ঢাকা ০৪:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
আন্তর্জাতিক মে দিবস পালন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাসাদ নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয় রাঙ্গুনিয়ায় চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানে প্রতিদ্বন্দ্বীবিহীন প্রার্থী ভোট হবে ভাইস চেয়ারম্যানের (চার প্রার্থীর মধ্যে দুই প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দুই জনের মধ্যে।) “কেরানীগঞ্জে এক হাজার পথচারীদের মাঝে শরবত বিতরণ করলেন সাংবাদিকরা” লক্ষ্মীপুরে শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ পুরস্কার নিয়ে বির্তক দিঘলিয়ায় মে দিবস পালিত। মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিড়ি শ্রমিকদের র‌্যালি ও সমাবেশ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ড তীব্রতাপ প্রভায়ে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ বগুড়া শাজাহানপুরে অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও “দেশ টিভির সাংবাদিককে লিগ্যাল নোটিশ” বাকেরগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় কলেজ শিক্ষার্থীর পায়ের পাতা বিচ্ছিন্ন।

মমতার সংসার, শাহানাজ শিউলী

শরীর থেকে দরদর করে ঘাম ঝরছে রেণুর। মমতা রাগের স্বরে বলল,”কিরে মুখপুড়ি এই গরমে কোথায় গিয়েছিলি? জামা ভর্তি ছোট ছোট আমের কুশি দেখালো রেণু। মমতা বলল,”এগুলো কি করবি? রেনু উত্তর দিল,”ঝাল আর সরিষা বাটা দিয়ে মাখিয়ে খাব। আর বাকিগুলো তুমি ডাল দিয়ে রান্না করবে।। মমতা বলল,এ ছাড়া আর কি খাওয়াতে পারি আমি তোদের? সেইতো আলু আর ডাল। কতটা মাস গেল— এক টুকরা মাছ,মাংসের মুখ দেখাতে পারলাম না। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে হাঁসফাঁস করে মমতার জীবন। স্বামীর মৃত্যুর পর মমতার সংসার খুব কষ্টে চলে। মেয়ে দুটোকে নিয়ে সে অসহায় হয়ে পড়ে। ছোট্ট মেয়ে বেনু গর্ভে থাকা অবস্থায় স্বামী চলে গেলেন ওপারে। সেই থেকেই মমতার সংগ্রাম জীবন শুরু। বড় মেয়ে রেণু ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ে। বেনুর বয়স দুই বছর। মমতাকে দেখে আহাজারি করার লোকের অভাব নেই। কিন্তু বাস্তবতা অনেক নির্মম ও কঠিন। অভাব অনাটনের সংসারে মমতা স্বামীর সাথে সুখেই ছিল। স্বামী বেঁচে থাকতে কখনো বুঝতে পারিনি সংসারের এত যন্ত্রণা। কত স্মৃতি কত কথা মনে করে সবার অগোচরে চোখের পানি ঝরতে থাকে মমতার।
এভাবে কষ্টের সাথে দিনাতিপাত করতে না করতেই জ্বরে পড়ল বিনা। মমতার দুশ্চিন্তার কোন শেষ রইল না। কি করে মেয়েকে সুস্থ করে তুলবে? কোথায় পাবে টাকা পয়সা? মমতা দর্জির কাজ করে। ঘরে বসেই পোশাক তৈরি করে যে টাকা পায় তা দিয়ে কোনরকম সংসার চলে। কিছু টাকা ধার করে বিকালে সে মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার কিছু ওষুধ দিয়ে বললো এই ওষুধগুলো খাওয়ালে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ৫ দিন চলে যাওয়ার পরেও বেনুর কোন উন্নতি হলো না। মমতার আরো দুশ্চিন্তা বেড়ে গেল। কোথায় টাকা পাবে? বাবার বাড়িতেও পাওয়ার কিছু নেই। বাবার যে ছয় বিঘা জমি ছিল তিনি মারা যাওয়ার আগে দুই ভাইয়ের নামে লিখে দিয়ে যান। এক বুক অভিমানে মমতা আর বাবার বাড়ি কখনো যায়নি। মমতার একমাত্র বৃদ্ধ মাকেও ভাইয়েরা দেখাশোনা করে না। অন্য উপায় না পেয়ে মমতা ফজল সাহেবের বাসায় যায়। ফজল সাহেব পৌর মেয়র। বয়স ৫৫ -৬০ হবে। ফজল সাহেব আপাদমস্তক মমতাকে একবার দেখে নিল। মমতা দেখতে বেশ সুন্দরী। অল্প বয়সেই বিধবা হয়েছে। মমতা ফজল সাহেবকে বলল,””ভাই সাহেব আমাকে কিছু কাজ দেবেন?? আমার মেয়েটা খুবই অসুস্থ তাকে ডাক্তার দেখাতে হবে। এক অস্বাভাবিক চাহনিতে মেয়র বলল,” তুই আমার বাসায় কাজ করবি? তোকে খাওয়া পরা দেবাে আর মাসে এক হাজার করে টাকা দেব। মমতা তাতে রাজি হয়ে গেল। মমতা খুব মনোযোগ দিয়ে দায়িত্বের সাথে ফজল সাহেবের বাসায় কাজ করতে লাগলো। প্রায় প্রায় ফজল সাহেব প্রয়োজনে -অপ্রয়োজনে মমতাকে ডাকে। সেদিন মমতাকে ডেকে বলল,”মমতা এই ৫০০ টাকা লও।তোমার মেয়েকে ডাক্তার দেখাও। সেদিন কৃতজ্ঞতায় চোখে পানি এসে গিয়েছিল মমতার। কিন্তু তার অন্তরালে যে এত হীনমনোবৃত্তি লুকিয়ে ছিল মমতা বুঝতে পারিনি। এখন সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।। পরের দিন মমতা একটু আগেই কাজ করতে বেরিয়ে গেল ফজল সাহেবের বাসায়। সে ভেবেছিল আজকে একটু তাড়াতাড়ি কাজ করে মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে। সে জানতনা মেয়র সাহেবের স্ত্রী তার বাবার বাড়িতে বেড়াতে গেছে। তিনি একাই বাড়িতে আছেন। কাজ করতে করতে মমতার হঠাৎ চোখ পড়ল মেয়র সাহেবের দিকে। মমতার বুকের ভিতর ছপছপ করে উঠলো। আজ মেয়র সাহেব কে একদম আলাদা দেখাচ্ছে।। লোলুপদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে মমতার দিকে। মনে হচ্ছে অনেক দিনের ক্ষুধার্ত হায়েনা শিকারের অপেক্ষায় ছিল। মমতা বলল,” সাহেব আমি তাড়াতাড়ি বাসায় যাব আজ। আমার মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব এই বলে সে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিল। মেয়র সাহেব বলল,” হ্যাঁ বাসায় তো যাবেই। আমাকে এক গ্লাস পানি দিয়ে যাও। মমতা পা বাড়ানোর সাহস পাচ্ছিল না। দুরু দুরু করে তার বুকটা কাঁপছিল। ফাজল সাহেবের চাহানিটা একদমই ভালো ছিল না। তবুও মনে মনে শক্ত হওয়ার চেষ্টা করছিল মমতা। সে ভাবল,না আমাকে কিছুতেই দুর্বল হলে চলবে না। আমাকে শক্তি, সাহস নিয়ে এগোতে হবে। যদি তেমন কিছু হয় আমাকেই মোকাবেলা করতে হবে। নিজেকে রক্ষা করার প্রস্তুতি হিসেবে মেয়র সাহেবের টেবিলের উপর থেকে একটা কলম নিয়ে পিছনে রাখল এবং পানি আনতে গেল।। মমতা পানি দিতে গেলে মেয়র সাহেব মমতার হাতটি টেনে ধরল। মমতা রেগে বলল, আরে এ কি করছেন? হাত ছাড়ুন। কিন্তু ফজল সাহেব কোন কথাই কর্ণপাত করলো না। তারপর মমতাকে জাপটে ধরল। মমতা কৌশলী এবং বুদ্ধিমতী মেয়ে। সে বাহুডোর থেকে নিজেকে মুক্ত করে কলমটা চোখের ভিতরে ঢুকিয়ে দিল। মেয়র সাহেব মাগো বাবা গো বলে চিৎকার করে উঠল। মমতা হাপাতে হাপাতে বাসায় ফিরে তাড়াতাড়ি ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল। মেয়ে দুটোকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল। মমতার আকাশ ভেঙে মাথায় পড়ল। স্বামীর মৃত্যুর সাথে সাথে এই বিশাল আকাশটাও যেন তার কাছ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। মমতা সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে।আজ সে বুঝতে পারছে মেয়েদের লেখাপড়া ও স্বাবলম্বী হওয়া কত দরকার। মমতা ভাবলো,না না যত কষ্টই হোক আমি আমার মেয়ে দুটোকে লেখাপড়া শেখাবই। আমার মত এমন পরিস্থিতি যেন আমার মেয়েদের জীবনে না আসে। আজ যদি আমি লেখাপড়া জানতাম তাহলে আমাকে এমন দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতে হতো না। আবার নিজের মনের কাছে প্রশ্ন করে আমি লেখাপড়া শিখলে হয়তো চাকরি পেতাম কিন্তু তাই বলে কি হায়েনারা উচ্ছেদ হয়ে যেত? জানিনা এসব নরপশুদের হাত থেকে মেয়েরা কবে মুক্তি পাবে? আজ আমার জন্য পৃথিবীর জায়গা শূন্য।পৃথিবীর বুকে আমার জন্য কি কোথাও একটু জায়গা নেই? যেখানে নিশ্চিন্তে নিরাপত্তায় মেয়ে দুটোকে নিয়ে থাকতে পারবো? মনে মনে ভেবে হু হু করে কাঁদতে লাগলো।সেদিন সারারাত ঘুম হলো না মমতার। ইউসুফ কে নিয়ে কত স্মৃতি কত কথা মনের পর্দায় ভাসতে লাগলো আর কাঁদতে লাগলো। জানিনা রাত পোহালে তার কপালে কি আছে।। তার কলিজার টুকরা বেনুকে বুকের উপর রাখল। বেনুর মুখের দিকে তাকিয়ে তার ভয় ভয় করতে লাগলো।। মেয়ের সারা মুখে বারবার চুমু দিচ্ছে আর শক্ত করে জাপটে ধরছে। শুয়ে শুয়ে কত কিছু ভাবছে আর আঁখিদ্বয় থেকে গোল গোল বৃষ্টির ফোটায় বালিশ ভিজে যাচ্ছে। বারবার ঈশ্বরকে ডাকছে। ঈশ্বর আমাকে শক্তি, সাহস,সামর্থ্য দাও। আমাকে সহিবার ক্ষমতা দাও। কেন মেয়েদের জীবনে এমন হয়? ইউসুফকে অভিযোগ করে বলে, তুমি আমার কোন যন্ত্রণার ভিতরে রেখে গেলে? তুমি হয়তো বেঁচে থাকলে আমার জীবনের এই দুর্দশা হতো না। ভাবতে ভাবতে কখন যে ভোর হল সে ঠিক পেলনা। আযানের ধ্বনি কানে আসে। তড়িঘড়ি উঠে রেণূকে ডাকে। বেনুর কপালে হাত দিতে সে চমকে গেল। বেনুর কোন সাড়া শব্দ নেই। শরীরটা নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। বেনুর বুকে মাথা রেখে মমতা নিঃশ্বাসের শব্দ শোনার চেষ্টা করল। কিন্তু কি করে সে শব্দ শুনবে? এটা যে তার অসাড় দেহ। কখন যে তার প্রাণ পাখির জানটা খাঁচা ছেড়ে উড়ে গেছে সে টের পাইনি। মমতার আর্তচিৎকারে সেদিন আকাশ বাতাস ভারী উঠল। ভোর হতে না হতেই ফজল সাহেব পুলিশ নিয়ে হাজির হল মমতার বাড়িতে। টাকা ও গয়না চুরির মিথ্যা কেচ সাজাই মমতার বিরুদ্ধে। ফজল সাহেব এসে দেখে সন্তানের লাশকে বুকে চেপে ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বকছে মমতা।

পরিচিতি
শাহানাজ শিউলী
গ্রাম: আড়পাড়া,পোস্ট : নলডাঙ্গা,উপজেলা :কালীগঞ্জ,জেলা :ঝিনাইদহ.
মোবাইল ০১ ৭৯৬ ২৪ ৮৪ ৩৭

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

আন্তর্জাতিক মে দিবস পালন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাসাদ নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়

মমতার সংসার, শাহানাজ শিউলী

আপডেট টাইম ০৭:৪৮:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৩

শরীর থেকে দরদর করে ঘাম ঝরছে রেণুর। মমতা রাগের স্বরে বলল,”কিরে মুখপুড়ি এই গরমে কোথায় গিয়েছিলি? জামা ভর্তি ছোট ছোট আমের কুশি দেখালো রেণু। মমতা বলল,”এগুলো কি করবি? রেনু উত্তর দিল,”ঝাল আর সরিষা বাটা দিয়ে মাখিয়ে খাব। আর বাকিগুলো তুমি ডাল দিয়ে রান্না করবে।। মমতা বলল,এ ছাড়া আর কি খাওয়াতে পারি আমি তোদের? সেইতো আলু আর ডাল। কতটা মাস গেল— এক টুকরা মাছ,মাংসের মুখ দেখাতে পারলাম না। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে হাঁসফাঁস করে মমতার জীবন। স্বামীর মৃত্যুর পর মমতার সংসার খুব কষ্টে চলে। মেয়ে দুটোকে নিয়ে সে অসহায় হয়ে পড়ে। ছোট্ট মেয়ে বেনু গর্ভে থাকা অবস্থায় স্বামী চলে গেলেন ওপারে। সেই থেকেই মমতার সংগ্রাম জীবন শুরু। বড় মেয়ে রেণু ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ে। বেনুর বয়স দুই বছর। মমতাকে দেখে আহাজারি করার লোকের অভাব নেই। কিন্তু বাস্তবতা অনেক নির্মম ও কঠিন। অভাব অনাটনের সংসারে মমতা স্বামীর সাথে সুখেই ছিল। স্বামী বেঁচে থাকতে কখনো বুঝতে পারিনি সংসারের এত যন্ত্রণা। কত স্মৃতি কত কথা মনে করে সবার অগোচরে চোখের পানি ঝরতে থাকে মমতার।
এভাবে কষ্টের সাথে দিনাতিপাত করতে না করতেই জ্বরে পড়ল বিনা। মমতার দুশ্চিন্তার কোন শেষ রইল না। কি করে মেয়েকে সুস্থ করে তুলবে? কোথায় পাবে টাকা পয়সা? মমতা দর্জির কাজ করে। ঘরে বসেই পোশাক তৈরি করে যে টাকা পায় তা দিয়ে কোনরকম সংসার চলে। কিছু টাকা ধার করে বিকালে সে মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার কিছু ওষুধ দিয়ে বললো এই ওষুধগুলো খাওয়ালে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ৫ দিন চলে যাওয়ার পরেও বেনুর কোন উন্নতি হলো না। মমতার আরো দুশ্চিন্তা বেড়ে গেল। কোথায় টাকা পাবে? বাবার বাড়িতেও পাওয়ার কিছু নেই। বাবার যে ছয় বিঘা জমি ছিল তিনি মারা যাওয়ার আগে দুই ভাইয়ের নামে লিখে দিয়ে যান। এক বুক অভিমানে মমতা আর বাবার বাড়ি কখনো যায়নি। মমতার একমাত্র বৃদ্ধ মাকেও ভাইয়েরা দেখাশোনা করে না। অন্য উপায় না পেয়ে মমতা ফজল সাহেবের বাসায় যায়। ফজল সাহেব পৌর মেয়র। বয়স ৫৫ -৬০ হবে। ফজল সাহেব আপাদমস্তক মমতাকে একবার দেখে নিল। মমতা দেখতে বেশ সুন্দরী। অল্প বয়সেই বিধবা হয়েছে। মমতা ফজল সাহেবকে বলল,””ভাই সাহেব আমাকে কিছু কাজ দেবেন?? আমার মেয়েটা খুবই অসুস্থ তাকে ডাক্তার দেখাতে হবে। এক অস্বাভাবিক চাহনিতে মেয়র বলল,” তুই আমার বাসায় কাজ করবি? তোকে খাওয়া পরা দেবাে আর মাসে এক হাজার করে টাকা দেব। মমতা তাতে রাজি হয়ে গেল। মমতা খুব মনোযোগ দিয়ে দায়িত্বের সাথে ফজল সাহেবের বাসায় কাজ করতে লাগলো। প্রায় প্রায় ফজল সাহেব প্রয়োজনে -অপ্রয়োজনে মমতাকে ডাকে। সেদিন মমতাকে ডেকে বলল,”মমতা এই ৫০০ টাকা লও।তোমার মেয়েকে ডাক্তার দেখাও। সেদিন কৃতজ্ঞতায় চোখে পানি এসে গিয়েছিল মমতার। কিন্তু তার অন্তরালে যে এত হীনমনোবৃত্তি লুকিয়ে ছিল মমতা বুঝতে পারিনি। এখন সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।। পরের দিন মমতা একটু আগেই কাজ করতে বেরিয়ে গেল ফজল সাহেবের বাসায়। সে ভেবেছিল আজকে একটু তাড়াতাড়ি কাজ করে মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে। সে জানতনা মেয়র সাহেবের স্ত্রী তার বাবার বাড়িতে বেড়াতে গেছে। তিনি একাই বাড়িতে আছেন। কাজ করতে করতে মমতার হঠাৎ চোখ পড়ল মেয়র সাহেবের দিকে। মমতার বুকের ভিতর ছপছপ করে উঠলো। আজ মেয়র সাহেব কে একদম আলাদা দেখাচ্ছে।। লোলুপদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে মমতার দিকে। মনে হচ্ছে অনেক দিনের ক্ষুধার্ত হায়েনা শিকারের অপেক্ষায় ছিল। মমতা বলল,” সাহেব আমি তাড়াতাড়ি বাসায় যাব আজ। আমার মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব এই বলে সে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিল। মেয়র সাহেব বলল,” হ্যাঁ বাসায় তো যাবেই। আমাকে এক গ্লাস পানি দিয়ে যাও। মমতা পা বাড়ানোর সাহস পাচ্ছিল না। দুরু দুরু করে তার বুকটা কাঁপছিল। ফাজল সাহেবের চাহানিটা একদমই ভালো ছিল না। তবুও মনে মনে শক্ত হওয়ার চেষ্টা করছিল মমতা। সে ভাবল,না আমাকে কিছুতেই দুর্বল হলে চলবে না। আমাকে শক্তি, সাহস নিয়ে এগোতে হবে। যদি তেমন কিছু হয় আমাকেই মোকাবেলা করতে হবে। নিজেকে রক্ষা করার প্রস্তুতি হিসেবে মেয়র সাহেবের টেবিলের উপর থেকে একটা কলম নিয়ে পিছনে রাখল এবং পানি আনতে গেল।। মমতা পানি দিতে গেলে মেয়র সাহেব মমতার হাতটি টেনে ধরল। মমতা রেগে বলল, আরে এ কি করছেন? হাত ছাড়ুন। কিন্তু ফজল সাহেব কোন কথাই কর্ণপাত করলো না। তারপর মমতাকে জাপটে ধরল। মমতা কৌশলী এবং বুদ্ধিমতী মেয়ে। সে বাহুডোর থেকে নিজেকে মুক্ত করে কলমটা চোখের ভিতরে ঢুকিয়ে দিল। মেয়র সাহেব মাগো বাবা গো বলে চিৎকার করে উঠল। মমতা হাপাতে হাপাতে বাসায় ফিরে তাড়াতাড়ি ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল। মেয়ে দুটোকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল। মমতার আকাশ ভেঙে মাথায় পড়ল। স্বামীর মৃত্যুর সাথে সাথে এই বিশাল আকাশটাও যেন তার কাছ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। মমতা সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে।আজ সে বুঝতে পারছে মেয়েদের লেখাপড়া ও স্বাবলম্বী হওয়া কত দরকার। মমতা ভাবলো,না না যত কষ্টই হোক আমি আমার মেয়ে দুটোকে লেখাপড়া শেখাবই। আমার মত এমন পরিস্থিতি যেন আমার মেয়েদের জীবনে না আসে। আজ যদি আমি লেখাপড়া জানতাম তাহলে আমাকে এমন দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতে হতো না। আবার নিজের মনের কাছে প্রশ্ন করে আমি লেখাপড়া শিখলে হয়তো চাকরি পেতাম কিন্তু তাই বলে কি হায়েনারা উচ্ছেদ হয়ে যেত? জানিনা এসব নরপশুদের হাত থেকে মেয়েরা কবে মুক্তি পাবে? আজ আমার জন্য পৃথিবীর জায়গা শূন্য।পৃথিবীর বুকে আমার জন্য কি কোথাও একটু জায়গা নেই? যেখানে নিশ্চিন্তে নিরাপত্তায় মেয়ে দুটোকে নিয়ে থাকতে পারবো? মনে মনে ভেবে হু হু করে কাঁদতে লাগলো।সেদিন সারারাত ঘুম হলো না মমতার। ইউসুফ কে নিয়ে কত স্মৃতি কত কথা মনের পর্দায় ভাসতে লাগলো আর কাঁদতে লাগলো। জানিনা রাত পোহালে তার কপালে কি আছে।। তার কলিজার টুকরা বেনুকে বুকের উপর রাখল। বেনুর মুখের দিকে তাকিয়ে তার ভয় ভয় করতে লাগলো।। মেয়ের সারা মুখে বারবার চুমু দিচ্ছে আর শক্ত করে জাপটে ধরছে। শুয়ে শুয়ে কত কিছু ভাবছে আর আঁখিদ্বয় থেকে গোল গোল বৃষ্টির ফোটায় বালিশ ভিজে যাচ্ছে। বারবার ঈশ্বরকে ডাকছে। ঈশ্বর আমাকে শক্তি, সাহস,সামর্থ্য দাও। আমাকে সহিবার ক্ষমতা দাও। কেন মেয়েদের জীবনে এমন হয়? ইউসুফকে অভিযোগ করে বলে, তুমি আমার কোন যন্ত্রণার ভিতরে রেখে গেলে? তুমি হয়তো বেঁচে থাকলে আমার জীবনের এই দুর্দশা হতো না। ভাবতে ভাবতে কখন যে ভোর হল সে ঠিক পেলনা। আযানের ধ্বনি কানে আসে। তড়িঘড়ি উঠে রেণূকে ডাকে। বেনুর কপালে হাত দিতে সে চমকে গেল। বেনুর কোন সাড়া শব্দ নেই। শরীরটা নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। বেনুর বুকে মাথা রেখে মমতা নিঃশ্বাসের শব্দ শোনার চেষ্টা করল। কিন্তু কি করে সে শব্দ শুনবে? এটা যে তার অসাড় দেহ। কখন যে তার প্রাণ পাখির জানটা খাঁচা ছেড়ে উড়ে গেছে সে টের পাইনি। মমতার আর্তচিৎকারে সেদিন আকাশ বাতাস ভারী উঠল। ভোর হতে না হতেই ফজল সাহেব পুলিশ নিয়ে হাজির হল মমতার বাড়িতে। টাকা ও গয়না চুরির মিথ্যা কেচ সাজাই মমতার বিরুদ্ধে। ফজল সাহেব এসে দেখে সন্তানের লাশকে বুকে চেপে ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বকছে মমতা।

পরিচিতি
শাহানাজ শিউলী
গ্রাম: আড়পাড়া,পোস্ট : নলডাঙ্গা,উপজেলা :কালীগঞ্জ,জেলা :ঝিনাইদহ.
মোবাইল ০১ ৭৯৬ ২৪ ৮৪ ৩৭