ঢাকা ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।। বরিশালে সুলভ মুল্যে বসুন্ধরা পন্য পেয়ে ক্রেতারা খুশী। বাবুগঞ্জে স্কুল ছুটির পরে বাড়ি যাওয়ার সময় দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজ। আমার বাবাও মায়ের দেওয়া উপদেশ বড়দের সম্মান কর ছোটদের স্নেহ করো। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখী নারী উদ্যোক্তা মেলা শুরু। টাঙ্গাইলে তিনদিন ব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা শুরু বাকেরগঞ্জে প্রধান মন্ত্রীর ছবি ব্যঙ্গক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট করায় হায়দর সিপাই গ্রেফতার। বাকেরগঞ্জে স্ত্রীর দায়ের কৃত মামলায় স্বামী পারভেজ খান গ্রেফতার।। বাকেরগঞ্জে তরমুজ চাষী হত্যা চেষ্টা মামলার আসামী রুদ্র গাজী গ্রেফতার টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড অনুষ্ঠিত

বাগেরহাট ঐতিহাসিক ষাট গম্বুজ মসজিদ।

আঃ মজিদ খান, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ বাগেরহাট ষাট গম্বুজ মসজিদ ঐতিহাসিক মসজিদের শহর। বাগেরহাট ১৯৮৫ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ইউনেস্কো এ শহরটিকে তালিকাভুক্ত করে ‘স্থাপত্য কর্মের একটি অসাধারণ নিদর্শন হিসেবে’, যা মানব ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বর্নণা করে। এদের মধ্যে ষাট গম্বুজ মসজিদ অন্যতম। এছাড়া খান জাহান সমাধি রয়েছে।
খান জাহান ছিলেন দিল্লির তুঘলক সুলতানদের অধীনে আমির। সম্ভবত তৈমুরের দিল্লি আক্রমণের (১৩৯৮ সাল) পরপরই বাংলায় আসেন তিনি। তার সমাধিতে খোদাই করে নাম হিসেবে লেখা আছে ‘উলুঘ খান-ই-আজম খান জাহান’। এ থেকে অনুমান করা হয়, তিনি তুর্কি (উলুঘ) দেশ থেকে এসেছিলেন এবং বাংলা সালতানাতের একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা (খান-ই-আজম) ছিলেন। বাংলার সুলতান শাসক নাসিরুদ্দীন মাহমুদ শাহর রাজত্বকালে (১৪৩৫-৫৯ সাল) খুলনা অঞ্চলে (যশোর-খুলনা) আসেন খানজাহান। তার নেতৃত্বে দক্ষিণবঙ্গের একটি বৃহৎ অঞ্চলে মুসলমানদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রথমে দিল্লির সুলতানের এবং পরে বাংলার সুলতানের কাছ থেকে সুন্দরবন অঞ্চল জায়গির হিসেবে পান। সুন্দরবন এলাকায় গভীর বন কেটে সেখানে জনবসতি গড়ে তোলেন। খানজাহান ছিলেন একজন প্রখ্যাত নির্মাতা। তিনি বৃহত্তর যশোর ও খুলনা জেলায় কয়েকটি শহর প্রতিষ্ঠা, মসজিদ, মাদরাসা, সরাইখানা, মহাসড়ক ও সেতু নির্মাণ এবং বহুসংখ্যক দিঘি খনন করেন। তার দুর্গবেষ্টিত সুরক্ষিত রাজধানী শহর ‘খলিফাতাবাদ’ ছাড়াও তিনি মারুলি কসবা, পৈগ্রাম কসবা ও বারোবাজারে তিনটি শহর প্রতিষ্ঠা করেন। তবে তার প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল খলিফাতাবাদ, যা বর্তমান বাগেরহাট জেলা। এক জরিপে দেখা গেছে, খলিফাতাবাদকে কেন্দ্র করে ৫০টিরও বেশি স্থাপনা তিনি তৈরি করেছিলেন। কথিত আছে, খানজাহান ৩৬০টি মসজিদ ও বহু বড় দিঘিও খনন করেছিলেন। ‘ষাট গম্বুজ মসজিদ’ খানজাহানের সবচেয়ে বিখ্যাত কীর্তি। নামাজ আদায়ের পাশাপাশি মসজিদটি খানজাহানের দরবার হিসেবেও ব্যবহৃত হতো।
স্থাপত্যকৌশলে ও লাল পোড়ামাটির ওপর লতাপাতার অলংকরণে মধ্যযুগীয় স্থাপত্যশিল্পে মসজিদটি এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। মসজিদটিকে ‘ষাট গম্বুজ’ বলা হলেও আদতে এতে মোট গম্বুজ আছে ৮১টি। ১৫২৬ সালে দিল্লিতে মোগলদের শাসন শুরু হলে ধীরে ধীরে এখানকার গুরুত্ব কমতে থাকে। ১৬১০ সালে ঢাকা বাংলার রাজধানী হওয়ায় এই অঞ্চল এক প্রকার লোকচক্ষুর অন্তরালে যেতে থাকে। বনজঙ্গলে গ্রাস করে মসজিদটিকে।
১৮৯৫ সালে এলাকাটিতে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ১৯০৩-০৪ সালের দিকে ষাট গম্বুজ মসজিদের পুনরুদ্ধার দৃশ্যমান হয়। ১৯০৭-০৮ সালে ছাদের এবং ২৮টি গম্বুজ পুনরুদ্ধার করা হয়। ১৯৮২-৮৩ সালে ইউনেসকো বাগেরহাট এলাকার জন্য একটি বেশ বড় পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ১৯৮৫ সালে এটিকে বিশ্বের উল্লেখযোগ্য স্থানের (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।।

বাগেরহাট ঐতিহাসিক ষাট গম্বুজ মসজিদ।

আপডেট টাইম ০৫:৪৩:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জুন ২০২২

আঃ মজিদ খান, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ বাগেরহাট ষাট গম্বুজ মসজিদ ঐতিহাসিক মসজিদের শহর। বাগেরহাট ১৯৮৫ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ইউনেস্কো এ শহরটিকে তালিকাভুক্ত করে ‘স্থাপত্য কর্মের একটি অসাধারণ নিদর্শন হিসেবে’, যা মানব ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বর্নণা করে। এদের মধ্যে ষাট গম্বুজ মসজিদ অন্যতম। এছাড়া খান জাহান সমাধি রয়েছে।
খান জাহান ছিলেন দিল্লির তুঘলক সুলতানদের অধীনে আমির। সম্ভবত তৈমুরের দিল্লি আক্রমণের (১৩৯৮ সাল) পরপরই বাংলায় আসেন তিনি। তার সমাধিতে খোদাই করে নাম হিসেবে লেখা আছে ‘উলুঘ খান-ই-আজম খান জাহান’। এ থেকে অনুমান করা হয়, তিনি তুর্কি (উলুঘ) দেশ থেকে এসেছিলেন এবং বাংলা সালতানাতের একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা (খান-ই-আজম) ছিলেন। বাংলার সুলতান শাসক নাসিরুদ্দীন মাহমুদ শাহর রাজত্বকালে (১৪৩৫-৫৯ সাল) খুলনা অঞ্চলে (যশোর-খুলনা) আসেন খানজাহান। তার নেতৃত্বে দক্ষিণবঙ্গের একটি বৃহৎ অঞ্চলে মুসলমানদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রথমে দিল্লির সুলতানের এবং পরে বাংলার সুলতানের কাছ থেকে সুন্দরবন অঞ্চল জায়গির হিসেবে পান। সুন্দরবন এলাকায় গভীর বন কেটে সেখানে জনবসতি গড়ে তোলেন। খানজাহান ছিলেন একজন প্রখ্যাত নির্মাতা। তিনি বৃহত্তর যশোর ও খুলনা জেলায় কয়েকটি শহর প্রতিষ্ঠা, মসজিদ, মাদরাসা, সরাইখানা, মহাসড়ক ও সেতু নির্মাণ এবং বহুসংখ্যক দিঘি খনন করেন। তার দুর্গবেষ্টিত সুরক্ষিত রাজধানী শহর ‘খলিফাতাবাদ’ ছাড়াও তিনি মারুলি কসবা, পৈগ্রাম কসবা ও বারোবাজারে তিনটি শহর প্রতিষ্ঠা করেন। তবে তার প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল খলিফাতাবাদ, যা বর্তমান বাগেরহাট জেলা। এক জরিপে দেখা গেছে, খলিফাতাবাদকে কেন্দ্র করে ৫০টিরও বেশি স্থাপনা তিনি তৈরি করেছিলেন। কথিত আছে, খানজাহান ৩৬০টি মসজিদ ও বহু বড় দিঘিও খনন করেছিলেন। ‘ষাট গম্বুজ মসজিদ’ খানজাহানের সবচেয়ে বিখ্যাত কীর্তি। নামাজ আদায়ের পাশাপাশি মসজিদটি খানজাহানের দরবার হিসেবেও ব্যবহৃত হতো।
স্থাপত্যকৌশলে ও লাল পোড়ামাটির ওপর লতাপাতার অলংকরণে মধ্যযুগীয় স্থাপত্যশিল্পে মসজিদটি এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। মসজিদটিকে ‘ষাট গম্বুজ’ বলা হলেও আদতে এতে মোট গম্বুজ আছে ৮১টি। ১৫২৬ সালে দিল্লিতে মোগলদের শাসন শুরু হলে ধীরে ধীরে এখানকার গুরুত্ব কমতে থাকে। ১৬১০ সালে ঢাকা বাংলার রাজধানী হওয়ায় এই অঞ্চল এক প্রকার লোকচক্ষুর অন্তরালে যেতে থাকে। বনজঙ্গলে গ্রাস করে মসজিদটিকে।
১৮৯৫ সালে এলাকাটিতে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ১৯০৩-০৪ সালের দিকে ষাট গম্বুজ মসজিদের পুনরুদ্ধার দৃশ্যমান হয়। ১৯০৭-০৮ সালে ছাদের এবং ২৮টি গম্বুজ পুনরুদ্ধার করা হয়। ১৯৮২-৮৩ সালে ইউনেসকো বাগেরহাট এলাকার জন্য একটি বেশ বড় পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ১৯৮৫ সালে এটিকে বিশ্বের উল্লেখযোগ্য স্থানের (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।