শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর সৈয়দপুরে বিরোধপূর্ণ একটি বাঁশঝাড় থেকে জোর পূর্বক বাঁশ কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় নিষেধ করায় মেডিকেল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রসহ তার পরিবারের লোকজনের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে দূর্বৃত্তরা। গত ২৩ জুন দুপুরে উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মণপুর মন্ডলপাড়া সংঘটিত এ ঘটনায় ১০ জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। কিন্তু উল্টো হামলাকারীরা প্রাননাশের হুমকি দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখায় হামলায় আহত হয়েও হাসপাতালে ভর্তি বা থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে পারছেনা বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এতে চরম অসহায়ত্বের মধ্যে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে দুটি পরিবার।
জানা যায়, লক্ষ্মণপুর মন্ডলপাড়ার মৃত সমসের আলীর ছেলে নুরুজ্জামান মন্ডলের সাথে প্রতিবেশী মৃত মমতাজ মন্ডলের ছেলে মাসুদুল ইসলাম মাসুদ ও আমিনুল ইসলাম বাবুর একটি বাঁশঝাড়ের সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ চলছে দীর্ঘদিন থেকে। এলাকাবাসী, মেম্বার উপস্থিত থেকে কয়েকবার মাপজোক করা হলেও মাসুদ ও বাবু তা মেনে না নেয়ায় সিদ্ধান্ত হয় বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোন পক্ষই ওই বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কাটতে পারবেনা। কিন্তু মাসুদ ও বাবু এ সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে প্রায়ই বাঁশ কাটে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৩ জুন মঙ্গলবার দুপুরে মাসুদ আবারও বাঁশ কাটে। এসময় নুরুজ্জামান মন্ডল নিষেধ করলে মাসুদের সাথে তর্ক-বিবাদ শুরু হয়। কথা কাটাকাটির মধ্যেই মাসুদের বাবু, দুলাভাই আসগার আলী ও ভাগিনা হাফিজুল ইসলাম লাটিসোটা নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নুরুজ্জামানের উপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে তারা সদলবলে নুরুজ্জামানকে লাঠি দিয়ে মারতে থাকে। এতে নুরুজ্জামান আর্তনাদ করে উঠলে তার চিৎকার শুনে বাড়ীর নারীরা এগিয়ে আসলে হাফিজুল ইসলাম ও মাসুদ তাদেরকেও বেধড়ক মারপিট করতে থাকে। এলোপাতাড়ি মার ডাং কালে নুরুজ্জামানের লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত অসুস্থ বিধবা বৃদ্ধাা বোন মৃত জাফর উদ্দিনের স্ত্রী মাহমুদা বেগম (৬৭) কে কোমড়ে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয় হাফিজুল। এতে প্রতিবাদ করায় নুরুজ্জামানের ছোট বোন এবং সেনাবাহিনীর (সিভিল) বেসামরিক সদস্য (যিনি বর্তমানে করোনার কারনে সৈয়দপুর সেনা নিবাসে কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় আছেন) মোঃ আব্দুল মান্নান এর স্ত্রী মোবাশশেরা বেগম ও মেয়ে সুমাইয়া আক্তার মীম কেও লাঠি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। আর মাসুদ নুরুজ্জামানের স্ত্রী মোরসেদা বেগমকে কাটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। এতে মুহুর্তে তুমুল হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে নুরুজ্জামানের ভাই রায়হান (বাবলা) ও এজাজুল ছুটে এসে আহতদের উদ্ধার করতে গেলে হাফিজুল ও মাসুদ তাদের উপর হামলা করে মাটিতে ফেলে দিয়ে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলতে উদ্ধত হয়। ধ্বস্তাধস্তির সময় হাফিজুল বাবলার বুকে শক্ত ঘুসি মারায় প্রচন্ড আঘাত পায়। এজাজুলও আঘাতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
নুরুজ্জামানের ভাগিনা ও বেসামরিক সেনা সদস্য আব্দুল মান্নানের ছেলে যশোর মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ও কলেজ ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাইমিনুল ইসলাম সাগর অভিযোগ করে বলেন, উপরোক্ত ঘটনার সময় আমি জুম-এর মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস করছিলাম। এ কারনে কানে এয়ার ফোন ও হেড ফোন লাগানো থাকায় কিছুই বুঝতে পারিনি। পরে ক্লাস শেষে বের হয়ে দেখি বাড়ীর লোকজন প্রায় সবাই আহত এবং কান্না করছে। এমনকি আমার মা বোনও। এবং তখনও বাঁশঝাড়ে প্রতিপক্ষরা আস্ফালন ও চিৎকার চেচামেচি করেই চলেছে। সব শুনে আমি এগিয়ে গিয়ে এমন হামলার কারন জিজ্ঞেস করতেই হাফিজুল ও মাসুদ আমার উপরও চড়াও হয় এবং হাতের লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এতে আমি মাটিতে লুটে পড়ি। পরে লোকজন আমাকে উদ্ধার করে।
আমিসহ আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে চেয়েও রাস্তায় হাফিজুল ও মাসুদ-বাবুসহ তাদের পরিবারের লোকজন লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করায় এবং অনবরত প্রাননাশের হুমকি দেয়ায় যেতে পারিনি। আমার বাবা ক্যান্টনমেন্ট থেকে সৈয়দপুর থানায় জানালে দুজন পুলিশ সদস্য এসে দেখে গেলেও এখন পর্যন্ত হামলাকারীরা বহাল তবিয়তে আছে এবং হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এতে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি। কারন হাফিজুল খুবই দুর্দান্ত ও উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির। সে সৈয়দপুরে বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি তে এমএলএসএস পদে চাকুরী করে। এ কারনে কথায় কথায় আর্মির দাপট দেখায়। ইতোপূর্বেও এলাকার অনেককে বিনাদোষেই মারপিট করেছে। এমনকি মহিলাদের গায়েও হাত দেয় সে। কয়েক মাস আগে এক মহিলাকে মারার কারনে গ্রাম্য শালিসে পা ধরে মাফ নিলেও আবারও সে আমার মা-বোন সহ বাড়ির অন্যান্য নারীদের গায়েও হাত দিয়েছে। তাই আশংকা করছি ওই হাফিজুলরা আবারও সন্ত্রাসী হামলা চালাতে পারে। তাই প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবী করেছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হাফিজুলের সাথে কথা হলে সে জানায়, সাগর কেমন ছাত্রলীগ করে আর কত বড় ডাক্তার হইছে তাই দেখব। ওর দাদার বাড়ি কুড়িগ্রাম, এখানে নানার বাড়িতে থেকে আমাদের সাথে দাপট দেখাবে আমরা মেনে নিবনা। নুরুজ্জামান বা বাড়ির লোকজনই অন্যায়ভাবে আমার মামা বাবু ও মাসুদের উপর হামলা করেছে। আমি ও আমার বাবা মামাদের উদ্ধার করতে যাওয়ায় মহিলা মানুষ হয়ে আমাদের মারপিট করেছে। আমার বাবা আসগার আলীকে বুকে ঘুসি মেরে বাবলা গুরুত্বরভাবে আহত করেছে। তিনি এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। বাবাকে আঘাত করায় আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো। তাই মহিলাদেরকেও মারতে বাধ্য হয়েছি। নারী জাতি পর্দায় থাকবে তা না করে তারা যখন মারামারি করতে এসেছে, তাহলে তাদেরকে সায়েস্তা না করলে কি হয়। এখন যা হবার হবে, তবে ওদেরকে দেখে ছাড়বো।৷ (ছবি আছে)