টাঙ্গাইলে ভুল চিকিৎসায় ছিড়ে ফেলা হলো প্রসূতির যৌনাঙ্গ
মোঃ মশিউর রহমান/টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইল শহরের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ডাক্তারের পরিবর্তে নার্স দিয়ে ডেলিভারি করানোর সময় ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতির যৌনাঙ্গ ছিড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে ওই প্রসূতির অবস্থা আরো অবনতি হয়ে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শিশুর অবস্থা আশংকাজনক। এ ঘটনায় সুষ্ঠ বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রসূতির স্বামী দেলদুয়ার উপজেলার চিনাখোলা গ্রামের মো. মহসিন মিয়া। লিখিত অভিযোগ ও মহসিন মিয়া জানান, গত ১৯ সেপ্টেম্বর রোববার তার স্ত্রী তাছলিমা আক্তারের প্রসব ব্যথা উঠলে রাত সাড়ে ৯ টায় মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। ডা. আখতার জাহানের অধীনে নার্স হাফিজা ও সেলিনা তত্তাবধানে ছিলো। কিন্তু সময় হওয়ার আগেই ওই দুই নার্স জোর পূর্বক তার স্ত্রীর ডেলেভারি করিয়ে এক পুত্র সন্তান প্রসব করে। কিন্তু তাদের কাটাকাটি না করার অনুরোধ জানালেও তার পরেও কেটে তার স্ত্রীর জরায়ু, পায়খানা ও প্রসাবের রাস্তা পুরোটাই কেটে এক করে সেলাই করে। পরদিন ২০ সেপ্টেম্বর ডা. আখতার জাহানকে না দেখিয়ে হাসপাতালের কর্মকর্তা শাহনাজ আক্তার শিল্পী ১৩ শত টাকা নিয়ে তাদের ছুটি দেয়। ৫ দিন বাড়িতে থাকার পর ২৫ সেপ্টেম্বর তার স্ত্রীর প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে পায়খানা বের হতে থাকে। পরে ওই দিন পুনরায় তাকে মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর ডাক্তার আখতার জাহানকে দেখাতে চাইলে নার্স হাফিজা ও সেলিনা দেখাতে বাঁধা দেয়। পরে ভিজিট দিয়ে আখতার জাহানের ব্যক্তিগত চেম্বারে দেখা করেন। আখতার জাহানের পরামর্শ অনুযায়ি আরো চারদিন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ভর্তি রাখা হয়। ডাক্তার আখতার জাহানের অনুমতি ছাড়া ওই দুই নার্স তার স্ত্রীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে হাত দিয়ে তার যৌনাঙ্গ ছিড়ে ফেলে। এরপর তার স্ত্রীর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এরপর সেলাই করে দেয়। বিষয়টি ডাঃ আখতার জাহানকে জানালে তিনি স্বীকার করেন যে, নার্সরা ভুল করেছে। ২৭ সেপ্টেম্বর তার স্ত্রীকে নিয়ে বাসায় যেতে বলেন। তার স্ত্রীর অবস্থা ভাল না হওয়ায় তারা বাসায় যেতে চান না। পরে ডাক্তার আখতার জাহানের কাছ থেকে রেফার্ড নিয়ে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তেমন চিকিৎসা পাচ্ছে না। তার স্ত্রীর অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। যা খাবার খায় তা যৌনাঙ্গ দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে দিন দিন তার স্ত্রীর অবস্থা আরো অবনতি হচ্ছে। তার শিশুটির অবস্থাও ভাল না। মহসিন মিয়া জানান, মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রের ডাক্তার সরকারি বেতন নিলেও তেমন দায়িত্ব পালন করেন না। ডা. আখতার জাহানের ব্যক্তিগত চেম্বার নিয়ে খুবই ব্যস্ত। তিনি নার্স দিয়ে তার কাজ করায়। ভুল চিকিৎসার কারণে আমার স্ত্রীর অবস্থা খুবই খারাপ। সরকারি হাসপাতাল হলেও বাহির থেকে যাবতীয় ঔষধ কিনতে হয়। এর সঠিক বিচার দাবি করছি। এ বিষয়ে ডাক্তার আখতার জাহান জানান, নরমাল ডেলিভারী নার্সরাই সাধারনত করিয়ে থাকে। তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া আছে। আমি শুধু তত্ত্বাবধান করে থাকি। কিন্তু তাছলিমা আক্তারের যে অবস্থা তাকে তিন মাসের আগে কোন চিকিৎসা দেয়া যাবে না। তার অবস্থা যতই অবনতি হোক না কেন তিন মাসের তাকে কোন চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ডাক্তার আখতার জাহান অনুমোদনহীন একটি ক্লিনিক পরিচালনা করেন। এছাড়াও বেশ কয়েকটি ক্লিনিকে অন কলে অপারেশন করেন। মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে আসা রোগীদের ফুসলিয়ে নিজের ক্লিনিকে নিয়ে অপারেশন করিয়ে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করে থাকেন। ইতিপূর্বে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটিয়ে, কৌশলে ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।