বাকেরগঞ্জ ( বরিশাল ) প্রতিনিধি।
বাকেরগঞ্জে বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়ক এবং নদী ও ভালের তীর ঘেষে গড়ে উঠেছে অবৈধ করাত কল।
সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিন এ করাত কলে চেরাই করা হচ্ছে গাছপালা। এতে হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য। আর অবৈধ করাত কলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ায় বাড়ছে দুর্ঘটনার শঙ্কা। এ সমস্ত করাত কল বা স্ব- মিলের নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র। নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যাবস্থা।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে লক্ষীপাশা ভাঙ্গা পোল নামক স্থানে মহাসড়কের দুই কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় দশটি স’মিল বসিয়ে অবৈধভাবে যুগের পর যুগ ধরে গাছ চেরাই করছেন করাত কলের মালিকরা। এতে একদিকে ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশের, অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। শুধু এই করাত কলই নয়। বাস স্ট্যান্ড থেকে কালিগঞ্জ বাজার ও পাদ্রীশিবপুর থেকে নিয়ামতি বাজার পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কে ১০ টি উপরে অবৈধ করাত কল গড়ে উঠেছে। এছাড়াও উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নে বাণিজ্যিকভাবে শতাধিক করাত কলের নেই কোনো লাইসেন্স কিংবা ফায়ার সার্ভিসের অনুমতি। সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিনের পর দিন এসব করাত কলে স্থানীয় গাছ চেরাই করায় হুমকির মুখে পরিবেশ।
লক্ষ্মীপাশা ভাঙা পোল ভাই ভাই মিল মালিক নাসির উদ্দিন বলেন, আমার লাইসেন্স নেই। তবে করার চেষ্টা চালাচ্ছি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পাওয়ায় একটু জটিলতার দেখা দিয়েছে। আমি ব্যবসা করি ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে মিল চালাচ্ছি। এ জন্য করাত কলের লাইসেন্সের আবেদনও করতে পারছি ন।
মধ্য মহেশপুর স’মিলের মালিক বলেন, আমার স’মিলের ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। আর বন বিভাগের লাইসেন্সের জন্য দরখাস্ত করেছি। এখনও হাতে পাইনি।
স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বন বিভাগের নাকের ডগায় বসে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অবাধে গাছপালা কাটছে। সরকারি অনুমতি ব্যতীত এসব করাত কল মালিকদের বিরুদ্ধে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এতে পরিবেশের ভারসাম্য ফিরবে, অন্যদিকে সরকারের রাজস্বও বাড়বে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগকে ম্যানেজ করে এসব অবৈধ করাত কলে দেয়া হয়েছে সংযোগ। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছে তারা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, পশ্চিম লক্ষ্মীপাশা দুধল মৌ করাত কলটিতে বন বিভাগ থেকে লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৪ তারিখ। তাদের লাইসেন্স মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৪ তারিখ। লাইসেন্স মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে তাও প্রায় বছরখানে। এভাবেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় লাইসেন্সবিহীন করাত কল চালিয়ে আসছে অবৈধ করাত কল মালিকরা।
জানা যায়, বাকেরগঞ্জ বন বিভাগের বর্তমান রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল্লা আল মামুন ২০১২ সালে বরিশালে বাকেরগঞ্জ উপজেলায় উপজেলা বন কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্বে ছিলেন। তার রেঞ্জ কর্মকার্তা হিসেবে পদন্নতি হলে বরিশাল সদর ও বাকেরগঞ্জ উপজেলার রেঞ্জের দায়িত্বে রয়েছেন এখন। এরপর থেকে উপজেলা বন কর্মকর্তা হিসেবে কেউ যোগদান করলেও সব কার্যক্রমেই আব্দুল্লা আল মামুন নিজেই হস্তক্ষেপ করেন। অবৈধ করাত কলের মালিকদের সাথে অর্থ লেনদেনের বিনিময়ে তিনি অবৈধ করাত করলের লাইসেন্স এর ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেন না। এছাড়াও অগ্নিনির্বাপক ব্যাবস্থা না থাকার পরও ফায়ার সার্ভিস এর পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
উপজেলা বন কর্মকর্তা মনিন্দ্রনাথ জানান, কিছু করার কল পরিবেশ থেকে ছাড়পত্র পাইনি। এবং কিছু করার কলের লাইসেন্স মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। তবে এই বিষয়টা দেখেন রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল্লা আল মামুন।
বর্তমান রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল্লা আল মামুন বলেন, অবৈধ করাত কলের বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।