ঢাকা ০৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।। বরিশালে সুলভ মুল্যে বসুন্ধরা পন্য পেয়ে ক্রেতারা খুশী। বাবুগঞ্জে স্কুল ছুটির পরে বাড়ি যাওয়ার সময় দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজ। আমার বাবাও মায়ের দেওয়া উপদেশ বড়দের সম্মান কর ছোটদের স্নেহ করো। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখী নারী উদ্যোক্তা মেলা শুরু। টাঙ্গাইলে তিনদিন ব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা শুরু বাকেরগঞ্জে প্রধান মন্ত্রীর ছবি ব্যঙ্গক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট করায় হায়দর সিপাই গ্রেফতার। বাকেরগঞ্জে স্ত্রীর দায়ের কৃত মামলায় স্বামী পারভেজ খান গ্রেফতার।। বাকেরগঞ্জে তরমুজ চাষী হত্যা চেষ্টা মামলার আসামী রুদ্র গাজী গ্রেফতার টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড অনুষ্ঠিত

চুনারুঘাটে বাংলাদেশের ২৩ তম স্থলবন্দরের কাজ শুরু।

লিটন পাঠান, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা কেদেরাকোট ও কাটানীপারে বহুপ্রতিক্ষিত বাংলাদেশের ২৩তম স্থলবন্দর, বাল্লা স্থলবন্দর উন্নয়নের কাজ দ্র‍ুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আর এই স্থলবন্দরের উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চলমান ২৫ কোটি টাকার আবাসিক প্রকল্পের বাউন্ডারি নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলায় এ অঞ্চলের মানুষগুলোর মনে অর্থনৈতিক মুক্তির প্রত্যাশা জাগছে স্বাভাবিক ভাবেই। সমাজের খেঁটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আশা বাল্লা স্থলবন্দরকে কেন্দ্র করে, এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি সর্বত্র কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে, বৈদেশিক বাণিজ্যে এগিয়ে যাবে দেশ, সফল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে যুক্ত হবে সমৃদ্ধির এক নতুন অধ্যায়।

জানা যায়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এ অঞ্চলের মানুষদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। বড় কিংবা ছোট কোন ধরনেরই মিল ফ্যাক্টরি কল কারখানা না থাকায় এ অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষ অত্যন্ত কায়ক্লেশে বেকার জীবন-যাপন করছেন। তাই এলাকাবাসীর প্রত্যাশা এই বাল্লা স্থলবন্দর নির্মানসহ সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হলে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন এর প্রসার এবং মানুষে-মানুষে সম্পর্কোন্নয়নে গোটা অঞ্চলের উপকার হবে। যে কারণে নতুন আশায় উজ্জীবিত এ সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ বিনিয়োগকারী-ব্যবসায়ীরা। যদিও রাজনৈতিক ও নানা আমলা তান্ত্রিক জটিলতায় এ প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন থমকে ছিল। বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বর্তমান সরকারের আন্তরিক উদ্যোগে, চলতি বছরের সেপ্টম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে চলমান নির্মাণ কাজের মধ্যে দিয়ে বাস্তবে রুপ নিতে যাচ্ছে বহুকাঙ্খিত বাল্লা স্থলবন্দরের দৃশ্যমান অবকাঠামো।

বিশ্লেষকদের মতে, এ স্থলবন্দরের চলমান নির্মান কাজ শেষ হলে বিপুল সংখ্যক বেকার মানুষেরা কাজে লাগবে এই কর্মযজ্ঞে। ওই সময় চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যে সবার সামনেই খুলে যাবে নতুন এক স্বর্ণালী সময়, যেন বহুবছরের প্রত্যাশিত চাওয়া। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়বে। আর এ বন্দর চালু হলে দু’দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে নতুন দিগন্ত উম্মোচন হবে। অর্থনৈতিকভাবে এ অঞ্চল হবে সমৃদ্ধ চলতি মাসের ৭ই সেপ্টম্বর উপস্থিত লোকজনের মাঝে মিষ্টি বিতরণের মধ্যে দিয়ে ২৫ কোটি টাকার স্থলবন্দরের আবাসিক প্রকল্পের বাউন্ডারি নির্মাণসহ উন্নয়নের কাজ শুরু করা হয়। চুনারুঘাট দক্ষিণাঞ্চলের প্রানের দাবি ছিল বাল্লা স্থলবন্দর।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকারের নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহ জাহান খাঁন বাল্লা সীমান্তবর্তী এলাকা গাজীপুর ইউনিয়নের কাটানীপার গ্রামে সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং বাংলাদেশের ২৩ তম স্থলবন্দর হিসাবে বাল্লা স্থলবন্দরকে ঘোষণা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার ১নং গাজীপুর ইউনিয়নের কাটানীপার মৌজার মোঃ আতাউর রহমান খানের ১০০শত শতক (এক একর) জমি অধিগ্রহনের মাধ্যমে উক্ত জমিতে আবাসিক প্রকল্পের জন্য নির্ধারণ করা হয়। ২৫ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ এখন চলমান। ২জন প্রকৌশলীর সার্বক্ষণিক দেখবালে পুরোদমে চলছে উন্নয়ন কাজ।

সামপ্রতিক সময়ে স্থলবন্দর এলাকার নির্মাণাধীন কাজের অগ্রগতি ও পন্যের গুনগত মান যাচাই-বাচাই করতে সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সহকারী প্রকৌশলী মো: রুহুল আমিন ও মো: মেহেদী হাসান জোয়ারদার। এসময় তাদের সাথে ছিলেন সনিক্স ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার মেজবাহ উদ্দিন ও কন্ট্রাক্টর আব্দুর রাজ্জাক। সহকারী প্রকৌশলী রুহুল আমিন বলেন, কাজের গুনগত মান ভালো করতে ইঞ্জিনিয়ারিং ফর্মূলা যত ধরনের রয়েছে সেটা আমরা শতভাগ প্রয়োগ করার চেষ্টা করব। বাল্লা স্থলবন্দরের আবাসিক প্রকল্পের কাজে খুবই ভালো মানের সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে এবং পাথরের গুনগতমানও খুবই ভালো। তিনি আরোও বলেন, তারপরও আমরা কিছু পাথর পরীক্ষা করে দেখার জন্য বুয়েটে নিয়ে যাচ্ছি।

বাল্লা স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোঃ জালাল উদ্দিন খান এ প্রতিবেদককে জানান, ২৫ কোটি টাকার স্থলবন্দরের আবাসিক প্রকল্পের বাউন্ডারি নির্মাণসহ উন্নয়নের কাজ চলমান। বর্তমানে কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। ২৫ কোটি টাকার আবাসিক প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হলে ধারাবাহিকভাবে শুরু হবে বন্দরের অবশিষ্ট কাজ। বন্দরের সকল কাজ সমাপ্ত হলে কোটি-কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হবে এখানে। স্থলবন্দরের নির্মানাধীণ কাজ আমরা তদারকি করছি সব সময়, এখানে সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে কাজ চলছে এতে কোনো প্রকারের অনিয়ম চোখে পড়ছে না।

তিনি আরোও বলেন, কিছু কুচক্রি মহলের লোকজন এ স্থলবন্দরের চলমান কাজে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্ঠা চালিয়েছে। চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল কাদির লস্কর বলেন, হবিগঞ্জের উন্নয়নে বাল্লা স্থলবন্দর একটি মাইলফলক হিসাবে কাজ করবে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীরা বলেন, অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে বাল্লা স্থলবন্দর অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে অবশ্যই তা একটি ইতিবাচক খবর একটা সময় ধরেই নেওয়া হয়েছিল যে এটা বোধহয় আর হচ্ছে না।

কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষের আগ্রহ এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ বিমান প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, এমপিসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতায় সফলতার দিকে এগুচ্ছে বাল্লা স্থলবন্দরের অগ্রযাত্রা। সে জন্য আমরা স্থলবন্দর এলাকার বাসিন্দাসহ চুনারুঘাটবাসীর পক্ষ হতে আপনাদের সকলকেই জানই আন্তরিকতার সাথে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা সরেজমিন এই প্রতিবেদক বাল্লা স্থলবন্দরের আবাসিক প্রকল্পের বাউন্ডারি নির্মাণসহ উন্নয়নের চলমান কাজ স্বচক্ষেই দেখে এসেছেন।

উল্লেখ্য, ১৯৫১ সালে চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী বাল্লা নামক স্থানে ৪ দশমিক ৩৭ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত বাল্লা স্থল শুল্কবন্দর চালু করা হয়। সেই স্থল শুল্কবন্দরটি দিয়ে সিমেন্টসহ বিভিন্ন পণ্য রফতানি হয়ে থাকে। দুই দেশের সীমান্ত দিয়ে বয়ে চলছে খোয়াই নদী। বর্ষায় নৌকা আর শুকনো মৌসুমে শ্রমিকরা মাথা ও কাঁধে করে পণ্য আনা-নেয়া করে থাকেন। ফলে একদিকে ঝুঁকি, অন্যদিকে আমদানি-রফতানিকারকদের অর্থ ব্যয় হয় বেশি। এ সমস্যা দূর করতে ২০১২ সালের ১১ জুন ভারত ও বাংলাদেশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ প্রতিনিধি দল কেদারাকোট এলাকাটি পরিদর্শন শেষে উভয়পক্ষই শুল্কস্টেশনের দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে কেদারাকোটে স্থলবন্দর করার ব্যাপারে একমত হয়।

২০১৭ সালের ৮ জুলাই স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষর চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী বন্দর পরিদর্শনে এসে জানান, একনেক সভায় স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার অনুমোদন পেয়েছে এবং এটি দেশের ২৩তম স্থলবন্দর। অবকাঠামো তৈরির জন্য অর্থও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরপর স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালের জুলাইয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে ২১ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠায়। প্রস্তাবিত জমিতে বসতবাড়ি থাকায় আপত্তি জানান স্থানীয়রা। এ অবস্থায় থমকে যায় পুরো প্রক্রিয়াটি। তবে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে স্থলবন্দরের জন্য ১৩ একর ভূমি অধিগ্রহণে ভূমি জরিপ সম্পন্ন করা হয়।

২০১৬ সালের ৩০ মার্চ উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের কেদারাকোর্ট নামক স্থানে বাল্লা স্থলবন্দরকে দেশের ২৩তম স্থলবন্দর ঘোষণা করেন বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহ জাহান খাঁন, চলতি বছর জেলা প্রশাসন জমি অধিগ্রহণ করতে গেলে দেখা দেয় নতুন সমস্যা। জমির মূল্য নির্ধারণ নিয়ে স্থানীয়দের সাথে প্রশাসনের দ্বিমত দেখা দেয়। স্থানীয়রা এ জমির মূল্য বেশি বলে দাবি করেন। কিন্তু প্রশাসন সরকার র্নিধারিত মূল্যে জমির অধিগ্রহণ মূল্য র্নিধারণ করে দেয়। এরই মধ্যে স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী এ জমির মূল্য আরও বেশি দেখিয়ে বেশ কিছু দলিল সম্পন্ন করে।

এ নিয়ে টানাপোড়েনের পর গত বছরের ১৪ই ডিসেম্বর স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ দখল বুঝে নেয় তাদের অধিগ্রহণকৃত ১৩ একর জমি। এতে জটিলতা দূর হল এবং চুনারুঘাটবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নে আর কোনো বাধা নেই। ইতোমধ্যেই বন্দরের অবকাঠামোসহ সব স্থাপনা নির্মাণের এসেসমেন্ট সম্পন্ন হওয়ার পর ৭ই সেপ্টেম্বর ২০২১ থেকে ২৫ কোটি টাকার স্থলবন্দরের আবাসিক প্রকল্পের বাউন্ডারি নির্মাণসহ উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।।

চুনারুঘাটে বাংলাদেশের ২৩ তম স্থলবন্দরের কাজ শুরু।

আপডেট টাইম ০৩:৫৫:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অক্টোবর ২০২১

লিটন পাঠান, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা কেদেরাকোট ও কাটানীপারে বহুপ্রতিক্ষিত বাংলাদেশের ২৩তম স্থলবন্দর, বাল্লা স্থলবন্দর উন্নয়নের কাজ দ্র‍ুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আর এই স্থলবন্দরের উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চলমান ২৫ কোটি টাকার আবাসিক প্রকল্পের বাউন্ডারি নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলায় এ অঞ্চলের মানুষগুলোর মনে অর্থনৈতিক মুক্তির প্রত্যাশা জাগছে স্বাভাবিক ভাবেই। সমাজের খেঁটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আশা বাল্লা স্থলবন্দরকে কেন্দ্র করে, এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি সর্বত্র কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে, বৈদেশিক বাণিজ্যে এগিয়ে যাবে দেশ, সফল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে যুক্ত হবে সমৃদ্ধির এক নতুন অধ্যায়।

জানা যায়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এ অঞ্চলের মানুষদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। বড় কিংবা ছোট কোন ধরনেরই মিল ফ্যাক্টরি কল কারখানা না থাকায় এ অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষ অত্যন্ত কায়ক্লেশে বেকার জীবন-যাপন করছেন। তাই এলাকাবাসীর প্রত্যাশা এই বাল্লা স্থলবন্দর নির্মানসহ সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হলে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন এর প্রসার এবং মানুষে-মানুষে সম্পর্কোন্নয়নে গোটা অঞ্চলের উপকার হবে। যে কারণে নতুন আশায় উজ্জীবিত এ সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ বিনিয়োগকারী-ব্যবসায়ীরা। যদিও রাজনৈতিক ও নানা আমলা তান্ত্রিক জটিলতায় এ প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন থমকে ছিল। বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বর্তমান সরকারের আন্তরিক উদ্যোগে, চলতি বছরের সেপ্টম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে চলমান নির্মাণ কাজের মধ্যে দিয়ে বাস্তবে রুপ নিতে যাচ্ছে বহুকাঙ্খিত বাল্লা স্থলবন্দরের দৃশ্যমান অবকাঠামো।

বিশ্লেষকদের মতে, এ স্থলবন্দরের চলমান নির্মান কাজ শেষ হলে বিপুল সংখ্যক বেকার মানুষেরা কাজে লাগবে এই কর্মযজ্ঞে। ওই সময় চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যে সবার সামনেই খুলে যাবে নতুন এক স্বর্ণালী সময়, যেন বহুবছরের প্রত্যাশিত চাওয়া। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়বে। আর এ বন্দর চালু হলে দু’দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে নতুন দিগন্ত উম্মোচন হবে। অর্থনৈতিকভাবে এ অঞ্চল হবে সমৃদ্ধ চলতি মাসের ৭ই সেপ্টম্বর উপস্থিত লোকজনের মাঝে মিষ্টি বিতরণের মধ্যে দিয়ে ২৫ কোটি টাকার স্থলবন্দরের আবাসিক প্রকল্পের বাউন্ডারি নির্মাণসহ উন্নয়নের কাজ শুরু করা হয়। চুনারুঘাট দক্ষিণাঞ্চলের প্রানের দাবি ছিল বাল্লা স্থলবন্দর।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকারের নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহ জাহান খাঁন বাল্লা সীমান্তবর্তী এলাকা গাজীপুর ইউনিয়নের কাটানীপার গ্রামে সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং বাংলাদেশের ২৩ তম স্থলবন্দর হিসাবে বাল্লা স্থলবন্দরকে ঘোষণা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার ১নং গাজীপুর ইউনিয়নের কাটানীপার মৌজার মোঃ আতাউর রহমান খানের ১০০শত শতক (এক একর) জমি অধিগ্রহনের মাধ্যমে উক্ত জমিতে আবাসিক প্রকল্পের জন্য নির্ধারণ করা হয়। ২৫ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ এখন চলমান। ২জন প্রকৌশলীর সার্বক্ষণিক দেখবালে পুরোদমে চলছে উন্নয়ন কাজ।

সামপ্রতিক সময়ে স্থলবন্দর এলাকার নির্মাণাধীন কাজের অগ্রগতি ও পন্যের গুনগত মান যাচাই-বাচাই করতে সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সহকারী প্রকৌশলী মো: রুহুল আমিন ও মো: মেহেদী হাসান জোয়ারদার। এসময় তাদের সাথে ছিলেন সনিক্স ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার মেজবাহ উদ্দিন ও কন্ট্রাক্টর আব্দুর রাজ্জাক। সহকারী প্রকৌশলী রুহুল আমিন বলেন, কাজের গুনগত মান ভালো করতে ইঞ্জিনিয়ারিং ফর্মূলা যত ধরনের রয়েছে সেটা আমরা শতভাগ প্রয়োগ করার চেষ্টা করব। বাল্লা স্থলবন্দরের আবাসিক প্রকল্পের কাজে খুবই ভালো মানের সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে এবং পাথরের গুনগতমানও খুবই ভালো। তিনি আরোও বলেন, তারপরও আমরা কিছু পাথর পরীক্ষা করে দেখার জন্য বুয়েটে নিয়ে যাচ্ছি।

বাল্লা স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোঃ জালাল উদ্দিন খান এ প্রতিবেদককে জানান, ২৫ কোটি টাকার স্থলবন্দরের আবাসিক প্রকল্পের বাউন্ডারি নির্মাণসহ উন্নয়নের কাজ চলমান। বর্তমানে কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। ২৫ কোটি টাকার আবাসিক প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হলে ধারাবাহিকভাবে শুরু হবে বন্দরের অবশিষ্ট কাজ। বন্দরের সকল কাজ সমাপ্ত হলে কোটি-কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হবে এখানে। স্থলবন্দরের নির্মানাধীণ কাজ আমরা তদারকি করছি সব সময়, এখানে সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে কাজ চলছে এতে কোনো প্রকারের অনিয়ম চোখে পড়ছে না।

তিনি আরোও বলেন, কিছু কুচক্রি মহলের লোকজন এ স্থলবন্দরের চলমান কাজে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্ঠা চালিয়েছে। চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল কাদির লস্কর বলেন, হবিগঞ্জের উন্নয়নে বাল্লা স্থলবন্দর একটি মাইলফলক হিসাবে কাজ করবে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীরা বলেন, অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে বাল্লা স্থলবন্দর অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে অবশ্যই তা একটি ইতিবাচক খবর একটা সময় ধরেই নেওয়া হয়েছিল যে এটা বোধহয় আর হচ্ছে না।

কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষের আগ্রহ এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ বিমান প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, এমপিসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতায় সফলতার দিকে এগুচ্ছে বাল্লা স্থলবন্দরের অগ্রযাত্রা। সে জন্য আমরা স্থলবন্দর এলাকার বাসিন্দাসহ চুনারুঘাটবাসীর পক্ষ হতে আপনাদের সকলকেই জানই আন্তরিকতার সাথে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা সরেজমিন এই প্রতিবেদক বাল্লা স্থলবন্দরের আবাসিক প্রকল্পের বাউন্ডারি নির্মাণসহ উন্নয়নের চলমান কাজ স্বচক্ষেই দেখে এসেছেন।

উল্লেখ্য, ১৯৫১ সালে চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী বাল্লা নামক স্থানে ৪ দশমিক ৩৭ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত বাল্লা স্থল শুল্কবন্দর চালু করা হয়। সেই স্থল শুল্কবন্দরটি দিয়ে সিমেন্টসহ বিভিন্ন পণ্য রফতানি হয়ে থাকে। দুই দেশের সীমান্ত দিয়ে বয়ে চলছে খোয়াই নদী। বর্ষায় নৌকা আর শুকনো মৌসুমে শ্রমিকরা মাথা ও কাঁধে করে পণ্য আনা-নেয়া করে থাকেন। ফলে একদিকে ঝুঁকি, অন্যদিকে আমদানি-রফতানিকারকদের অর্থ ব্যয় হয় বেশি। এ সমস্যা দূর করতে ২০১২ সালের ১১ জুন ভারত ও বাংলাদেশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ প্রতিনিধি দল কেদারাকোট এলাকাটি পরিদর্শন শেষে উভয়পক্ষই শুল্কস্টেশনের দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে কেদারাকোটে স্থলবন্দর করার ব্যাপারে একমত হয়।

২০১৭ সালের ৮ জুলাই স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষর চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী বন্দর পরিদর্শনে এসে জানান, একনেক সভায় স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার অনুমোদন পেয়েছে এবং এটি দেশের ২৩তম স্থলবন্দর। অবকাঠামো তৈরির জন্য অর্থও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরপর স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালের জুলাইয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে ২১ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠায়। প্রস্তাবিত জমিতে বসতবাড়ি থাকায় আপত্তি জানান স্থানীয়রা। এ অবস্থায় থমকে যায় পুরো প্রক্রিয়াটি। তবে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে স্থলবন্দরের জন্য ১৩ একর ভূমি অধিগ্রহণে ভূমি জরিপ সম্পন্ন করা হয়।

২০১৬ সালের ৩০ মার্চ উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের কেদারাকোর্ট নামক স্থানে বাল্লা স্থলবন্দরকে দেশের ২৩তম স্থলবন্দর ঘোষণা করেন বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহ জাহান খাঁন, চলতি বছর জেলা প্রশাসন জমি অধিগ্রহণ করতে গেলে দেখা দেয় নতুন সমস্যা। জমির মূল্য নির্ধারণ নিয়ে স্থানীয়দের সাথে প্রশাসনের দ্বিমত দেখা দেয়। স্থানীয়রা এ জমির মূল্য বেশি বলে দাবি করেন। কিন্তু প্রশাসন সরকার র্নিধারিত মূল্যে জমির অধিগ্রহণ মূল্য র্নিধারণ করে দেয়। এরই মধ্যে স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী এ জমির মূল্য আরও বেশি দেখিয়ে বেশ কিছু দলিল সম্পন্ন করে।

এ নিয়ে টানাপোড়েনের পর গত বছরের ১৪ই ডিসেম্বর স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ দখল বুঝে নেয় তাদের অধিগ্রহণকৃত ১৩ একর জমি। এতে জটিলতা দূর হল এবং চুনারুঘাটবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নে আর কোনো বাধা নেই। ইতোমধ্যেই বন্দরের অবকাঠামোসহ সব স্থাপনা নির্মাণের এসেসমেন্ট সম্পন্ন হওয়ার পর ৭ই সেপ্টেম্বর ২০২১ থেকে ২৫ কোটি টাকার স্থলবন্দরের আবাসিক প্রকল্পের বাউন্ডারি নির্মাণসহ উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে।