল হাতে এক ইনিংসে তাঁর প্রথম পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তিও এই লর্ডসেই, এক টেস্টে প্রথম ১০ উইকেট নেওয়াও এই একই মাঠে!

মাঠের সঙ্গে প্রেমের নমুনা এমন হলে নামটা চিরস্থায়ী হবেই। ওকসের নামটাও তাই চিরস্থায়ী হয়ে গেল লর্ডসের অনার্স বোর্ডে। কাল যেমন অনার্স বোর্ডে নাম তুলেছেন সেঞ্চুরির জন্য, যেখানে আছেন তামিম ইকবালও। এ ছাড়া এই মাঠে এক ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া আর সেঞ্চুরি করা যে নয়জন ভাগ্যবান ক্রিকেটার ছিলেন তাঁদের পাশেও যোগ হলো ওকসের নাম। পাশাপাশি এই মাঠে এক ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি তো আছেই। লর্ডসে পঞ্চম ক্রিকেটার হিসেবে এক ইনিংসে ৫ উইকেট, এক ম্যাচে ১০ উইকেট আর সেঞ্চুরি তুলে নিলেন ওকস।

ওকসকে দেখে লারা-টেন্ডুলকারদের কী তারপরেও হিংসে হবে না!