ঢাকা ১১:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
আন্তর্জাতিক মে দিবস পালন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাসাদ নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয় রাঙ্গুনিয়ায় চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানে প্রতিদ্বন্দ্বীবিহীন প্রার্থী ভোট হবে ভাইস চেয়ারম্যানের (চার প্রার্থীর মধ্যে দুই প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দুই জনের মধ্যে।) “কেরানীগঞ্জে এক হাজার পথচারীদের মাঝে শরবত বিতরণ করলেন সাংবাদিকরা” লক্ষ্মীপুরে শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ পুরস্কার নিয়ে বির্তক দিঘলিয়ায় মে দিবস পালিত। মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিড়ি শ্রমিকদের র‌্যালি ও সমাবেশ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ড তীব্রতাপ প্রভায়ে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ বগুড়া শাজাহানপুরে অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও “দেশ টিভির সাংবাদিককে লিগ্যাল নোটিশ” বাকেরগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় কলেজ শিক্ষার্থীর পায়ের পাতা বিচ্ছিন্ন।

পটুয়াখালীতে আগাম মুগডাল চাষে কৃষকের মুখে হাসি।

আঃ মজিদ খান, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ
লবণাক্ততার কারণে রবি মৌসুমে ফসলের জমি ফেলে রাখতে হতো। তবে সেই নোনা খেতে এবার আগাম মুগডালের আবাদ করে ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকেরা খেত থেকে মুগডাল তোলা শেষ করে এখন বাজারজাতকরণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই চিত্র পটুয়াখালীর উপকূলীয় কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের রোসনাবাদ গ্রামের।
উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার কারণে আমন ফসল ঘরে তোলার পর অনেক খেত পতিত অবস্থায় পড়ে থাকে। তবে এসব পতিত জমি আবাদের আওতায় আনতে অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অর্থায়নে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ও দারিদ্র্য নিরসন কর্মসূচির মাধ্যমে ওই গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে আগাম মুগডালের আবাদ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ প্রকল্পে সহযোগিতা করছে। এর আওতায় রোসনাবাদ গ্রামে ২৫ জন নারী ও পুরুষ কৃষক তাঁদের পতিত তিন হেক্টরের বেশি জমিতে আগাম মুগডালের আবাদ করেছেন। এরই মধ্যে তাঁরা খেত থেকে মুগডাল ঘরে তুলেছেন।
পটুয়াখালীর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় রবি মৌসুমে লবণাক্ততা ও মিঠাপানির অভাবে ৩১ হাজার ৫৮৯ হেক্টর আবাদি জমি পতিত পড়ে থাকে। জেলায় সাধারণত কৃষক-কৃষানিরা আমন ঘরে তোলার পর ফেব্রুয়ারি মাসে মুগডালের আবাদ করে থাকেন। তবে এ বছর জানুয়ারির শুরুতেই রোসনাবাদ গ্রামের ২৫ জন কৃষক আগাম মুগডালের আবাদ করেছেন। জেলায় এ বছর মোট ৮৫ হাজার ৪৩২ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় জাতের মুগের আবাদ করা হয়।
উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৫১৯ মেট্রিক টন। প্রচলিত পদ্ধতিতে গত ফেব্রুয়ারিতে যাঁরা মুগডালের আবাদ করেছেন, তাঁদের ডাল এখন পরিপক্ক হতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে কিছু খেত থেকে ডাল তোলা শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগ জানায়, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় ৭ হাজার ২০০ হেক্টর খেত থেকে মুগডাল ঘরে তোলা হয়েছে।
আগাম মুগডাল আবাদ নিয়ে কথা হয় ইউনিভার্সিটি অব ওয়ের্স্টান অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি প্রজেক্ট লিডার এম জি নিয়োগীর সঙ্গে। তিনি বলেন, উপকূলের নোনা পতিত জমি আবাদের আওতায় আনতে তাঁরা কাজ করছেন। এ বছর রোসনাবাদ গ্রামের কৃষকদের আগাম মুগডালের বীজ, সার, ওষুধ সহায়তাসহ পরামর্শ দিয়েছেন। এসব কৃষক তিন হেক্টর জমিতে জানুয়ারি মাসেই আগাম মুগডালের আবাদ করেছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত আগাম বৃষ্টির সমস্যা সমাধানের জন্য মুগডালের প্রচলিত চাষাবাদের পরিবর্তে জানুয়ারি মাসের শুরুতে আগাম মুগডালের চাষ করা লাভজনক। এই চাষাবাদ পদ্ধতিতে এপ্রিল-মে মাসের ঝড়-বৃষ্টির আগেই মুগডাল ঘরে তোলা যায়। ইতিমধ্যে রোসনাবাদ গ্রামে আগাম আবাদ করা তিন হেক্টর জমি থেকে ৩ দশমিক ৬০ মেট্রিক টন মুগডাল উৎপন্ন হয়েছে বলে জানান তিনি। গত সপ্তাহে রোসনাবাদ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা খেত থেকে মুগডাল তোলা শেষ করেছেন। বাড়িতে এখন ডালের খোসা ছাড়িয়ে বাজারজাতকরণের কাজ চলছে। কৃষক বিবেক হালদার (৫০) বলেন, আমন ফসল ঘরে তোলার পর সাধারণত তাঁর জমি পড়ে থাকত।
তবে এ বছরের প্রথম দিকেই তিনি তাঁর ৩৩ শতাংশ জমিতে আগাম মুগডালের আবাদ করেছেন। এ জন্য তাঁদের ৫ কেজি মুগডাল বীজ, সার, ওষুধ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। তবে বৈশাখের ঝড়-বৃষ্টির শুরুর আগেই তিনি ডাল ঘরে তুলছেন।
নন্দিতা হালদার ও তাঁর স্বামী শংকর হালদার মিলে ৩৩ শতাংশ জমিতে আগাম মুগডালের চাষ করেছিলেন। নন্দিতা হালদার বলেন, বর্ষার আগেই তাঁরা খেত থেকে মুগডাল ঘরে তুলছেন। রবি মৌসুমে তাঁদের বড় সমস্যা হচ্ছে মিঠাপানির অভাব। এখানে মিঠাপানির ব্যবস্থা করা হলে রবি মৌসুমে পতিত জমিগুলো আবাদের আওতায় আসবে বলে মনে করেন তাঁরা।
জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পটুয়াখালী কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, এ বছর কলাপাড়ায় পরীক্ষামূলকভাবে আগাম মুগডালের চাষ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। ভবিষ্যতে কৃষি বিভাগ থেকে রবি মৌসুমে লবণাক্ততার কারণে অন্য পতিত জমিগুলো মুগডালের আবাদের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। মুগ আবাদ করে কৃষকেরা সব দিক থেকে লাভবান হচ্ছেন।
মুগগাছের শিকড়ে রাইজরিয়াম নামের একধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকার ফলে মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি পায়। এতে করে পরবর্তী আবাদে কৃষকের রাসায়নিক সারের ব্যবহার অনেকাংশে কমে যায়।###

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

আন্তর্জাতিক মে দিবস পালন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাসাদ নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়

পটুয়াখালীতে আগাম মুগডাল চাষে কৃষকের মুখে হাসি।

আপডেট টাইম ০৯:৪২:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৩

আঃ মজিদ খান, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ
লবণাক্ততার কারণে রবি মৌসুমে ফসলের জমি ফেলে রাখতে হতো। তবে সেই নোনা খেতে এবার আগাম মুগডালের আবাদ করে ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকেরা খেত থেকে মুগডাল তোলা শেষ করে এখন বাজারজাতকরণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই চিত্র পটুয়াখালীর উপকূলীয় কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের রোসনাবাদ গ্রামের।
উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার কারণে আমন ফসল ঘরে তোলার পর অনেক খেত পতিত অবস্থায় পড়ে থাকে। তবে এসব পতিত জমি আবাদের আওতায় আনতে অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অর্থায়নে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ও দারিদ্র্য নিরসন কর্মসূচির মাধ্যমে ওই গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে আগাম মুগডালের আবাদ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ প্রকল্পে সহযোগিতা করছে। এর আওতায় রোসনাবাদ গ্রামে ২৫ জন নারী ও পুরুষ কৃষক তাঁদের পতিত তিন হেক্টরের বেশি জমিতে আগাম মুগডালের আবাদ করেছেন। এরই মধ্যে তাঁরা খেত থেকে মুগডাল ঘরে তুলেছেন।
পটুয়াখালীর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় রবি মৌসুমে লবণাক্ততা ও মিঠাপানির অভাবে ৩১ হাজার ৫৮৯ হেক্টর আবাদি জমি পতিত পড়ে থাকে। জেলায় সাধারণত কৃষক-কৃষানিরা আমন ঘরে তোলার পর ফেব্রুয়ারি মাসে মুগডালের আবাদ করে থাকেন। তবে এ বছর জানুয়ারির শুরুতেই রোসনাবাদ গ্রামের ২৫ জন কৃষক আগাম মুগডালের আবাদ করেছেন। জেলায় এ বছর মোট ৮৫ হাজার ৪৩২ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় জাতের মুগের আবাদ করা হয়।
উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৫১৯ মেট্রিক টন। প্রচলিত পদ্ধতিতে গত ফেব্রুয়ারিতে যাঁরা মুগডালের আবাদ করেছেন, তাঁদের ডাল এখন পরিপক্ক হতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে কিছু খেত থেকে ডাল তোলা শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগ জানায়, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় ৭ হাজার ২০০ হেক্টর খেত থেকে মুগডাল ঘরে তোলা হয়েছে।
আগাম মুগডাল আবাদ নিয়ে কথা হয় ইউনিভার্সিটি অব ওয়ের্স্টান অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি প্রজেক্ট লিডার এম জি নিয়োগীর সঙ্গে। তিনি বলেন, উপকূলের নোনা পতিত জমি আবাদের আওতায় আনতে তাঁরা কাজ করছেন। এ বছর রোসনাবাদ গ্রামের কৃষকদের আগাম মুগডালের বীজ, সার, ওষুধ সহায়তাসহ পরামর্শ দিয়েছেন। এসব কৃষক তিন হেক্টর জমিতে জানুয়ারি মাসেই আগাম মুগডালের আবাদ করেছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত আগাম বৃষ্টির সমস্যা সমাধানের জন্য মুগডালের প্রচলিত চাষাবাদের পরিবর্তে জানুয়ারি মাসের শুরুতে আগাম মুগডালের চাষ করা লাভজনক। এই চাষাবাদ পদ্ধতিতে এপ্রিল-মে মাসের ঝড়-বৃষ্টির আগেই মুগডাল ঘরে তোলা যায়। ইতিমধ্যে রোসনাবাদ গ্রামে আগাম আবাদ করা তিন হেক্টর জমি থেকে ৩ দশমিক ৬০ মেট্রিক টন মুগডাল উৎপন্ন হয়েছে বলে জানান তিনি। গত সপ্তাহে রোসনাবাদ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা খেত থেকে মুগডাল তোলা শেষ করেছেন। বাড়িতে এখন ডালের খোসা ছাড়িয়ে বাজারজাতকরণের কাজ চলছে। কৃষক বিবেক হালদার (৫০) বলেন, আমন ফসল ঘরে তোলার পর সাধারণত তাঁর জমি পড়ে থাকত।
তবে এ বছরের প্রথম দিকেই তিনি তাঁর ৩৩ শতাংশ জমিতে আগাম মুগডালের আবাদ করেছেন। এ জন্য তাঁদের ৫ কেজি মুগডাল বীজ, সার, ওষুধ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। তবে বৈশাখের ঝড়-বৃষ্টির শুরুর আগেই তিনি ডাল ঘরে তুলছেন।
নন্দিতা হালদার ও তাঁর স্বামী শংকর হালদার মিলে ৩৩ শতাংশ জমিতে আগাম মুগডালের চাষ করেছিলেন। নন্দিতা হালদার বলেন, বর্ষার আগেই তাঁরা খেত থেকে মুগডাল ঘরে তুলছেন। রবি মৌসুমে তাঁদের বড় সমস্যা হচ্ছে মিঠাপানির অভাব। এখানে মিঠাপানির ব্যবস্থা করা হলে রবি মৌসুমে পতিত জমিগুলো আবাদের আওতায় আসবে বলে মনে করেন তাঁরা।
জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পটুয়াখালী কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, এ বছর কলাপাড়ায় পরীক্ষামূলকভাবে আগাম মুগডালের চাষ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। ভবিষ্যতে কৃষি বিভাগ থেকে রবি মৌসুমে লবণাক্ততার কারণে অন্য পতিত জমিগুলো মুগডালের আবাদের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। মুগ আবাদ করে কৃষকেরা সব দিক থেকে লাভবান হচ্ছেন।
মুগগাছের শিকড়ে রাইজরিয়াম নামের একধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকার ফলে মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি পায়। এতে করে পরবর্তী আবাদে কৃষকের রাসায়নিক সারের ব্যবহার অনেকাংশে কমে যায়।###