রকিবুজ্জামান,মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি :
মাদারীপুরের কালকিনিতে প্রধান শিক্ষকের প্রচেষ্টায় এমিলি খানম নামে এক মেধাবী স্কুলছাত্রী বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা পেল। এমিলি খানম উপজেলার আলীনগর এলাকার কালিনগর ফাসিয়াতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বানিজ্য বিভাগের দশম শ্রেনীর ছাত্রী। আজ শনিবার সকালে ওই বিদ্যালয় সুত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
জানাগেছে,উপজেলার পশ্চিম আলীপুর গ্রামের মোঃ মজিবর রহমান ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন বেগম মিলে হঠাৎ মেয়ে এমিলির বিয়ে ঠিক করেন। এবং বিয়েতে এমিলির কোন মত না থাকায় জোরপুর্বক বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে তার বাবা-মা। কিন্তু এমিলি থেমে থাকারা পাত্রী নয়। অদম্য আত্মপ্রত্যয় ও দৃঢ়তা নিয়ে সে নিজেই বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। এমিলি তার বাবা-মায়ের দেয়া বিয়ের প্রস্তাব কোন প্রকার কর্ণপাত না করে স্কুলের সহপাঠিদের নিয়ে প্রধান শিক্ষক সোহরাফ হোসেন কিরনের শরণাপন্ন হয়। পরে প্রধান শিক্ষক তার অভিভাবক মজিবর রহমানকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এমিলির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা তুলে ধরে এ বাল্যবিবাহ বন্ধ করার পরামর্শ দেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের পরামর্শের কথা উপেক্ষা করে মজিবর তার মেয়ের বিয়ের বিষয় সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। এতে এমিলি মানসিকভাবে ভেঙে পরে এবং ভবিষ্যত অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনের কথা চিন্তা করে স্কুল প্রাঙ্গণেই কান্না করতে থাকে। এ বিয়ে প্রতিরোধের অন্য কোন উপায় না দেখে প্রধান শিক্ষক সোহরাফ হোসেন কিরন নিরুপায় হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ সাইফুল ইসলামের নিকট বিবাহ বন্ধের লিখিত আবেদন জানান। পরে ইউএনও বিষয়টি অবগত হয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে এ বিবাহ বন্ধ করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এমিলি খানম জানায়, আমি আমার নিজের বাল্যবিয়েকে ভেঙ্গে দিয়েছি। আমার মত সচেতন হলে অনেকেই বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পাবে। আমাদের সকলকে বাল্যবিয়েকে প্রতিরোধ করতে হবে।
প্রধান শিক্ষক সোহরাফ হোসেন কিরন বলেন, এমিলির স্বপ্নযাত্রা নতুন করে শুরু হলো। এমিলিরা থেমে থাকার নয়, সমাজের প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে এভাবেই এমিলিরা এগিয়ে যাবে , তাদের স্বপ্নকে স্বার্থক করবে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে নিজের পরিচয়ে- এটাই প্রত্যাশা। ধন্যবাদ জানাই আত্মপ্রত্যয়ী ও সাহসিকতার জ্বলন্ত অগ্নিকন্যা এমিলিকে। এমিলি আমাদের বিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ছাত্রী।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা যে যার অবস্থান থেকে যদি বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। তাহলে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব।