ঢাকা ০৮:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।। বরিশালে সুলভ মুল্যে বসুন্ধরা পন্য পেয়ে ক্রেতারা খুশী। বাবুগঞ্জে স্কুল ছুটির পরে বাড়ি যাওয়ার সময় দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজ। আমার বাবাও মায়ের দেওয়া উপদেশ বড়দের সম্মান কর ছোটদের স্নেহ করো। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখী নারী উদ্যোক্তা মেলা শুরু। টাঙ্গাইলে তিনদিন ব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা শুরু বাকেরগঞ্জে প্রধান মন্ত্রীর ছবি ব্যঙ্গক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট করায় হায়দর সিপাই গ্রেফতার। বাকেরগঞ্জে স্ত্রীর দায়ের কৃত মামলায় স্বামী পারভেজ খান গ্রেফতার।। বাকেরগঞ্জে তরমুজ চাষী হত্যা চেষ্টা মামলার আসামী রুদ্র গাজী গ্রেফতার টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড অনুষ্ঠিত

হবিগঞ্জে হারিয়ে গেছে রেডিও টেপ রেকর্ডার মোবাইল ইন্টারনেটের ভিড়ে।

লিটন পাঠান, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি

হবিগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে প্রচলন আছে একটি রেডিও বা টেপ রেকর্ডার যৌতুক না দেয়ার কারণে একাধিক বিয়ে ভেঙে গেছে! আবার কোনো ব্যাক্তি বিয়েতে রেডিও বা টেপ রেকর্ডার উপহার পেলে আশ পাশের গ্রাম থেকে সেটি দেখতে অনেকে ছুটে আসতেন। আবার পড়ন্ত বিকেল কিংবা রাতে বাড়ির উঠোনে টেপ রেকর্ডার বাজিয়ে সকলে একত্রিতভাবে গান অনুষ্ঠান কিংবা খবর শুনতেন।

প্রতি রাতেই গ্রামে যেন টেপ রেকর্ডারের মাধ্যমে গানের আসর বসত। বসবে নাই-বা কেন তখনকার সময়ে গ্রামের মানুষের তথ্য প্রবাহ ও বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিল এই রেডিও এবং টেপ রেকর্ডার। এমনকি মুক্তিযোদ্ধেও বিশাল অবদান রেখেছে এটি কিন্তু আজ আর সেই রেডিও বা টেপ রেকর্ডার দেখা যায় না।

তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর কম্পিউটার, মোবাইল ও ইন্টারনেটের ভিড়ে হারিয়ে গেছে এসব যন্ত্র। মোবাইল, ইন্টারনেট কম্পিউটারে দক্ষ বর্তমান প্রজন্মের অনেকই হয়তো রেডিও-টেপ রেকর্ডার দু’চোখে দেখেওনি। ডিজিটাল যুগের ছোঁয়া পড়তে না পড়তে দ্রুত এগুলো হারিয়ে গেছে। জনগণের চাহিদা নেই বলে বাজারেও পাওয়া যায় না মান্ধাতার আমলের যন্ত্রগুলো।

মূলত, বাংলাদেশে অতিথ বিনোদনের ডিজিটাল মাধ্যম বলতে ছিল- রেডিও-টেপ রেকর্ডার, টেলিভিশন ও সিনেমা। কিন্তু অসচ্ছল গ্রামীণ সমাজে সকলেরই টেলিভিশন কেনা সাধ্যের বাইরে ছিল। তাই সামান্য সচ্ছল পরিবারগুলো রেডিও-টেপ রেকর্ডার কিনতো বিনোদন উপভোগ ও খবর শোনার জন্য।

মো. ওয়াহিদ মুরাদ নামে ডাচ বাংলা ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের একটি টেপ রেকর্ডার ছিল। আব্বা বাজার থেকে ‘অরুণ-বরুণ কিরণমালা ‘রূপবান ঝিনুকমালা শঙ্খমালা আপন-দুলালের কিচ্ছা’সহ বিভিন্ন যাত্রাপালার অডিও রেকর্ড নিয়ে আসতেন। আমরা সবাই মিলে শুনতাম। কিন্তু এখন আর সেই টেপ রেকর্ডার এখন আর নেই।

বানিয়াচং উপজেলা সদরের নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. সাহেব মিয়া বলেন, ‘একটা সময় ছিল, যখন দল বেঁধে সন্ধ্যার পর রেডিও-টেপ রেকর্ডারে অনুষ্ঠান উপভোগ করতাম। কিন্তু এখন আর দল বেঁধে গান, নাটক বা খবর শোনার জন্য কেউ অপেক্ষা করে না। এসব জায়গায় এখন দখল করে নিয়েছে ডিশ সংযোগে টিভি, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন।

তিনি আরও বলেন, ‘শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক সবার হাতে এখন ভালো মানের মোবাইল ফোন আছে। যেখান থেকে তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো অনুষ্ঠান শুনতে পারে এবং দেখতেও পারে।’

একই উপজেলার ইকরাম বাজারের ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান বলেন বেশি দিন আগের কথা না, কয়েক বছর আগেও ইকরাম বাজারে যে দোকানে রেডিও, টেপ বা টিভি ছিল সে দোকানগুলোতে বেশি বেচা-বিক্রি হতো। কিন্তু এখন আর কেউ দোকানে (বিশেষ করে চা স্টল বা খাবার হোটেল) রেডিও-টিভি দেখার জন্য কেউ আসে না প্রত্যেক ঘরে ঘরে টিভি আছে এছাড়া মোবাইলতো সবার হাতে আছেই।

একই এলাকার বৃদ্ধ ফজলুল হক বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন আমাদের গ্রামের এক বাড়িতে টেপ ছিল সেখানে সন্ধ্যার পরই আমরা বসে মধ্যরাত পর্যন্ত বিভিন্ন গান নাটক, পালা ও খবর শুনতাম তিনি আরও বলেন গেল কয়েক বছর ধরে রেডিও-টেপ শুনা দূরের কথা চোখেও দেখিনি।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।।

হবিগঞ্জে হারিয়ে গেছে রেডিও টেপ রেকর্ডার মোবাইল ইন্টারনেটের ভিড়ে।

আপডেট টাইম ০৯:৪৩:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২২

লিটন পাঠান, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি

হবিগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে প্রচলন আছে একটি রেডিও বা টেপ রেকর্ডার যৌতুক না দেয়ার কারণে একাধিক বিয়ে ভেঙে গেছে! আবার কোনো ব্যাক্তি বিয়েতে রেডিও বা টেপ রেকর্ডার উপহার পেলে আশ পাশের গ্রাম থেকে সেটি দেখতে অনেকে ছুটে আসতেন। আবার পড়ন্ত বিকেল কিংবা রাতে বাড়ির উঠোনে টেপ রেকর্ডার বাজিয়ে সকলে একত্রিতভাবে গান অনুষ্ঠান কিংবা খবর শুনতেন।

প্রতি রাতেই গ্রামে যেন টেপ রেকর্ডারের মাধ্যমে গানের আসর বসত। বসবে নাই-বা কেন তখনকার সময়ে গ্রামের মানুষের তথ্য প্রবাহ ও বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিল এই রেডিও এবং টেপ রেকর্ডার। এমনকি মুক্তিযোদ্ধেও বিশাল অবদান রেখেছে এটি কিন্তু আজ আর সেই রেডিও বা টেপ রেকর্ডার দেখা যায় না।

তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর কম্পিউটার, মোবাইল ও ইন্টারনেটের ভিড়ে হারিয়ে গেছে এসব যন্ত্র। মোবাইল, ইন্টারনেট কম্পিউটারে দক্ষ বর্তমান প্রজন্মের অনেকই হয়তো রেডিও-টেপ রেকর্ডার দু’চোখে দেখেওনি। ডিজিটাল যুগের ছোঁয়া পড়তে না পড়তে দ্রুত এগুলো হারিয়ে গেছে। জনগণের চাহিদা নেই বলে বাজারেও পাওয়া যায় না মান্ধাতার আমলের যন্ত্রগুলো।

মূলত, বাংলাদেশে অতিথ বিনোদনের ডিজিটাল মাধ্যম বলতে ছিল- রেডিও-টেপ রেকর্ডার, টেলিভিশন ও সিনেমা। কিন্তু অসচ্ছল গ্রামীণ সমাজে সকলেরই টেলিভিশন কেনা সাধ্যের বাইরে ছিল। তাই সামান্য সচ্ছল পরিবারগুলো রেডিও-টেপ রেকর্ডার কিনতো বিনোদন উপভোগ ও খবর শোনার জন্য।

মো. ওয়াহিদ মুরাদ নামে ডাচ বাংলা ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের একটি টেপ রেকর্ডার ছিল। আব্বা বাজার থেকে ‘অরুণ-বরুণ কিরণমালা ‘রূপবান ঝিনুকমালা শঙ্খমালা আপন-দুলালের কিচ্ছা’সহ বিভিন্ন যাত্রাপালার অডিও রেকর্ড নিয়ে আসতেন। আমরা সবাই মিলে শুনতাম। কিন্তু এখন আর সেই টেপ রেকর্ডার এখন আর নেই।

বানিয়াচং উপজেলা সদরের নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. সাহেব মিয়া বলেন, ‘একটা সময় ছিল, যখন দল বেঁধে সন্ধ্যার পর রেডিও-টেপ রেকর্ডারে অনুষ্ঠান উপভোগ করতাম। কিন্তু এখন আর দল বেঁধে গান, নাটক বা খবর শোনার জন্য কেউ অপেক্ষা করে না। এসব জায়গায় এখন দখল করে নিয়েছে ডিশ সংযোগে টিভি, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন।

তিনি আরও বলেন, ‘শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক সবার হাতে এখন ভালো মানের মোবাইল ফোন আছে। যেখান থেকে তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো অনুষ্ঠান শুনতে পারে এবং দেখতেও পারে।’

একই উপজেলার ইকরাম বাজারের ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান বলেন বেশি দিন আগের কথা না, কয়েক বছর আগেও ইকরাম বাজারে যে দোকানে রেডিও, টেপ বা টিভি ছিল সে দোকানগুলোতে বেশি বেচা-বিক্রি হতো। কিন্তু এখন আর কেউ দোকানে (বিশেষ করে চা স্টল বা খাবার হোটেল) রেডিও-টিভি দেখার জন্য কেউ আসে না প্রত্যেক ঘরে ঘরে টিভি আছে এছাড়া মোবাইলতো সবার হাতে আছেই।

একই এলাকার বৃদ্ধ ফজলুল হক বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন আমাদের গ্রামের এক বাড়িতে টেপ ছিল সেখানে সন্ধ্যার পরই আমরা বসে মধ্যরাত পর্যন্ত বিভিন্ন গান নাটক, পালা ও খবর শুনতাম তিনি আরও বলেন গেল কয়েক বছর ধরে রেডিও-টেপ শুনা দূরের কথা চোখেও দেখিনি।