ঢাকা ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।। বরিশালে সুলভ মুল্যে বসুন্ধরা পন্য পেয়ে ক্রেতারা খুশী। বাবুগঞ্জে স্কুল ছুটির পরে বাড়ি যাওয়ার সময় দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজ। আমার বাবাও মায়ের দেওয়া উপদেশ বড়দের সম্মান কর ছোটদের স্নেহ করো। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখী নারী উদ্যোক্তা মেলা শুরু। টাঙ্গাইলে তিনদিন ব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা শুরু বাকেরগঞ্জে প্রধান মন্ত্রীর ছবি ব্যঙ্গক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট করায় হায়দর সিপাই গ্রেফতার। বাকেরগঞ্জে স্ত্রীর দায়ের কৃত মামলায় স্বামী পারভেজ খান গ্রেফতার।। বাকেরগঞ্জে তরমুজ চাষী হত্যা চেষ্টা মামলার আসামী রুদ্র গাজী গ্রেফতার টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড অনুষ্ঠিত

কলকাতা থেকে পায়ে হেঁটে নড়াইল- লোহাগড়ায় ভারতীয় যুবক

শরিফুজ্জামান, নড়াইল প্রতিনিধি : ‘রক্ত দিন জীবন বাঁচান।’ প্রতিবছর থ্যালাসেমিয়া নামে বিরল এ রোগে বিশ্বে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
তবে এ রোগে আক্রান্তের হিসেবে বিশ্বের মোট আক্রান্তের আনুপাতিক হারে এগিয়ে ভারত-বাংলাদেশ। আর এই রোগে আক্রান্তদের বাঁচাতে পারে এক ব্যাগ রক্ত। রক্ত দান করতে প্রয়োজন হয় আত্ম-সচেতনতা। সেই সচেতনতা তৈরি করতেই হাতে পোস্টার, পায়ে শক্ত বুট। পিচঢালা পথ পেরিয়ে কলকাতা (ভারত) থেকে হেঁটে (বাংলাদেশ) ঢাকা যাচ্ছেন পেশায় প্রকৌশলী আলমগীর খান (৩০) নামে এক যুবক।
যশোর-নড়াইল রোড ধরে পায়ে হেঁটে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) যশোর থেকে রওনা হয়ে বিকেলে নড়াইলে পৌছান আলমগীর খান।
তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদার কালিয়াচকের বাসিন্দা।
ভারতের কলকতার অদূরে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত থেকে তার যাত্রা শুরু হয় বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি), গন্তব্য বাংলাদেশের ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।
আলমগীর খান নামে ওই যুবক গত ৯ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ বৃহস্পতিবার এসে পৌঁছান বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বনগাঁতে। বারাসাত থেকে তাঁর রুট ছিল কলকাতা শহর ঘেঁষা যশোর রোড।
পথে যেতে যেতে কথা বলেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। রক্ত দিলে নিজের কোনো ক্ষতি হয় না বরং বাঁচে আরেকজনের জীবন-এমন কথা বোঝান রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে থাকার উৎসুক মানুষকে।
সাধারণ মানুষজনও আলমগীরের কথা শোনেন। কেউ কেই এগিয়ে করেন করমর্দন, তোলেন সেলফিও।
আলমগীর বলেন, ভারতের কলকাতায় আমাদের ভাষা হচ্ছে বাংলা আর বাংলাদেশের ভাষাও একই। আমার আন্দোলন থ্যালাসেমিয়া ও রক্তদান নিয়ে। থ্যালেসেমিয়া মুক্ত বিশ্ব গড়তে হবে আমাদের। না হলে আগামীতে প্রত্যেক ১০ জনের মধ্যে একজন বাচ্চা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হবে’।
তিনি আরো বলেন, সকলে একজোট হয়ে যদি থ্যালাসেমিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়, তাহলে শুধুমাত্র ভারত কিংবা বাংলাদেশ কেন, গোটা বিশ্ব থেকে থ্যালাসেমিয়াকে একটা সময় নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া সম্ভব।
আজ আমার পথযাত্রার ৬ষ্ঠ দিনে আমি নড়াইল জেলাতে প্রবেশ করেছি। আগামী ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে আমার এ পথ যাত্রা শেষ হবে। বাংলাদেশ সরকারসহ সকলকে তিনি থ্যালেসেমিয়া নিয়ে ভাবতে আহ্বান জানান।
আলমগীর আরও বলেন, ২০১৬ সালে রক্তের অভাবে এক বড় ভাইকে রক্তের অভাবে মারা যেতে দেখেই মূলত তিনি রক্তদান ও থ্যালেসেমিয়া নিয়ে কাজ শুরু করেন। যাদের ওজন ৫০ কেজি এবং বয়স ১৮ বছর তাদেরকে রক্তদানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে পায়ে হেঁটে দূরত্ব অতিক্রম করা আলমগীরের কাছে নতুন বিষয় নয়। পায়ে হেঁটে এর আগে একবার কলকাতা থেকে দিল্লি গিয়েছিলেন তিনি। তাই হাঁটার অভিজ্ঞতা নতুন নয়। যদিও বাংলাদেশে হেঁটে আসার অভিজ্ঞতা তার নতুন। তাই রয়েছে বাড়তি কৌতুহলও।
গত বছরও আলমগীর মালদা থেকে দিল্লি একইভাবে পায়ে হেটে প্রচারণা করেন। একই স্লোগানে মে মাসে পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন মালদা থেকে সিটি অফ জয় কলকাতায়। এবার তার গন্তব্য কলকাতা থেকে ঢাকা; উদ্দেশ্যও এক ‘রক্ত দিন জীবন বাঁচান’।
এদিকে সোমবার বিকেলে নড়াইলে পৌছালে নড়াইলের মুচিরপোল এলাকায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান। এসময় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এর মধ্যে মানবিক নড়াইল, রক্তের ফেরিওয়ালা নড়াইল এবং একটু হাসি সেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশনের সদস্যরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানবিক নড়াইল এর ইমামুল ইসলাম রিয়ান বলেন, কলকাতা থেকে পায়ে হেটে আলমগীর ভাই যে প্রচার করছে এটা বিরল ঘটনা। মানবিক কাজ সবাই করতে পারে না ইচ্ছা থাকলেও। তার এ উদ্যোগ আসলেই প্রশংসনীয়।
লোহাগড়ার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নেতা ইকরামুল ইসলাম বলেন আলমগীর ভাইয়ের উৎসাহ উদ্দীপনা দেখে আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়।
আলমগীর খান মঙ্গলবার সকালে পায়ে হেঁটে নড়াইল শহর থেকে লোহাগড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন।
নড়াইল-লোহাগাড়া মহাসড়ক হয়ে আলমগীর পায়ে হেঁটে মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ লোহাগড়া উপজেলা সদরে পৌঁছান। লোহাগড়ার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতারা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর তিনি মধুমতি ব্রিজ পার হয়ে গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে লোহাগড়া ত্যাগ করেন।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।।

কলকাতা থেকে পায়ে হেঁটে নড়াইল- লোহাগড়ায় ভারতীয় যুবক

আপডেট টাইম ০৭:৪৪:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

শরিফুজ্জামান, নড়াইল প্রতিনিধি : ‘রক্ত দিন জীবন বাঁচান।’ প্রতিবছর থ্যালাসেমিয়া নামে বিরল এ রোগে বিশ্বে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
তবে এ রোগে আক্রান্তের হিসেবে বিশ্বের মোট আক্রান্তের আনুপাতিক হারে এগিয়ে ভারত-বাংলাদেশ। আর এই রোগে আক্রান্তদের বাঁচাতে পারে এক ব্যাগ রক্ত। রক্ত দান করতে প্রয়োজন হয় আত্ম-সচেতনতা। সেই সচেতনতা তৈরি করতেই হাতে পোস্টার, পায়ে শক্ত বুট। পিচঢালা পথ পেরিয়ে কলকাতা (ভারত) থেকে হেঁটে (বাংলাদেশ) ঢাকা যাচ্ছেন পেশায় প্রকৌশলী আলমগীর খান (৩০) নামে এক যুবক।
যশোর-নড়াইল রোড ধরে পায়ে হেঁটে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) যশোর থেকে রওনা হয়ে বিকেলে নড়াইলে পৌছান আলমগীর খান।
তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদার কালিয়াচকের বাসিন্দা।
ভারতের কলকতার অদূরে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত থেকে তার যাত্রা শুরু হয় বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি), গন্তব্য বাংলাদেশের ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।
আলমগীর খান নামে ওই যুবক গত ৯ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ বৃহস্পতিবার এসে পৌঁছান বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বনগাঁতে। বারাসাত থেকে তাঁর রুট ছিল কলকাতা শহর ঘেঁষা যশোর রোড।
পথে যেতে যেতে কথা বলেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। রক্ত দিলে নিজের কোনো ক্ষতি হয় না বরং বাঁচে আরেকজনের জীবন-এমন কথা বোঝান রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে থাকার উৎসুক মানুষকে।
সাধারণ মানুষজনও আলমগীরের কথা শোনেন। কেউ কেই এগিয়ে করেন করমর্দন, তোলেন সেলফিও।
আলমগীর বলেন, ভারতের কলকাতায় আমাদের ভাষা হচ্ছে বাংলা আর বাংলাদেশের ভাষাও একই। আমার আন্দোলন থ্যালাসেমিয়া ও রক্তদান নিয়ে। থ্যালেসেমিয়া মুক্ত বিশ্ব গড়তে হবে আমাদের। না হলে আগামীতে প্রত্যেক ১০ জনের মধ্যে একজন বাচ্চা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হবে’।
তিনি আরো বলেন, সকলে একজোট হয়ে যদি থ্যালাসেমিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়, তাহলে শুধুমাত্র ভারত কিংবা বাংলাদেশ কেন, গোটা বিশ্ব থেকে থ্যালাসেমিয়াকে একটা সময় নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া সম্ভব।
আজ আমার পথযাত্রার ৬ষ্ঠ দিনে আমি নড়াইল জেলাতে প্রবেশ করেছি। আগামী ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে আমার এ পথ যাত্রা শেষ হবে। বাংলাদেশ সরকারসহ সকলকে তিনি থ্যালেসেমিয়া নিয়ে ভাবতে আহ্বান জানান।
আলমগীর আরও বলেন, ২০১৬ সালে রক্তের অভাবে এক বড় ভাইকে রক্তের অভাবে মারা যেতে দেখেই মূলত তিনি রক্তদান ও থ্যালেসেমিয়া নিয়ে কাজ শুরু করেন। যাদের ওজন ৫০ কেজি এবং বয়স ১৮ বছর তাদেরকে রক্তদানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে পায়ে হেঁটে দূরত্ব অতিক্রম করা আলমগীরের কাছে নতুন বিষয় নয়। পায়ে হেঁটে এর আগে একবার কলকাতা থেকে দিল্লি গিয়েছিলেন তিনি। তাই হাঁটার অভিজ্ঞতা নতুন নয়। যদিও বাংলাদেশে হেঁটে আসার অভিজ্ঞতা তার নতুন। তাই রয়েছে বাড়তি কৌতুহলও।
গত বছরও আলমগীর মালদা থেকে দিল্লি একইভাবে পায়ে হেটে প্রচারণা করেন। একই স্লোগানে মে মাসে পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন মালদা থেকে সিটি অফ জয় কলকাতায়। এবার তার গন্তব্য কলকাতা থেকে ঢাকা; উদ্দেশ্যও এক ‘রক্ত দিন জীবন বাঁচান’।
এদিকে সোমবার বিকেলে নড়াইলে পৌছালে নড়াইলের মুচিরপোল এলাকায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান। এসময় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এর মধ্যে মানবিক নড়াইল, রক্তের ফেরিওয়ালা নড়াইল এবং একটু হাসি সেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশনের সদস্যরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানবিক নড়াইল এর ইমামুল ইসলাম রিয়ান বলেন, কলকাতা থেকে পায়ে হেটে আলমগীর ভাই যে প্রচার করছে এটা বিরল ঘটনা। মানবিক কাজ সবাই করতে পারে না ইচ্ছা থাকলেও। তার এ উদ্যোগ আসলেই প্রশংসনীয়।
লোহাগড়ার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নেতা ইকরামুল ইসলাম বলেন আলমগীর ভাইয়ের উৎসাহ উদ্দীপনা দেখে আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়।
আলমগীর খান মঙ্গলবার সকালে পায়ে হেঁটে নড়াইল শহর থেকে লোহাগড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন।
নড়াইল-লোহাগাড়া মহাসড়ক হয়ে আলমগীর পায়ে হেঁটে মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ লোহাগড়া উপজেলা সদরে পৌঁছান। লোহাগড়ার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতারা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর তিনি মধুমতি ব্রিজ পার হয়ে গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে লোহাগড়া ত্যাগ করেন।