ঢাকা ০৮:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।। বরিশালে সুলভ মুল্যে বসুন্ধরা পন্য পেয়ে ক্রেতারা খুশী। বাবুগঞ্জে স্কুল ছুটির পরে বাড়ি যাওয়ার সময় দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজ। আমার বাবাও মায়ের দেওয়া উপদেশ বড়দের সম্মান কর ছোটদের স্নেহ করো। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখী নারী উদ্যোক্তা মেলা শুরু। টাঙ্গাইলে তিনদিন ব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা শুরু বাকেরগঞ্জে প্রধান মন্ত্রীর ছবি ব্যঙ্গক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট করায় হায়দর সিপাই গ্রেফতার। বাকেরগঞ্জে স্ত্রীর দায়ের কৃত মামলায় স্বামী পারভেজ খান গ্রেফতার।। বাকেরগঞ্জে তরমুজ চাষী হত্যা চেষ্টা মামলার আসামী রুদ্র গাজী গ্রেফতার টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড অনুষ্ঠিত

বাকেরগঞ্জের আবদুল জব্বার (৩৫) বছর বিদেশের মাটিতে জেল খেটে দেশে আসলেন। (বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা তাকে চিনেন না )

( বাকেরগঞ্জ) বরিশাল। প্রতিনিধি

বাকেরগঞ্জের দুধল গ্রামের আবদুল জব্বারের রাইস মিল (ধান ভাঙানোর যন্ত্র) ছিল। সেই রাইস মিল বিক্রি করে সব টাকা তুলে দেন দালালের হাতে। স্বপ্ন ছিল ইরান যাবেন। দালাল ভারত ও পাকিস্তান হয়ে তাঁকে ইরানে পাঠানোর চেষ্টা করেন। তবে পাকিস্তানে গিয়ে আটকা পড়েন তিনি। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় দীর্ঘ ৩৫ জেল খাটেন।

একটু স্বচ্ছলতার আশায় ১৯৮৮ সালে আবদুল জব্বার যখন ইরান যাওয়ার জন্য দেশ ছেড়েছিলেন, তখন বড় ছেলে আউয়াল আকনের বয়স ছিল মাত্র তিন বছর, মেয়ে নূপুর ছিল দুই বছরের। আর ছোট ছেলে কামাল হোসেন তখনো জন্মায়নি; এর তিন মাস পর সে পৃথিবীতে আসে। সেই কামাল বড় হয়ে বাবাকে দেশে ফেরানোর জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন।

সকল সমস্যার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে গত ২০/১০/২০২৩ ইং শুক্রবার দেশে ফেরেন আবদুল জব্বার। এবং দীর্ঘ তিন দশক পর বাবা ও ছেলের সাক্ষাৎ হল।

দীর্ঘ দিন পাকিস্তানে থাকার কারণে আবদুল জব্বার উর্দু ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে বাংলায় কথা শুরু করলেও একটু পর পরই উর্দু চলে আসছিল তাঁর মুখে।

আবদুল জব্বারের ছেলে কামাল জানালেন, কথা বলতে গেলে তাঁর বাবা বাংলায় আর কথা বলতে পারছেন না।
কামাল তাঁর বাবাকে দেশে ফেরাতে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির সহায়তা নিয়েছেন। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির মাধ্যমে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি চালাচালির পর দেশে ফিরতে পারেন আবদুল জব্বার।

কামাল বললেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে বাবাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ফিরলেন ২০ অক্টোবর। বাবা দেশে ফিরবেন, বাবাকে দেখব—এ অস্থিরতায় শেষ দিকে আর দিন পারই হতে চাচ্ছিল না! জন্মের ৩৫ বছর পর বাবাকে প্রথম দেখলাম। সে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না!’

কামাল জানালেন, তাঁর বাবা দেশ ছাড়ার পর থেকে মা রাশেদা বেগম অনেক কষ্টে তাঁদের দুই ভাই ও এক বোনকে বড় করেছেন। বোনের বিয়ে দিয়েছেন।
কামাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতকোত্তর করেছেন। সাভারের নবীনগরে বাসা ভাড়া করে সেখানেই মাকে নিয়ে থাকেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের কোচিং করান। বড় ভাই আউয়াল গাজীপুরে কাজ করছেন। আবদুল জব্বার দেশে ফেরার পর নবীনগরে আছেন।

কামাল বললেন, ‘বাবা দেশ ছাড়ার তিন মাস পর আমি পৃথিবীতে আসি। বাবার স্পর্শ পর্যন্ত পাইনি! তিন সন্তান নিয়ে মা আমার দুঃখের সাগরে হাবুডুবু খান। প্রথমে বাসার আসবাবপত্র বিক্রি করে দেন। মা মানুষের বাসায় কাজ করে এক কেজি চাল পেতেন। তা দিয়ে সংসার চলত। নিরুপায় হয়ে মা বড় ভাইকে স্থানীয় এক লোকের কাছে পেটে-ভাতে চুক্তিতে কাজে দেন। ভাইয়ের বয়স তখন মাত্র ৯–১০ বছর বয়স। কাজে ভুল হলেই ওই লোক ভাইকে মারধর করতেন। ভাইয়ের পড়াশোনা হলো না। কত কষ্ট যে ভাই আমার করেছে, তা ভাষায় প্রকাশ অসম্ভব! একদিন অনেক মারধর করার পর ভাই পালাল। পরে বরিশালের রহমতপুরের একটা হোটেল পেটে-ভাতে কাজ করত।’

নিজের প্রসঙ্গে কামাল জানান, বড় ভাই যে বাসা থেকে পালিয়ে যান, সেই বাসায় তাঁকেও রান্নার কাজসহ মাছ চাষ, গরু লালন-পালন, কলার বাগানে কাজ, সবজি চাষসহ কত কাজ যে করতে হয়েছে, তার হিসাব নেই! কাজে সামান্য ভুল হলে তিনিও মার খেতেন। একদিন ডিম ভাজি করতে বেশি তেল দিয়েছেন, এ অভিযোগে তাঁকে লাথি মারলে কয়েক ফুট দূরে গিয়ে পড়েছিলেন। তখন ‘মা’ বলে একটা চিৎকার দিয়েছিলেন!

কামাল বলেন, ‘আকাশে প্লেন যেত যখন, অনেক মানুষ দৌড়ে বের হতো দেখার জন্য। আমিও যেতাম, কিন্তু লোকজন আমায় নিয়ে উপহাস করে বলত তোর বাবা যাচ্ছে প্লেনে করে!’

একদিন কামাল ও সেই বাড়ি পালাতে বাধ্য হন। মায়ের এক খালার বাড়িতে আশ্রয় নেন।
মায়ের এক খালার বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে দিনের বেলা কাজ করে রাতে পড়াশোনা করতেন। স্কুলে ভর্তির প্রথম দিকে ফেল করলেও পরে আস্তে আস্তে ভালো ফল করতে থাকেন। ২০০২ সালে মায়ের কাছে ফিরে এসে গ্রামের স্কুলে ভর্তি হন। অন্যের বাড়িতে জায়গির থেকে, শিক্ষার্থী পড়িয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতেন। ২০০৯ সালে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ–৫ পান। তখন পত্রিকায় কামালের ছবি ছাপা হয়েছিল।

কামাল জানালেন, পাঁচ বছর আগে মায়ের ক্যানসার ধরা পড়ে। কোনো রকমে মায়ের চিকিৎসা চলছে। বললেন, ‘ভেবেছিলাম বাবা হয়তো বেঁচে নেই। এখন প্রায় ৭০ বছর বয়সী বাবাকে কাছে পেয়ে পৃথিবীটা অনেক সুন্দর হয়ে গেছে। বাবাও শারীরিকভাবে খুব অসুস্থ।’

আবদুল জব্বার বিদেশ যাওয়ার পর ছয় মাসের মাথায় পরিবারকে জানাতে পেরেছিলেন, তিনি খুব বিপদের মধ্যে আছেন। এরপর ১৫ বা ২০ বছর আগে একবার করাচি থেকে উর্দুতে একটি চিঠি এসেছিল, কিন্তু সে চিঠি কেউ পড়তে পারেননি। এরপর সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। কোনোভাবেই দেশে ফিরতে পারছিলেন না আবদুল জব্বার।

কামাল জানালেন, তাঁর চাচা আবদুল রশীদ মারা গেছেন, এ খবর বাবা জানতেন না। গত ৮ জানুয়ারি বাবা অন্য একজনকে দিয়ে বাংলায় চিঠি লিখিয়ে চাচার ঠিকানায় পাঠান। সেই চিঠিতে থাকা একটি মঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেন কামাল। তবে সেই নম্বরে কল ঢুকছিল না। এরপর কামাল পাকিস্তানের ইংরেজি ডন পত্রিকার ফেসবুক পেজে এ চিঠির কথা উল্লেখ করে লেখেন, কেউ তাঁকে সহায়তা করতে পারবেন কি না। তখন এক পাকিস্তানি চিকিৎসক সহায়তায় এগিয়ে আসেন। বাংলাদেশে পাঠানো চিঠিতে টেলিফোন নম্বরে একটি শূন্য বেশি ছিল বলে কামাল যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। এরপর ওই চিকিৎসক আবদুল জব্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে সার্বিকভাবে সহায়তা করেন।

কামাল বলেন, ‘ব্র্যাকের সহায়তায় ২৫ বছর পর সৌদিপ্রবাসী আবুল কাশেমের সন্ধান পেয়েছেন তাঁর সন্তানেরা—এমন একটি ভিডিও দেখেছিলাম। তাই ব্র্যাকের কাছে বাবাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সহায়তা চাই। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির রায়হান কবির নামের একজন যোগাযোগ করেন। এরপর তো বাবাকে ফেরত পেলাম। যাঁরা বাবাকে দেশে ফিরতে সহায়তা করেছেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।।

বাকেরগঞ্জের আবদুল জব্বার (৩৫) বছর বিদেশের মাটিতে জেল খেটে দেশে আসলেন। (বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা তাকে চিনেন না )

আপডেট টাইম ০৮:২৩:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ অক্টোবর ২০২৩

( বাকেরগঞ্জ) বরিশাল। প্রতিনিধি

বাকেরগঞ্জের দুধল গ্রামের আবদুল জব্বারের রাইস মিল (ধান ভাঙানোর যন্ত্র) ছিল। সেই রাইস মিল বিক্রি করে সব টাকা তুলে দেন দালালের হাতে। স্বপ্ন ছিল ইরান যাবেন। দালাল ভারত ও পাকিস্তান হয়ে তাঁকে ইরানে পাঠানোর চেষ্টা করেন। তবে পাকিস্তানে গিয়ে আটকা পড়েন তিনি। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় দীর্ঘ ৩৫ জেল খাটেন।

একটু স্বচ্ছলতার আশায় ১৯৮৮ সালে আবদুল জব্বার যখন ইরান যাওয়ার জন্য দেশ ছেড়েছিলেন, তখন বড় ছেলে আউয়াল আকনের বয়স ছিল মাত্র তিন বছর, মেয়ে নূপুর ছিল দুই বছরের। আর ছোট ছেলে কামাল হোসেন তখনো জন্মায়নি; এর তিন মাস পর সে পৃথিবীতে আসে। সেই কামাল বড় হয়ে বাবাকে দেশে ফেরানোর জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন।

সকল সমস্যার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে গত ২০/১০/২০২৩ ইং শুক্রবার দেশে ফেরেন আবদুল জব্বার। এবং দীর্ঘ তিন দশক পর বাবা ও ছেলের সাক্ষাৎ হল।

দীর্ঘ দিন পাকিস্তানে থাকার কারণে আবদুল জব্বার উর্দু ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে বাংলায় কথা শুরু করলেও একটু পর পরই উর্দু চলে আসছিল তাঁর মুখে।

আবদুল জব্বারের ছেলে কামাল জানালেন, কথা বলতে গেলে তাঁর বাবা বাংলায় আর কথা বলতে পারছেন না।
কামাল তাঁর বাবাকে দেশে ফেরাতে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির সহায়তা নিয়েছেন। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির মাধ্যমে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি চালাচালির পর দেশে ফিরতে পারেন আবদুল জব্বার।

কামাল বললেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে বাবাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ফিরলেন ২০ অক্টোবর। বাবা দেশে ফিরবেন, বাবাকে দেখব—এ অস্থিরতায় শেষ দিকে আর দিন পারই হতে চাচ্ছিল না! জন্মের ৩৫ বছর পর বাবাকে প্রথম দেখলাম। সে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না!’

কামাল জানালেন, তাঁর বাবা দেশ ছাড়ার পর থেকে মা রাশেদা বেগম অনেক কষ্টে তাঁদের দুই ভাই ও এক বোনকে বড় করেছেন। বোনের বিয়ে দিয়েছেন।
কামাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতকোত্তর করেছেন। সাভারের নবীনগরে বাসা ভাড়া করে সেখানেই মাকে নিয়ে থাকেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের কোচিং করান। বড় ভাই আউয়াল গাজীপুরে কাজ করছেন। আবদুল জব্বার দেশে ফেরার পর নবীনগরে আছেন।

কামাল বললেন, ‘বাবা দেশ ছাড়ার তিন মাস পর আমি পৃথিবীতে আসি। বাবার স্পর্শ পর্যন্ত পাইনি! তিন সন্তান নিয়ে মা আমার দুঃখের সাগরে হাবুডুবু খান। প্রথমে বাসার আসবাবপত্র বিক্রি করে দেন। মা মানুষের বাসায় কাজ করে এক কেজি চাল পেতেন। তা দিয়ে সংসার চলত। নিরুপায় হয়ে মা বড় ভাইকে স্থানীয় এক লোকের কাছে পেটে-ভাতে চুক্তিতে কাজে দেন। ভাইয়ের বয়স তখন মাত্র ৯–১০ বছর বয়স। কাজে ভুল হলেই ওই লোক ভাইকে মারধর করতেন। ভাইয়ের পড়াশোনা হলো না। কত কষ্ট যে ভাই আমার করেছে, তা ভাষায় প্রকাশ অসম্ভব! একদিন অনেক মারধর করার পর ভাই পালাল। পরে বরিশালের রহমতপুরের একটা হোটেল পেটে-ভাতে কাজ করত।’

নিজের প্রসঙ্গে কামাল জানান, বড় ভাই যে বাসা থেকে পালিয়ে যান, সেই বাসায় তাঁকেও রান্নার কাজসহ মাছ চাষ, গরু লালন-পালন, কলার বাগানে কাজ, সবজি চাষসহ কত কাজ যে করতে হয়েছে, তার হিসাব নেই! কাজে সামান্য ভুল হলে তিনিও মার খেতেন। একদিন ডিম ভাজি করতে বেশি তেল দিয়েছেন, এ অভিযোগে তাঁকে লাথি মারলে কয়েক ফুট দূরে গিয়ে পড়েছিলেন। তখন ‘মা’ বলে একটা চিৎকার দিয়েছিলেন!

কামাল বলেন, ‘আকাশে প্লেন যেত যখন, অনেক মানুষ দৌড়ে বের হতো দেখার জন্য। আমিও যেতাম, কিন্তু লোকজন আমায় নিয়ে উপহাস করে বলত তোর বাবা যাচ্ছে প্লেনে করে!’

একদিন কামাল ও সেই বাড়ি পালাতে বাধ্য হন। মায়ের এক খালার বাড়িতে আশ্রয় নেন।
মায়ের এক খালার বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে দিনের বেলা কাজ করে রাতে পড়াশোনা করতেন। স্কুলে ভর্তির প্রথম দিকে ফেল করলেও পরে আস্তে আস্তে ভালো ফল করতে থাকেন। ২০০২ সালে মায়ের কাছে ফিরে এসে গ্রামের স্কুলে ভর্তি হন। অন্যের বাড়িতে জায়গির থেকে, শিক্ষার্থী পড়িয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতেন। ২০০৯ সালে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ–৫ পান। তখন পত্রিকায় কামালের ছবি ছাপা হয়েছিল।

কামাল জানালেন, পাঁচ বছর আগে মায়ের ক্যানসার ধরা পড়ে। কোনো রকমে মায়ের চিকিৎসা চলছে। বললেন, ‘ভেবেছিলাম বাবা হয়তো বেঁচে নেই। এখন প্রায় ৭০ বছর বয়সী বাবাকে কাছে পেয়ে পৃথিবীটা অনেক সুন্দর হয়ে গেছে। বাবাও শারীরিকভাবে খুব অসুস্থ।’

আবদুল জব্বার বিদেশ যাওয়ার পর ছয় মাসের মাথায় পরিবারকে জানাতে পেরেছিলেন, তিনি খুব বিপদের মধ্যে আছেন। এরপর ১৫ বা ২০ বছর আগে একবার করাচি থেকে উর্দুতে একটি চিঠি এসেছিল, কিন্তু সে চিঠি কেউ পড়তে পারেননি। এরপর সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। কোনোভাবেই দেশে ফিরতে পারছিলেন না আবদুল জব্বার।

কামাল জানালেন, তাঁর চাচা আবদুল রশীদ মারা গেছেন, এ খবর বাবা জানতেন না। গত ৮ জানুয়ারি বাবা অন্য একজনকে দিয়ে বাংলায় চিঠি লিখিয়ে চাচার ঠিকানায় পাঠান। সেই চিঠিতে থাকা একটি মঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেন কামাল। তবে সেই নম্বরে কল ঢুকছিল না। এরপর কামাল পাকিস্তানের ইংরেজি ডন পত্রিকার ফেসবুক পেজে এ চিঠির কথা উল্লেখ করে লেখেন, কেউ তাঁকে সহায়তা করতে পারবেন কি না। তখন এক পাকিস্তানি চিকিৎসক সহায়তায় এগিয়ে আসেন। বাংলাদেশে পাঠানো চিঠিতে টেলিফোন নম্বরে একটি শূন্য বেশি ছিল বলে কামাল যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। এরপর ওই চিকিৎসক আবদুল জব্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে সার্বিকভাবে সহায়তা করেন।

কামাল বলেন, ‘ব্র্যাকের সহায়তায় ২৫ বছর পর সৌদিপ্রবাসী আবুল কাশেমের সন্ধান পেয়েছেন তাঁর সন্তানেরা—এমন একটি ভিডিও দেখেছিলাম। তাই ব্র্যাকের কাছে বাবাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সহায়তা চাই। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির রায়হান কবির নামের একজন যোগাযোগ করেন। এরপর তো বাবাকে ফেরত পেলাম। যাঁরা বাবাকে দেশে ফিরতে সহায়তা করেছেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।