ঢাকা ১১:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।। বরিশালে সুলভ মুল্যে বসুন্ধরা পন্য পেয়ে ক্রেতারা খুশী। বাবুগঞ্জে স্কুল ছুটির পরে বাড়ি যাওয়ার সময় দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজ। আমার বাবাও মায়ের দেওয়া উপদেশ বড়দের সম্মান কর ছোটদের স্নেহ করো। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখী নারী উদ্যোক্তা মেলা শুরু। টাঙ্গাইলে তিনদিন ব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা শুরু বাকেরগঞ্জে প্রধান মন্ত্রীর ছবি ব্যঙ্গক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট করায় হায়দর সিপাই গ্রেফতার। বাকেরগঞ্জে স্ত্রীর দায়ের কৃত মামলায় স্বামী পারভেজ খান গ্রেফতার।। বাকেরগঞ্জে তরমুজ চাষী হত্যা চেষ্টা মামলার আসামী রুদ্র গাজী গ্রেফতার টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড অনুষ্ঠিত

পটুয়াখালীর ঐতিহাসিক সুন্দরী কমলা রানীর দীঘি।

আঃ মজিদ খান, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গের জেলা পটুয়াখালী শুধু মাত্র কুয়াকাটার জন্যই বিখ্যাত নয়। এই জেলাতে আরও অনেক দর্শনীয় স্হাপনা এবং ইতিহাস বিজড়িত স্হান রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম একটি সুন্দরী কমলার দীঘি। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া নদীর তীরে সুন্দরী কমলা রানীর দীঘি অবস্থিত। ৫২৯ বছর আগের সেই দীঘি এখনও কালের সাক্ষী।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, চন্দ্রদ্বীপ রাজার শৌর্যবীর্যের স্মৃতি এই কমলা রানীর দীঘি। কথিত আছে, রাজা জয়দেবের কোনো পুত্র সন্তান ছিল না। কমলা সুন্দরী ও বিদ্যাসুন্দরী নামে দুই মেয়ে ছিল। কমলা ছিলেন বুদ্ধিমতি। পিতার নির্দেশে তিনি রাজ্য পরিচালনা ও অশ্র চালনা শেখেন। পরিনত বয়সে রাজা কমলাকে বাবুগঞ্জ থানার দেহেরগতি গ্রামের উষাপতির পুত্র বলভদ্র বসুর সঙ্গে বিবাহ দেন । বলভদ্র বসু ছিলেন বিদ্যোৎসাহী ও বিভিন্ন শাস্রে পন্ডিত এবং যুদ্ধ বিদ্যায় অতুলনীয়। বলভদ্র বসু অবশ্য দেখতে কালো ছিলেন, তাই প্রজারা তাকে কালো রাজা বলতেন। বিয়ের পর কমলা স্বামীসহ কচুয়াতেই বসবাস করতেন। রাজা জয়দেব তার মৃত্যর সময় পরবর্তী রাজা নিযুক্ত করেছিলেন। ১৪৯০ খ্রিষ্টাব্দে কমলা সিংহাসনে আরোহণ করেন।
কমলা রানীর দীঘির পাড়ের উচ্চতা প্রায় ৪০-৫০ ফুট। এতবড়এবং উঁচু পাড় বিশিষ্ট দীঘি তখন এ বঙ্গে ছিলো প্রথম। দীঘি খননে তখনকার দিনে মোট নয় লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। কথিত আছে দীঘি খনন করলেও দীঘিতে পানি উঠছিলো না। অথচ দীঘির চার পাশে ডোবা নালা খাল বিল পানিতে ভর্তি। পানি উঠাতে পুঁজা দেওয়া হয়, কাঙ্গালি ভোজের ব্যবস্হা করা হয়। কিন্তু তার পরেও পানি ওঠেনি। এ জন্য কমলা রানীসহ সভাসদের ঘুম ছিলোনা। একদিন রাতে কমলা রানী পালঙ্কে ঘুমাচ্ছিলেন তখন কে যেন ফিস ফিস করে তার কানে কানে সাবধান করে দিয়ে যায় – যদি না সে পুকুরে খালি পায়ে একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে হেটে না আসেন, তা হলে কিছুতেই একফোঁটা পানিও উঠবেনা। তখন কমলা রানী পুঁজা আর্চনা সেরে খালি পায়ে দীঘিতে হাঁটা শুরু করেন। তিনি দীঘির মাঝ খানে যেতেই পানি ওঠা শুরু করে। চোঁখের পলকেই কমলা হাটু পর্যন্ত পানিতে ডুবেযায়। কমলা জেদ করেছিলেন কোমর পর্যন্ত পানি না হলে তিনি উপরে উঠবেন না।
এই কাজকরতে গিয়ে পানি এতটাই উঠে যায় যে কমলা আর সেই পানি থেকে তীরে উঠতে পারে নাই। তিনি ঐ পানিতে ডুবে হারিয়ে যান। সেই কমলা সুন্দরী দীঘির উত্তর পার দিয়ে তেঁতুলিয়া নদীতে চলে গেল। ৫২৯ বছর আগের সেই খাল ও দীঘিটা এখন কালের স্বাক্ষী হয়ে নানা স্মৃতি বহন করছে।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।।

পটুয়াখালীর ঐতিহাসিক সুন্দরী কমলা রানীর দীঘি।

আপডেট টাইম ০৩:০৩:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জুন ২০২২

আঃ মজিদ খান, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গের জেলা পটুয়াখালী শুধু মাত্র কুয়াকাটার জন্যই বিখ্যাত নয়। এই জেলাতে আরও অনেক দর্শনীয় স্হাপনা এবং ইতিহাস বিজড়িত স্হান রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম একটি সুন্দরী কমলার দীঘি। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া নদীর তীরে সুন্দরী কমলা রানীর দীঘি অবস্থিত। ৫২৯ বছর আগের সেই দীঘি এখনও কালের সাক্ষী।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, চন্দ্রদ্বীপ রাজার শৌর্যবীর্যের স্মৃতি এই কমলা রানীর দীঘি। কথিত আছে, রাজা জয়দেবের কোনো পুত্র সন্তান ছিল না। কমলা সুন্দরী ও বিদ্যাসুন্দরী নামে দুই মেয়ে ছিল। কমলা ছিলেন বুদ্ধিমতি। পিতার নির্দেশে তিনি রাজ্য পরিচালনা ও অশ্র চালনা শেখেন। পরিনত বয়সে রাজা কমলাকে বাবুগঞ্জ থানার দেহেরগতি গ্রামের উষাপতির পুত্র বলভদ্র বসুর সঙ্গে বিবাহ দেন । বলভদ্র বসু ছিলেন বিদ্যোৎসাহী ও বিভিন্ন শাস্রে পন্ডিত এবং যুদ্ধ বিদ্যায় অতুলনীয়। বলভদ্র বসু অবশ্য দেখতে কালো ছিলেন, তাই প্রজারা তাকে কালো রাজা বলতেন। বিয়ের পর কমলা স্বামীসহ কচুয়াতেই বসবাস করতেন। রাজা জয়দেব তার মৃত্যর সময় পরবর্তী রাজা নিযুক্ত করেছিলেন। ১৪৯০ খ্রিষ্টাব্দে কমলা সিংহাসনে আরোহণ করেন।
কমলা রানীর দীঘির পাড়ের উচ্চতা প্রায় ৪০-৫০ ফুট। এতবড়এবং উঁচু পাড় বিশিষ্ট দীঘি তখন এ বঙ্গে ছিলো প্রথম। দীঘি খননে তখনকার দিনে মোট নয় লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। কথিত আছে দীঘি খনন করলেও দীঘিতে পানি উঠছিলো না। অথচ দীঘির চার পাশে ডোবা নালা খাল বিল পানিতে ভর্তি। পানি উঠাতে পুঁজা দেওয়া হয়, কাঙ্গালি ভোজের ব্যবস্হা করা হয়। কিন্তু তার পরেও পানি ওঠেনি। এ জন্য কমলা রানীসহ সভাসদের ঘুম ছিলোনা। একদিন রাতে কমলা রানী পালঙ্কে ঘুমাচ্ছিলেন তখন কে যেন ফিস ফিস করে তার কানে কানে সাবধান করে দিয়ে যায় – যদি না সে পুকুরে খালি পায়ে একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে হেটে না আসেন, তা হলে কিছুতেই একফোঁটা পানিও উঠবেনা। তখন কমলা রানী পুঁজা আর্চনা সেরে খালি পায়ে দীঘিতে হাঁটা শুরু করেন। তিনি দীঘির মাঝ খানে যেতেই পানি ওঠা শুরু করে। চোঁখের পলকেই কমলা হাটু পর্যন্ত পানিতে ডুবেযায়। কমলা জেদ করেছিলেন কোমর পর্যন্ত পানি না হলে তিনি উপরে উঠবেন না।
এই কাজকরতে গিয়ে পানি এতটাই উঠে যায় যে কমলা আর সেই পানি থেকে তীরে উঠতে পারে নাই। তিনি ঐ পানিতে ডুবে হারিয়ে যান। সেই কমলা সুন্দরী দীঘির উত্তর পার দিয়ে তেঁতুলিয়া নদীতে চলে গেল। ৫২৯ বছর আগের সেই খাল ও দীঘিটা এখন কালের স্বাক্ষী হয়ে নানা স্মৃতি বহন করছে।