ঢাকা ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, প্রথম ধাপ ইন্দুরকানীতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ইভিএম ভোট কেন্দ্র চট্টগ্রামে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতে একসাথে কাজ করবে চসিক ও সিএমপি নির্বাচনী ছড়া বাড়ছে সাংবাদিক কমছে সাংবাদিকতা-মোঃ রাব্বী মেল্লা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মাতুয়াইলে বাস ও পিকআপ মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও আহত ২ লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কে শপথ বাক্য পাঠ করালেন প্রধানমন্ত্রী বরিশালে সার্বজনীন পেনশন মেলা ২০২৪ উদ্বোধন হিরাঝীলে বিশ্বাস মঞ্জিল নামের একটি বিল্ডিং হেলে পড়ে,নিরাপত্তাহীনতায় এলাকাবাসী বাকেরগঞ্জে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জন প্রিয়তার শীর্ষে সাইফুল ইসলাম ডাকুয়া। বাকেরগঞ্জে যুবদল সভাপতি টুকুর মুক্তির দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল

পরকীয়াই কাল হলো আজিজুলের,বন্ধুকে হত্যা করেন নেজাম

রাহাত মামুন
চট্টগ্রাম সংবাদদাতা

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দুই ট্রাকচালক আজিজুল হক (২২) ও মো. নেজাম ওরফে মিজান (২৬) দুজন ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আজিজের বাড়ি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে। সে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল হাকিমের ছেলে। অভিযুক্ত নেজাম একই উপজেলার জঙ্গল পোমরা এলাকার সন্ধীপ নিবাসী নুরুল আলমের ছেলে।

উভয়ের বাড়িতে ঘনিষ্ঠ যাতায়াতের সুবাদে নেজামের স্ত্রীর সঙ্গে আজিজের পরকীয়ার সম্পর্কের ঝেরে একপর্যায়ে আজিজ নেজামের স্ত্রীকে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এতে মনস্থ করে নেজাম তার বন্ধু আজিজকে হত্যা করে।

গ্রেফতারের পর রোববার (২৫ এপ্রিল) মো. নেজাম চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম আঞ্জুমান আরার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

নিজের বন্ধুর হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে নেজাম আদালতের জবানবন্দিতে আরও বলেন, গত ২৫ মার্চ বালু আনার কথা বলে আজিজকে কৌশলে রাঙ্গামাটি জেলার বেতবুনিয়া এলাকার এক গহীন লোকচক্ষু আড়াল জায়গায় নিয়ে যান নেজাম। এরপর সেখানে ট্রাকের রেঞ্জ দিয়ে মাথায় আঘাত এবং ছুরিকাঘাতে আজিজকে হত্যা করেন।

আদালত সূত্রে আরও জানা গেছে, হত্যার পর নেজাম বন্ধুর মরদেহ পাহাড়ে লুকিয়ে রাখলেও পরদিন ২৬ মার্চ দিবাগত রাতে সে মরদেহটিকে কাঁধে করে রাঙ্গুনিয়া থানার চৌধুরী খিল নাজিম প্রফেসরের পাহাড়ের পাদদেশে একটি ডোবার পাশে একাই মৃতের জানাজা পড়েন। বন্ধুর হাত ধরে ক্ষমা চেয়ে কবর দেয়ার মতো করে ডোবার তলদেশে মরদেহটিকে পুঁতে ফেলেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ মার্চ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে নিখোঁজ হন ট্রাকচালক আজিজুল হক (২২)। এ ঘটনায় আজিজের পরিবার রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরির সূত্রে তদন্তে একপর্যায়ে আজিজের ব্যবহৃত মোবাইলটি প্রযুক্তির সাহায্যে কক্সবাজারে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।

জানা গেছে, ঘটনার ১৫ দিন পর সূত্র ধরে কক্সবাজার সদর এলাকা থেকে মোবাইল এবং রামু এলাকা থেকে ট্রাকটি জব্দ করা হয়। অপহরণকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ওই এলাকার দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা মো. নেজাম নামে আরেক যুবক জড়িতের কথা স্বীকার করে।

এরপর পুলিশ প্রযুক্তির সাহায্যে সন্দ্বীপে নেজামের অবস্থান শনাক্ত করে এবং শনিবার (২৪ এপ্রিল) সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন, নিজের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার জেরে তার বন্ধু ট্রাকচালক আজিজকে হত্যা করে একটি ডোবায় মাটিচাপা দেন নেজাম।

পুলিশ জানায়, নেজামের জবানবন্দিতে শনিবার (২৪ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় রাঙ্গুনিয়া এলাকার একটি ডোবা থেকে আজিজের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুব মিল্কী বলেন, ‘আজিজের ব্যবহৃত মোবাইলের সূত্র ধরেই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার আসামি নেজামকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির আবেদন করে আজ (রোববার) আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া উদ্ধারের পর আজিজের অর্ধগলিত মরদেহ ময়না
তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।’

পুরো ঘটনা তদন্তে নেতৃত্ব দিয়েছেন রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম। তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমে এক মাসের নিরবচ্ছিন্ন তদন্তে আমরা কোনো ক্লু-লেস এই মামলার রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা নেজামকে গ্রেফতার এবং তার দেয়া তথ্যমতে ভিকটিমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’ এ ঘটনায় অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না তাও তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, প্রথম ধাপ ইন্দুরকানীতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ইভিএম ভোট কেন্দ্র

পরকীয়াই কাল হলো আজিজুলের,বন্ধুকে হত্যা করেন নেজাম

আপডেট টাইম ১০:৪৩:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২১

রাহাত মামুন
চট্টগ্রাম সংবাদদাতা

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দুই ট্রাকচালক আজিজুল হক (২২) ও মো. নেজাম ওরফে মিজান (২৬) দুজন ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আজিজের বাড়ি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে। সে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল হাকিমের ছেলে। অভিযুক্ত নেজাম একই উপজেলার জঙ্গল পোমরা এলাকার সন্ধীপ নিবাসী নুরুল আলমের ছেলে।

উভয়ের বাড়িতে ঘনিষ্ঠ যাতায়াতের সুবাদে নেজামের স্ত্রীর সঙ্গে আজিজের পরকীয়ার সম্পর্কের ঝেরে একপর্যায়ে আজিজ নেজামের স্ত্রীকে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এতে মনস্থ করে নেজাম তার বন্ধু আজিজকে হত্যা করে।

গ্রেফতারের পর রোববার (২৫ এপ্রিল) মো. নেজাম চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম আঞ্জুমান আরার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

নিজের বন্ধুর হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে নেজাম আদালতের জবানবন্দিতে আরও বলেন, গত ২৫ মার্চ বালু আনার কথা বলে আজিজকে কৌশলে রাঙ্গামাটি জেলার বেতবুনিয়া এলাকার এক গহীন লোকচক্ষু আড়াল জায়গায় নিয়ে যান নেজাম। এরপর সেখানে ট্রাকের রেঞ্জ দিয়ে মাথায় আঘাত এবং ছুরিকাঘাতে আজিজকে হত্যা করেন।

আদালত সূত্রে আরও জানা গেছে, হত্যার পর নেজাম বন্ধুর মরদেহ পাহাড়ে লুকিয়ে রাখলেও পরদিন ২৬ মার্চ দিবাগত রাতে সে মরদেহটিকে কাঁধে করে রাঙ্গুনিয়া থানার চৌধুরী খিল নাজিম প্রফেসরের পাহাড়ের পাদদেশে একটি ডোবার পাশে একাই মৃতের জানাজা পড়েন। বন্ধুর হাত ধরে ক্ষমা চেয়ে কবর দেয়ার মতো করে ডোবার তলদেশে মরদেহটিকে পুঁতে ফেলেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ মার্চ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে নিখোঁজ হন ট্রাকচালক আজিজুল হক (২২)। এ ঘটনায় আজিজের পরিবার রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরির সূত্রে তদন্তে একপর্যায়ে আজিজের ব্যবহৃত মোবাইলটি প্রযুক্তির সাহায্যে কক্সবাজারে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।

জানা গেছে, ঘটনার ১৫ দিন পর সূত্র ধরে কক্সবাজার সদর এলাকা থেকে মোবাইল এবং রামু এলাকা থেকে ট্রাকটি জব্দ করা হয়। অপহরণকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ওই এলাকার দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা মো. নেজাম নামে আরেক যুবক জড়িতের কথা স্বীকার করে।

এরপর পুলিশ প্রযুক্তির সাহায্যে সন্দ্বীপে নেজামের অবস্থান শনাক্ত করে এবং শনিবার (২৪ এপ্রিল) সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন, নিজের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার জেরে তার বন্ধু ট্রাকচালক আজিজকে হত্যা করে একটি ডোবায় মাটিচাপা দেন নেজাম।

পুলিশ জানায়, নেজামের জবানবন্দিতে শনিবার (২৪ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় রাঙ্গুনিয়া এলাকার একটি ডোবা থেকে আজিজের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুব মিল্কী বলেন, ‘আজিজের ব্যবহৃত মোবাইলের সূত্র ধরেই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার আসামি নেজামকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির আবেদন করে আজ (রোববার) আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া উদ্ধারের পর আজিজের অর্ধগলিত মরদেহ ময়না
তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।’

পুরো ঘটনা তদন্তে নেতৃত্ব দিয়েছেন রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম। তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমে এক মাসের নিরবচ্ছিন্ন তদন্তে আমরা কোনো ক্লু-লেস এই মামলার রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা নেজামকে গ্রেফতার এবং তার দেয়া তথ্যমতে ভিকটিমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’ এ ঘটনায় অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না তাও তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।