ঢাকা ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।। বরিশালে সুলভ মুল্যে বসুন্ধরা পন্য পেয়ে ক্রেতারা খুশী। বাবুগঞ্জে স্কুল ছুটির পরে বাড়ি যাওয়ার সময় দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজ। আমার বাবাও মায়ের দেওয়া উপদেশ বড়দের সম্মান কর ছোটদের স্নেহ করো। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখী নারী উদ্যোক্তা মেলা শুরু। টাঙ্গাইলে তিনদিন ব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা শুরু বাকেরগঞ্জে প্রধান মন্ত্রীর ছবি ব্যঙ্গক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট করায় হায়দর সিপাই গ্রেফতার। বাকেরগঞ্জে স্ত্রীর দায়ের কৃত মামলায় স্বামী পারভেজ খান গ্রেফতার।। বাকেরগঞ্জে তরমুজ চাষী হত্যা চেষ্টা মামলার আসামী রুদ্র গাজী গ্রেফতার টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড অনুষ্ঠিত

ডাক্তার হয়ে উঠা হলো না ফাতেমার’ সড়কে ঝরল প্রাণ

শেখ নাদিম, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়ন এর কালুশাহ নগরের বাসিন্দা মো: ফারুকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতল। সড়ক দুর্ঘটনায়
মেয়েকে হারিয়ে পাগল প্রায় মা আয়েশা। কান্না করতে করতে মোঃ ফারুক বলেন,মেয়ে টা আমার মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গেল। আমি ভাবতেই পারিনি যে সে মারা গেছে। কাছে গিয়ে বলেছি, ওঠ মা। কিন্তু কোনো কথা নেই। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম, সব শেষ। মেয়ে আমার আর নেই। তখন আর বাঁচতে ইচ্ছে হয়নি। রাস্তায় শুয়ে ভেবেছিলাম, আমাকেও গাড়ি পিষে দিক। চোখের সামনে মেয়ের এমন মৃত্যু আমি সইব কেমন করে!’

গতকাল রোববার সকালে সীতাকুণ্ডের সলিমপুরে মো. ফারুকের বাড়িতে গিয়ে এমন শোকাবহ পরিবেশ দেখা গেল। আগের দিন শনিবার দুপুরে নিজের মোটরসাইকেলের পেছনে বসিয়ে একমাত্র মেয়ে ফাতেহা জাহান জেবাকে (১৯) চট্টগ্রাম নগরের এনায়েত বাজার মহিলা কলেজে নিয়ে যাচ্ছিলেন ফারুক। পথে ফৌজদারহাট বায়েজিদ সংযোগ সড়কের ৩ নম্বর সেতু এলাকায় ব্রেক কষলে বাইক থেকে পড়ে যান ফাতেহা। মুহূর্তেই পেছন থেকে আসা কাভার্ড ভ্যানের চাপায় মৃত্যু হয় তাঁর।

নিহত ফাতেহা এনায়েত বাজার মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। শনিবার বেলা দুইটায় তাঁর ব্যবহারিক পরীক্ষা ছিল।

মো. ফারুকের তিন ছেলে–মেয়ের মধ্যে ফাতেহা সবার বড়। একমাত্র মেয়ে হলেও বাবা-মায়ের কাছে খুব বেশি চাহিদার কথা বলতেন না তিনি। লেখাপড়া নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। অনেকটা নিভৃতচারী ছিলেন তিনি। মেয়েকে নিয়ে ফারুকের অনেক স্বপ্ন ছিল। তিনি বলেন, ‘মেয়ের ইচ্ছা ছিল সে চিকিৎসক হবে। এসএসসিতে জিপিএ–৫ পেয়েছিল। এইচএসসির প্রস্তুতিও বেশ ভালো ছিল। কিন্তু এখন সব শেষ।’

বাড়ির সামনের একচিলতে জায়গায় স্বজন আর প্রতিবেশীদের ভিড়। সেখানে চেয়ারে বসে ফাতেহার কথা বলতে বলতে ক্ষণে ক্ষণে ডুকরে কেঁদে উঠছিলেন ফারুক। তিনি বলেন, ‘১৮ বছর ধরে মেয়েকে তিল তিল করে বড় করেছি। কখনো কাছছাড়া করিনি। খুব শখ ছিল মেয়েকে সাজিয়ে-গুজিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠাব। এভাবে তাকে বিদায় দিতে হবে কখনো কল্পনাও করিনি। আমার বুকটা ভেঙে যাচ্ছে।’ নিহত ফাতেহার বাবা ফারুক আর মা আয়েশা বেগম সারা রাত ঘুমাননি। সকাল থেকে ফারুক তাঁর ঘরের সামনে লাগোয়া দোকানের চেয়ারে বসে কাঁদছিলেন। তাঁর স্ত্রী আয়েশা ঘরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। চিৎকার করে মেয়েকে ডাকছিলেন ক্ষণে ক্ষণে।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।।

ডাক্তার হয়ে উঠা হলো না ফাতেমার’ সড়কে ঝরল প্রাণ

আপডেট টাইম ০৯:০২:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ জুলাই ২০২২

শেখ নাদিম, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়ন এর কালুশাহ নগরের বাসিন্দা মো: ফারুকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতল। সড়ক দুর্ঘটনায়
মেয়েকে হারিয়ে পাগল প্রায় মা আয়েশা। কান্না করতে করতে মোঃ ফারুক বলেন,মেয়ে টা আমার মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গেল। আমি ভাবতেই পারিনি যে সে মারা গেছে। কাছে গিয়ে বলেছি, ওঠ মা। কিন্তু কোনো কথা নেই। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম, সব শেষ। মেয়ে আমার আর নেই। তখন আর বাঁচতে ইচ্ছে হয়নি। রাস্তায় শুয়ে ভেবেছিলাম, আমাকেও গাড়ি পিষে দিক। চোখের সামনে মেয়ের এমন মৃত্যু আমি সইব কেমন করে!’

গতকাল রোববার সকালে সীতাকুণ্ডের সলিমপুরে মো. ফারুকের বাড়িতে গিয়ে এমন শোকাবহ পরিবেশ দেখা গেল। আগের দিন শনিবার দুপুরে নিজের মোটরসাইকেলের পেছনে বসিয়ে একমাত্র মেয়ে ফাতেহা জাহান জেবাকে (১৯) চট্টগ্রাম নগরের এনায়েত বাজার মহিলা কলেজে নিয়ে যাচ্ছিলেন ফারুক। পথে ফৌজদারহাট বায়েজিদ সংযোগ সড়কের ৩ নম্বর সেতু এলাকায় ব্রেক কষলে বাইক থেকে পড়ে যান ফাতেহা। মুহূর্তেই পেছন থেকে আসা কাভার্ড ভ্যানের চাপায় মৃত্যু হয় তাঁর।

নিহত ফাতেহা এনায়েত বাজার মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। শনিবার বেলা দুইটায় তাঁর ব্যবহারিক পরীক্ষা ছিল।

মো. ফারুকের তিন ছেলে–মেয়ের মধ্যে ফাতেহা সবার বড়। একমাত্র মেয়ে হলেও বাবা-মায়ের কাছে খুব বেশি চাহিদার কথা বলতেন না তিনি। লেখাপড়া নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। অনেকটা নিভৃতচারী ছিলেন তিনি। মেয়েকে নিয়ে ফারুকের অনেক স্বপ্ন ছিল। তিনি বলেন, ‘মেয়ের ইচ্ছা ছিল সে চিকিৎসক হবে। এসএসসিতে জিপিএ–৫ পেয়েছিল। এইচএসসির প্রস্তুতিও বেশ ভালো ছিল। কিন্তু এখন সব শেষ।’

বাড়ির সামনের একচিলতে জায়গায় স্বজন আর প্রতিবেশীদের ভিড়। সেখানে চেয়ারে বসে ফাতেহার কথা বলতে বলতে ক্ষণে ক্ষণে ডুকরে কেঁদে উঠছিলেন ফারুক। তিনি বলেন, ‘১৮ বছর ধরে মেয়েকে তিল তিল করে বড় করেছি। কখনো কাছছাড়া করিনি। খুব শখ ছিল মেয়েকে সাজিয়ে-গুজিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠাব। এভাবে তাকে বিদায় দিতে হবে কখনো কল্পনাও করিনি। আমার বুকটা ভেঙে যাচ্ছে।’ নিহত ফাতেহার বাবা ফারুক আর মা আয়েশা বেগম সারা রাত ঘুমাননি। সকাল থেকে ফারুক তাঁর ঘরের সামনে লাগোয়া দোকানের চেয়ারে বসে কাঁদছিলেন। তাঁর স্ত্রী আয়েশা ঘরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। চিৎকার করে মেয়েকে ডাকছিলেন ক্ষণে ক্ষণে।