ঢাকা ১১:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বরিশালে বাস শ্রমিককে মারধরের ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল অবরোধ করে শ্রমিকেরা। গজারিয়ায় কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় খাদে প্রাইভেটকার, নিহত ৩ সিলেটে আগাম বন্যার আশঙ্কায়!! হাওরজুড়ে কৃষকের ব্যস্ততা শিশুদের মনোবিকাশে প্রয়োজন সংস্কৃতি চর্চা: মেয়র রেজাউল উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হাতীবান্ধায় নির্বাচনী সংঘর্ষে চেয়ারম্যান প্রার্থী সহ আহত ১০ ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার, প্রতারক চক্রের এক সদস্য গ্রেপ্তার প্রথম দিনেই রোগী দেখে সবার মন জয় করেলেন ডাক্তার মোঃ হুমায়ুন রশিদ শাকিল বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে বগুড়া জেলা আরজেএফ’র সুপেয় পানি স্যালাইন ও বিস্কুট বিতরণ দুমকীতে খাল সংস্কার প্রকল্পে অনিয়মসহ শত শতগাছ উপড়ে ফেলার অভিযোগ। বাকেরগঞ্জ বাসীর উন্নয়নমুলক সকল প্রত্যাশা পুরনে কাজ করব। ৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷ রাজীব আহমেদ তালুকদার।

জ্যোৎস্না এখন কোথায় যাবে নিজেই জানেনা। ।

পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালী সমাজসেবা অধিদপ্তরের এতিম, প্রতিবন্ধী ও দুস্থ মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রয়েছেন জ্যোৎস্না।
শৈশবেই বাবা মারা যান জ্যোৎস্নার (২৬)। এরপর একটি মামলায় তাঁর মাকে কারাগারে যেতে হয়। কয়েক বছর মায়ের সঙ্গে কারাগারে থাকতে হয়। আনুমানিক সাত বছর বয়সে কারাগার থেকে ঠাঁই হয় সরকারি শিশু পরিবারে (বালিকা)। এর মধ্যে কারাগারেই মায়ের মৃত্যু হয়।
জ্যোৎস্না বর্তমানে পটুয়াখালী সমাজসেবা অধিদপ্তরের এতিম, প্রতিবন্ধী ও দুস্থ মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রয়েছেন। তাঁকে হাঁস-মুরগি লালনপালনের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। জ্যোৎস্নার দেওয়া তথ্যমতে, তাঁর দুই খালার নাম আয়শা ও শেফালি। দুই মামার নাম ছিল হারুন ও শাহজাহান। তবে তাঁরা কোথায় আছেন, তা বলতে পারেননি। ফলে প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে যাওয়ার জায়গা নেই এতিম এই তরুণীর। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন জ্যোৎস্না। এরপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘লেখাপড়া মনে থাকে না। হাঁস-মুরগি পালা শিখছি। এইহান থ্যাইক্যা মামুরা নিয়ে গেলে এই কাজ কইরা চলতে পারুম। কিন্তু কেউ আমারে নিতে আয় না।’ কথা বলার সময় চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল জ্যোৎস্নার। অসহায় এই তরুণী বলেন, ‘মামা-খালারা কেন আমারে নিতে আয় না। আমি হেগো কাছে যাইতে চাই।’
পটুয়াখালীর ওই কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, জ্যোৎস্নার বাবার নাম জয়নাল খাঁ ও মা জুলি বেগম। বাড়ি ছিল ফরিদপুরের জাজিরা উপজেলার গঙ্গানগর গ্রামে। শৈশবে বাবাকে হারান জ্যোৎস্না। এরপর মায়ের সঙ্গে ঢাকায় মিরপুর–১–এ সনি সিনেমা হল এলাকায় একটি বস্তিতে থাকতেন।
জুলি বেগম বাসাবাড়িতে কাজ করে যা পেতেন, তা দিয়ে মা ও মেয়ের চলে যেত। তবে শিশু চুরির দায়ে তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। জেল হয় তাঁর। তখন জ্যোৎস্নার বয়স আনুমানিক চার বছর। অভিভাবক না থাকায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে থাকার অনুমতি মেলে জ্যোৎস্নার।
২০০৩ সালের ২২ মার্চ সাত বছর বয়সে জ্যোৎস্নাকে কারাগার থেকে পাঠানো হয় ঢাকা আজিমপুর সরকারি শিশু পরিবারে। এর মধ্যে কারাগারে জ্যোৎস্নার মায়ের মৃত্যু হয়। আজিমপুরে তিন বছর থাকার পর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকার সরকারি শিশু সদনে (বালিকা) পাঠানো হয় তাঁকে।
১৫ বছর সরকারি শিশু সদনে ছিলেন জ্যোৎস্না। ২০১৮ সালে রূপগঞ্জের শিশু সদন লেখাপড়ায় অমনোযোগী হওয়ায় তাঁকে ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। এরপর তাঁকে পটুয়াখালীর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়। চার বছর ধরে জ্যোৎস্না এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বাস করছেন। এখান থেকে হাঁস-মুরগি পালনের ওপর দুটি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
পটুয়াখালীতে এতিম, প্রতিবন্ধী ও দুস্থ মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উপপরিচালক কাজী মুহাম্মদ ইব্রাহিম প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন এখানে আছেন জ্যোৎস্না। দুবার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখন স্বজনদের কাছে যেতে ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। প্রতিদিন বারবার জিজ্ঞাসা করেন, কেউ তাঁর খোঁজে এসেছিল কি না।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বরিশালে বাস শ্রমিককে মারধরের ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল অবরোধ করে শ্রমিকেরা।

জ্যোৎস্না এখন কোথায় যাবে নিজেই জানেনা। ।

আপডেট টাইম ০২:৩৪:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২২

পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালী সমাজসেবা অধিদপ্তরের এতিম, প্রতিবন্ধী ও দুস্থ মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রয়েছেন জ্যোৎস্না।
শৈশবেই বাবা মারা যান জ্যোৎস্নার (২৬)। এরপর একটি মামলায় তাঁর মাকে কারাগারে যেতে হয়। কয়েক বছর মায়ের সঙ্গে কারাগারে থাকতে হয়। আনুমানিক সাত বছর বয়সে কারাগার থেকে ঠাঁই হয় সরকারি শিশু পরিবারে (বালিকা)। এর মধ্যে কারাগারেই মায়ের মৃত্যু হয়।
জ্যোৎস্না বর্তমানে পটুয়াখালী সমাজসেবা অধিদপ্তরের এতিম, প্রতিবন্ধী ও দুস্থ মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রয়েছেন। তাঁকে হাঁস-মুরগি লালনপালনের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। জ্যোৎস্নার দেওয়া তথ্যমতে, তাঁর দুই খালার নাম আয়শা ও শেফালি। দুই মামার নাম ছিল হারুন ও শাহজাহান। তবে তাঁরা কোথায় আছেন, তা বলতে পারেননি। ফলে প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে যাওয়ার জায়গা নেই এতিম এই তরুণীর। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন জ্যোৎস্না। এরপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘লেখাপড়া মনে থাকে না। হাঁস-মুরগি পালা শিখছি। এইহান থ্যাইক্যা মামুরা নিয়ে গেলে এই কাজ কইরা চলতে পারুম। কিন্তু কেউ আমারে নিতে আয় না।’ কথা বলার সময় চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল জ্যোৎস্নার। অসহায় এই তরুণী বলেন, ‘মামা-খালারা কেন আমারে নিতে আয় না। আমি হেগো কাছে যাইতে চাই।’
পটুয়াখালীর ওই কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, জ্যোৎস্নার বাবার নাম জয়নাল খাঁ ও মা জুলি বেগম। বাড়ি ছিল ফরিদপুরের জাজিরা উপজেলার গঙ্গানগর গ্রামে। শৈশবে বাবাকে হারান জ্যোৎস্না। এরপর মায়ের সঙ্গে ঢাকায় মিরপুর–১–এ সনি সিনেমা হল এলাকায় একটি বস্তিতে থাকতেন।
জুলি বেগম বাসাবাড়িতে কাজ করে যা পেতেন, তা দিয়ে মা ও মেয়ের চলে যেত। তবে শিশু চুরির দায়ে তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। জেল হয় তাঁর। তখন জ্যোৎস্নার বয়স আনুমানিক চার বছর। অভিভাবক না থাকায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে থাকার অনুমতি মেলে জ্যোৎস্নার।
২০০৩ সালের ২২ মার্চ সাত বছর বয়সে জ্যোৎস্নাকে কারাগার থেকে পাঠানো হয় ঢাকা আজিমপুর সরকারি শিশু পরিবারে। এর মধ্যে কারাগারে জ্যোৎস্নার মায়ের মৃত্যু হয়। আজিমপুরে তিন বছর থাকার পর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকার সরকারি শিশু সদনে (বালিকা) পাঠানো হয় তাঁকে।
১৫ বছর সরকারি শিশু সদনে ছিলেন জ্যোৎস্না। ২০১৮ সালে রূপগঞ্জের শিশু সদন লেখাপড়ায় অমনোযোগী হওয়ায় তাঁকে ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। এরপর তাঁকে পটুয়াখালীর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়। চার বছর ধরে জ্যোৎস্না এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বাস করছেন। এখান থেকে হাঁস-মুরগি পালনের ওপর দুটি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
পটুয়াখালীতে এতিম, প্রতিবন্ধী ও দুস্থ মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উপপরিচালক কাজী মুহাম্মদ ইব্রাহিম প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন এখানে আছেন জ্যোৎস্না। দুবার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখন স্বজনদের কাছে যেতে ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। প্রতিদিন বারবার জিজ্ঞাসা করেন, কেউ তাঁর খোঁজে এসেছিল কি না।