রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
রাঙ্গুনিয়ায় পুত্রের বিরুদ্ধে মাকে মারধরের অভিযোগ করা হয়েছে থানায়। পুত্রের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মা। পরে তদন্তে এসে পুত্রের কাছ থেকে ধারালো ছুরি উদ্ধার করে পুলিশ।
সরফভাটা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মৌলানা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পুত্রের নাম আরিফুল ইসলাম (২৭)। তিনি ওই এলাকার আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আরিফের বৃদ্ধা মা মুজলিস বেগম অভিযোগ করে জানান, ১ বছর আগে নাঈমা আক্তারকে (২০) তার অভিযুক্ত সন্তান বিয়ে করেন। বিয়ের আগে থেকেই তিনি তাদের থেকে পৃথকভাবে থাকতেন। বিয়ের পরও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে তার ভালো সম্পর্ক ছিল না। গত ১ জানুয়ারি দুপুরে ছেলের শশুর বাড়ি থেকে মেহমান আসলে মাকে তাদের সাথে খাবার খেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু অভিমানী মা খেতে যাননি। এমনকি শ্বশুর বাড়ি থেকে আনা পানও নিতে অস্বীকৃতি জানান।
এ ঘটনায় ওইদিন বিকাল সাড়ে চারটার দিকে আরিফ তার মায়ের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, একপর্যায়ে মাকে লাথি, কিল, ঘুষি মেরে আহত করে। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে মাকে উদ্ধার করে। উদ্ধারের পরও ধারালো ছুরি প্রদর্শন করে মা-বাবা ও ভাই-বোনদের মেরে ফেলার হুমকি দেয় অভিযুক্ত সন্তান। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নেন মা। স্ত্রী মুজলিস বেগম যখন সন্তানের নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন, তখন পাশে বসা স্বামী স্থানীয় একটি মাদ্রাসার দপ্তরী আনোয়ারুল ইসলাম কাঁদছিলেন। তিনিও পুত্রের বিরুদ্ধে এরআগেও বিভিন্ন সময় ক্ষিপ্ত হয়ে মারধরসহ নানা অভিযোগের বর্ণনা দেন। এ সময় পাড়া-প্রতিবেশীরা ওই পুত্রের বিভিন্ন উগ্রতার বর্ণনা দেন।
এ প্রসঙ্গে আরিফুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, “আমার মা-বাবার চাহিদা, আমি যেন শ্বশুর বাড়ি থেকে যৌতুক গ্রহণ করি। কিন্তু আমি আমার স্ত্রীকে মাত্র আটশ টাকার একটি আংটি দিয়ে বিয়ে করেছি, তাই আমি তাদের কাছ থেকে কিছুই নেইনি। এটি নিয়েই মূলত তাদের সাথে আমার বিরোধ। আমার মাকে আমি মারিনি, এটি মিথ্যা কথা, শুধুমাত্র কথা কাটাকাটি হয়েছে। আমি মায়ের পা ধরে ক্ষমা চেয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরফভাটা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “ছেলেটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় তার পরিবারের বড় ভাই ও বাবা-মা আমাকে অভিযোগ জানিয়েছে এর আগেও আমি অভিযোগের ভিত্তিতে ফোন করে আরিফকে ফারদার এরকম জঘন্য কাজ না করার জন্য তাগিদ দিয় এবং সজ্ঞানে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু এরপরও যখন মাকে মারধর করে তখন তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রাম্য আদালতের মাধ্যমে খুব শীঘ্রই বিচারের আওতায় আনবো। যে ছেলে মাকে মারে তার বিচার করা উচিৎ। এমন ছেলে হওয়ার চাইতে না হওয়া উত্তম, সে তো দুনিয়াও হারালো আখেরাতও হারালো”।
এদিকে সরফভাটা ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল আলম বলেন, “ছেলেটি এগ্রেসিভ এবং উগ্র মেজাজের, ছেলেটির সম্পর্কে প্রায় সময় আমার কাছে অভিযোগ আসে। আমি অনেকবার তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। সে আমার কথা অগ্রাহ্য করে না এতে আমি উপায় না দেখে পরিবারকে বললাম চেয়ারম্যান মহোদয়কে অবগত করে থানায় একটি জিডি করতে।
দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার এসআই মাহামুদুল করিম জানান, অভিযোগের ব্যাপারে তিনি সরেজমিন তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মুবিন বিন সোলাইমান
01690072488