চট্টগ্রাম সংবাদদাতা
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বৈচিত্রময় ভাইরাস দেখা গেছে চট্টগ্রামে। এ অঞ্চলে একই সাথে চারটি মহাদেশের ভাইরাসের সাথে সাদৃশ্য পাওয়া গেছে। যা সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের এবং অন্যান্য মহাদেশের সাথেও খুবই ঘনিষ্ঠতার মিল দেখা গেছে বলে তথ্য জানিয়েছেন একদল গবেষক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ চারটি প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের বাংলাদেশের ২০২০ সালের জিনোম সিকুয়েন্সগুলো নিয়ে এমন বিশ্লেষণী গবেষণায় এসব তথ্য ওঠে আসে।
এ গবেষণা পত্রটি ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা ‘এলসেভিয়ার’ এবং নেদারল্যান্ড’র ‘ভাইরাস রিসার্চ’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় ওঠে আসে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দেশে এই ভাইরাসের জিনোমে ৪ হাজার ৬০৪ রকমের ভিন্নতা দেখা গেছে। যা পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায়নি। এরকম নতুন ধারার পরিবর্তন (যাকে বিজ্ঞানীরা বলেন ইউনিক মিউটেশন) বাংলাদেশে পাওয়া গেছে ৩৪ টি। মিউটেশনগুলোকে গবেষকেরা নাম দিয়েছেন ‘বাংলা মিউটেশন’।
গবেষকরা জানান, দেশে সবচেয়ে বেশি নতুন ধারার জিনগত পরিবর্তন তথা ইউনিক মিউটেশন পাওয়া যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুরে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বৈচিত্রময় জিনোম সিকুয়েন্স পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে। এখানে একই সাথে সৌদিআরব তথা মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলের ভাইরাসের জিনোম সিকুয়েন্সের সাথে মিল পাওয়া গেছে। গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক মাহবুব হাসান ও আদনান মান্নান এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউএসটিসি) শিক্ষক রাসেল দাশ।
এছাড়াও তত্ত্বাবধানে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এস এম মাহবুবুর রশিদ ও ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জুনায়েদ সিদ্দিকি। তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে ছিল মালেশিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক হামিদ হোসাইন ও নাজমুল হাসান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসমা সালাউদ্দিন, রাশেদুজ্জামান ও মেহেদী হাসান। গবেষকদলের প্রধান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আদনান মান্নান বলেন, এই মিউটেশন বা জিনগত ভিন্নতার কারণে ভাইরাসের সংক্রমণ করার ক্ষমতায় কোন পরিবর্তন এসেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা খুব গুরত্বপূর্ণ। কোন বিশেষ উপসর্গের পেছনে এরকম ইউনিক বা বাংলাদেশে স্বতন্ত্র মিউটেশনগুলো দায়ী কিনা, কিংবা এই ধরনের মিউটেশন থাকলে রোগীরা উপসর্গবিহীন হয় কিনা সেটাও দেখা প্রয়োজন। কারণ ‘নিউ মাইক্রোবস এন্ড নিউ ইনফেকশন’ নিবন্ধে প্রকাশিত আমাদের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে সাম্প্রতিক সময়গুলোতে দেশে আনুপাতিকহারে উপসর্গবিহীন কোভিড-১৯ এর রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
ইউএসটিসি’র শিক্ষক রাসেল দাশ বলেন, এই গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি দিক হল বাংলাদেশের ইউনিক মিউটেশনগুলো খুব অঞ্চলভিত্তিক। যেমন কিছু কিছু জিনগত পরিবর্তন শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু জেলা বা অঞ্চলেই দেখা গেছে। ঢাকায় তিনটি সুনির্দিষ্ট জিনগত পরিবর্তন দেখা গেছে যেটা শুধু ঢাকার রোগীদের মধ্যেই ছিল, আর কোথাও দেখা যায়নি। একইভাবে চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, বরিশাল, যশোর, মৌলভীবাজার ও ময়মনসিংহ’তে এরকম একদমই নিজস্ব জেনেটিক ভিন্নতা ছিল। এক্ষেত্রে সেসব জেলার ভৌগলিক অবস্থান, জীবনযাপন এবং পরিবেশগত নিয়ামকগুলো হয়ত ভাইরাসকে বদলে দিতে ভূমিকা পালন করছে।