ঢাকা ০৭:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।। বরিশালে সুলভ মুল্যে বসুন্ধরা পন্য পেয়ে ক্রেতারা খুশী। বাবুগঞ্জে স্কুল ছুটির পরে বাড়ি যাওয়ার সময় দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজ। আমার বাবাও মায়ের দেওয়া উপদেশ বড়দের সম্মান কর ছোটদের স্নেহ করো। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখী নারী উদ্যোক্তা মেলা শুরু। টাঙ্গাইলে তিনদিন ব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা শুরু বাকেরগঞ্জে প্রধান মন্ত্রীর ছবি ব্যঙ্গক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট করায় হায়দর সিপাই গ্রেফতার। বাকেরগঞ্জে স্ত্রীর দায়ের কৃত মামলায় স্বামী পারভেজ খান গ্রেফতার।। বাকেরগঞ্জে তরমুজ চাষী হত্যা চেষ্টা মামলার আসামী রুদ্র গাজী গ্রেফতার টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড অনুষ্ঠিত

টাঙ্গাইলে খরস্রোতা ধলেশ্বরী নদীর বুকে সবুজ ফসলের ক্ষেত

মোঃ মশিউর রহমান/টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের একসময়কার খরস্রোতা ধলেশ্বরী নদীর বুকে এখন সবুজের সমারোহ। চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের ফসল। গত এক দশক যাবৎ এ নদীর বেশিরভাগ অংশে বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে আসছেন স্থানীয় কৃষকরা। বর্ষা মৌসুম ছাড়া বাকি সময় বিভিন্ন ফসল চাষ হয় এ নদীর বুকে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা ধলেশ্বরী নদী শুষ্ক মৌসুমে হয়ে উঠে ধূ ধূ মাঠ। বিস্তীর্ণ এই মাঠকে বিরাণভূমি রাখতে নারাজ সেখানকার কৃষকরা। দেরি না করে শুকনা মৌসুমে আবাদ করেছেন ইরি-২৮ ও ২৯, বোরো ধান, মাসকালাই, বাদামসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি।

সরেজমিন দেখা যায়, ধলেশ্বরী নদীর বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা হয়েছে। নদীর বুকজুড়ে সবুজ আর সবুজ। নদীটির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে বর্তমানে কৃষকের চাষযোগ্য ভূমিতে পরিণত হয়েছে। নদীর উপরে সেতু ছাড়া বোঝার উপায় নেই এটা নদী নাকি ফসলের মাঠ। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া, কাকুয়া, কাতুলী, বাঘিল, পোড়াবাড়ী ও ছিলিমপুর ইউনিয়নের প্রায় ২৫ কিলোমিটার অংশে ধলেশ্বরী নদীর বুকে ধানসহ বিভিন্ন ফসল ফলানো হচ্ছে।

পরিবেশ বাদী সংগঠন বেলার ঊর্ধ্বতন গবেষণা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র জানান, টাঙ্গাইলের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে যমুনা নদী থেকে ধলেশ্বরী নদীর সৃষ্টি হয়েছে। নদীটির দুটি শাখা রয়েছে। একটি শাখা পাশের জেলা মাকিগঞ্জের উত্তর দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মানিকগঞ্জের দক্ষিণে গিয়ে শেষ হয়েছে। অপরটি গাজীপুরের কালীগঞ্জের সাথে মিলিত হয়েছে। বুড়িগঙ্গা এক সময় ধলেশ্বরীর শাখা ছিল। ধলেশ্বরী নদী নানাভাবে প্রবাহিত হয়ে পুনরায় ধলেশ্বরীতেই পতিত হওয়ায় এটাকে ব্যতিক্রম নদী হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। এর এত বিস্তৃতির কারণেই উপকৃত হচ্ছে ধলেশ্বরীপাড়ের বাসিন্দারা।

কাকুয়া ইউনিয়নের এক কৃষক বলেন, এ নদী দিয়ে এক সময় নৌকা, স্টিমার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল করত। এখন আর আগের মতো দীর্ঘ সময় পানি থাকে না। বন্যার সময় ৩-৪ মাস নদীতে পানি থাকে। বছরের বাকি সময়টা শুকনা থাকে। প্রতি বছর বন্যার সময় পলি জমে থাকায় ফসল ভালো হয়।

চর পাকুল্লা গ্রামের হুমায়ুন এবং মাহমুদনগর গ্রামের রশিদ মিয়া বলেন, এক সময় নদী অনেক গভীর ছিল। ফাল্গুন-চৈত্র মাসেও নদীতে নৌকা চলাচল করত। এখন নদী প্রায় মরে গেছে। অন্য অঞ্চলের মানুষ এখানে এলে বুঝতেই পারবে না এটা খরস্রোতা ধলেশ্বরী। এখন নদী দেখে খালও মনে হয় না। কারণ নদীর তীর নেই, গভীরতা নেই, নদীর বিস্তীর্ণ এলাকায় বালু নাই। এ কারণে স্থানীয় কৃষকরা নদীতে ধানসহ সবজি চাষ করে থাকেন।

ছিলিমপুর ইউপি সদস্য মো. আমিন মিয়া বলেন, ধলেশ্বরী নদী বর্তমানে ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। পুরো নদীতে বালুর পরিবর্তে উর্বর মাটিতে ভরে গেছে। এ নদীতে ধানসহ যে কোনো ফসল চাষ করলে ফলনও ভালো হয়।

কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, কাকুয়া ইউনিয়নের ওমরপুর, দেলদা, রাঙাচিড়া ও চরপৌলী গ্রামের পাশ দিয়ে ধলেশ্বরী নদী বয়ে গেছে। এ ইউনিয়নের পাঁচ কিলোমিটার নদীতে ধান-পাটসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করা হচ্ছে।

পোড়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজমত আলী জানান, তার ইউনিয়নের খারজানা, বাউশা, নন্দিপাড়া, ঝিনাই গ্রামের পাশ দিয়ে প্রায় চার কিলোমিটার নদীর সীমানা। এখন নদী নেই বললেই চলে। নদীর পতিত ভূমিতে বন্যার সময় ব্যতীত বাকি সময় ফসল চাষ হচ্ছে।

ধলেশ্বরী নদীর যৌবন ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন জানান, নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রাণালয়ের সাথে কথা হয়েছে। ধলেশ্বরী, লৌহজং, ঝিনাই নদীসহ কয়েকটি নদীকে এ, বি এবং সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। এ ক্যাটাগরিতে থাকা ধলেশ্বরী নদী খনন ও তীররক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করা হবে শিগগিরই।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।।

টাঙ্গাইলে খরস্রোতা ধলেশ্বরী নদীর বুকে সবুজ ফসলের ক্ষেত

আপডেট টাইম ০৮:১১:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১

মোঃ মশিউর রহমান/টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের একসময়কার খরস্রোতা ধলেশ্বরী নদীর বুকে এখন সবুজের সমারোহ। চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের ফসল। গত এক দশক যাবৎ এ নদীর বেশিরভাগ অংশে বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে আসছেন স্থানীয় কৃষকরা। বর্ষা মৌসুম ছাড়া বাকি সময় বিভিন্ন ফসল চাষ হয় এ নদীর বুকে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা ধলেশ্বরী নদী শুষ্ক মৌসুমে হয়ে উঠে ধূ ধূ মাঠ। বিস্তীর্ণ এই মাঠকে বিরাণভূমি রাখতে নারাজ সেখানকার কৃষকরা। দেরি না করে শুকনা মৌসুমে আবাদ করেছেন ইরি-২৮ ও ২৯, বোরো ধান, মাসকালাই, বাদামসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি।

সরেজমিন দেখা যায়, ধলেশ্বরী নদীর বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা হয়েছে। নদীর বুকজুড়ে সবুজ আর সবুজ। নদীটির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে বর্তমানে কৃষকের চাষযোগ্য ভূমিতে পরিণত হয়েছে। নদীর উপরে সেতু ছাড়া বোঝার উপায় নেই এটা নদী নাকি ফসলের মাঠ। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া, কাকুয়া, কাতুলী, বাঘিল, পোড়াবাড়ী ও ছিলিমপুর ইউনিয়নের প্রায় ২৫ কিলোমিটার অংশে ধলেশ্বরী নদীর বুকে ধানসহ বিভিন্ন ফসল ফলানো হচ্ছে।

পরিবেশ বাদী সংগঠন বেলার ঊর্ধ্বতন গবেষণা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র জানান, টাঙ্গাইলের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে যমুনা নদী থেকে ধলেশ্বরী নদীর সৃষ্টি হয়েছে। নদীটির দুটি শাখা রয়েছে। একটি শাখা পাশের জেলা মাকিগঞ্জের উত্তর দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মানিকগঞ্জের দক্ষিণে গিয়ে শেষ হয়েছে। অপরটি গাজীপুরের কালীগঞ্জের সাথে মিলিত হয়েছে। বুড়িগঙ্গা এক সময় ধলেশ্বরীর শাখা ছিল। ধলেশ্বরী নদী নানাভাবে প্রবাহিত হয়ে পুনরায় ধলেশ্বরীতেই পতিত হওয়ায় এটাকে ব্যতিক্রম নদী হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। এর এত বিস্তৃতির কারণেই উপকৃত হচ্ছে ধলেশ্বরীপাড়ের বাসিন্দারা।

কাকুয়া ইউনিয়নের এক কৃষক বলেন, এ নদী দিয়ে এক সময় নৌকা, স্টিমার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল করত। এখন আর আগের মতো দীর্ঘ সময় পানি থাকে না। বন্যার সময় ৩-৪ মাস নদীতে পানি থাকে। বছরের বাকি সময়টা শুকনা থাকে। প্রতি বছর বন্যার সময় পলি জমে থাকায় ফসল ভালো হয়।

চর পাকুল্লা গ্রামের হুমায়ুন এবং মাহমুদনগর গ্রামের রশিদ মিয়া বলেন, এক সময় নদী অনেক গভীর ছিল। ফাল্গুন-চৈত্র মাসেও নদীতে নৌকা চলাচল করত। এখন নদী প্রায় মরে গেছে। অন্য অঞ্চলের মানুষ এখানে এলে বুঝতেই পারবে না এটা খরস্রোতা ধলেশ্বরী। এখন নদী দেখে খালও মনে হয় না। কারণ নদীর তীর নেই, গভীরতা নেই, নদীর বিস্তীর্ণ এলাকায় বালু নাই। এ কারণে স্থানীয় কৃষকরা নদীতে ধানসহ সবজি চাষ করে থাকেন।

ছিলিমপুর ইউপি সদস্য মো. আমিন মিয়া বলেন, ধলেশ্বরী নদী বর্তমানে ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। পুরো নদীতে বালুর পরিবর্তে উর্বর মাটিতে ভরে গেছে। এ নদীতে ধানসহ যে কোনো ফসল চাষ করলে ফলনও ভালো হয়।

কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, কাকুয়া ইউনিয়নের ওমরপুর, দেলদা, রাঙাচিড়া ও চরপৌলী গ্রামের পাশ দিয়ে ধলেশ্বরী নদী বয়ে গেছে। এ ইউনিয়নের পাঁচ কিলোমিটার নদীতে ধান-পাটসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করা হচ্ছে।

পোড়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজমত আলী জানান, তার ইউনিয়নের খারজানা, বাউশা, নন্দিপাড়া, ঝিনাই গ্রামের পাশ দিয়ে প্রায় চার কিলোমিটার নদীর সীমানা। এখন নদী নেই বললেই চলে। নদীর পতিত ভূমিতে বন্যার সময় ব্যতীত বাকি সময় ফসল চাষ হচ্ছে।

ধলেশ্বরী নদীর যৌবন ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন জানান, নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রাণালয়ের সাথে কথা হয়েছে। ধলেশ্বরী, লৌহজং, ঝিনাই নদীসহ কয়েকটি নদীকে এ, বি এবং সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। এ ক্যাটাগরিতে থাকা ধলেশ্বরী নদী খনন ও তীররক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করা হবে শিগগিরই।