সোলায়মান মোহাম্মদ, স্টাফ রিপোর্টার ঃ
গাজীপুরের শ্রীপুরে উপজেলার ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কের জায়গা দখল করে যার যা খুশি তাই করছে। এতে একদিকে যেমন মহাসড়কের শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য হারাচ্ছে অন্যদিকে পথচারীরা হচ্ছে মোটা দাগে ভোগান্তির শিকার। কেউ কেউ মনে করছেন দখলকৃত মহাসড়কের জায়গাগুলো যেনো মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠছে।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায় মহাসড়কের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে সড়ক ও জনপদ সওজের জায়গা দখল করে গড়ে তুলা হয়েছে অবৈধ বালুগদি। এছাড়াও হরেক রকম ব্যবসা। এসকল অবৈধ বালুগদি গড়ে উঠার ফলে ফুটপাত দিয়ে হাঁটাচলা পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে। ফুটপাত দখল হওয়ার ফলে পথচারীদের হাঁটতে হচ্ছে ব্যস্ততম মহাসড়ক দিয়ে। এতে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। নষ্ট হচ্ছে সড়কের শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য। প্রভাবশালীদের এধরণের কাজে সংশ্লিষ্টদের দৃশ্যমান তেমন কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। এসব অবৈধ বালুগদির মালিকদের বিষয়ে জানেন না সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয়রাও ভয়ে এসকল বিষয়ে মুখ খুলতে চায় না। সড়ক ও জনপদ সওজের সংশ্লিষ্টদের মাসোহারা দিয়ে এধরণের কাজ করছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার থেকে শ্রীপুর পৌরসভার মাধখলা বাজার পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার এলাকার মহাসড়কের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট দখল করে বসানো হয়েছে বালুগতি। বালু মজুদ করে চলছে রমরমা ব্যবসা। সিলেট থেকে বালু এনে মজুদ করা হচ্ছে মহাসড়কের এসকল পয়েন্টে। এমসি বাজার এলাকায় মহাসড়ক ও তার ফুটপাত দখল করে গড়ে তুলা হয়েছে বিরাট একটি বালুগদি। এছাড়াও জপ্তার পুকুর পাড়ে রয়েছে কয়েকটি বালুগদি। নয়নপুর এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি বালুগদি, জৈনা বাজার, রঙিলা বাজার, ১ নম্বর সিএন্ডবি বাজার এলাকায় গড়ে তুলা হয়েছে অসংখ্য বালু গদি। এসকল বালুগদি থেকে প্রতিনিয়ত বড়বড় ড্রামট্রাক মহাসড়কে পার্কিং করে হচ্ছে লোড আনলোড। মহাসড়কের ফুটপাত ছাড়িয়ে বেশ কয়েকটি বালুগদি মহাসড়কের লেন দখল করে গড়ে উঠেছে। মহাসড়কের ফুটপাত দখল করার ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে পথচারীরা। এতে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকু অনেকটা অনিরাপদ হয় উঠেছে দিন দিন। মহাসড়কটি বর্তমান সরকার চার লেনে উন্নীত করলেও এর পুরো সুবিধা এখনও ভোগ করতে পারছে না চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীরা। মহাসড়কের অধিকাংশ এলাকা দখল হয়ে যাওয়ায় এখন মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ বিপদজনক অবস্থায় পরিণত হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় নিয়মিত প্রাণহাণীর ঘটনাও ঘটছে।
এমসি বাজার এলাকার বাসিন্দা নাঈম ইসলাম বলেন, মহাসড়কের জায়গা দখল হয়ে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন শিল্প কারখানার গাড়ি সড়কের লেন দখল করে পার্কিং করে রাখে। এতে সড়ক সংকোচিত হয়ে অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। সড়কের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পয়েন্টে শতশত গাড়ি সড়কের লেন দখল করে পার্কিংয়ে থাকে। বালুগদি দিয়ে সড়কের বেশিরভাগ অংশ বন্ধ করে রেখেছে।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক কামরুল হাসান উদাহরণ টেনে বলেন, আমার বাড়িতে মাসের পর মাস ভাড়া থাকবেন। কিন্তু ভাড়া দিবেন না। এটা হতে পারে না। নিশ্চয়ই সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্টদের মাসোহারা দিয়ে এধরণের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। তাছাড়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। এসকল অবৈধ বালুগদি ব্যবসার মধ্যে সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্টদের ভাগ রয়েছে। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে অবৈধ ব্যবসা করতে সুযোগ করে দিচ্ছে সড়ক ও জনপদ সওজের সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পথচারীরা বলেন, মহাসড়কে এভাবে বালু ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠবে তা চিন্তাও করতে পারিনি। প্রভাবশালীরা এখানে জড়িত। এদিক দিয়ে চলাচল যেনো জীবনটা হাতে নিয়ে চলা।
মাওনা হাইওয়ে থানার দায়িত্বে থাকা (টিআই) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মহাসড়কের শৃঙ্খলা সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে হাইওয়ে পুলিশ সাধ্যমতো চেষ্টা করছে সব সময়। অবৈধ বালুগদি সরিয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে এগুলো সরিয়ে দিয়ে সড়কের শৃঙ্খলা সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে পারবো। বালুগদি মালিক কারা এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, এবিষয়ে আমারা গোপনে তালিকা করছি সেগুলো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবো। অভিযান হলে নাম জানতে পারবেন।
গাজীপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মোহাম্মদ শরিফুল আলম বলেন, সড়ক ও জনপদ সওজের জায়গা জবরদখল করে গড়ে উঠা বালুগদি মালিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়া হবে। কোন অনিয়মের সঙ্গে আমাদের কোন কর্মকর্তা জড়িত নয়। নির্দিষ্ট কারো বিরুদ্ধে প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।