ঢাকা ১২:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।। বরিশালে সুলভ মুল্যে বসুন্ধরা পন্য পেয়ে ক্রেতারা খুশী। বাবুগঞ্জে স্কুল ছুটির পরে বাড়ি যাওয়ার সময় দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজ। আমার বাবাও মায়ের দেওয়া উপদেশ বড়দের সম্মান কর ছোটদের স্নেহ করো। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখী নারী উদ্যোক্তা মেলা শুরু। টাঙ্গাইলে তিনদিন ব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা শুরু বাকেরগঞ্জে প্রধান মন্ত্রীর ছবি ব্যঙ্গক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট করায় হায়দর সিপাই গ্রেফতার। বাকেরগঞ্জে স্ত্রীর দায়ের কৃত মামলায় স্বামী পারভেজ খান গ্রেফতার।। বাকেরগঞ্জে তরমুজ চাষী হত্যা চেষ্টা মামলার আসামী রুদ্র গাজী গ্রেফতার টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড অনুষ্ঠিত

এক ছেলের খুনি আরেক ছেলের ফাঁসি চাইলেন- মা

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা:

বৃদ্ধা জিন্নাত আরা বেগম শোকে পাথর হয়ে যাবেন নাকি ক্ষোভে ফেটে পড়বেন, ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না। কারণ খুন হয়েছে তার ছেলে মুন্না। খুন করেছে তার আরেক ছেলে কামরুল। এ প্রতিবেদকের পরিচয় জেনে আর্তনাদ করে বললেন, ‘অ ফুত ইতেরে ফাঁসি দি আঁরারে বাঁচা’(ও ছেলে তাকে ফাঁসি দিয়ে আমাদের বাঁচাও)। পরক্ষণে বললেন, ‘আঁর ফোয়া উগ্‌গা খবরত, আরুগ্‌গা জেলত পচি মরিবু। আঁই কিল্লেই বাঁচি আছি?’(এক ছেলে কবরে,আরেক ছেলে জেলে পছবে। আমি কি জন্য বেঁচে আছি? )।

নগরীর পাহাড়তলীর সরাইপাড়া এলাকায় বড় ভাই কামরুলের হাতে খুন হয়েছেন জিন্নাত আরার ছেলে নিজাম উদ্দিন মুন্না। নিহত মুন্না ও কামরুলের বাবার নাম গিয়াস উদ্দিন। পাঁচ ভাই, দুই বোনের মধ্যে মুন্না ছিলেন তৃতীয়। মুন্নার স্ত্রী নাসরিন আকতার সুমী বাকপ্রতিবন্ধী। তাদের সংসারে আছে আড়াই বছর বয়সী কন্যা বিবি মরিয়ম জায়া ও ৮ মাস বয়সী পুত্র ইব্রাহিম।
জানা যায়, বারকোয়াটার এলাকার পশ্চিম নাসিরাবাদ নিজ বাড়ির কাছেই ফজু মিয়া সড়কের মা ভবনের সামনে নৃশংসভাবে খুন হন মুন্না। বেলা দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তায় তখনও রক্ত জমাট বেঁধে আছে। স্থানীয়রা চারপাশে ইট দিয়ে ঘেরাও দিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী মুন্নার ভাতিজা জানান, ভোর ৭টার দিকে ঘুম থেকে উঠে আমি আর চাচা (মুন্না) পাশের বাড়িতে কাউন্সিলর প্রার্থী সাবেরের পক্ষে ভোট কেন্দ্রে যেতে নির্বাচনী এজেন্ট ডাকতে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে ‘মা’ ভবনের সামনে আগে থেকে ১৫/২০ জন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ওঁত পেঁতে ছিল কামরুল চাচা। মুন্না চাচা সেই সময় মোবাইলে কার সাথে কথা বলছিলেন। হঠাৎ পেছন থেকে তার কোমরে ছুরিকাঘাত করে কামরুলের সাথে থাকা একজন। এ সময় মুন্না পড়ে যায়। আবারো ছুরিকাঘাত করা হয়। চাচা তখন কামরুল চাচার পা ধরে মাফ করে দিতে বলছিলেন। মুন্না চাচা বলেন, ভাই আমাকে মারিও না। আমার ছোট ছোট দুটি সন্তান আছে। আমাকে ছেড়ে দাও। এ সময় মুখ চেপে ধরে তাকে জবাই করে দেয়। আমি চিৎকার দিয়ে উঠি। কামরুল চাচাসহ কয়েকজন আমাকে মারার জন্য ধাওয়া করে। আমি দৌড়ে পালাই।

এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে তাদের মা জিন্নাত বলেন, যে ছেলে আপন ভাইকে এভাবে জবাই করে দিতে পারে, সে তো আমাদেরকেও বাঁচতে দেবে না। তার দাবি, বিদ্যুৎ ও পানির বিল নিয়ে দুই ভাইয়ের আগে থেকেই ঝগড়া হতো। সেটা বড় আকার ধারণ করে যখন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মুন্না সরাইপাড়া ১২ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী সাবের আহম্মদের হয়ে এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছিল। অন্যদিকে সালাউদ্দিন কামরুল আওয়ামী লীগের প্রার্থী নূরুল আমিনের কর্মী। ফেসবুকেও দুই ভাই দুই প্রার্থীর হয়ে বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতি দিয়েছিল। আজ সে নির্মমভাবে আমার বুকের ধনকে হত্যা করে পালিয়ে গেছে। আমি তার উপযুক্ত বিচার চাই।

মুন্নার বাবা গিয়াস উদ্দিন বলেন, দুই ভাই দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছিল। পারিবারিক জায়গা নিয়েও বিরোধ ছিল। আমার ছেলের খুনের জন্য আমার আরেক ছেলে কামরুলই দায়ী। আমি তার ফাঁসি চাই। আমার এক ছেলের বিধবা বউ আর দুই বাচ্চাকে যদি খাওয়াতে পারি, আরেক ছেলের বিধবা বউ ও বাচ্চাদেরও খাওয়াতে পারব।

মুন্নার শ্বশুর মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, সাত বছর হচ্ছে আমার বোবা মেয়েটাকে মুন্নার সাথে বিয়ে দিয়েছি। ছেলেটার স্বভাব-চরিত্র ভালো। তার মা-বাবাও বলেছিল, মেয়ের মতো করে রাখবে। তাই অমত করিনি। এখন আমার মেয়েটার কী হবে? তার মাসুম দুই সন্তানের কী হবে?

নিহত মুন্নার স্ত্রী বাকপ্রতিবন্ধী নাসরিন আকতার সুমি নিজের ভাষায় বলার চেষ্টা করছিলেন সব ঘটনা। বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন তার মা ও শাশুড়ি। সুমি জানান, অনেকদিন ধরে আমাদের ওপর অত্যাচার করে আসছিল কামরুল। হত্যার হুমকিও দিয়েছিল। গতকাল বুধবার আমার স্বামী বের হয়েছিল ভোরে। পরে ভোটার আইডি কার্ড নিতে বাসায় আসে। তখন বাচ্চা দুটিকে আদর করে গেছে। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছে বাচ্চাদের খেয়াল রাখতে। আর তো ফিরে এল না। আমরা ভালো আছি না খারাপ আছি, সে তো আর কখনো দেখতে আসবে না। বলেই মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এ সময় তার ৮ মাস বয়সী ছেলে ইব্রাহীম মায়ের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিল।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।।

এক ছেলের খুনি আরেক ছেলের ফাঁসি চাইলেন- মা

আপডেট টাইম ০২:৫৯:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা:

বৃদ্ধা জিন্নাত আরা বেগম শোকে পাথর হয়ে যাবেন নাকি ক্ষোভে ফেটে পড়বেন, ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না। কারণ খুন হয়েছে তার ছেলে মুন্না। খুন করেছে তার আরেক ছেলে কামরুল। এ প্রতিবেদকের পরিচয় জেনে আর্তনাদ করে বললেন, ‘অ ফুত ইতেরে ফাঁসি দি আঁরারে বাঁচা’(ও ছেলে তাকে ফাঁসি দিয়ে আমাদের বাঁচাও)। পরক্ষণে বললেন, ‘আঁর ফোয়া উগ্‌গা খবরত, আরুগ্‌গা জেলত পচি মরিবু। আঁই কিল্লেই বাঁচি আছি?’(এক ছেলে কবরে,আরেক ছেলে জেলে পছবে। আমি কি জন্য বেঁচে আছি? )।

নগরীর পাহাড়তলীর সরাইপাড়া এলাকায় বড় ভাই কামরুলের হাতে খুন হয়েছেন জিন্নাত আরার ছেলে নিজাম উদ্দিন মুন্না। নিহত মুন্না ও কামরুলের বাবার নাম গিয়াস উদ্দিন। পাঁচ ভাই, দুই বোনের মধ্যে মুন্না ছিলেন তৃতীয়। মুন্নার স্ত্রী নাসরিন আকতার সুমী বাকপ্রতিবন্ধী। তাদের সংসারে আছে আড়াই বছর বয়সী কন্যা বিবি মরিয়ম জায়া ও ৮ মাস বয়সী পুত্র ইব্রাহিম।
জানা যায়, বারকোয়াটার এলাকার পশ্চিম নাসিরাবাদ নিজ বাড়ির কাছেই ফজু মিয়া সড়কের মা ভবনের সামনে নৃশংসভাবে খুন হন মুন্না। বেলা দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তায় তখনও রক্ত জমাট বেঁধে আছে। স্থানীয়রা চারপাশে ইট দিয়ে ঘেরাও দিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী মুন্নার ভাতিজা জানান, ভোর ৭টার দিকে ঘুম থেকে উঠে আমি আর চাচা (মুন্না) পাশের বাড়িতে কাউন্সিলর প্রার্থী সাবেরের পক্ষে ভোট কেন্দ্রে যেতে নির্বাচনী এজেন্ট ডাকতে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে ‘মা’ ভবনের সামনে আগে থেকে ১৫/২০ জন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ওঁত পেঁতে ছিল কামরুল চাচা। মুন্না চাচা সেই সময় মোবাইলে কার সাথে কথা বলছিলেন। হঠাৎ পেছন থেকে তার কোমরে ছুরিকাঘাত করে কামরুলের সাথে থাকা একজন। এ সময় মুন্না পড়ে যায়। আবারো ছুরিকাঘাত করা হয়। চাচা তখন কামরুল চাচার পা ধরে মাফ করে দিতে বলছিলেন। মুন্না চাচা বলেন, ভাই আমাকে মারিও না। আমার ছোট ছোট দুটি সন্তান আছে। আমাকে ছেড়ে দাও। এ সময় মুখ চেপে ধরে তাকে জবাই করে দেয়। আমি চিৎকার দিয়ে উঠি। কামরুল চাচাসহ কয়েকজন আমাকে মারার জন্য ধাওয়া করে। আমি দৌড়ে পালাই।

এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে তাদের মা জিন্নাত বলেন, যে ছেলে আপন ভাইকে এভাবে জবাই করে দিতে পারে, সে তো আমাদেরকেও বাঁচতে দেবে না। তার দাবি, বিদ্যুৎ ও পানির বিল নিয়ে দুই ভাইয়ের আগে থেকেই ঝগড়া হতো। সেটা বড় আকার ধারণ করে যখন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মুন্না সরাইপাড়া ১২ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী সাবের আহম্মদের হয়ে এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছিল। অন্যদিকে সালাউদ্দিন কামরুল আওয়ামী লীগের প্রার্থী নূরুল আমিনের কর্মী। ফেসবুকেও দুই ভাই দুই প্রার্থীর হয়ে বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতি দিয়েছিল। আজ সে নির্মমভাবে আমার বুকের ধনকে হত্যা করে পালিয়ে গেছে। আমি তার উপযুক্ত বিচার চাই।

মুন্নার বাবা গিয়াস উদ্দিন বলেন, দুই ভাই দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছিল। পারিবারিক জায়গা নিয়েও বিরোধ ছিল। আমার ছেলের খুনের জন্য আমার আরেক ছেলে কামরুলই দায়ী। আমি তার ফাঁসি চাই। আমার এক ছেলের বিধবা বউ আর দুই বাচ্চাকে যদি খাওয়াতে পারি, আরেক ছেলের বিধবা বউ ও বাচ্চাদেরও খাওয়াতে পারব।

মুন্নার শ্বশুর মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, সাত বছর হচ্ছে আমার বোবা মেয়েটাকে মুন্নার সাথে বিয়ে দিয়েছি। ছেলেটার স্বভাব-চরিত্র ভালো। তার মা-বাবাও বলেছিল, মেয়ের মতো করে রাখবে। তাই অমত করিনি। এখন আমার মেয়েটার কী হবে? তার মাসুম দুই সন্তানের কী হবে?

নিহত মুন্নার স্ত্রী বাকপ্রতিবন্ধী নাসরিন আকতার সুমি নিজের ভাষায় বলার চেষ্টা করছিলেন সব ঘটনা। বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন তার মা ও শাশুড়ি। সুমি জানান, অনেকদিন ধরে আমাদের ওপর অত্যাচার করে আসছিল কামরুল। হত্যার হুমকিও দিয়েছিল। গতকাল বুধবার আমার স্বামী বের হয়েছিল ভোরে। পরে ভোটার আইডি কার্ড নিতে বাসায় আসে। তখন বাচ্চা দুটিকে আদর করে গেছে। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছে বাচ্চাদের খেয়াল রাখতে। আর তো ফিরে এল না। আমরা ভালো আছি না খারাপ আছি, সে তো আর কখনো দেখতে আসবে না। বলেই মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এ সময় তার ৮ মাস বয়সী ছেলে ইব্রাহীম মায়ের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিল।