স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রামঃ
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে যৌথভাবে আয়োজিত “মৈত্রী দিবস”-এর অনুষ্ঠান যথাযথ উৎসাহ-উদ্দীপনার মাধ্যমে আবুধাবির স্থানীয় একটি হোটেলে উদযাপিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ভারতের মান্যবর রাষ্ট্রদূতদ্বয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতবৃন্দ, উভয় দেশের কূটনীতিকগণ, স্থানীয় স্বনামধন্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং বাংলাদেশ ও ভারতের প্রবাসী কমিউনিটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের সূচনালগ্নে উভয় দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অতঃপর মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্ম-উৎসর্গীকৃত বাংলাদেশ এবং ভারতের সকল শহীদদের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব মোঃ আবু জাফর এবং ভারতের মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব সুঞ্জয় সুধির দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যে দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার ও বন্ধুপ্রতিম ভারতের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সহমর্মিতা এবং নিঃস্বার্থ সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের সাথে মিশে গেছে ভারতের ১৮ হাজার শহীদের রক্ত যা আমাদের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছে এবং দৃঢ় ভিত্তিমূল স্থাপন করেছে দুদেশের বন্ধুত্বের। তিনি উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন, ভারতীয় শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী আশুগঞ্জে একটি যুদ্ধ স্মারক নির্মাণ করছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ২০২১ সাল উভয় দেশের বন্ধুত্বের একটি মাইলফলক বছর হয়ে থাকবে কেননা বাংলাদেশ যেমন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে তেমনি বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশই তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষ্যে বিশ্বের নানা প্রান্তে “মৈত্রী দিবস” উদযাপন করছে। ৫০ বছরের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পরিক্রমায় উভয় দেশ নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, ব্যবসা, জ্বালানী, যোগাযোগ ব্যবস্থার সংযোগ, প্রতিরক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষাসহ প্রভূত বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে উভয় দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। রাষ্ট্রদূত মোঃ আবু জাফর বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নতির উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির একটি যার মাথাপিছু আয় গত এক দশকে প্রায় দিগুণ হয়ে ২৫০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে , একইসাথে দারিদ্র্য এবং চরম দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে যথাক্রমে ২০% এবং ১২% এবং মেয়ে শিশুদের স্কুল অন্তর্ভুক্তির হার ৯৬% যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, উভয়ের বলিষ্ঠ ও গতিশীল নেতৃত্বে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সুদূরপ্রসারী ও নতুন মাত্রা নেবে, এই আশাবাদ ব্যক্ত করে বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্য সমাপ্ত করেন।
ভারতের মান্যবর রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান চমৎকার পরিসরে “মৈত্রী দিবস”-এর অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য। তিনি বলেন, দুই দেশের মৈত্রীর সূচনা হয়েছিলো মহান মুক্তিযুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের মাধ্যমে অভিন্ন আত্মত্যাগ স্বীকার করে। বাংলাদেশ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে সোনালী অধ্যায় পার করছে এবং বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রার ভারত অবদান রাখতে পেরে গর্বিত এবং আনন্দিত। ১৯৭১ সালের ০৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে যে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী রচিত হয়েছিলো তা ভবিষ্যতে আরও বেগবান হবে এ মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত জনাব সুঞ্জয় সুধির।
অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দেশের শিল্পীরা এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনা করেন। সবশেষে, উপস্থিত সকল অথিতিকে নৈশভোজে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।