ঢাকা ১১:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাকেরগঞ্জে ভোটের গনসংযোগ শেষে হিটস্ট্রোকে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু। টাঙ্গাইলে কাগজপত্র সঠিক না থাকায় তিন বাসকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা বাকেরগঞ্জে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের তিনজন নিহত। রাজধানীর জুরাইনে (,ডিএমপি,) ট্রাফিকের উদ্যোগে সাধারণ জনগণ,পথচারীদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ বরিশালে সাজানো মামলায় কারাবাস: ভুক্তভোগীর আক্ষেপ, বাদীর উল্লাস –ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ এলাকা হতে কিশোর গ্যাংয়ের ০৪ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৭ লাখ টাকার বিদেশি মুদ্রাসহ যাত্রী আটক চট্টগ্রামের চন্দনাইশে গৃহবধুর আত্মহত্যা বিএনইজি ও এমজেসিবি ‘র ঈদ পুনর্মিলন অনুষ্ঠিত সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে বিসিআরসি’র মানববন্ধন

মুরাদনগরে সরকারি খাল ভড়াটের হিড়িক।

মোহাম্মদ আলী, কুমিল্লা উত্তর জেলা প্রতিনিধি,
কুমিল্লার মুরাদনগরে সরকারি খাল দখলের হিড়িক পড়েছে। যে যেভাবে পারছেন সেভাবেই দখল করছেন সরকারি খাল। কেউবা রাতের আধাঁরে আবার কেউবা বেছে নিয়েছেন সরকারি বন্ধের দিন এসব খাল ভড়াট করার জন্য।
 সরকারি খাল ভড়াটকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেওয়ার কারনে দিন দিন এ উপজেলার খাল গুলো বেদখল হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে এ উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক সরকারি খাল মরা খালে পরিণত হয়েছে। দখল হওয়া অধিকাংশ খালের উপর কেউ নির্মান করেছেন পাঁকা বহুতল ভবন আবার কেউ নির্মান করেছেন ব্যাক্তিস্বার্থে রাস্তা। কেহ আবার বসত বাড়ির যায়গা প্রশস্থ করার জন্য খাল দখল করে পরিত্যাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখেছেন। খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় কারনে এসব এলাকার ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। আর প্রশাসনের নিরব ভূমিকার কারনে স্থানীয়দের মাঝে চরম উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সরেজমিনে উপজেলার নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের নগরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি খাল বেদখলের চিত্র। পানি চলাচলের জন্য খালের উপর ৩ থেকে ৪ ফুটের একটি ড্রেন নির্মান করে খাল ভড়াট করছেন দখলদার চক্রটি। যার ফলে কৃষি জমি ও এ উপজেলা সহ আশপাশের ৬টি উপজেলার সবচেয়ে বড় কোম্পানীগঞ্জ বাজারটি রয়েছে হুমকির মুখে। বাজারের পানিসহ কোম্পানীগঞ্জ, ত্রিশ, পৈয়াপাথর, বাখরনগর, নগরপাড়, ফুলপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের পানি গড়াত এই খালে। তাছাড়াও কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী গোমতী নদীতে এ খালটির সংযোগস্থল হওয়াতে কৃষিকাজের জন্য এ খালের পানির উপর নির্ভর ছিলো এ অঞ্চলের কৃষকরা।
বর্তমানে নগরপাড় এলাকায় খালটি ভরাট করেছেন, নগরপাড় গ্রামের মৃত. আব্দুল কাশেমের ছেলে লুৎফুর রহমান, একই গ্রামের মোস্তফা কামাল চৌধুরী, বাখরনগর গ্রামের মোঃ মালেকের ছেলে মোঃ ফারুক, একই গ্রামের হাজী গোলাম মোস্তফা সরকার, মোসলেহ উদ্দিন, ধুনু মিয়া, চাপিতলা গ্রামের মোঃ জব্বার (ফুল মিয়া)।
তাছাড়াও এ খালের বিভিন্ন অংশে ভড়াট করে খালের চিহ্ন মুছে ফেলেছেন দখলদাররা।
নগরপাড় গ্রামের জয়নাল আবেদীন(৭২) বলেন, এটি একটি শ্রোতবাহী খাল ছিল। আমার স্পষ্ট মনে আছে এই খাল দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান হতে বড় বড় পণ্যবাহী ট্রলার এবং নৌকা কোম্পানীগঞ্জ বাজারে আসত। সপ্তাহিক বাজারের দিনে এ খালে নৌকা এবং ট্রলারের সারি ছিল। আমার ভাবতে অবাক লাগে এই খালটির চিহ্ন এখন নেই।
একই গ্রামের ইব্রাহীম ফকির (৬৬) বলেন, দখলদাররা খুবই প্রভাবশালী। এই খালটির বিভিন্ন অংশে ভরাট করলেও প্রশাসন কেন নিরব ভূমিকায় তা নিয়ে আমাদের সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন। গত দুই বছরে সবচেয়ে বেশী ভড়াট হয়েছে এ খালটি। প্রশাসনের নিকট আমার জোর দাবী এ খালটিকে দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার করে আগের রূপে যেন ফিরিয়ে আনে।
কুলুবাড়ী গ্রামের আক্তার মিয়া বলেন, এই খালটি দখলদাররা ভড়াট করার ফলে বর্ষা মৌসুমে এ খালের আশপাশের গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। যার প্রভাব কোম্পানীগঞ্জ বাজারেও পরে। গত বর্ষার মৌসুমে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বাজারের এ গলি থেকে অন্য গলিতে যেতে হয়েছে নৌকায় চড়ে। বাজারের মধ্যে নৌকা চলার বিষয়টি বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো। তারপরও জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয় নি। যেভাবে খালটি দখল হয়ে গেছে তা নিয়ে যদি কোন পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে আগামীতে কোম্পানীগঞ্জ বাজার সহ এ খালের আশপাশের গ্রামগুলো জলাবদ্ধতায় বেহাল অবস্থায় পরবে।
দখলদার মোঃ ফারুক বলেন, সরকারের সম্পত্তি নিয়ে সাংবাদিকদের এত মাথ্যা ব্যাথা কেন। আমাদের নিজস্ব জায়গার সামনে আমরা খাল ভড়াট করেছি কিন্তু পানি চলাচলের জন্য আমরা ড্রেন নির্মান করে দিয়েছি। যদি সরকার কখনো চায় তাহলে আমরা দিয়ে দিব।
অন্য আরেক দখলদার ধনু মিয়ার ছেলে, সোহাগ মিয়া বলেন, আমাদের কাছে খাল দখলের অনুমতি আছে যদি প্রশাসন দেখতে চায় আমরা দেখাব। তাছাড়া খাল তো আমি একা ভড়াট করছি না অনেকেই করেছে। আমরাও পানি চলাচলের জন্য ড্রেন নির্মান করে দিয়েছি।
নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী আবুল খায়ের বলেন, নগরপাড়ের এ খালটি অনেকেই যার যার জায়গার সামনের অংশ ভড়াট করে দখল করে ফেলেছে। আসলেই তা অত্যান্ত দুঃখজনক। প্রশাসন যদি খালটিকে দখলমুক্ত করে তাহলে বর্ষা মৌসুমে এ ইউনিয়নের অনেকটাই জলাবদ্ধতা কমে যাবে। এই খাল উদ্ধারে আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
মুরাদনগর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম (কমল) বলেন, আমি এ উপজেলায় যোগদানের পর কোন খাল দখলের কোন অনুমতি দেইনি। যারা সরকারি খাল ভরাট করছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

বাকেরগঞ্জে ভোটের গনসংযোগ শেষে হিটস্ট্রোকে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু।

মুরাদনগরে সরকারি খাল ভড়াটের হিড়িক।

আপডেট টাইম ০৭:১২:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০
মোহাম্মদ আলী, কুমিল্লা উত্তর জেলা প্রতিনিধি,
কুমিল্লার মুরাদনগরে সরকারি খাল দখলের হিড়িক পড়েছে। যে যেভাবে পারছেন সেভাবেই দখল করছেন সরকারি খাল। কেউবা রাতের আধাঁরে আবার কেউবা বেছে নিয়েছেন সরকারি বন্ধের দিন এসব খাল ভড়াট করার জন্য।
 সরকারি খাল ভড়াটকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেওয়ার কারনে দিন দিন এ উপজেলার খাল গুলো বেদখল হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে এ উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক সরকারি খাল মরা খালে পরিণত হয়েছে। দখল হওয়া অধিকাংশ খালের উপর কেউ নির্মান করেছেন পাঁকা বহুতল ভবন আবার কেউ নির্মান করেছেন ব্যাক্তিস্বার্থে রাস্তা। কেহ আবার বসত বাড়ির যায়গা প্রশস্থ করার জন্য খাল দখল করে পরিত্যাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখেছেন। খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় কারনে এসব এলাকার ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। আর প্রশাসনের নিরব ভূমিকার কারনে স্থানীয়দের মাঝে চরম উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সরেজমিনে উপজেলার নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের নগরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি খাল বেদখলের চিত্র। পানি চলাচলের জন্য খালের উপর ৩ থেকে ৪ ফুটের একটি ড্রেন নির্মান করে খাল ভড়াট করছেন দখলদার চক্রটি। যার ফলে কৃষি জমি ও এ উপজেলা সহ আশপাশের ৬টি উপজেলার সবচেয়ে বড় কোম্পানীগঞ্জ বাজারটি রয়েছে হুমকির মুখে। বাজারের পানিসহ কোম্পানীগঞ্জ, ত্রিশ, পৈয়াপাথর, বাখরনগর, নগরপাড়, ফুলপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের পানি গড়াত এই খালে। তাছাড়াও কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী গোমতী নদীতে এ খালটির সংযোগস্থল হওয়াতে কৃষিকাজের জন্য এ খালের পানির উপর নির্ভর ছিলো এ অঞ্চলের কৃষকরা।
বর্তমানে নগরপাড় এলাকায় খালটি ভরাট করেছেন, নগরপাড় গ্রামের মৃত. আব্দুল কাশেমের ছেলে লুৎফুর রহমান, একই গ্রামের মোস্তফা কামাল চৌধুরী, বাখরনগর গ্রামের মোঃ মালেকের ছেলে মোঃ ফারুক, একই গ্রামের হাজী গোলাম মোস্তফা সরকার, মোসলেহ উদ্দিন, ধুনু মিয়া, চাপিতলা গ্রামের মোঃ জব্বার (ফুল মিয়া)।
তাছাড়াও এ খালের বিভিন্ন অংশে ভড়াট করে খালের চিহ্ন মুছে ফেলেছেন দখলদাররা।
নগরপাড় গ্রামের জয়নাল আবেদীন(৭২) বলেন, এটি একটি শ্রোতবাহী খাল ছিল। আমার স্পষ্ট মনে আছে এই খাল দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান হতে বড় বড় পণ্যবাহী ট্রলার এবং নৌকা কোম্পানীগঞ্জ বাজারে আসত। সপ্তাহিক বাজারের দিনে এ খালে নৌকা এবং ট্রলারের সারি ছিল। আমার ভাবতে অবাক লাগে এই খালটির চিহ্ন এখন নেই।
একই গ্রামের ইব্রাহীম ফকির (৬৬) বলেন, দখলদাররা খুবই প্রভাবশালী। এই খালটির বিভিন্ন অংশে ভরাট করলেও প্রশাসন কেন নিরব ভূমিকায় তা নিয়ে আমাদের সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন। গত দুই বছরে সবচেয়ে বেশী ভড়াট হয়েছে এ খালটি। প্রশাসনের নিকট আমার জোর দাবী এ খালটিকে দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার করে আগের রূপে যেন ফিরিয়ে আনে।
কুলুবাড়ী গ্রামের আক্তার মিয়া বলেন, এই খালটি দখলদাররা ভড়াট করার ফলে বর্ষা মৌসুমে এ খালের আশপাশের গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। যার প্রভাব কোম্পানীগঞ্জ বাজারেও পরে। গত বর্ষার মৌসুমে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বাজারের এ গলি থেকে অন্য গলিতে যেতে হয়েছে নৌকায় চড়ে। বাজারের মধ্যে নৌকা চলার বিষয়টি বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো। তারপরও জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয় নি। যেভাবে খালটি দখল হয়ে গেছে তা নিয়ে যদি কোন পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে আগামীতে কোম্পানীগঞ্জ বাজার সহ এ খালের আশপাশের গ্রামগুলো জলাবদ্ধতায় বেহাল অবস্থায় পরবে।
দখলদার মোঃ ফারুক বলেন, সরকারের সম্পত্তি নিয়ে সাংবাদিকদের এত মাথ্যা ব্যাথা কেন। আমাদের নিজস্ব জায়গার সামনে আমরা খাল ভড়াট করেছি কিন্তু পানি চলাচলের জন্য আমরা ড্রেন নির্মান করে দিয়েছি। যদি সরকার কখনো চায় তাহলে আমরা দিয়ে দিব।
অন্য আরেক দখলদার ধনু মিয়ার ছেলে, সোহাগ মিয়া বলেন, আমাদের কাছে খাল দখলের অনুমতি আছে যদি প্রশাসন দেখতে চায় আমরা দেখাব। তাছাড়া খাল তো আমি একা ভড়াট করছি না অনেকেই করেছে। আমরাও পানি চলাচলের জন্য ড্রেন নির্মান করে দিয়েছি।
নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী আবুল খায়ের বলেন, নগরপাড়ের এ খালটি অনেকেই যার যার জায়গার সামনের অংশ ভড়াট করে দখল করে ফেলেছে। আসলেই তা অত্যান্ত দুঃখজনক। প্রশাসন যদি খালটিকে দখলমুক্ত করে তাহলে বর্ষা মৌসুমে এ ইউনিয়নের অনেকটাই জলাবদ্ধতা কমে যাবে। এই খাল উদ্ধারে আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
মুরাদনগর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম (কমল) বলেন, আমি এ উপজেলায় যোগদানের পর কোন খাল দখলের কোন অনুমতি দেইনি। যারা সরকারি খাল ভরাট করছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।