রকিবুজ্জামান,মাদারীপুর:
মাদারীপুরের কালকিনিতে পৌরসভার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন। পৌরসভা থেকে বার বার গিয়ে নিষেধ করা সত্ত্বেও নির্মাণ কাজ থামছেনা । অজানা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে পৌরসভাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েই অনুমোদনের বাইরে চলছে বহুতল ভবন নির্মাণ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের ঝাউতলা এলাকায় গার্ডেন সিটি আবাসিক প্রকল্পের মধ্যে নির্ধারিত রাস্তা ঘেঁষে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন। ভবনের কিছু অংশ চলে এসেছে আবাসিক প্রকল্পে চলাচলের জন্য রাখা নির্ধারিত রাস্তার মাঝে। রাস্তার মাঝেই বসানো হয়েছে গভীর নলকূপ। যার ফলে আবাসিক প্রকল্পে জরুরী প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি কিংবা এ্যাম্বুলেন্স প্রবেশে বাঁধার সৃষ্টি হবে।এসব কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা পৌরসভায় লিখিত অভিযোগ দিলে পৌরসভা থেকে একে একে সার্ভেয়ার,পৌর ইঞ্জিনিয়ার এবং সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গিয়ে নিয়ম মেনে কাজ করার নির্দেশনা দিলেও তা মানছেনা ভবনের মালিকপক্ষ।
অপর দিকে অভিযোগ রয়েছে এই ভবন নির্মাণে পৌরসভার অনুমোদন পেতে মানা হয়নি সঠিক নিয়ম। অনুমোদনের ব্যাপারে জানেনই না পৌরসভার সার্ভেয়ার। তার পরিদর্শনের স্থানে টিকচিহ্ন দিয়ে নেয়া হয় পৌরসভার অনুমোদন।এমনটাই জানালেন কালকিনি পৌরসভার সার্ভেয়ার মোঃ শাহীন হোসেন।
তিনি বলেন,”পৌরসভার প্লান অনুমোদনের প্রধান কাজ হচ্ছে সার্ভেয়ার এবং মেয়র এর। অথচ নিয়ম না মেনে আমার পরিদর্শনের জায়গায় টিক দিয়ে অবৈধভাবে এই অনুমোদন দেয়া হয়েছে। রাস্তার উপর নির্মিত এই ভবনের প্লান অনুমোদনের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।”
এদিকে কালকিনি পৌরসভার সহকারী ইঞ্জিনিয়ার মোঃ লিটন হোসেন জানান,”এই ভবনটি নির্মাণে অনিয়মের কথা শুনে আমি সার্ভেয়ার সহ সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করেছি। ভবন মালিক ইতালী প্রবাসী হওয়ায় তাকে না পেয়ে ভবনের দেখাশোনা করার দায়িত্ব থাকা তার ভায়রা মোঃ মোশারফ হোসেনকে ভবনটি প্লানের বাইরে না করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপরেও শুনেছি তিনি অনুমোদিত প্লানের বাইরে ভবন নির্মাণ করছেন।আমরা তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।”
পৌর ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ ইউনুস আলী হাওলাদার বলেন, “আমি নিজে পৌরসভার সার্ভেয়ার,ইঞ্জিনিয়ার সহ গিয়ে তাকে (ভবনের দেখাশোনা কারী মোশারফ) রাস্তার জন্য নির্ধারিত জায়গা রেখে ভবন করতে বলেছি।যাতে জরুরী প্রয়োজনে বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে সমস্যা না হয়। তিনি (মোশারফ) তখন তা মেনে নিলেও আমরা চলে আসার পর আবারও রাস্তা বন্ধ করে ভবন নির্মাণ করছে বলে শুনেছি। বিষয়টা মেয়রকে জানানো হয়েছে।”
এ বিষয়ে জানতে ভবনটির দেখাশোনা করার দায়িত্বে থাকা মোঃ মোশারফ হোসেন কে ঘটনাস্থলে গিয়ে পাওয়া যায়নি,তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে কালকিনি পৌরসভার মেয়র এস এম হানিফ বলেন,”পৌরসভার মধ্যে কোন স্থাপনা করতে অবশ্যই পৌরসভার বৈধ অনুমোদন নিতে হবে।অনুমোদনবিহীন বা অনুমোদিত কাগজের বাইরে কোন ভবন নির্মাণ করতে দেয়া হবেনা। জরুরী এ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি করে ভবন নির্মাণ করা ঠিক নয়।আমি বিষয়টা জেনেছি, ঐ ভবনের অনুমোদন বাতিলের জন্য ইঞ্জিনিয়ারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।যদি ঐ ভবনটি জরুরী প্রয়োজনের জন্য এ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি করে তবে তা ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় ভেঙ্গে ফেলা হবে।”
তবে মেয়র আশ্বাস দিলেও এই ভবনের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী প্রায় এক মাস আগে পৌরসভায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি কোন কার্যকরী ব্যবস্থা।