সাইদুল ইসলাম চৌধুরী।
কালীগঞ্জে জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করেছেন গাজিপুর কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
ঘটনা রোববার রাতের, তবে বিষয়টি জানাজানি হলে মঙ্গলবার গঠন করা হয় কমিটি।
মৃত শিরিন বেগম উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চুয়ারিয়াখোলা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী। সন্তান জন্ম দেয়ার পর তিনি মারা যান। তার ১০ বছর বয়সী জমজ ছেলে আছে।
শিরিনের স্বামী রাজ্জাক বলেন, রোববার সকালে আমার স্ত্রীকে নিয়ে জনসেবা হাসপাতাল যাই। সে সময় হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক ছিল না। তবে এক নার্স রোগীর কাগজপত্র দেখে বলে আজই সিজার করতে হবে। তিনি মাসুদ নামের এক ডাক্তারকে ফোন করে ডেকে আনেন।
‘মাসুদ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আমার স্ত্রীর সিজার করেন। তার এ পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন বলা হয়। আমি দুজন ডোনার হিসেবে আমার শ্যালক ও এক ভাগ্নেকে নেই।
‘তারা শুরুতে শ্যালকের কাছ থেকে এক ব্যাগ রক্ত নিয়ে আমার স্ত্রীর শরীরে পুশ করে। এরপর আমার ভাগ্নের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহের জন্য তাকে হাসপাতালে বেডে নেয়। এরইমধ্যে নার্স শামীমা বি পজেটিভের এক ব্যাগ রক্ত আমার স্ত্রীর শরীরে পুশ করে ফেলেন। তখনই আমার স্ত্রীর খিঁচুনি শুরু হয়।’
আব্দুর রাজ্জাক জানান, বি পজেটিভ রক্ত দেয়ার কারণ জানতে চাইলে হাসপাতালের ল্যাব সহকারী শাওন মিয়া তাকে জানান যে এতে কোনো সমস্যা হবে না। প্রসূতির অবস্থার অবনতি হতে থাকলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সে রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠায়। সেখানকার চিকিৎসক জানান যে ওই নারীকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ওই হাসপাতালে গিয়ে মালিক, অভিযুক্ত চিকিৎসক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। বক্তব্য নিতে তাদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ কেউ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ না করলে তো আমরা কারও বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি না।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মনজুর-ই-এলাহী জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনী বিভাগের চিকিৎসক সানজিদা পারভীনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বিষয়টি তদন্তের জন্য। কমিটি আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসসাদিকজামান জানান, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।