ঢাকা ০৭:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।। বরিশালে সুলভ মুল্যে বসুন্ধরা পন্য পেয়ে ক্রেতারা খুশী। বাবুগঞ্জে স্কুল ছুটির পরে বাড়ি যাওয়ার সময় দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজ। আমার বাবাও মায়ের দেওয়া উপদেশ বড়দের সম্মান কর ছোটদের স্নেহ করো। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখী নারী উদ্যোক্তা মেলা শুরু। টাঙ্গাইলে তিনদিন ব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা শুরু বাকেরগঞ্জে প্রধান মন্ত্রীর ছবি ব্যঙ্গক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট করায় হায়দর সিপাই গ্রেফতার। বাকেরগঞ্জে স্ত্রীর দায়ের কৃত মামলায় স্বামী পারভেজ খান গ্রেফতার।। বাকেরগঞ্জে তরমুজ চাষী হত্যা চেষ্টা মামলার আসামী রুদ্র গাজী গ্রেফতার টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড অনুষ্ঠিত

আবাসিক এলাকায় ঢালাই কারখানা : এলাকাবাসী ভুগছেন নানা রোগে, মারা গেছেন দুইজন /আবাসিক এলাকায় ঢালাই কারখানায় চরম দুর্ভোগে এলাকাবাসী

লিটন আহমেদ
কদমতলী থানার নতুন জুরাইন আলমবাগের আবাসিক এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত অবৈধ দুটি ঢালাই কারখানা দিনরাত চালুর কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন এলাকাবাসী। বিকট শব্দ ও এর বিষাক্ত কালো ধোয়ার কারণে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। শুধু তাই নয়, গ্যাস দ্বারা তীব্র আগুন দিয়ে ভাট্টির মাধ্যমে লোহা গলিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন জিনিস। ফলে এর তীব্র তাপ ছড়িয়ে পড়ছে কারখানা সংলগ্ন বাসা বাড়িতে। এছাড়া কারখানার ভাট্টিগুলো চলার কারণে সৃষ্টি হয় প্রকট ভূকম্পনের। ফলে আশেপাশের ভবনগুলোর দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। এই কারখানার কালো দূষিত ধোয়ার কারণে কারখানার আশেপাশে বসবাসরত শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ মানসিক ও স্নায়ুতন্ত্রসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, এরই মাঝে ক্যান্সারে মারা গেছেন দুইজন। অনেকে আবার বাড়ি বিক্রি করে চলে গেছেন অন্যত্র। কিন্তু ‘এগ্রো ফাউন্ডারি এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ’ (সাবেক ওয়াহেদ মেটাল) নামক ঢালাই কারখানার মালিক শুক্কুর মিয়াকে কারখানা বন্ধ করতে বা অন্যত্র সরিয়ে নিতে এলাকাবাসী একাধিকবার অনুরোধ করেন। কিন্তু শুক্কুর মিয়া কারখানা বন্ধ না করে উল্টো তাদেরকে নানাভাবে হেনস্থা করেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে লিখিত অভিযোগ করেন। এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তর ও সিটি কর্পোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস কারখানাটি এখান থেকে সরিয়ে অন্যত্র শিল্প সমৃদ্ধ এলাকায় নেওয়ার জন্য কারখানার মালিককে একাধিকবার নোটিশ দেন। কিন্তু এক যুগের বেশি হল কারখানার মালিক কারখানাটি অন্যত্র না সরিয়ে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে এলাকাবাসী প্রতিকার না পেয়ে চরম বিপাকে বসবাস করছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নতুন জুরাইন আলমবাগ হাজেরা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের সরু গলিতে ২১ নম্বর হোল্ডিংয়ে অবস্থিত একই মালিকের দুটি কারখানা। কারখানার আশেপাশে রয়েছে বহুতল ভবনসহ অনেক টিনশেড বাড়ি। এসব বাড়িতে বসবাস করেন প্রায় দুই হাজার মানুষ। কারখানা দুটির চারপাশে কয়েক ফুট উচু ইটের দেয়াল দিয়ে ঘেরা। উপরে রয়েছে টিন। রয়েছে চারটি ভাট্টি। এই ভাট্টিগুলোতে তীব্র গ্যাস দিয়ে প্রখর আগুনের তাপে লোহাকে গলিয়ে সেই গলিত লোহা পানির মত তরল করে নির্দিষ্ট ডাইসে ঢেলে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হয়। যদিও কিছুদিন যাবত কারখানাটি দিনে বন্ধ থাকে ও রাত্রে চালু থাকে। কিন্তু এখানের কালো ধোয়া ছড়িয়ে পড়ছে আশেপাশের ঘর বাড়িতে।

কারখানার সংলগ্ন ২২ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা সুবর্ণা জানান, দিনরাত কারখানা চলাকালীন সময়ে এর বিকট শব্দ, দূষিত কালো ধোয়ার কারণে আমাদের শিশু বাচ্চাসহ বয়স্করাও শ্বাসকষ্ট, কানের শ্রবণশক্তি কমে যাওয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ব্যাঘাত ঘটছে ঘুমেরও। এই কারখানার আগুন কয়েকদিন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তখন আমরা আতঙ্কে পড়ে যাই। এছাড়া সরু গলি আটকিয়ে গরম মালামাল পরিবহনে উঠানামা করায় শিশু বাচ্চারাসহ এলাকাবাসীকে সেই রাস্তা দিয়ে অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। পাশের আরেক বাসিন্দা গোলাম মাওলা মানিক অভিযোগ করেন, আমি প্রতিবাদ করায় আমাকে নানাভাবে হেনস্থা করেন কারখানার মালিক শুক্কুর মিয়া। তিনি আরো বলেন, এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস কারখানা সরানোর কয়েক দফা সময় বেঁধে দেন। কিন্তু কারখানাগুলো না সরিয়ে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন কারখানার মালিক শুক্কুর মিয়া। ১২ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা হযরত আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আবাসিক এলাকার মধ্যে এ ধরনের বিষাক্ত ধোয়ার কারখানা চলার কারণে অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। কারখানা যখন চলে তখন এর কম্পনে আমাদের ভবনও ঝাঁকুনি দেয় । আমাদের বাড়ির দেয়ালেও ফাটল ধরেছে। এছাড়া কারখানায় কখন যে আগুন লাগে আমাদের সেই আতঙ্কে থাকতে হয়। অন্যদিকে এলাকার মুরুব্বী মফিজ শেখ ও অভিযোগকারী আসাদ বেপারীসহ অনেকে জানান, এই কারখানার কারণে প্রায় দুই দশক ধরে এলাকাবাসীর নানা রোগসহ চরম দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। এছাড়া কারখানার কারণেই কয়েক বছর আগে এলাকার ১০ নম্বর বাড়ির মালিক জুম্মন ও ভাড়াটিয়া আলী নামে দুইজন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আমরা শুরু থেকেই এই কারখানা বন্ধ করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে লিখিত অভিযোগ করি। কিন্তু আজও কোন কাজ হয়নি।

জানা যায়, কারখানাটির নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও নেই সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন। আবাসিক এলাকায় এসব অবৈধ কারখানা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০০২) এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ এর পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে উল্লেখ আছে। শুধু তাই নয়, ২০০৭ সালে ও গত বছরের নভেম্বর মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর আলোকে এই কারখানাকে দুই মাসের মধ্যে কারখানার সকল স্থাপনা পরিবেশ সম্মত স্থানে স্থানান্তরের নির্দেশ প্রদান করেন। এবং কারখানার বিকট শব্দ বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধনী ২০১০) এর অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ এবং এর ক্ষতিপূরণ কারখানার মালিকের নিকট হতে আদায় করার বিধান রয়েছে। অন্যদিকে ২০০৭ সালে বর্তমান ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন অঞ্চল-১ থেকে জনস্বাস্থ্য হানিকর ও অবৈধ ঢালাই কারখানা বন্ধের নোটিশ দেওয়া হয়। সেসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকেও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।।

আবাসিক এলাকায় ঢালাই কারখানা : এলাকাবাসী ভুগছেন নানা রোগে, মারা গেছেন দুইজন /আবাসিক এলাকায় ঢালাই কারখানায় চরম দুর্ভোগে এলাকাবাসী

আপডেট টাইম ০৫:৪২:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০২৩

লিটন আহমেদ
কদমতলী থানার নতুন জুরাইন আলমবাগের আবাসিক এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত অবৈধ দুটি ঢালাই কারখানা দিনরাত চালুর কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন এলাকাবাসী। বিকট শব্দ ও এর বিষাক্ত কালো ধোয়ার কারণে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। শুধু তাই নয়, গ্যাস দ্বারা তীব্র আগুন দিয়ে ভাট্টির মাধ্যমে লোহা গলিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন জিনিস। ফলে এর তীব্র তাপ ছড়িয়ে পড়ছে কারখানা সংলগ্ন বাসা বাড়িতে। এছাড়া কারখানার ভাট্টিগুলো চলার কারণে সৃষ্টি হয় প্রকট ভূকম্পনের। ফলে আশেপাশের ভবনগুলোর দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। এই কারখানার কালো দূষিত ধোয়ার কারণে কারখানার আশেপাশে বসবাসরত শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ মানসিক ও স্নায়ুতন্ত্রসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, এরই মাঝে ক্যান্সারে মারা গেছেন দুইজন। অনেকে আবার বাড়ি বিক্রি করে চলে গেছেন অন্যত্র। কিন্তু ‘এগ্রো ফাউন্ডারি এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ’ (সাবেক ওয়াহেদ মেটাল) নামক ঢালাই কারখানার মালিক শুক্কুর মিয়াকে কারখানা বন্ধ করতে বা অন্যত্র সরিয়ে নিতে এলাকাবাসী একাধিকবার অনুরোধ করেন। কিন্তু শুক্কুর মিয়া কারখানা বন্ধ না করে উল্টো তাদেরকে নানাভাবে হেনস্থা করেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে লিখিত অভিযোগ করেন। এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তর ও সিটি কর্পোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস কারখানাটি এখান থেকে সরিয়ে অন্যত্র শিল্প সমৃদ্ধ এলাকায় নেওয়ার জন্য কারখানার মালিককে একাধিকবার নোটিশ দেন। কিন্তু এক যুগের বেশি হল কারখানার মালিক কারখানাটি অন্যত্র না সরিয়ে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে এলাকাবাসী প্রতিকার না পেয়ে চরম বিপাকে বসবাস করছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নতুন জুরাইন আলমবাগ হাজেরা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের সরু গলিতে ২১ নম্বর হোল্ডিংয়ে অবস্থিত একই মালিকের দুটি কারখানা। কারখানার আশেপাশে রয়েছে বহুতল ভবনসহ অনেক টিনশেড বাড়ি। এসব বাড়িতে বসবাস করেন প্রায় দুই হাজার মানুষ। কারখানা দুটির চারপাশে কয়েক ফুট উচু ইটের দেয়াল দিয়ে ঘেরা। উপরে রয়েছে টিন। রয়েছে চারটি ভাট্টি। এই ভাট্টিগুলোতে তীব্র গ্যাস দিয়ে প্রখর আগুনের তাপে লোহাকে গলিয়ে সেই গলিত লোহা পানির মত তরল করে নির্দিষ্ট ডাইসে ঢেলে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হয়। যদিও কিছুদিন যাবত কারখানাটি দিনে বন্ধ থাকে ও রাত্রে চালু থাকে। কিন্তু এখানের কালো ধোয়া ছড়িয়ে পড়ছে আশেপাশের ঘর বাড়িতে।

কারখানার সংলগ্ন ২২ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা সুবর্ণা জানান, দিনরাত কারখানা চলাকালীন সময়ে এর বিকট শব্দ, দূষিত কালো ধোয়ার কারণে আমাদের শিশু বাচ্চাসহ বয়স্করাও শ্বাসকষ্ট, কানের শ্রবণশক্তি কমে যাওয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ব্যাঘাত ঘটছে ঘুমেরও। এই কারখানার আগুন কয়েকদিন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তখন আমরা আতঙ্কে পড়ে যাই। এছাড়া সরু গলি আটকিয়ে গরম মালামাল পরিবহনে উঠানামা করায় শিশু বাচ্চারাসহ এলাকাবাসীকে সেই রাস্তা দিয়ে অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। পাশের আরেক বাসিন্দা গোলাম মাওলা মানিক অভিযোগ করেন, আমি প্রতিবাদ করায় আমাকে নানাভাবে হেনস্থা করেন কারখানার মালিক শুক্কুর মিয়া। তিনি আরো বলেন, এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস কারখানা সরানোর কয়েক দফা সময় বেঁধে দেন। কিন্তু কারখানাগুলো না সরিয়ে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন কারখানার মালিক শুক্কুর মিয়া। ১২ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা হযরত আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আবাসিক এলাকার মধ্যে এ ধরনের বিষাক্ত ধোয়ার কারখানা চলার কারণে অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। কারখানা যখন চলে তখন এর কম্পনে আমাদের ভবনও ঝাঁকুনি দেয় । আমাদের বাড়ির দেয়ালেও ফাটল ধরেছে। এছাড়া কারখানায় কখন যে আগুন লাগে আমাদের সেই আতঙ্কে থাকতে হয়। অন্যদিকে এলাকার মুরুব্বী মফিজ শেখ ও অভিযোগকারী আসাদ বেপারীসহ অনেকে জানান, এই কারখানার কারণে প্রায় দুই দশক ধরে এলাকাবাসীর নানা রোগসহ চরম দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। এছাড়া কারখানার কারণেই কয়েক বছর আগে এলাকার ১০ নম্বর বাড়ির মালিক জুম্মন ও ভাড়াটিয়া আলী নামে দুইজন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আমরা শুরু থেকেই এই কারখানা বন্ধ করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে লিখিত অভিযোগ করি। কিন্তু আজও কোন কাজ হয়নি।

জানা যায়, কারখানাটির নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও নেই সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন। আবাসিক এলাকায় এসব অবৈধ কারখানা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০০২) এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ এর পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে উল্লেখ আছে। শুধু তাই নয়, ২০০৭ সালে ও গত বছরের নভেম্বর মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর আলোকে এই কারখানাকে দুই মাসের মধ্যে কারখানার সকল স্থাপনা পরিবেশ সম্মত স্থানে স্থানান্তরের নির্দেশ প্রদান করেন। এবং কারখানার বিকট শব্দ বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধনী ২০১০) এর অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ এবং এর ক্ষতিপূরণ কারখানার মালিকের নিকট হতে আদায় করার বিধান রয়েছে। অন্যদিকে ২০০৭ সালে বর্তমান ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন অঞ্চল-১ থেকে জনস্বাস্থ্য হানিকর ও অবৈধ ঢালাই কারখানা বন্ধের নোটিশ দেওয়া হয়। সেসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকেও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়।