ঢাকা ০৯:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ফুটপাত উদ্ধার করতে হবে: মেয়র রেজাউল আন্তর্জাতিক মে দিবস পালন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাসাদ নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয় রাঙ্গুনিয়ায় চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানে প্রতিদ্বন্দ্বীবিহীন প্রার্থী ভোট হবে ভাইস চেয়ারম্যানের (চার প্রার্থীর মধ্যে দুই প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দুই জনের মধ্যে।) “কেরানীগঞ্জে এক হাজার পথচারীদের মাঝে শরবত বিতরণ করলেন সাংবাদিকরা” লক্ষ্মীপুরে শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ পুরস্কার নিয়ে বির্তক দিঘলিয়ায় মে দিবস পালিত। মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিড়ি শ্রমিকদের র‌্যালি ও সমাবেশ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ড তীব্রতাপ প্রভায়ে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ বগুড়া শাজাহানপুরে অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও “দেশ টিভির সাংবাদিককে লিগ্যাল নোটিশ”

একটি চর, একটি শিখনকেন্দ্র ও কিছু সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের গল্প

মো: আলতাফ হোসেন, ইন্দুরকানী, পিরোজপুর।

চর সাউদখালী গ্রাম। চারদিকে নদী বেষ্টিত একটি চর। এরই মাঝে বই-খাতা নিয়ে
অধীর আগ্রহে পড়তে এসেছে শিশুরা, দেখতে যে কারো কাছে খুবই ভাললাগে, তবে এ
শিশুদের গল্প অন্য শিশুদের মত নয়। তাদের পোশাক ও চেহারা দেখেই বলা যায়
তাদের পৃথিবীটা কত ছোট। অন্য পাঁচ জন শিশুদের মত অভিভাবকরা তাদের স্কুলে
নিয়ে এসে বসে থাকে না। সুন্দর পোশাক, ভাল স্কুল ব্যাগ, টিফিনের টাকা অথবা
ছুটির দিনে গাড়িতে করে একটু বেড়াতে যাওয়া এসব শিশুদের কাছে স্বপ্নমাত্র।

বলছি পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের চর সাউদখালী
(মাঝের চর) আশ্রায়ন প্রকল্প এলাকার কথা। চারদিকে নদী বেষ্টিত প্রায় ৪০০
পরিবারের এ গ্রামটির প্রায় সকলেই জেলে পরিবারের। আর্থিক স্বচ্ছলতা না
থাকার কারণে তাদের জীবনযাপন অনেকটাই আলাদা। ২০০৭ সালে সিডর পরবর্তী একটি
সাইক্লোন সেল্টার কাম সরকারি প্রাইমারী স্কুল হওয়াতে কিছুটা আলোর মুখ
দেখতে শুরু করেছে এখানের শিশুরা। তবে অভিভাবকদের দারিদ্রতা এবং শিক্ষায়
অনাগ্রহ অনেকটাই বাধাগ্রস্থ করে সে আলোকে।

এইরূপ প্রেক্ষিতে দাতব্য প্রতিষ্ঠান এইডিটি এর সহায়তায় ২০১৮ সাল থেকে
এসকল সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষায় আগ্রহ বৃদ্ধি করতে বাতিঘর
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রে কাজ করে যাচ্ছে রূপসী বাংলা উন্নয়ন
সংস্থা নামের একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ ৫ বছরের এই সংগ্রামে
অনেকটাই এগিয়েছে শিশুরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় আশ্রায়ন প্রকল্পের একটি
ঘরে ৩০ জনের অধিক শিশুরাই পাঠদান করছে। শিক্ষিকা ফাহিমা বেগম জানান,
প্রথম দিকে শিশুরা আসতে চাইতো না, ঘরে ঘরে গিয়ে অভিভাবকদের বলে আসতাম।
কোলে করে শিশুদের শিখন কেন্দ্রে নিয়ে আসতাম, চকলেট-বিস্কুট দিতাম।
অভিভাবকরা শিশুদের জন্য কোন টাকা খরচ করতে চাইতো না, অনেক সময় সামর্থ ছিল
না অনেক পরিবারের। তবে এখন অনেক অভিভাবকই সচেতন হয়েছেন। নিজেরাই তাদের
ছেলে-মেয়েদের কেন্দ্রে নিয়ে আসছেন। হাজিরা খাতায় ৩০ জনের নাম থাকলেও
বর্তমানে উপস্থিতি তার চেয়েও বেশী। এখান থেকে শিশুরা এক বছর পাঠ শিখে
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়। ফলে শিশুদের কাছে সরকারি পাঠ্যবই অনেকটা
সহজ হয়েছে। বাস্তবায়নকারী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোঃ আজাদ হোসেন
বাচ্চু জানান- সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে আমরা কাজটি করে আসছি। এখানে
শিশুরা লেখাপড়া শিখবে, মানুষ হবে এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি, আমাদের
প্রত্যাশা। এইডিটি পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন- প্রয়োজনের তুলনায় সার্বিক
সহায়তা দিতে না পারলেও অন্তত বিনামূল্য বই, খাতা, কলম, বার্ষিক ক্রীড়া
প্রতিযোগিতাসহ পাঠদান সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। এতে করে অনেক শিশু ও অভিভাবকগন
পাঠদানে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। সকলের সহযোগিতা পেলে হয়তো এ শিশুরাও দেখাতে
পারে নৈপুন্য, গড়তে পারে সম্ভবনাময় ভবিষ্যত।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

ফুটপাত উদ্ধার করতে হবে: মেয়র রেজাউল

একটি চর, একটি শিখনকেন্দ্র ও কিছু সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের গল্প

আপডেট টাইম ০৬:৪৯:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ অগাস্ট ২০২২

মো: আলতাফ হোসেন, ইন্দুরকানী, পিরোজপুর।

চর সাউদখালী গ্রাম। চারদিকে নদী বেষ্টিত একটি চর। এরই মাঝে বই-খাতা নিয়ে
অধীর আগ্রহে পড়তে এসেছে শিশুরা, দেখতে যে কারো কাছে খুবই ভাললাগে, তবে এ
শিশুদের গল্প অন্য শিশুদের মত নয়। তাদের পোশাক ও চেহারা দেখেই বলা যায়
তাদের পৃথিবীটা কত ছোট। অন্য পাঁচ জন শিশুদের মত অভিভাবকরা তাদের স্কুলে
নিয়ে এসে বসে থাকে না। সুন্দর পোশাক, ভাল স্কুল ব্যাগ, টিফিনের টাকা অথবা
ছুটির দিনে গাড়িতে করে একটু বেড়াতে যাওয়া এসব শিশুদের কাছে স্বপ্নমাত্র।

বলছি পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের চর সাউদখালী
(মাঝের চর) আশ্রায়ন প্রকল্প এলাকার কথা। চারদিকে নদী বেষ্টিত প্রায় ৪০০
পরিবারের এ গ্রামটির প্রায় সকলেই জেলে পরিবারের। আর্থিক স্বচ্ছলতা না
থাকার কারণে তাদের জীবনযাপন অনেকটাই আলাদা। ২০০৭ সালে সিডর পরবর্তী একটি
সাইক্লোন সেল্টার কাম সরকারি প্রাইমারী স্কুল হওয়াতে কিছুটা আলোর মুখ
দেখতে শুরু করেছে এখানের শিশুরা। তবে অভিভাবকদের দারিদ্রতা এবং শিক্ষায়
অনাগ্রহ অনেকটাই বাধাগ্রস্থ করে সে আলোকে।

এইরূপ প্রেক্ষিতে দাতব্য প্রতিষ্ঠান এইডিটি এর সহায়তায় ২০১৮ সাল থেকে
এসকল সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষায় আগ্রহ বৃদ্ধি করতে বাতিঘর
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রে কাজ করে যাচ্ছে রূপসী বাংলা উন্নয়ন
সংস্থা নামের একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ ৫ বছরের এই সংগ্রামে
অনেকটাই এগিয়েছে শিশুরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় আশ্রায়ন প্রকল্পের একটি
ঘরে ৩০ জনের অধিক শিশুরাই পাঠদান করছে। শিক্ষিকা ফাহিমা বেগম জানান,
প্রথম দিকে শিশুরা আসতে চাইতো না, ঘরে ঘরে গিয়ে অভিভাবকদের বলে আসতাম।
কোলে করে শিশুদের শিখন কেন্দ্রে নিয়ে আসতাম, চকলেট-বিস্কুট দিতাম।
অভিভাবকরা শিশুদের জন্য কোন টাকা খরচ করতে চাইতো না, অনেক সময় সামর্থ ছিল
না অনেক পরিবারের। তবে এখন অনেক অভিভাবকই সচেতন হয়েছেন। নিজেরাই তাদের
ছেলে-মেয়েদের কেন্দ্রে নিয়ে আসছেন। হাজিরা খাতায় ৩০ জনের নাম থাকলেও
বর্তমানে উপস্থিতি তার চেয়েও বেশী। এখান থেকে শিশুরা এক বছর পাঠ শিখে
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়। ফলে শিশুদের কাছে সরকারি পাঠ্যবই অনেকটা
সহজ হয়েছে। বাস্তবায়নকারী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোঃ আজাদ হোসেন
বাচ্চু জানান- সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে আমরা কাজটি করে আসছি। এখানে
শিশুরা লেখাপড়া শিখবে, মানুষ হবে এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি, আমাদের
প্রত্যাশা। এইডিটি পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন- প্রয়োজনের তুলনায় সার্বিক
সহায়তা দিতে না পারলেও অন্তত বিনামূল্য বই, খাতা, কলম, বার্ষিক ক্রীড়া
প্রতিযোগিতাসহ পাঠদান সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। এতে করে অনেক শিশু ও অভিভাবকগন
পাঠদানে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। সকলের সহযোগিতা পেলে হয়তো এ শিশুরাও দেখাতে
পারে নৈপুন্য, গড়তে পারে সম্ভবনাময় ভবিষ্যত।