ব্যুরো চট্টগ্রামঃ
ডিসিদের চট্টগ্রামের কালুরঘাটে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ৩ দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসক সম্মেলনে আমাদের মন্ত্রণালয়ের দুইটি প্রস্তাব ছিল। একটি হলো চট্টগ্রামের কালুরঘাটে মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ স্মৃতিস্তম্ভ করা। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রথম বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। সেজন্য সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করা হবে। জেলা প্রশাসকদের বলেছি কোথাও জায়গা পাওয়া গেলে বা দিলে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি এর আগে যখন চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম, তখন জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কাছাকাছি কাট্টতলি মৌজায় একটি জায়গা দেখিয়েছিলেন। তখন আমি বলেছিলাম কাগজপত্র পাঠিয়ে দিলে ইনশাআল্লাহ সেখানেও মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে স্মৃতিস্তম্ভ করবো।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে দুইটি প্রস্তাব রেখে আসছি। এরমধ্যে একটি হচ্ছে- ভূমির সাব রেজিস্ট্রি অফিস আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন আছে। সেটার এলোকেশন অব বিজনেস পরিবর্তন করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন আনলে ভালো হয়। কারণ সাব-রেজিস্ট্রির কার্যক্রম ভূমি অফিসের রিলেটেড। যদি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আসে তাহলে কাজে গতি আসবে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, অপর প্রস্তাবটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে। সেটা হলো— আমরা যেসব জিনিসপত্র কিনি তার জন্য ভ্যাট দিতে হয়। সেটা দোকানদার রাখে। কিন্তু দোকানদার সেটা ঠিকমতো দেয় কি না সে বিষয়ে আমার সন্দেহ হয়। আর জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামের দোকান থেকে যেসব পণ্য কিনি, তখন যে ক্রয় রশিদ দেওয়া হয় সেটা হাতে লেখা থাকে। এর ফলে রাজস্ব আদায়ে কিছু সমস্যা হয়। এজন্য সব দোকানে ইএফটি মেশিন সরবরাহ করার প্রস্তাব দিয়েছি। যাদের কেনার সামর্থ্য নেই তাদের যদি সরকার লোন দেয়।
এর আগে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) তিন দিনব্যাপী বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি ডিসিদের উদ্দেশে বলেন, ‘দেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ায় দায়িত্ব বেড়ে গেছে। সরকারি সেবা পেতে সাধারণ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে ডিসিদের লক্ষ্য রাখতে হবে।’
এবার ডিসি সম্মেলনে ১২টি ইস্যু গুরুত্ব পাচ্ছে—ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম জোরদার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম, স্থানীয় পর্যায়ে কর্ম সৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্নেন্স, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ, ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়।
ডিসিদের সঙ্গে কর্ম অধিবেশনে মাত্র ১৫ জন মন্ত্রী ও ১৫ জন সচিব অংশ নিচ্ছেন। প্রতিবার সশরীরে প্রধানমন্ত্রী নিজ কার্যালয়ের শাপলা হলে ডিসিদের সঙ্গে উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দিলেও এবার ভার্চুয়ালি ভাষণ দিলেন। একইভাবে কর্ম অধিবেশনগুলো সচিবালয়ের মন্ত্রিসভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হলেও এবার নেওয়া হয়েছে সচিবালয়ের উল্টো দিকে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলণে রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও প্রধান বিচারপতিও ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন।
প্রতিবারের ডিসি সম্মেলনে ৬৪ জেলার ডিসি ও ৮ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার যোগ দিলেও এবার করোনার কারণে ৬৪ জন জেলা প্রশাসক ও দুজন বিভাগীয় কমিশনার সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না। করোনা আক্রান্ত হওয়ায় রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরুল্লাহ, এবং বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান থাকছেন না সম্মেলনে। একই কারণে অনুপস্থিত থাকছেন কক্সবাজারের ডিসি মো. মামুনুর রশীদ, পটুয়াখালীর মো. কামাল হোসেন, চুয়াডাঙ্গার মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান, রাজশাহীর আব্দুল জলিল, ও লক্ষ্মীপুরের মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ।