ঢাকা ১১:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
দুমকীতে খাল সংস্কার প্রকল্পে অনিয়মসহ শত শতগাছ উপড়ে ফেলার অভিযোগ। বাকেরগঞ্জ বাসীর উন্নয়নমুলক সকল প্রত্যাশা পুরনে কাজ করব। ৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷ রাজীব আহমেদ তালুকদার। দেশ জুরে শুরু হয়েছে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। মুরাদনগর উপজেলা মোট-১৭ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। টাঙ্গাইলে এইচআইভি ও এইডস রোগের সচেতনতা সৃষ্টিতে কর্মশালা অনুষ্ঠিত লোহাগড়া উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিক বরাদ্দ বগুড়া শিবগঞ্জে নাতির রাম দা’র কোপে নানী খুন ফুটপাত উদ্ধার করতে হবে: মেয়র রেজাউল আন্তর্জাতিক মে দিবস পালন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাসাদ নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয় রাঙ্গুনিয়ায় চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানে প্রতিদ্বন্দ্বীবিহীন প্রার্থী ভোট হবে ভাইস চেয়ারম্যানের (চার প্রার্থীর মধ্যে দুই প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দুই জনের মধ্যে।) “কেরানীগঞ্জে এক হাজার পথচারীদের মাঝে শরবত বিতরণ করলেন সাংবাদিকরা”

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর প্রাচীন স্থাপত্যের হাতছানি ভোলায়

আঃ মজিদ খান, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ মনপুরায় ম্যানগ্রোভ বনে হরিণ। বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে নদীবেষ্টিত গাঙ্গেয় দ্বীপজেলা ভোলা। রুপালি ইলিশ, ধান আর সুপারির জন্য এ জেলা সুপরিচিত। নান্দনিক প্রাচীন স্থাপত্য এ জেলাকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা, যা অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে পড়ে আছে। সরকারের পুরাকীর্তি সংরক্ষণ বিভাগ এদিকে নজর দিলে অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।
ভোলার সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে আছে অনেক বিস্তৃত চর। সেখানকার ম্যানগ্রোভ বন ও সমুদ্রসৈকত মিলে অপরূপ সৌন্দর্যের আধার প্রকৃতিপ্রেমীদের নজর কাড়ছে। এক পাশে সৈকত, আরেক পাশে বন; সঙ্গে বাতাসের শো শো শব্দ, সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মায়াবী দৃশ্য যে কারও মনে অদ্ভুত দোলা দেবে। এখানে না এলে প্রকৃতির অবারিত সাজের পসরা বর্ণনা করে বোঝানো কঠিন।
তারুয়া দ্বীপঃ ভোলা সদর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণে চরফ্যাশন উপজেলা। উপজেলার সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় প্রায় দেড় শ বছর আগে জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচর। এই চরের তারুয়া সমুদ্রসৈকতটি অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বিচ্ছিন্ন ঢালচর থেকে ট্রলারে প্রায় দেড় ঘণ্টার নদীপথ পেরিয়ে তারুয়া। স্পিডবোটে গেলে লাগে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। বঙ্গোপসাগরের একেবারে দক্ষিণের মোহনায় মনোরম ম্যানগ্রোভ বনসমৃদ্ধ তারুয়া চর। তারুয়া সৈকতে দেখা মিলবে চকচকে সাদা বালু আর লাল কাঁকড়ার মিছিল। মাথার ওপর কিংবা বেলাভূমিতে বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো পাখির কলকাকলিতে মুখর চারপাশ। তবে শীতের সময় অতিথি পাখির বিচরণে এক অতি প্রাকৃতিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বর্ণিল আলোকচ্ছটা মোহিত করবে যে কাউকে। নাগরিক ব্যস্ততার বন্দিজীবনে অবকাশযাপনের জন্য প্রকৃতিপ্রেমীরা একটু সময় করে এখানে এলে প্রকৃতি তাঁদের নিরাশ করবে না।
তারুয়া ম্যানগ্রোভ বনঃ ঢালচরের ৩১ দশমিক ৩১ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ২৮ দশমিক ২০ বর্গকিলোমিটারজুড়ে সুবিশাল বনাঞ্চল। এর মধ্যে তারুয়ার বন অন্যতম। সেখানে আছে গেওয়া, গড়ান, কেওড়া, বাইন, রেইনট্রিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ। শীত এলেই এখানে আস্তানা গড়ে বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো অতিথি পাখি।
১৯৭৬ সালে এখানে পরিকল্পিতভাবে বনাঞ্চল শুরু হয়। কোনো হিংস্র পশুর ভয় না থাকলেও বনে আছে শিয়াল, বনবিড়াল, হরিণ, সাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। বাগানের মধ্যে দিয়ে সরু পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটু ভেতরে গেলেই মনে হবে, এ যেন আরেক ভুবন। সেখানে শীতল ছায়াবিশিষ্ট একটি মাঠ। স্থানীয়ভাবে জায়গাটা বরইতলা নামে পরিচিত।
তারুয়া সমুদ্রসৈকতঃ বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা তারুয়ার শুভ্র বালুর সমুদ্রসৈকতে লোনাপানির ঢেউ শো শো শব্দে আছড়ে পড়ে। একদিকে উঁচু ঢেউ, অন্যদিকে সবুজ বনভূমি দেখে কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটা সৈকতের চেয়ে অন্য রকম মনে হতে পারে। সৈকতে হেঁটে বেড়াতে গেলেই চোখে পড়বে লাল কাঁকড়ার বিচরণ। গুটি গুটি পায়ে দৌড়ে চলে লাল কাঁকড়ার দল। মানুষের অবস্থান টের পেলে চোখের নিমেষেই লুকিয়ে পড়ে বালুর গর্তে। এখানে দেখা যায় চিত্রা হরিণ, বানর, উদবিড়াল, পাতিশিয়াল, বন্য মহিষ ও গরু, বনবিড়াল, বনমোরগসহ নানা প্রজাতির প্রাণী। বক, শঙ্খচিল, মথুরা, কাঠময়ূর, কোয়েল, গুইসাপ, বেজি, কচ্ছপ নানা ধরনের সাপও আছে এ চরে।
চর কুকরি-মুকরিঃ চর কুকরি-মুকরি আরেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। ট্রলার বা স্পিডবোটে মাঝারি খালের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যাওয়ার সময় দুই পাশে ম্যানগ্রোভ বন দেখে সুন্দরবনের অবয়ব ভেসে ওঠে। হেঁটে বনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হবে যেন সুন্দরবনের কোনো অংশ। বলে আছে সুন্দরী, গেওয়া, গরান ও শ্বাসমূলীয় গাছ। এ ছাড়া বনে গোলপাতার সমাহারও চোখে পড়ার মতো। কুকরির পূর্ব অংশে নারকেলবাগান। নামে নারকেলবাগান হলেও নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজির আচ্ছাদনে ঢাকা পড়ে সূর্য। বনের ভেতর যাওয়ার জন্য গামবুট অথবা কেডস উপযুক্ত। অন্যথায় শ্বাসমূলে পা রক্তাক্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। নদীর পাড় আরও মুগ্ধতার, শুভ্রতায় মোড়ানো। সব সময় সাদা বকের সমারোহ থাকে সেখানে। শীতের সময় অতিথি পাখি এলাকাকে দেয় ভিন্নমাত্রা। এ চরে বেড়ানোর জন্য শীত উপযুক্ত সময়। কুকরি-মুকরির শীতকালের দৃশ্য মুগ্ধ হওয়ার মতো।
চর কুকরি-মুকরির ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে একটি খাল। স্থানীয় মানুষের কাছে খালটি ভাড়ানি খাল হিসেবেই পরিচিত। মেঘনার বিশাল বুক থেকে বয়ে গিয়ে খালটি বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এখানকার ধু ধু বালিয়াড়ির ওপর দাঁড়ালে সাগরের শো শো শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাবে না। স্থানীয় মানুষ এ স্পটকে বালুর ধুম নামে ডাকে। একটু সামনে এগোলেই ঢালচর। এরপরই বঙ্গোপসাগর।
চর কুকরি-মুকরির প্রধান আকর্ষণ সাগরপাড়। এখানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত কিংবা সূর্য ডোবার দৃশ্য ভ্রমণপিপাসুদের মুগ্ধ করবে। চর কুকরি-মুকরিতে ডুবন্ত সূর্যের লাল, হলুদ, কমলা আভা সবুজরঙা বনে ছড়িয়ে পড়ে বনটিকে আরও মায়াবী করে তোলে।
কীভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে লঞ্চে সরাসরি চরফ্যাশন যাওয়া যায়। লঞ্চ থেকে নেমে মোটরসাইকেল কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে চর দক্ষিণ আইচার চর কচ্ছপিয়া ঘাটে যেতে হবে। এরপর ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বেশ খানিকটা জলপথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছানো যাবে চর কুকরি-মুকরি অথবা তারুয়া দ্বীপে।
লক্ষ্মীপুর থেকে যেতে হলে মজু চৌধুরী লঞ্চ ও ফেরিঘাট থেকে লঞ্চ-ট্রলার-স্পিডবোটে ভোলার ইলিশা ঘাট। সেখান থেকে অটোরিকশায় ভোলা সদরে। শহরের বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে চরফ্যাশন গিয়ে দক্ষিণ আইচার চর কচ্ছপিয়া ঘাট।
থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাঃ চর কুকরি-মুকরি বাজারের পাশে বন বিভাগের একটি রিসোর্ট আছে। সেখানে থাকা যায়। বাজারে হানিফ নামের একটি হোটেল আছে। রিসোর্ট ও ইউনিয়ন পরিষদে খাওয়ার ব্যবস্থা না থাকলেও এখানে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে বেশ কয়েকটি হোম স্টে সার্ভিস চালু আছে। সেখানে স্বল্প খরচে থাকা যায়। মনে রাখতে হবে, তারুয়া যেতে হলে স্পিডবোট অথবা ট্রলারে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে কুকরি-মুকরি থেকে ওই পরিবহন ভাড়া করে বা রিজার্ভ নিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসতে হবে।
মনপুরাঃ ভোলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে মেঘনার বুকে জেগে ওঠা দ্বীপ উপজেলা মনপুরার অবস্থান। প্রমত্ত মেঘনার উত্তাল ঢেউয়ের পলি জমে এ দ্বীপের জন্ম হয়। সাগরের কোল ঘেঁষে জন্ম নেওয়ায় স্থানীয়দের কাছে মনপুরা ‘সাগরকন্যা’ হিসেবে পরিচিত। এখানে ভোরে সূর্যের আগমনী বার্তা ও বিকেলে পশ্চিম আকাশের সিঁড়ি বেয়ে এক পা দুই পা করে মেঘের বুকে সূর্যের হারিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সত্যিই অতুলনীয়। মনপুরা উপজেলা প্রায় ৮০০ বছরের পুরোনো। ৭০০ বছর আগে এখানে পর্তুগিজ জলদস্যুদের আস্তানা ছিল। যার প্রমাণ মেলে মনপুরায় আজও সে সময়ের লোমশ কুকুরের বিচরণ।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি মনপুরা অপার সম্ভাবনাময়। পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় এখানকার হাজার হাজার একর জায়গাজুড়ে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। আছে বাহারি প্রজাতির বৃক্ষ, তরুলতার সমাহার। বনে আছে হরিণ, বানর, ভালুকসহ নানা বৈচিত্র্যময় প্রাণী। এর গহিন জঙ্গলে ভয়ংকর কিছু মাংসাশী প্রাণী আছে বলেও জনশ্রুতি আছে। মনপুরায় ৮ থেকে ১০টি বিচ্ছিন্ন চর আছে। এগুলো হচ্ছে চর তাজাম্মল, চর জামশেদ, চর পাতিলা, চর পিয়াল, চর নিজাম, লালচর, বালুয়ারচর, চর গোয়ালিয়া ও সাকুচিয়ার চর। চরগুলো দেখলে মনে হবে যেন কিশোরীর গলায় মুক্তার মালা। এসব চরাঞ্চলে বন বিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে সবুজ বিপ্লব। চোখধাঁধানো রূপ নিয়েই যেন চরগুলোর জন্ম। চরগুলোয় মানুষের বসতি আছে। তাঁদের পেশা অনেকটা নদীর ওপর নির্ভরশীল। জীবনযাত্রার মানও কিছুটা ভিন্ন ধরনের। তাই সবুজের সমারোহ আর পাখির কলকাকলিতে মুখরিত বিচ্ছিন্ন সাগরকন্যা মনপুরা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বের দাবিদার।
ভ্রমণপিপাসু মানুষকে মুগ্ধতার বন্ধনে আটকে দেওয়ার অলৌকিক ক্ষমতা আছে সাগরকন্যার। শীত মৌসুমে এর চিত্র ভিন্ন ধরনের। সুদূর সাইবেরিয়া থেকে ছুটে আসা অতিথি পাখির আগমনে চরাঞ্চলগুলো নতুন রূপ পায়। তখন মনপুরার চর অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। মনপুরায় একটি ল্যান্ডিং স্টেশন আছে। সেখান থেকে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। উপভোগ করা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য।
সম্প্রতি মনপুরার সাগর মোহনায় জেগে ওঠা প্রায় এক কিলোমিটার বালুকাময় সৈকত ঘিরে তৈরি হয়েছে দক্ষিণা হাওয়া সি-বিচ। এই সৈকতকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, ভালো হোটেল, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতিসহ বিভিন্ন সুবিধা বাড়াতে পারলে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে মনপুরায়। তবে সরকারি, বেসরকারি সংস্থাগুলো যদি গুরুত্বের সঙ্গে দৃষ্টি দেয়, তাহলে শিগগিরই এখানে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব।
যোগাযোগব্যবস্থাঃ ঢাকা থেকে সরাসরি লঞ্চযোগে মনপুরা আসা যায়। সন্ধ্যায় লঞ্চে উঠে সকাল ছয়টায় পৌঁছানো যায় মনপুরায়। এ ছাড়া ভোলার ইলিশা ঘাট থেকে রাতে লঞ্চ ও সি-ট্রাকে তজুমদ্দিন অথবা ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে করেও যাওয়া যায়।
প্রাচীন স্থাপত্যঃ ভোলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে বোরহানউদ্দিন উপজেলা। এখানে আছে বেশ কয়েকটি সুদৃশ্য প্রাচীন নান্দনিক স্থাপনা। এগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে অনেক প্রকৌশলী নির্মাণশৈলী দেখলে বিস্ময়ে থ হয়ে যান। এ রকম স্থাপনার সন্ধান মেলে বোরহানউদ্দিন উপজেলা সদর থেকে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দক্ষিণে সাঁচড়া ইউনিয়নের গুড়িন্দাবাড়িতে। প্রায় ৫৫০ বছর আগে তৎকালীন চন্দ্রদ্বীপের রাজা জয়দেবের ছোট মেয়ে বিদ্যা সুন্দরীকে বিয়ে দিয়ে তাঁদের জন্য এই রাজবাড়ি নির্মাণ করেন। কিছু জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়লেও এর নির্মাণশৈলী অবাক করার মতো। স্থানীয় মানুষ এর ইতিহাস বলতে পারে না। তবে ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাজার জামাতা রাজার গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করতেন। এ কারণে ওই বাড়িকে একসময় গোয়েন্দাবাড়ি নামে ডাকা হতো। ধারণা করা হয়, রাজশাসনের পর কালক্রমে মানুষের মুখে মুখে ওই বাড়ির নাম গুড়িন্দাবাড়ি হয়ে যায়। এ পুরাকীর্তি সরকারি হেফাজতে নিয়ে সংরক্ষণ করা উচিত। পরিপূর্ণ গবেষণায় এ স্থান থেকে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব।
রাজা জয়দেব এলাকায় পানীয় জলের জন্য তাঁর দুই মেয়ের নামে কমলা সুন্দরীর দিঘি ও বিদ্যা সুন্দরীর দিঘি খনন করেন। দিঘি দুটি কালক্রমে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তবে কমলা সুন্দরীর দিঘির একটি পাড় ও বিদ্যা সুন্দরীর দিঘির দুটি পাড় কালের সাক্ষ্য বহন করছে। স্থানীয় লোকজন পাড়গুলোকে পাহাড় নামে ডাকে। এ ছাড়া বোরহানউদ্দিনে আছে ২০০ বছরের আবদুল জব্বার চৌধুরী জমিদারবাড়ি, বোরহানউদ্দিন চৌধুরী জমিদারবাড়ি, বোরহানউদ্দিন চৌধুরী জমিদারবাড়ির মসজিদ, হায়দার আলী মিয়াবাড়ি। প্রাচীন স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন হিসেবে এগুলো যে কাউকে মোহিত করবে। এগুলোর নির্মাণশৈলী দেখলে নানা প্রশ্নের জন্ম দেবে। প্রত্নতত্ত্ব বা পুরাকীর্তি যাঁদের আকৃষ্ট করে, নিঃসন্দেহে এ স্থাপনা তাঁদের নিরাশ করবে না।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

দুমকীতে খাল সংস্কার প্রকল্পে অনিয়মসহ শত শতগাছ উপড়ে ফেলার অভিযোগ।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর প্রাচীন স্থাপত্যের হাতছানি ভোলায়

আপডেট টাইম ১২:৪৫:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর ২০২২

আঃ মজিদ খান, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ মনপুরায় ম্যানগ্রোভ বনে হরিণ। বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে নদীবেষ্টিত গাঙ্গেয় দ্বীপজেলা ভোলা। রুপালি ইলিশ, ধান আর সুপারির জন্য এ জেলা সুপরিচিত। নান্দনিক প্রাচীন স্থাপত্য এ জেলাকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা, যা অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে পড়ে আছে। সরকারের পুরাকীর্তি সংরক্ষণ বিভাগ এদিকে নজর দিলে অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।
ভোলার সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে আছে অনেক বিস্তৃত চর। সেখানকার ম্যানগ্রোভ বন ও সমুদ্রসৈকত মিলে অপরূপ সৌন্দর্যের আধার প্রকৃতিপ্রেমীদের নজর কাড়ছে। এক পাশে সৈকত, আরেক পাশে বন; সঙ্গে বাতাসের শো শো শব্দ, সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মায়াবী দৃশ্য যে কারও মনে অদ্ভুত দোলা দেবে। এখানে না এলে প্রকৃতির অবারিত সাজের পসরা বর্ণনা করে বোঝানো কঠিন।
তারুয়া দ্বীপঃ ভোলা সদর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণে চরফ্যাশন উপজেলা। উপজেলার সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় প্রায় দেড় শ বছর আগে জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচর। এই চরের তারুয়া সমুদ্রসৈকতটি অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বিচ্ছিন্ন ঢালচর থেকে ট্রলারে প্রায় দেড় ঘণ্টার নদীপথ পেরিয়ে তারুয়া। স্পিডবোটে গেলে লাগে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। বঙ্গোপসাগরের একেবারে দক্ষিণের মোহনায় মনোরম ম্যানগ্রোভ বনসমৃদ্ধ তারুয়া চর। তারুয়া সৈকতে দেখা মিলবে চকচকে সাদা বালু আর লাল কাঁকড়ার মিছিল। মাথার ওপর কিংবা বেলাভূমিতে বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো পাখির কলকাকলিতে মুখর চারপাশ। তবে শীতের সময় অতিথি পাখির বিচরণে এক অতি প্রাকৃতিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বর্ণিল আলোকচ্ছটা মোহিত করবে যে কাউকে। নাগরিক ব্যস্ততার বন্দিজীবনে অবকাশযাপনের জন্য প্রকৃতিপ্রেমীরা একটু সময় করে এখানে এলে প্রকৃতি তাঁদের নিরাশ করবে না।
তারুয়া ম্যানগ্রোভ বনঃ ঢালচরের ৩১ দশমিক ৩১ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ২৮ দশমিক ২০ বর্গকিলোমিটারজুড়ে সুবিশাল বনাঞ্চল। এর মধ্যে তারুয়ার বন অন্যতম। সেখানে আছে গেওয়া, গড়ান, কেওড়া, বাইন, রেইনট্রিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ। শীত এলেই এখানে আস্তানা গড়ে বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো অতিথি পাখি।
১৯৭৬ সালে এখানে পরিকল্পিতভাবে বনাঞ্চল শুরু হয়। কোনো হিংস্র পশুর ভয় না থাকলেও বনে আছে শিয়াল, বনবিড়াল, হরিণ, সাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। বাগানের মধ্যে দিয়ে সরু পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটু ভেতরে গেলেই মনে হবে, এ যেন আরেক ভুবন। সেখানে শীতল ছায়াবিশিষ্ট একটি মাঠ। স্থানীয়ভাবে জায়গাটা বরইতলা নামে পরিচিত।
তারুয়া সমুদ্রসৈকতঃ বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা তারুয়ার শুভ্র বালুর সমুদ্রসৈকতে লোনাপানির ঢেউ শো শো শব্দে আছড়ে পড়ে। একদিকে উঁচু ঢেউ, অন্যদিকে সবুজ বনভূমি দেখে কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটা সৈকতের চেয়ে অন্য রকম মনে হতে পারে। সৈকতে হেঁটে বেড়াতে গেলেই চোখে পড়বে লাল কাঁকড়ার বিচরণ। গুটি গুটি পায়ে দৌড়ে চলে লাল কাঁকড়ার দল। মানুষের অবস্থান টের পেলে চোখের নিমেষেই লুকিয়ে পড়ে বালুর গর্তে। এখানে দেখা যায় চিত্রা হরিণ, বানর, উদবিড়াল, পাতিশিয়াল, বন্য মহিষ ও গরু, বনবিড়াল, বনমোরগসহ নানা প্রজাতির প্রাণী। বক, শঙ্খচিল, মথুরা, কাঠময়ূর, কোয়েল, গুইসাপ, বেজি, কচ্ছপ নানা ধরনের সাপও আছে এ চরে।
চর কুকরি-মুকরিঃ চর কুকরি-মুকরি আরেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। ট্রলার বা স্পিডবোটে মাঝারি খালের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যাওয়ার সময় দুই পাশে ম্যানগ্রোভ বন দেখে সুন্দরবনের অবয়ব ভেসে ওঠে। হেঁটে বনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হবে যেন সুন্দরবনের কোনো অংশ। বলে আছে সুন্দরী, গেওয়া, গরান ও শ্বাসমূলীয় গাছ। এ ছাড়া বনে গোলপাতার সমাহারও চোখে পড়ার মতো। কুকরির পূর্ব অংশে নারকেলবাগান। নামে নারকেলবাগান হলেও নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজির আচ্ছাদনে ঢাকা পড়ে সূর্য। বনের ভেতর যাওয়ার জন্য গামবুট অথবা কেডস উপযুক্ত। অন্যথায় শ্বাসমূলে পা রক্তাক্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। নদীর পাড় আরও মুগ্ধতার, শুভ্রতায় মোড়ানো। সব সময় সাদা বকের সমারোহ থাকে সেখানে। শীতের সময় অতিথি পাখি এলাকাকে দেয় ভিন্নমাত্রা। এ চরে বেড়ানোর জন্য শীত উপযুক্ত সময়। কুকরি-মুকরির শীতকালের দৃশ্য মুগ্ধ হওয়ার মতো।
চর কুকরি-মুকরির ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে একটি খাল। স্থানীয় মানুষের কাছে খালটি ভাড়ানি খাল হিসেবেই পরিচিত। মেঘনার বিশাল বুক থেকে বয়ে গিয়ে খালটি বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এখানকার ধু ধু বালিয়াড়ির ওপর দাঁড়ালে সাগরের শো শো শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাবে না। স্থানীয় মানুষ এ স্পটকে বালুর ধুম নামে ডাকে। একটু সামনে এগোলেই ঢালচর। এরপরই বঙ্গোপসাগর।
চর কুকরি-মুকরির প্রধান আকর্ষণ সাগরপাড়। এখানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত কিংবা সূর্য ডোবার দৃশ্য ভ্রমণপিপাসুদের মুগ্ধ করবে। চর কুকরি-মুকরিতে ডুবন্ত সূর্যের লাল, হলুদ, কমলা আভা সবুজরঙা বনে ছড়িয়ে পড়ে বনটিকে আরও মায়াবী করে তোলে।
কীভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে লঞ্চে সরাসরি চরফ্যাশন যাওয়া যায়। লঞ্চ থেকে নেমে মোটরসাইকেল কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে চর দক্ষিণ আইচার চর কচ্ছপিয়া ঘাটে যেতে হবে। এরপর ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বেশ খানিকটা জলপথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছানো যাবে চর কুকরি-মুকরি অথবা তারুয়া দ্বীপে।
লক্ষ্মীপুর থেকে যেতে হলে মজু চৌধুরী লঞ্চ ও ফেরিঘাট থেকে লঞ্চ-ট্রলার-স্পিডবোটে ভোলার ইলিশা ঘাট। সেখান থেকে অটোরিকশায় ভোলা সদরে। শহরের বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে চরফ্যাশন গিয়ে দক্ষিণ আইচার চর কচ্ছপিয়া ঘাট।
থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাঃ চর কুকরি-মুকরি বাজারের পাশে বন বিভাগের একটি রিসোর্ট আছে। সেখানে থাকা যায়। বাজারে হানিফ নামের একটি হোটেল আছে। রিসোর্ট ও ইউনিয়ন পরিষদে খাওয়ার ব্যবস্থা না থাকলেও এখানে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে বেশ কয়েকটি হোম স্টে সার্ভিস চালু আছে। সেখানে স্বল্প খরচে থাকা যায়। মনে রাখতে হবে, তারুয়া যেতে হলে স্পিডবোট অথবা ট্রলারে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে কুকরি-মুকরি থেকে ওই পরিবহন ভাড়া করে বা রিজার্ভ নিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসতে হবে।
মনপুরাঃ ভোলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে মেঘনার বুকে জেগে ওঠা দ্বীপ উপজেলা মনপুরার অবস্থান। প্রমত্ত মেঘনার উত্তাল ঢেউয়ের পলি জমে এ দ্বীপের জন্ম হয়। সাগরের কোল ঘেঁষে জন্ম নেওয়ায় স্থানীয়দের কাছে মনপুরা ‘সাগরকন্যা’ হিসেবে পরিচিত। এখানে ভোরে সূর্যের আগমনী বার্তা ও বিকেলে পশ্চিম আকাশের সিঁড়ি বেয়ে এক পা দুই পা করে মেঘের বুকে সূর্যের হারিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সত্যিই অতুলনীয়। মনপুরা উপজেলা প্রায় ৮০০ বছরের পুরোনো। ৭০০ বছর আগে এখানে পর্তুগিজ জলদস্যুদের আস্তানা ছিল। যার প্রমাণ মেলে মনপুরায় আজও সে সময়ের লোমশ কুকুরের বিচরণ।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি মনপুরা অপার সম্ভাবনাময়। পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় এখানকার হাজার হাজার একর জায়গাজুড়ে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। আছে বাহারি প্রজাতির বৃক্ষ, তরুলতার সমাহার। বনে আছে হরিণ, বানর, ভালুকসহ নানা বৈচিত্র্যময় প্রাণী। এর গহিন জঙ্গলে ভয়ংকর কিছু মাংসাশী প্রাণী আছে বলেও জনশ্রুতি আছে। মনপুরায় ৮ থেকে ১০টি বিচ্ছিন্ন চর আছে। এগুলো হচ্ছে চর তাজাম্মল, চর জামশেদ, চর পাতিলা, চর পিয়াল, চর নিজাম, লালচর, বালুয়ারচর, চর গোয়ালিয়া ও সাকুচিয়ার চর। চরগুলো দেখলে মনে হবে যেন কিশোরীর গলায় মুক্তার মালা। এসব চরাঞ্চলে বন বিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে সবুজ বিপ্লব। চোখধাঁধানো রূপ নিয়েই যেন চরগুলোর জন্ম। চরগুলোয় মানুষের বসতি আছে। তাঁদের পেশা অনেকটা নদীর ওপর নির্ভরশীল। জীবনযাত্রার মানও কিছুটা ভিন্ন ধরনের। তাই সবুজের সমারোহ আর পাখির কলকাকলিতে মুখরিত বিচ্ছিন্ন সাগরকন্যা মনপুরা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বের দাবিদার।
ভ্রমণপিপাসু মানুষকে মুগ্ধতার বন্ধনে আটকে দেওয়ার অলৌকিক ক্ষমতা আছে সাগরকন্যার। শীত মৌসুমে এর চিত্র ভিন্ন ধরনের। সুদূর সাইবেরিয়া থেকে ছুটে আসা অতিথি পাখির আগমনে চরাঞ্চলগুলো নতুন রূপ পায়। তখন মনপুরার চর অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। মনপুরায় একটি ল্যান্ডিং স্টেশন আছে। সেখান থেকে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। উপভোগ করা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য।
সম্প্রতি মনপুরার সাগর মোহনায় জেগে ওঠা প্রায় এক কিলোমিটার বালুকাময় সৈকত ঘিরে তৈরি হয়েছে দক্ষিণা হাওয়া সি-বিচ। এই সৈকতকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, ভালো হোটেল, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতিসহ বিভিন্ন সুবিধা বাড়াতে পারলে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে মনপুরায়। তবে সরকারি, বেসরকারি সংস্থাগুলো যদি গুরুত্বের সঙ্গে দৃষ্টি দেয়, তাহলে শিগগিরই এখানে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব।
যোগাযোগব্যবস্থাঃ ঢাকা থেকে সরাসরি লঞ্চযোগে মনপুরা আসা যায়। সন্ধ্যায় লঞ্চে উঠে সকাল ছয়টায় পৌঁছানো যায় মনপুরায়। এ ছাড়া ভোলার ইলিশা ঘাট থেকে রাতে লঞ্চ ও সি-ট্রাকে তজুমদ্দিন অথবা ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে করেও যাওয়া যায়।
প্রাচীন স্থাপত্যঃ ভোলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে বোরহানউদ্দিন উপজেলা। এখানে আছে বেশ কয়েকটি সুদৃশ্য প্রাচীন নান্দনিক স্থাপনা। এগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে অনেক প্রকৌশলী নির্মাণশৈলী দেখলে বিস্ময়ে থ হয়ে যান। এ রকম স্থাপনার সন্ধান মেলে বোরহানউদ্দিন উপজেলা সদর থেকে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দক্ষিণে সাঁচড়া ইউনিয়নের গুড়িন্দাবাড়িতে। প্রায় ৫৫০ বছর আগে তৎকালীন চন্দ্রদ্বীপের রাজা জয়দেবের ছোট মেয়ে বিদ্যা সুন্দরীকে বিয়ে দিয়ে তাঁদের জন্য এই রাজবাড়ি নির্মাণ করেন। কিছু জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়লেও এর নির্মাণশৈলী অবাক করার মতো। স্থানীয় মানুষ এর ইতিহাস বলতে পারে না। তবে ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাজার জামাতা রাজার গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করতেন। এ কারণে ওই বাড়িকে একসময় গোয়েন্দাবাড়ি নামে ডাকা হতো। ধারণা করা হয়, রাজশাসনের পর কালক্রমে মানুষের মুখে মুখে ওই বাড়ির নাম গুড়িন্দাবাড়ি হয়ে যায়। এ পুরাকীর্তি সরকারি হেফাজতে নিয়ে সংরক্ষণ করা উচিত। পরিপূর্ণ গবেষণায় এ স্থান থেকে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব।
রাজা জয়দেব এলাকায় পানীয় জলের জন্য তাঁর দুই মেয়ের নামে কমলা সুন্দরীর দিঘি ও বিদ্যা সুন্দরীর দিঘি খনন করেন। দিঘি দুটি কালক্রমে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তবে কমলা সুন্দরীর দিঘির একটি পাড় ও বিদ্যা সুন্দরীর দিঘির দুটি পাড় কালের সাক্ষ্য বহন করছে। স্থানীয় লোকজন পাড়গুলোকে পাহাড় নামে ডাকে। এ ছাড়া বোরহানউদ্দিনে আছে ২০০ বছরের আবদুল জব্বার চৌধুরী জমিদারবাড়ি, বোরহানউদ্দিন চৌধুরী জমিদারবাড়ি, বোরহানউদ্দিন চৌধুরী জমিদারবাড়ির মসজিদ, হায়দার আলী মিয়াবাড়ি। প্রাচীন স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন হিসেবে এগুলো যে কাউকে মোহিত করবে। এগুলোর নির্মাণশৈলী দেখলে নানা প্রশ্নের জন্ম দেবে। প্রত্নতত্ত্ব বা পুরাকীর্তি যাঁদের আকৃষ্ট করে, নিঃসন্দেহে এ স্থাপনা তাঁদের নিরাশ করবে না।