ঢাকা ১১:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।। বরিশালে সুলভ মুল্যে বসুন্ধরা পন্য পেয়ে ক্রেতারা খুশী। বাবুগঞ্জে স্কুল ছুটির পরে বাড়ি যাওয়ার সময় দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজ। আমার বাবাও মায়ের দেওয়া উপদেশ বড়দের সম্মান কর ছোটদের স্নেহ করো। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখী নারী উদ্যোক্তা মেলা শুরু। টাঙ্গাইলে তিনদিন ব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা শুরু বাকেরগঞ্জে প্রধান মন্ত্রীর ছবি ব্যঙ্গক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট করায় হায়দর সিপাই গ্রেফতার। বাকেরগঞ্জে স্ত্রীর দায়ের কৃত মামলায় স্বামী পারভেজ খান গ্রেফতার।। বাকেরগঞ্জে তরমুজ চাষী হত্যা চেষ্টা মামলার আসামী রুদ্র গাজী গ্রেফতার টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড অনুষ্ঠিত

সুরক্ষা সরঞ্জাম নেই দুই সিটির করোনা কাজে নিয়োজিত কর্মীদের

কোনও ধরনের সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। এরইমধ্যে দক্ষিণ সিটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তার মৃত্যুসহ কয়েকজন কর্মী করোনায় আক্রান্ত  হয়েছেন। এ অবস্থায় অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কর্মচারীদের অভিযোগ—দুই সিটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণেই তারা সুরক্ষা সরঞ্জাম পাচ্ছেন না। ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার কারণে তাদের মাঝে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও করেছেন কেউ কেউ।

দুই সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাধারণ ছুটির আওতায় থাকলেও ঢাকার দুই সিটির দফতর খোলা রয়েছে। এই দুর্যোগের মুহূর্তেও তারা নগরবাসীর জরুরি সেবা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জীবাণুনাশক ও মশার ওষুধ ছিটানোসহ ত্রাণ সহায়তা কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এসব কাজে সংস্থার কর্মীরা সার্বক্ষণিক মাঠে থাকলেও তাদের কোনও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হয়নি। এছাড়া, বর্তমান সময়ে সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ থাকায় তারা দুপুরের খাবার খেতেও পারছেন না। করপোরেশন থেকেও খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে না। এ অবস্থায় অনেকটা না খেয়েই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে সবাইকে।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দুই সিটি করপোরেশনের মশকনিধন কর্মীরা মাঠে রয়েছেন। সকাল-বিকাল দুই বেলায় নগরীর অলিগলিসহ বাসাবাড়িতে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। কিন্তু সব কর্মীকে সাধারণ সুরক্ষা সরঞ্জাম মাস্ক পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাস্ক কিনে ব্যবহার করছেন। শুধু তা-ই নয়, এই দুর্যোগকালে দুস্থ মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজও করছে সিটি করপোরেশন। সংস্থা দুটির প্রত্যেক কর্মীকে প্রতিদিন কয়েকটি বাড়ি ঘুরতে হচ্ছে। বহু মানুষের সংস্পর্শে যেতে হচ্ছে। কোনও  ধরনের সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই করোনার ঝুঁকি নিয়ে তারা এ কাজ করে যাচ্ছেন।

দক্ষিণ সিটির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, করোনার জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে প্রাথমিকভাবে তিন কোটি টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এই অর্থ করোনাকালে খরচ করার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু দক্ষিণ সিটির শীর্ষ কর্মকর্তারা এই বরাদ্দ থেকে কর্মীদের সুরক্ষার জন্য কোনও টাকা ব্যয় করছেন না। এজন্য বিভিন্ন ফাইল উত্থাপন করা হলেও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক তাতে সায় দিচ্ছেন না।

অপর এক কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ডিএসসিসিতে কিছু পিপিই এসেছে। কিন্তু যেসব কর্মকর্তা এসি রুমে বসে কাজ করেন, সব পিপিই  তারা রেখে দিয়েছেন। মাঠপর্যায়ে কর্মরতদের জন্য কোনও পিপিই নেই। করপোরেশন থেকে নিম্নমানের কিছু মাস্ক কেনা হয়েছে। যেগুলো নকল ও মেশিনে সেলাই করা। এগুলো পরেই মাঠকর্মীদের কাজ করতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ এমদাদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন হাসপাতাল ছাড়া কেউ পিপিই পরিধান করতে পারবে না। এরপরেও আমরা যেহেতু নগরবাসীর সেবা দিয়ে থাকি, কর্মীদের মাঠে নামাতে হয়, সেজন্য কিছু পিপিই’র ব্যবস্থা করেছি। যদিও এগুলোকে পিপিই বলা যায় না। তবে আমরা দুটি জিনিস নিশ্চিত করছি— মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস। ভাণ্ডার কর্মকর্তাকে বলে দিয়েছি, তারা যেন আরও কিছু পিপিই’র ব্যবস্থা করেন।’

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৩ এপ্রিল মারা গেছেন ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক উপদেষ্টা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম। এছাড়া, সংস্থাটির আরও কয়েকজন কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

খাদ্যসামগ্রী বিতরণ ও পরিচ্ছন্নতা কাজে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকলেও খন্দকার মিল্লাতুল ইসলামকে কখনও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম পরতে দেখা যায়নি। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘কর্তৃপক্ষ যদি পিপিই না দেয় তাহলে কীভাবে পাবো? আমার শত শত কর্মী কোনও সুরক্ষা ছাড়াই মাঠে কাজ করছে। তাদের নিজেদের প্রটেকশনের জন্য কিছুই দিতে পারিনি। এরমধ্যেই তারা কাজ করে যাচ্ছে।’

ডিএসসিসির ত্রাণ বিতরণ কাজে নিয়োজিত কর্মীরা জানান, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাদের মাঠে থাকতে হচ্ছে। হটলাইনে ফোন করা মানুষের বাসায় বাসায় খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যেতে হচ্ছে। সকালে নিজ বাসা থেকে খেয়ে বের হলেও দুপুরে খাবারের কোনও ব্যবস্থা থাকে না। দোকান বন্ধ থাকায় না খেয়েই ডিউটি করতে হচ্ছে। তবে নগরভবনে সীমিত পরিসরে কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর জন্য খাবারের বরাদ্দ রাখা আছে। সেটাও সময় মতো না এলে পাওয়া যায় না। যারা মাঠে ডিউটি করেন তারা সবদিক থেকে বঞ্চিত হন। এ জন্য তাদের আলাদা কোনও বরাদ্দও দেওয়া হচ্ছে না।

একই অবস্থা উত্তর সিটি করপোরেশনেও। সংস্থাটির পরিচ্ছন্নতা ও মশক  নিধনকর্মীসহ করোনা কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কোনও সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে না। নামমাত্র কিছু দেওয়া হলেও সেগুলো ব্যবহার অনুপযোগী। অনেক কর্মীকে সড়কে জীবাণুনাশক ছিটানোর সময় পিপিই ও মাস্ক পরতে দেখা যায়নি। তাদের অভিযোগ—করপোরেশন থেকে কোনও পিপিই দেওয়া হয়নি। করোনা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হলেও কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জীবাণুনাশক ছিটানোর কাজে নিয়োজিত একজন কর্মী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘জীবাণুনাশক ছিটানোর জন্য একটি পিপিই চেয়েছিলাম। স্যার (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা) বলেছেন—‘তোমারা তো সারাক্ষণই জীবাণুনাশক গাড়িতে থাকো। তোমাদের পিপিই লাগবে না।’ তিনি বলেছেন, আমাদের নাকি ভাইরাস আক্রান্ত করতে পারবে না। ’’

তবে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কাজে নিয়োজিত কর্মীদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করেছি।’

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।।

সুরক্ষা সরঞ্জাম নেই দুই সিটির করোনা কাজে নিয়োজিত কর্মীদের

আপডেট টাইম ০২:০৫:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল ২০২০

কোনও ধরনের সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। এরইমধ্যে দক্ষিণ সিটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তার মৃত্যুসহ কয়েকজন কর্মী করোনায় আক্রান্ত  হয়েছেন। এ অবস্থায় অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কর্মচারীদের অভিযোগ—দুই সিটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণেই তারা সুরক্ষা সরঞ্জাম পাচ্ছেন না। ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার কারণে তাদের মাঝে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও করেছেন কেউ কেউ।

দুই সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাধারণ ছুটির আওতায় থাকলেও ঢাকার দুই সিটির দফতর খোলা রয়েছে। এই দুর্যোগের মুহূর্তেও তারা নগরবাসীর জরুরি সেবা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জীবাণুনাশক ও মশার ওষুধ ছিটানোসহ ত্রাণ সহায়তা কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এসব কাজে সংস্থার কর্মীরা সার্বক্ষণিক মাঠে থাকলেও তাদের কোনও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হয়নি। এছাড়া, বর্তমান সময়ে সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ থাকায় তারা দুপুরের খাবার খেতেও পারছেন না। করপোরেশন থেকেও খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে না। এ অবস্থায় অনেকটা না খেয়েই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে সবাইকে।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দুই সিটি করপোরেশনের মশকনিধন কর্মীরা মাঠে রয়েছেন। সকাল-বিকাল দুই বেলায় নগরীর অলিগলিসহ বাসাবাড়িতে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। কিন্তু সব কর্মীকে সাধারণ সুরক্ষা সরঞ্জাম মাস্ক পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাস্ক কিনে ব্যবহার করছেন। শুধু তা-ই নয়, এই দুর্যোগকালে দুস্থ মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজও করছে সিটি করপোরেশন। সংস্থা দুটির প্রত্যেক কর্মীকে প্রতিদিন কয়েকটি বাড়ি ঘুরতে হচ্ছে। বহু মানুষের সংস্পর্শে যেতে হচ্ছে। কোনও  ধরনের সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই করোনার ঝুঁকি নিয়ে তারা এ কাজ করে যাচ্ছেন।

দক্ষিণ সিটির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, করোনার জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে প্রাথমিকভাবে তিন কোটি টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এই অর্থ করোনাকালে খরচ করার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু দক্ষিণ সিটির শীর্ষ কর্মকর্তারা এই বরাদ্দ থেকে কর্মীদের সুরক্ষার জন্য কোনও টাকা ব্যয় করছেন না। এজন্য বিভিন্ন ফাইল উত্থাপন করা হলেও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক তাতে সায় দিচ্ছেন না।

অপর এক কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ডিএসসিসিতে কিছু পিপিই এসেছে। কিন্তু যেসব কর্মকর্তা এসি রুমে বসে কাজ করেন, সব পিপিই  তারা রেখে দিয়েছেন। মাঠপর্যায়ে কর্মরতদের জন্য কোনও পিপিই নেই। করপোরেশন থেকে নিম্নমানের কিছু মাস্ক কেনা হয়েছে। যেগুলো নকল ও মেশিনে সেলাই করা। এগুলো পরেই মাঠকর্মীদের কাজ করতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ এমদাদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন হাসপাতাল ছাড়া কেউ পিপিই পরিধান করতে পারবে না। এরপরেও আমরা যেহেতু নগরবাসীর সেবা দিয়ে থাকি, কর্মীদের মাঠে নামাতে হয়, সেজন্য কিছু পিপিই’র ব্যবস্থা করেছি। যদিও এগুলোকে পিপিই বলা যায় না। তবে আমরা দুটি জিনিস নিশ্চিত করছি— মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস। ভাণ্ডার কর্মকর্তাকে বলে দিয়েছি, তারা যেন আরও কিছু পিপিই’র ব্যবস্থা করেন।’

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৩ এপ্রিল মারা গেছেন ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক উপদেষ্টা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম। এছাড়া, সংস্থাটির আরও কয়েকজন কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

খাদ্যসামগ্রী বিতরণ ও পরিচ্ছন্নতা কাজে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকলেও খন্দকার মিল্লাতুল ইসলামকে কখনও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম পরতে দেখা যায়নি। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘কর্তৃপক্ষ যদি পিপিই না দেয় তাহলে কীভাবে পাবো? আমার শত শত কর্মী কোনও সুরক্ষা ছাড়াই মাঠে কাজ করছে। তাদের নিজেদের প্রটেকশনের জন্য কিছুই দিতে পারিনি। এরমধ্যেই তারা কাজ করে যাচ্ছে।’

ডিএসসিসির ত্রাণ বিতরণ কাজে নিয়োজিত কর্মীরা জানান, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাদের মাঠে থাকতে হচ্ছে। হটলাইনে ফোন করা মানুষের বাসায় বাসায় খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যেতে হচ্ছে। সকালে নিজ বাসা থেকে খেয়ে বের হলেও দুপুরে খাবারের কোনও ব্যবস্থা থাকে না। দোকান বন্ধ থাকায় না খেয়েই ডিউটি করতে হচ্ছে। তবে নগরভবনে সীমিত পরিসরে কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর জন্য খাবারের বরাদ্দ রাখা আছে। সেটাও সময় মতো না এলে পাওয়া যায় না। যারা মাঠে ডিউটি করেন তারা সবদিক থেকে বঞ্চিত হন। এ জন্য তাদের আলাদা কোনও বরাদ্দও দেওয়া হচ্ছে না।

একই অবস্থা উত্তর সিটি করপোরেশনেও। সংস্থাটির পরিচ্ছন্নতা ও মশক  নিধনকর্মীসহ করোনা কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কোনও সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে না। নামমাত্র কিছু দেওয়া হলেও সেগুলো ব্যবহার অনুপযোগী। অনেক কর্মীকে সড়কে জীবাণুনাশক ছিটানোর সময় পিপিই ও মাস্ক পরতে দেখা যায়নি। তাদের অভিযোগ—করপোরেশন থেকে কোনও পিপিই দেওয়া হয়নি। করোনা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হলেও কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জীবাণুনাশক ছিটানোর কাজে নিয়োজিত একজন কর্মী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘জীবাণুনাশক ছিটানোর জন্য একটি পিপিই চেয়েছিলাম। স্যার (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা) বলেছেন—‘তোমারা তো সারাক্ষণই জীবাণুনাশক গাড়িতে থাকো। তোমাদের পিপিই লাগবে না।’ তিনি বলেছেন, আমাদের নাকি ভাইরাস আক্রান্ত করতে পারবে না। ’’

তবে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কাজে নিয়োজিত কর্মীদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করেছি।’