মোঃ জাহিদুল ইসলাম (বাকেরগঞ্জ) বরিশাল
উপজেলায় গ্রামাঞ্চলে মুদি দোকানে অহরহ বিক্রি হচ্ছে জীবনরক্ষাকারী এন্টিবায়োটিক ওষুধ। বিশেষ করে গ্রাম বা মহল্লার দোকানগুলোতে দীর্ঘদিন যাবৎ এক শ্রেনীর মুদী দোকানদার এন্টিবায়োটিকের মত গুরুত্বপূর্ণ এই ঔষধ বিক্রি করছে।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার প্রায় সবক’টি ইউনিয়নেরই মুদি দোকানের মধ্যে এ অবস্থা চলে আসছে।
উপজেলার মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য উপজেলা পর্যায়ে একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৭ টি উপ স্বাস্হ্য কেন্দ্র, ৫০ টি কমিউনিটি ক্লিনিক যার মধ্যে ৪১ টি চালু এবং অনেক গুলো প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতাল চালু আছে। এবং অসংখ্য ওষুধের দোকানসহ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান থাকার পরও কেন এই সব জীবনরক্ষাকারী ওষুধ মুদির দোকানে বিক্রি হচ্ছে সেটির সঠিক উত্তর দিতে পারেনি সূশীল সমাজ বা এর সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো মহল। অথচ এসব দোকানে দামি দামি এন্টিবায়োটিক সহ হাই প্রেসারের অনেক মূল্যবান ওষুধ তারা মজুত রেখে না বুঝেই বিক্রি করছে।
গ্রামের এসব দোকানের মালিক প্রায়ই অশিক্ষিত বা স্বল্প শিক্ষিত। এরা এন্টিবায়োটিক ঔষধ কোন ক্ষেএে সঠিক প্রয়োগ করতে হবে তা জানে না। তাছাড়া এসব ঔষধ একমাত্র রেজিষ্ট্রার্ড ডাঃ ছাড়া কেউ দিতে পারবে না। কিন্তুু না জেনেই এই সব এন্টিবায়োটিক ঔষধ দেদারছে বিক্রি হচ্ছে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
এব্যাপারে বাকেরগঞ্জ উপজেলার কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতির সভাপতি মিজান মল্লিক জানান এই সব মুদি দোকানে ঔষধ বিক্রির কোন বৈধতা নাই। মানুষ না বুঝে অনেক সময় এদের কাছ থেকে ঔষধ কিনে খায়। এই সব ঔষধের সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এবং রোগের ধরন না বুঝে ঔষধের মাএাতিরিক্ত প্রয়োগ হওয়ায় রোগীর অবস্থা ভালোর চাইতে আরও জটিল হয়। এদের কারনে প্রকৃত ফার্মেসীর মালিক বা ঔষধ ব্যাবসায়ীরা সমস্যায় পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রাম থেকে উপজেলা সদর কিংবা বড় হাট বাজার দূরে হওয়ার কারণে মুদি দোকানদাররা এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। মুদির দোকানের পাশাপাশি, এ চিত্র চা-দোকান, টং দোকান ও পানের দোকানেও পরিলক্ষিত হয়।।
উপজেলার গারুরিয়ার সাহেব পুর সাহেবের হাটের ঔষধ ব্যবসায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক মাওঃ নুরুল আমিন মৃধা বলেন গ্রামের অধিকাংশ মুদি দোকান নিয়ম বিধি বহির্ভূত ভাবে সাধারণত ঔষধের পাশাপাশি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ঔষধ বিক্রি করে থাকে।এবং দেখা যায় নাম সর্বস্ব কোম্পানির ঔষধ। এদের মান নিয়ন্ত্রত ঔষধের কারনে গ্রামে ভালো মানুষও অনেক সময় মারাত্মক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। অনতিবিলম্ব এইসব মুদী দোকানের ভূঁইফোড় হাতুরে চিকিৎসকদের হাত থেকে সাধারণ মানুষদের নিরাপদ রাখা এখন সময়ের দাবি।
এই সমস্ত মুদী দোকানে ঔষধের পাশাপাশি স্যানিটারি ন্যাপকিন, প্যাম্পাস ও ব্যান্ডেজ সামগ্রী, জন্ম নিয়ন্ত্রণের ট্যাবলেটসহ বেশকিছু পণ্য কিনতে পাওয়া যায়। এসব পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে তারা এমআরপির ধার ধারে না।
জানা যায়, জীবনরক্ষাকারী ওষুধের মধ্যে মুদি দোকানদাররা জ্বর, সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা, পেটের ব্যথা, মহিলাদের বিভিন্ন সমস্যা, বাতের ব্যথা ইত্যাদি রোগ থেকে শুরু করে কঠিন ও জটিল রোগের ওষুধও বিক্রি করে থাকেন।
তাদের বিক্রির তালিকায় যেসব ওষুধ সাধারণত দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিপ্রোসিনফ্লক্সাসিন, এজিথ্রোমাইসিন, ডাইক্লোফেনাক, সিটিরিজিন, রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল, কিটোরোলাক, এসিক্লোফেনাক, ন্যাপ্রোক্সেন, মেট্রোনিডাজল ইত্যাদি জেনেরিকে নামের বিভিন্ন গ্রুপের ওষুধ।
এ বিষয়ে কয়েকজন ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, অধিকাংশ মুদি দোকানে শুধুমাত্র জেনেরিকের ওষুধ পাওয়া যায় না। তারা অ্যান্টিবায়োটিক, হাই প্রেসার, ডায়াবেটিক, সরকারি ওষুধসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ বিক্রি করে থাকেন।
এইসব মুদী দোকানে যাইয়া রোগের লক্ষন বললেই ঔষধ দিয়া দেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুদি ও স্টেশনারী দোকানের মালিককে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন সাধারণ ছোট খাট রোগের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কিত ঔষধ বিক্রি করে থাকেন তারা। যেমন জ্বর, মাথা ব্যাথা, বাতের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যা, পেটের পীরা ইত্যাদি। এই সমস্ত রোগের জন্য ডাক্তারী অনুমতি ছাড়া ঔষধ বিক্রি করা যায় কিনা জানতে চাইলে কোন উওর পাওয়া যায়নি।