রাহাত মামুন
চট্টগ্রাম সংবাদদাতা
ইটভাটার নগরী রাঙ্গুনিয়ায় ব্যাঙ্গের ছাতার মত যতযত্র গজিয়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ ইটভাটা। এসব ইটভাটায় মাটির জোগান দিতে পরিবেশ আইন অমান্য করে রিজার্ভ ফরেস্টের অভ্যন্তরে টিলা ও কৃষিজমি উপরিভাগের মাটি কেটে সরবরাহ করা হচ্ছে এসব ইটভাটায়। ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি (টপ সয়েল) কাটা ও বিক্রির হিড়িক পড়েছে। এতে জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়েছে। এক শ্রেণির মাটি ব্যবসায়ী অভাবী কৃষকদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে স্বল্ল মূল্যে ফসলি জমির উর্বর মাটি ( টপ সয়েল) কিনে ইটভাটায় বেশি দামে সরবরাহ করছে। এতে বিরানভূমিতে পরিণত হচ্ছে রাঙ্গুনিয়ার ৭ ইউনিয়ন। অন্যদিকে কেউ মাটি বিক্রি করতে অনিচ্ছা দেখালে পার্শ্ববর্তী মাটি কেটে ভুূমিধসের মত ঘটনা ঘটছে অহরহ। তদুপরি মাটিখেকোদের অমানবিক আচরনের ফলে বাধ্য হয়ে মাটি বিক্রি করা ছাড়া অন্য উপায় মিলছেনা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ১ নং রাজানগর, ইসলামপুর, দক্ষিণ রাজানগর, হোচনাবাদ, লালানগর, পদুয়া, কোদালা, পোমরা ও সরফভাটা ইউনিয়নের শত শত হেক্টর ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে বিক্রির হিড়িক পড়েছে। এস্কেলেটর দিয়ে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে ট্রাকে করে সংশ্লিষ্ট ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভাটার মালিকেরা এসব মাটি ভাটার আশেপাশে স্তুপ করে রেখে পরে সে মাটি ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করছে। আবার এসব মাটি বড় বড় ট্রাকযোগে পরিবহনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাটও। নানা দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে এসব রাস্তায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছু রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় কিছু মাটি ব্যবসায়ী প্রতি বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত মাটির ব্যবসা করেন। তারা কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে জমির এক থেকে দেড় ফুট মাটি কিনে নিয়ে চড়া দামে ইটভাটায় বিক্রি করেন। এছাড়া বাড়ি তৈরি ও পুকুর- জলাশয় ভরাটে মাটির প্রয়োজন হলে অনেকে এসব মাটি ব্যবসায়ীর দ্বারস্থ হন। অল্প সময়েই মাটি ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা রোজগার করেন।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে একাধিক মাটি ব্যবসায়ী জানান, রাঙ্গুনিয়ায় আগে ২০০৮ সালের দিকে ইটভাটার সংখ্যা ছিল ৪০-৫০ টি। কিন্তু দিন দিন ইটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে বিভিন্ন ইউনিয়নে শতাধিক ইটের ভাটা স্থাপিত হয়েছে। এ কারণে মাটির প্রয়োজন হলে ভাটার মালিকেরা আমাদের কাছে চুক্তিভিত্তিক মাটির অর্ডার দেন। আমরা অর্ডারমাফিক বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে জমির মাটি কিনে তা ভাটায় সরবরাহ করি। তবে কৃষকেরা স্বেচ্ছায় আগ্রহী হয়ে তাদের কাছে মাটি বিক্রি করেন বলে তারা জানান।
উপজেলা কৃষি অফিস জানান, ‘জমির উপরিভাগের (টপ সয়েল) দেড় থেকে ২ ফুটের মধ্যেই মাটির মূল উর্বরাশক্তি বিরাজ করে। কিন্তুএ উর্বরাশক্তির অংশটিই কেটে নেয়ার ফলে জমির উর্বরাশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। সেই উর্বরাশক্তি ফিরে আসতে ৮-১০ বছর সময় লাগে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা টপ সয়েল কাটা ও ইটভাটা বিরোধী। কিন্তু টপ সয়েল কাটা বন্ধ ও ইটভাটার বিরুদ্ধে এ্যাকশনে যাওয়ার সরকার আমাদের ক্জ নয়। ইটভাটার জন্য কৃষি অফিস থেকে প্রত্যায়নপত্র নিতে হয়। কিন্তু এপর্যন্ত কেউ আমার কাছ থেকে কোন প্রত্যায়নপত্র নেয়নি।’
উপজেলা প্রশাসন বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই জমির টপ সয়েল কাটা হচ্ছে। জমির টপ সয়েল বিক্রি না করতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তারপরও গোপনে মাটি বিক্রি করছেন কৃষকেরা। আর পাহাড়ের টিলা কাটার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট দেখাশুনা করে থাকে। এরপরও যদি টপ সয়েল ও পাহাড়ের টিলা কাটার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় তাহলে সংশ্লিষ্ট ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তাছাড়া কাট পোড়ানোর কোন আইন না থাকলেও নিয়মের তোয়াক্কা না করে অবাদে বিভিন্ন রিজার্ভ বন থেকে গাছ কেটে চাঁদের গাড়ি বোঝায় কাট নিয়ে দেদারছে ভাটায় চাহিদা যোগান দেয়া হয়। বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব কারবার প্রকাশ্যে করলেও অজানা কারনে কোন কার্যকরী ভূমিকা চোখে পড়ার মত নয়।
এভাবে বনের গাছ ও মাটি কাটা হলে পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতির আশংকা করছেন সচেতন মহল।