লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি : আমজাদ হোসেন । করোনাকালীন মহা দুর্যোগের সময়েও থেমে নেই লক্ষ্মীপুরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনিয়ম ও দুর্নীতি ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় যে, লক্ষ্মীপুর পাসপোর্ট অফিসে দালাল ছাড়া কোনভাবেই পাসপোর্ট করা যায় না!!! অসম্পূর্ণ তথ্য, ফরম কাটাছেঁড়া, হাতের লেখা ভালো না, এ সমস্ত খুঁত দেখিয়ে পাসপোর্ট করতে আসা ব্যাক্তিদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে জানা যায় ।
এতে করে হয়রানির শিকার হচ্ছে পাসপোর্ট কাঙ্খীরা । বৈদেশিক রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের পাসপোর্ট নতুন করে করতেও পোহাতে হচ্ছে নানা ধরনের দুর্ভোগ । দিনের-পর-দিন ত্যাগ শিকার করেও হচ্ছে না এইসব রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কাজ । সকালে এসে সারাদিন অপেক্ষা করেও সন্ধ্যায় ফিরতে হয় শুকনো মুখ নিয়ে ।
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস লক্ষ্মীপুরের নৈশ প্রহরী থেকে আনসার পর্যন্ত পাসপোর্ট দালালীতে সক্রিয় তারা । গণমাধ্যমকর্মীরা আরো জানতে পারে যে, পাসপোর্ট অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম নিজেও টাকা ছাড়া আবেদন ফরমে সাক্ষর করেন না । যেসব দালালের কাছ থেকে এই কর্মকর্তা উপঢৌকন গ্রহণ করেন, শুধুমাত্র সেসব দালালের কাছ থেকে আসা আবেদনের ফরম গুলোতে গোপন সংকেত দেয়া থাকে । এবং, সেগুলোতে তিনি নির্দ্বিধায় স্বাক্ষর করে থাকেন ।
দালাল বেষ্টিত আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম যেসব দালালদের আবেদন ফরম নির্দ্বিধায় স্বাক্ষর করেন তারা হলেন, পাসপোর্ট অফিসের পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাবুল, আনসার সদস্যদের মধ্যে পি সি জসিম, সাইফুল, রায়পুরের দালালদের মধ্যে হিমাংশু, সোহেল, কালা অহিদ, রামগঞ্জের দালালদের মধ্যে সাইফুল, রাব্বানী, বিল্লাল, গৌতম, মোহাম্মদ, কমলনগরের দালালদের মধ্যে অনিমেষ, আজাদ, চন্দ্রগঞ্জের দালালদের মধ্যে ফয়েজ, মান্দারীর দালালদের মধ্যে হারুন, দিঘলির দালালদের মধ্যে আনোয়ার, লক্ষ্মীপুর সদরের দালালদের মধ্যে কাশেম, আরিফ, আবদুল খালেক সহ আরো নাম না জানা অনেক দালাল ।
এ সমস্ত দালালেরা বিভিন্ন স্থান থেকে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের সংগ্রহ করে নির্ধারিত ফি’র চেয়ে ২- ৩ গুণ বেশি টাকা হাতিয়ে নেয় । পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা সহজ- সরল মনের হওয়ায় ঝামেলামুক্ত নির্দ্বিধায় সহজে পাসপোর্ট পাওয়ার আশায় দালালদের খপ্পরে পড়ে থাকে বলে জানা যায় ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দালাল বলেন, আমরা বিভিন্ন রেটে পাসপোর্ট করে থাকি । এতে নির্ধারিত ফি’র বাহিরেও টাকা নিতে হয় গ্রাহকের কাছ থেকে । আমরা ৫ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৯ হাজার, এবং, ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আমরা নিয়ে থাকি । গ্রাহক দ্রুত পাসপোর্ট চাইলে আমরা খরচ সেভাবে নিয়ে থাকি ।
পাসপোর্ট প্রত্যাশী মহাদেবপুর থেকে আসা মো. শাহীন বলেন, ৯ মাস আগে আমি পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন ফরম জমা দিয়েছি এখনো পাইনি । এর মাঝে বহুবার অফিসে গেছি, তারা কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য আমাকে দিতে পারেননি ।’
আরেক পাসপোর্ট প্রত্যাশী সিএনজি চালক আবুল হোসেন বলেন, আমার ছেলের জন্য ১৫ হাজার টাকা আনসার সাইফুল ইসলামকে দিয়ে পাসপোর্ট করেছি, এই করোনার ভেতরেও তারউপর অভাবের সময় তারা আমাদের থেকে এ ভাবে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যায় । আমরা সাধারণ মানুষ প্রশাসনের কাছে এদের সুনির্দিষ্ট বিচার চায় ।
লক্ষ্মীপুরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এবং, আমার অফিস দালালমুক্ত, আমার অফিসে দালালদের প্রবেশ কড়াকড়ি ভাবে নিষিদ্ধ । আমার অফিসে কোন টাকা পয়সা লেনদেন হয় না । আমি সাধারণ মানুষকে সতর্ক করার জন্য নিয়মাবলি বিলবোর্ড আকারে তৈরি করে ঝুলিয়ে রেখেছি । করোনার ভিতরে আপনারাতো অফিসে প্রবেশ করার অনুমতি নায়, এ বলে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদেরকে এড়িয়ে যান !
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাসপোর্ট অফিসের অনিয়ম এবং, দালালের বিষয়ে কেউ আমাকে লিখিত অভিযোগ দেয়নি, লিখিত অভিযোগ ফেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এবং, সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে ।