রাজু আহমেদ, গজারিয়া প্রতিনিধিঃ
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বাজার উন্নয়নের নামে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের জায়গা দখল করার অভিযোগ উঠেছে ৪নং ভবেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহিদ মোহাম্মদ লিটনের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের অভিযোগ শুধু ইউনিয়ন ভূমি অফিসের জায়গা নয় বরাদ্দের টাকা খরচ দেখাতে নাম সর্বস্ব প্রকল্প দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী,২০২১-২০২২ অর্থবছরে ভবেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহিদ মোহাম্মদ লিটন
হাট-বাজার উন্নয়নের ১৫ শতাংশ হিসেবে প্রাপ্ত ৩৩ লক্ষ ১৯ হাজার ৭৭৬ টাকা খরচ করেছেন ১৯ টি প্রকল্প দেখিয়ে যার মাত্র ৩টি বাজার উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট। অন্যদিকে বিশেষ বরাদ্দ হিসেবে হাট বাজার উন্নয়নের আরো ৫ শতাংশ হিসেবে প্রাপ্ত ৭ সাত লক্ষ টাকা দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে খরচ করেছেন তিনি যার একটিও বাজার উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। অর্থাৎ হাট-বাজার উন্নয়নের কাজে বরাদ্দ পাওয়া ৪০ লক্ষ ১৯ হাজার ৭৭৬টাকার মধ্যে মাত্র সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা তিনি দেখিয়েছেন বাজার উন্নয়নের কাজে। বাকীটা রাস্তাঘাট, মসজিদ উন্নয়ন, ইউনিয়ন পরিষদের জায়গায় বালি ভরাট ও ইউনিয়ন পরিষদের জন্য কম্পিউটার প্রিন্টার বাবদ খরচ দেখিয়েছেন তিনি।
খবর নিয়ে জানা যায়, তিনি যে সকল রাস্তাঘাট এবং উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অর্থ বরাদ্দ দেখিয়েছেন তার অধিকাংশই ভুয়া। স্থানীয়দের অভিযোগ নাম সর্বস্ব প্রকল্প দেখিয়ে এই টাকার অধিকাংশ আত্মসাৎ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান।
এদিকে হাট-বাজার স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১৮এর পরিপত্র মতে হাট-বাজার হইতে প্রাপ্ত ইজারালদ্ধ অর্থ ব্যবস্থাপনা ও বন্টন বিধি অনুযায়ী ইজারা থেকে প্রাপ্ত মোট টাকার ১৫ শতাংশ ব্যয় করতে হবে শুধুমাত্র হাট বাজারের উন্নয়নে। প্রয়োজন থাকলে এখাতে ২৫ শতাংশ অর্থ ও বরাদ্ধ করা যাবে তবে কোনোভাবেই এই অর্থ হাট-বাজার পেরিফেরির বাহিরে কোন কাজে খরচ করা যাবে না।
সরেজমিনে সোমবার ( ৪ সেপ্টেম্বর) ভবেরচর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শাকসবজি এবং মাছ বিক্রি করার জন্য সেড তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি সেডগুলো আগেই তৈরি করেছিল সম্প্রতি কলামের মাথায় দেড় ফুট লম্বা অ্যাঙ্গেল বসিয়ে আর চালার উপরে টিনগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে অদ্ভুত এই উন্নয়ন কতটুকু টেকসই এ নিয়ে প্রশ্ন সবার মনে।
বাজারে সবজি বিক্রেতা আব্দুস সাত্তার বলেন, এগুলো ইউনিয়ন ভূমি অফিসের জায়গা কিনা তা আমরা জানিনা তবে বহু বছর ধরে এখানে এভাবেই ব্যবসা করছি। কিছুদিন আগে কলামের উপরে এঙ্গেল বসিয়ে শেডগুলো কিছুটা উচু করা হয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে ভবেরচর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা রাসেলুর রহমান বলেন,এস.এ. ২৮৭নং দাগে ৪৬ শতাংশ জমি বাজার হিসেবে দেখানো আছে। আর.এস. রেকর্ডেও জায়গার পরিমাণ অপরিবর্তিত আছে। এই ৪৬ শতাংশ জায়গা বর্তমানে চান্দিনা ভিটা হিসেবে বাজারে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে সাপ্তাহিক যে পশুর হাট বসে তার জন্য নির্ধারিত কোন জায়গা নেই এই বাজারে। এদিকে বাজারের মাঝে অবস্থিত ভবেরচর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের জন্য এস.এ. রেকর্ড অনুযায়ী ৮৩ শতাংশ এবং আর.এস. রেকর্ড অনুযায়ী ৭০ মতো শতাংশ জায়গা রয়েছে। আমাদের দখলে পাঁচ/ছয় শতাংশর মত জায়গা রয়েছে বাকি জায়গা বাজার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমান ভবেরচর বাজারের মাছ বাজার এবং সবজি বাজারের যে সেড রয়েছে তা ইউনিয়ন ইউনিয়ন পরিষদের জায়গায়। জায়গাগুলো দখলমুক্ত করতে আমরা চেষ্টা করছি।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জি.এম. রাশেদুল ইসলাম বলেন, রেকর্ড অনুযায়ী ভবেরচর বাজারের নামে অল্প কিছু জায়গা রয়েছে। কিন্তু আপনারা বর্তমানে যে বাজারটি দেখছেন তার অধিকাংশই ইউনিয়ন ভূমি অফিস এবং সরকারি খাস জায়গায়। সাপ্তাহিক হাট হিসেবে যেই জায়গাটি ব্যবহার করা হচ্ছে সেটি মূলত খাস পুকুর। হাট হিসেবে ব্যবহারের জন্য ভবেরচরে রেকর্ডীয় কোন ভূমি নাই। সাম্প্রতিককালে বিষয়টি নিয়ে বেশ জটিলতা তৈরি হয়েছে। আমরা বিষয়টি সমাধানে চেষ্টা করছি।
বিষয়টি সম্পর্কে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান সাহিদ মোহাম্মদ লিটন বলেন, আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রকল্পের প্রস্তাব দাখিল করেছি তারাই সেটি পাস করেছে। ভূমি অফিসের জায়গা হলে তারাই ভালো জানতো। কয়েকটি প্রকল্পের নামে আমি অর্থ আত্মসাৎ করেছি আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন সংশ্লিষ্ট খাতে আমাকে কোন অর্থই বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। হাট বাজারের নামে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে সে টাকা দিয়ে অন্য কোন উন্নয়ন কাজ করা যাবে না এরকম কোন নিয়ম আমার জানা নেই। আমি ইউনিয়নের উন্নয়নের কাজে টাকা খরচ করেছি।
হাট বাজারের নামে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকা সত্ত্বেও কিভাবে উপজেলা প্রশাসন থেকে অর্থ বরাদ্দ করা হলো এই প্রশ্নের জবাবে গজারিয়া কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, আমি এই উপজেলায় এসেছি অল্প কয়েকদিন। বিষয়টি আমার জানা ছিল না, স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমি বিষয়টি জেনেছি। ভূমি অফিসের দখলকৃত জায়গা দখলমুক্ত করতে দ্রুতই ব্যবস্থা নিব আমরা। অন্যদিকে সাপ্তাহিক পশুর হাটের জন্য খাস পুকুরের জায়গাটি রেকর্ড পরিবর্তন করে হাটের নামে দেওয়ার চেষ্টা করছি।
ক্যাপশনঃ ভবেরচর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা সেড।