ঢাকা ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।। বরিশালে সুলভ মুল্যে বসুন্ধরা পন্য পেয়ে ক্রেতারা খুশী। বাবুগঞ্জে স্কুল ছুটির পরে বাড়ি যাওয়ার সময় দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজ। আমার বাবাও মায়ের দেওয়া উপদেশ বড়দের সম্মান কর ছোটদের স্নেহ করো। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখী নারী উদ্যোক্তা মেলা শুরু। টাঙ্গাইলে তিনদিন ব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা শুরু বাকেরগঞ্জে প্রধান মন্ত্রীর ছবি ব্যঙ্গক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট করায় হায়দর সিপাই গ্রেফতার। বাকেরগঞ্জে স্ত্রীর দায়ের কৃত মামলায় স্বামী পারভেজ খান গ্রেফতার।। বাকেরগঞ্জে তরমুজ চাষী হত্যা চেষ্টা মামলার আসামী রুদ্র গাজী গ্রেফতার টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড অনুষ্ঠিত

তিতাসের বুকে নিয়ন্ত্রণহীন নৌযান কেড়ে নিল ২২ প্রাণ

তিতাসের বুকে নিয়ন্ত্রণহীন নৌযান কেড়ে নিল ২২ প্রাণ

মোঃ কেফাইতুল ভুঁইয়া, বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস ও ছোট বড় সব নদী খালে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণহীন উদাসীনতার কারনে বৈধ অবৈধ অবাধে নৌযান চলাচলে কেড়ে নিল ২২ টি তরতাজা প্রাণ।

গত (২৭ আগস্ট) শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর থেকে ছেড়ে যাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের আনন্দবাজার নৌ ঘাটে যাওয়া সোনা মিয়া মাঝির যাত্রীবাহী নৌকার সাথে অবৈধ বালুবাহী সরাইল উপজেলার জামিল মিয়া মাঝির নৌকার সাথে সংঘর্ষে কেড়ে নিল তাজা ২২ টি প্রাণ।

৬০ থেকে ৭০ জন ধারণক্ষমতা সম্পূর্ণ নৌকাটিতে প্রায় ২০০ থেকে ২২০ জন শিশুসহ নারী পুরুষ যাত্রী ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বিকেল ৬ টায় বিজয়নগরের শেখ হাসিনা সড়কের লইছকা বিল এলাকার তিতাস নদীতে এ ঘটনাটি ঘটেছে।

দুর্ঘটনা পর পর দের শতাধিকের মত মানুষ পাড়ে উঠতে পারলেও এ পর্যন্ত ২২ জনের মৃতদেহ ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী ডুবুরি দল, পুলিশসহ স্থানীয় জনতা উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়।তার মধ্যে ৬ জন শিশু ১৫ জন মহিলা ও ১ জন মেডিকেলের ছাত্র রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বিজয়নগরের প্রতিটি এলাকায় এলাকায় শোকের মাতম চলছে।ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কয়েক দর্শকে এত বড় মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা কখনো দেখিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নৌকাডুবিতে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তারা হলেন-বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের হুদাইপাড়া এলাকার কামাল মিয়ার মেয়ে মাহিদা আক্তার (৫), আব্দুল হাসিমের মেয়ে কমলা বেগম, একই ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামের অকিল বিশ্বাসের স্ত্রী অঞ্জনি বিশ্বাস (৫০), নূরপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে মিনার বেগম, একই গ্রামের জজ মিয়ার মেয়ে (৬) ও তার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪০), একই গ্রামের মালু মিয়ার স্ত্রী মঞ্জু বেগম (৬০), একই ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের জহিরুল হক ভূঁইয়ার ছেলে মেডিকেলের ছাত্র আরিফ বিল্লা (২০), মনিরপুর গ্রামের আব্দুর বারীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৫৮), পত্তন ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামের পরিমলের স্ত্রী অঞ্জনা (৫০) ও তার মেয়ে তিতিবা (৩), জেলা শহরের দাতিয়ারা এলাকার মোবারক মিয়ার মেয়ে তাসফিয়া মিম (১২), পৈরতলা এলাকার ফারুক মিয়া স্ত্রী কাজলী বেগম, সদর উপজেলা ভাটপাড়া গ্রামের ঝাড়ু মিয়ার মেয়ে শারমিন (১৮), সদর উপজেলার নরসিংসার ইউনিয়নের গাছতলা গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে আজীম (৭), সদর উপজেলা সাদেকপুর গ্রামের মুরাদ হোসেনের ছেলে তানভীর (৮), শহরের দক্ষিণ পৈরতলার আবু সায়েদের স্ত্রী মোমেনা বেগম (৫৫), সদরের চিলোকুট গ্রামের আব্দুল্লাহর মেয়ে তাকুয়া (৮) ও ময়মনসিংহ জেলার খোকন মিয়ার স্ত্রী ঝর্ণা বেগম (৫৫), জেলা শহরের পৈরতলার হারিস মিয়ার মেয়ে নাশরার (৩)।

একই পরিবারের ৪ জন নিহতের স্বজন উপজেলার গেরাগাঁও গ্রামের মোঃ সেলিম মিয়া বাদী হয়ে ৭ জনকে আসামী করে বিজয়নগর থানায় দুর্ঘটনাজনিত হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এর আগে দূর্ঘনার দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় ও রাতে উপজেলার চর ইসলামপুর এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ৫ জনকে পুলিশ বিভিন্ন জায়গা থেকে আটক করেন।

আটকরা হলো – বালুবাহী নৌকার মাঝি সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের ষোলাবাড়ির আবজাল এর ছেলে জামিল মিয়া (৩৫),তার সহাকারী একেই এলাকার কাশেম মিয়ার ছেলে মোঃ খোকন (২২), মৃত আব্দুল করিমের ছেলে মোঃ রাসেল (১৮) ও মোঃ সোলায়মান মিয়া (৬০), বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের মিষ্টু মিয়া (৬৭)কে আটক করে।বাকি দুই জনের আটকের চেষ্টা চলছে বলে বিজয়নগর থানা পুলিশ জানান।

দুর্ঘটনার কারণ নিরুপায়ের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।মৃতদেহ দাফনকাজ সম্পূর্ণ করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি মৃতদেহের স্বজনের হাতে ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়।উক্ত নৌ রোডে যান চলাচল সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিজয়নগর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) ফয়সাল আহাম্মদে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ৯৯৯ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। জেলা ও উপজেলার উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে সার্বক্ষণিক উদ্ধার কাজ মনিটরিং করেছ।নিহতের স্বজন সেলিম মিয়া নামে এক ব্যক্তি দুর্ঘটনাজনিত হত্যা অভিযোগ এনে ৭ জনকে আসামীকে একটি মামলা দায়ের করেন।এখন পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।বাকিদের গ্রেপ্তার চেষ্টা অব্যাহত আছে।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।।

তিতাসের বুকে নিয়ন্ত্রণহীন নৌযান কেড়ে নিল ২২ প্রাণ

আপডেট টাইম ০৯:২৪:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২১

তিতাসের বুকে নিয়ন্ত্রণহীন নৌযান কেড়ে নিল ২২ প্রাণ

মোঃ কেফাইতুল ভুঁইয়া, বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস ও ছোট বড় সব নদী খালে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণহীন উদাসীনতার কারনে বৈধ অবৈধ অবাধে নৌযান চলাচলে কেড়ে নিল ২২ টি তরতাজা প্রাণ।

গত (২৭ আগস্ট) শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর থেকে ছেড়ে যাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের আনন্দবাজার নৌ ঘাটে যাওয়া সোনা মিয়া মাঝির যাত্রীবাহী নৌকার সাথে অবৈধ বালুবাহী সরাইল উপজেলার জামিল মিয়া মাঝির নৌকার সাথে সংঘর্ষে কেড়ে নিল তাজা ২২ টি প্রাণ।

৬০ থেকে ৭০ জন ধারণক্ষমতা সম্পূর্ণ নৌকাটিতে প্রায় ২০০ থেকে ২২০ জন শিশুসহ নারী পুরুষ যাত্রী ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বিকেল ৬ টায় বিজয়নগরের শেখ হাসিনা সড়কের লইছকা বিল এলাকার তিতাস নদীতে এ ঘটনাটি ঘটেছে।

দুর্ঘটনা পর পর দের শতাধিকের মত মানুষ পাড়ে উঠতে পারলেও এ পর্যন্ত ২২ জনের মৃতদেহ ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী ডুবুরি দল, পুলিশসহ স্থানীয় জনতা উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়।তার মধ্যে ৬ জন শিশু ১৫ জন মহিলা ও ১ জন মেডিকেলের ছাত্র রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বিজয়নগরের প্রতিটি এলাকায় এলাকায় শোকের মাতম চলছে।ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কয়েক দর্শকে এত বড় মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা কখনো দেখিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নৌকাডুবিতে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তারা হলেন-বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের হুদাইপাড়া এলাকার কামাল মিয়ার মেয়ে মাহিদা আক্তার (৫), আব্দুল হাসিমের মেয়ে কমলা বেগম, একই ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামের অকিল বিশ্বাসের স্ত্রী অঞ্জনি বিশ্বাস (৫০), নূরপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে মিনার বেগম, একই গ্রামের জজ মিয়ার মেয়ে (৬) ও তার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪০), একই গ্রামের মালু মিয়ার স্ত্রী মঞ্জু বেগম (৬০), একই ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের জহিরুল হক ভূঁইয়ার ছেলে মেডিকেলের ছাত্র আরিফ বিল্লা (২০), মনিরপুর গ্রামের আব্দুর বারীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৫৮), পত্তন ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামের পরিমলের স্ত্রী অঞ্জনা (৫০) ও তার মেয়ে তিতিবা (৩), জেলা শহরের দাতিয়ারা এলাকার মোবারক মিয়ার মেয়ে তাসফিয়া মিম (১২), পৈরতলা এলাকার ফারুক মিয়া স্ত্রী কাজলী বেগম, সদর উপজেলা ভাটপাড়া গ্রামের ঝাড়ু মিয়ার মেয়ে শারমিন (১৮), সদর উপজেলার নরসিংসার ইউনিয়নের গাছতলা গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে আজীম (৭), সদর উপজেলা সাদেকপুর গ্রামের মুরাদ হোসেনের ছেলে তানভীর (৮), শহরের দক্ষিণ পৈরতলার আবু সায়েদের স্ত্রী মোমেনা বেগম (৫৫), সদরের চিলোকুট গ্রামের আব্দুল্লাহর মেয়ে তাকুয়া (৮) ও ময়মনসিংহ জেলার খোকন মিয়ার স্ত্রী ঝর্ণা বেগম (৫৫), জেলা শহরের পৈরতলার হারিস মিয়ার মেয়ে নাশরার (৩)।

একই পরিবারের ৪ জন নিহতের স্বজন উপজেলার গেরাগাঁও গ্রামের মোঃ সেলিম মিয়া বাদী হয়ে ৭ জনকে আসামী করে বিজয়নগর থানায় দুর্ঘটনাজনিত হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এর আগে দূর্ঘনার দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় ও রাতে উপজেলার চর ইসলামপুর এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ৫ জনকে পুলিশ বিভিন্ন জায়গা থেকে আটক করেন।

আটকরা হলো – বালুবাহী নৌকার মাঝি সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের ষোলাবাড়ির আবজাল এর ছেলে জামিল মিয়া (৩৫),তার সহাকারী একেই এলাকার কাশেম মিয়ার ছেলে মোঃ খোকন (২২), মৃত আব্দুল করিমের ছেলে মোঃ রাসেল (১৮) ও মোঃ সোলায়মান মিয়া (৬০), বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের মিষ্টু মিয়া (৬৭)কে আটক করে।বাকি দুই জনের আটকের চেষ্টা চলছে বলে বিজয়নগর থানা পুলিশ জানান।

দুর্ঘটনার কারণ নিরুপায়ের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।মৃতদেহ দাফনকাজ সম্পূর্ণ করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি মৃতদেহের স্বজনের হাতে ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়।উক্ত নৌ রোডে যান চলাচল সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিজয়নগর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) ফয়সাল আহাম্মদে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ৯৯৯ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। জেলা ও উপজেলার উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে সার্বক্ষণিক উদ্ধার কাজ মনিটরিং করেছ।নিহতের স্বজন সেলিম মিয়া নামে এক ব্যক্তি দুর্ঘটনাজনিত হত্যা অভিযোগ এনে ৭ জনকে আসামীকে একটি মামলা দায়ের করেন।এখন পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।বাকিদের গ্রেপ্তার চেষ্টা অব্যাহত আছে।