পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশের চৈত্র সংক্রান্তি ও ঘুড়ি।
বাংলাদেশের চ্যৈত্র সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি পালিত হয় বাংলা বছরের শেষ দিনে নানা পূজাম,অর্চনা, আচার ,আচরন, উৎসব আর কর্মকান্ডের মাধ্যমে। এর একটি হচ্ছে ঘুড়ি উড়ানো। ঘুড়ি উড়ানো কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বিনোদন মূলক উৎসব, এই দিনে বিশেষ উৎসব মূখর পরিবেশে সবাই অংশ গ্রহন করে। এ ছাড়া সারা বছর ধরে, বিশেষত: শুকনা মৌশুমে, বিনোদনমূলক ক্রিড়া হিসাবে অন্যান্য অনেক দেশের মত সমগ্র বাংলাদেশে ঘুড়ি উড়ান হয়। শৈশবে মফস্বল শহরে খুব প্রচলিত দেখেছি, নিজেও নিয়মিত সক্রিয় অংশ গ্রহন করেছি। সবই আজ সুখস্মৃতি।
পুরান ঢাকা সহ কুয়াকাটা সাগর পাড়ে চৈত্র সংক্রান্তির ঘুড়ি উড়ানো এখনও বিনোদনমূলক সার্বজনীন বর্ণীল ঐতিহ্য। কয়েক বছর ধরে ছাদে সৌখীন ঘুড়ি উড়ানোর আসরও বসে ।
ঘুড়ির সাথে আছে বহু উপাচার। বিভিন্ন রঙ্গীন কাগজের বিভিন্ন আকৃতির ঘুড়ি আর নাটাই। লেজওয়ালা ঘুড়ি উড়ানো নিম্ন মানের পারদর্শিতা বলে পরিগনিত হয়। ঘুড়ির ভারসাম্যতা রখ্খায় এক পাশে পেঁচানো কাগজের কান্নি জুড়ে দেও হয়। বাঁশের চিকন দুটি কাঠি (কাপ্পা)কাগজের ঘুড়ির কাঠামো সুদৃঢ় করে। ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগিতায় কাটাকাটিতে বিজয়ী হতে প্রধান উপাদান হচ্ছে সুতায় মান্জা দেওয়া। কার্যকরী মান্জা দিয়ে সুতা ধারালো করার কত যে প্রক্রিয়া নিয়জিত করতে হয়। নানা ধরনের উদ্ভিজ্ব আঠা, বিজ,গাছ গাছালির ছাল-বাকল-ফল,রং এবং সর্ব শেষ কাঁচের গুড়ার মিহি পাউডার। সুতায় মান্জা দিতে তিন চার জনের প্রয়োজন হয়,তার পর রৌদ্রে শুকানো। মনে আছে একবার দূর্লভ ‘উলট কম্বল’ গাছের ছাল খুঁজতে নাওয়া খাওয়া ভুলে সারা দুপুর শহরের বাইরে দিন পার করেছি। কাঁচের গুড়া বানাতে লাইটের বাল্ব ছিলো উত্তম। মনে আছে,কাঁচের গুড়া তৈরী করতে নানীর পান ছেঁচার হামান দিস্তা গোপনে ব্যবহার করার পর ধরা পড়ে কি বকুনি না খেয়েছিলাম।নকেননা ধুয়ে মুছে রাখলেও নানীর পানে কেন যেন বালি কিচমিচ করছিলো।
সব চাইতে আনন্দ ও কৃতিত্ব কত উঁচুতে ঘুড়ি উড়ানো আর নিজের ঘুড়ি বাঁচিয়ে কয়টা ঘুড়ি ভোকাট্টা করা । আমাদের বাড়িটা বড় এলাকা জুড়ে ও উঁচু হওয়ায় সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলাম। শৈশবে একটা দীর্ঘ সময় কুয়াকাটার সাগর পাড়ে ঘুড়ি উড়িয়ে আনন্দ করেছি।মৌশুমে পাড়ায় পাড়ায়,শহর জুড়ে সাজ সাজ রব পড়ে যেত। কখনো কখনো পটুয়াখালীর পায়রার পাড়ে ঘুড়ি উড়িয়েছি দল বেঁধে। তবে যৎসামান্য সন্চয়ের অনেকটাই খরচ হয়ে যেতো।
আহা, সেই যে আমার নানা রংয়ের দিনগুলো।
#
আবদুল মজিদ খান
পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি
১৩/৪/২২