ঢাকা ০৭:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
দুমকীতে খাল সংস্কার প্রকল্পে অনিয়মসহ শত শতগাছ উপড়ে ফেলার অভিযোগ। বাকেরগঞ্জ বাসীর উন্নয়নমুলক সকল প্রত্যাশা পুরনে কাজ করব। ৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷ রাজীব আহমেদ তালুকদার। দেশ জুরে শুরু হয়েছে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। মুরাদনগর উপজেলা মোট-১৭ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। টাঙ্গাইলে এইচআইভি ও এইডস রোগের সচেতনতা সৃষ্টিতে কর্মশালা অনুষ্ঠিত লোহাগড়া উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিক বরাদ্দ বগুড়া শিবগঞ্জে নাতির রাম দা’র কোপে নানী খুন ফুটপাত উদ্ধার করতে হবে: মেয়র রেজাউল আন্তর্জাতিক মে দিবস পালন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাসাদ নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয় রাঙ্গুনিয়ায় চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানে প্রতিদ্বন্দ্বীবিহীন প্রার্থী ভোট হবে ভাইস চেয়ারম্যানের (চার প্রার্থীর মধ্যে দুই প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দুই জনের মধ্যে।) “কেরানীগঞ্জে এক হাজার পথচারীদের মাঝে শরবত বিতরণ করলেন সাংবাদিকরা”

শুরু হলো অগ্নিঝরা মার্চ

মাতৃভূমির খবর ডেস্কঃ বছর ঘুরে আবারও এসেছে আগুনঝরা মার্চ। ১৯৭১ সালের এই মার্চ মাসেই স্বাধীনতার শপথে শুরু হয়েছিল বাঙালির পথচলা। একটি তর্জনির নির্দেশে গর্জে ওঠেছিল গোটা জাতি, মৃত্যুর বিভীষিকা পেরিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপ দেওয়ার অনন্য ইতিহাস রচিত হয়েছিল এই মার্চেই।  এটি অগ্নিঝরা ইতিহাস, বিষাদ ও বেদনার মাস। এই মাসের ২৫ তারিখ থেকে লেখা শুরু হয়েছিল এক অমর মহাকাব্য, যার নাম বাংলাদেশ।

বাঙালির জীবনে ভাষা আন্দোলনের স্মারক মাস ফেব্রুয়ারির পর মার্চের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত লড়াই শুরু হয় এই মার্চেই। এই মাসেই বাঙালি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। উত্তাল একাত্তরে পুরো মার্চ মাসজুড়ে বাঙালির চোখে ছিল স্বাধীনতার স্বপ্ন।

আজকের এই দিনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে ৩ মার্চের গণপরিষদের সাধারণ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। মুহূর্তে গর্জে উঠে পুরো দেশ। পূর্ব বাংলার ছাত্র সমাজ ও সাধারণ মানুষ স্লোগান তুলে ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।

১৯৭১ সালের মার্চে শুরু হয় স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লড়াই-সশস্ত্র সংগ্রাম। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর লাল-সবুজ পতাকার দেশ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। লাখ লাখ প্রাণের বিনিময়ে বিশ্ব মানচিত্রে নতুন একটি দেশের অভ্যুদয় ঘটে।

দীর্ঘদিন ধরে এদেশের শোষিত, নিপীড়িত, অধিকারবঞ্চিত মানুষ স্বাধিকারের জন্য লড়াই করে আসছিল। মহান ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ছিল জাতিসত্তার স্বরূপ অন্বেষার এক একটি মাইলফলক। সত্তরের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে নানা ষড়যন্ত্র ও টালবাহানা করছিল।

১৯৭১ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানি স্বৈরাচারী সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের নির্ধারিত অধিবেশন বাতিল করেন। এ অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল ৩ মার্চ। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ গোটা পাকিস্তানেই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার হীন, কূট ষড়যন্ত্র হিসেবে অধিবেশন বাতিলের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ক্রোধে, ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে।

বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, অধিকারহীন মানুষ ফেটে পড়ে বিক্ষোভে। অফিস-আদালত থেকে সব মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে এই ষড়যন্ত্রের তীব্র প্রতিবাদ করেন। স্লোগান ওঠে- বীর বাঙালি অস্ত্র ধর/বাংলাদেশ স্বাধীন কর।

১৯৭১-এর ৭ মার্চ সাবেক রেসকোর্স ময়দান আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এ সময় পাকিস্তানি শাসকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছিলেন, সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। মরতে যখন শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। রক্ত যখন দিয়েছি, আরো দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।

বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। তার ঘোষণার পর বীর বাঙালি সেই যে ঘর থেকে বেরিয়েছিল, বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত, দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত আর ঘরে ফেরেনি। মুক্তিযুদ্ধে অগণিত প্রাণ উৎসর্গ করতে হয়েছে, অগণিত মা-বোনকে হারাতে হয়েছে সম্ভ্রম। আহত ও পঙ্গু হতে হয়েছে এদেশের অগণিত মানুষকে। লাখো মানুষের অপরিসীম ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

মার্চ মাসেই বাঙালি জাতি তার চেতনাকে নতুন করে শাণিত করে। নতুন শপথে বলীয়ান হয়। অত্যাচার, নিপীড়ন আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্মারক মাস হিসেবে মার্চ প্রতিবারই আমাদের নতুন করে পথ দেখায়। আমরা আজকের দিনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সেই বীর শহীদদের, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের মূল্যবান জীবন দান করে প্রতিরোধ সংগ্রামে প্রেরণা যুগিয়েছিলেন।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

দুমকীতে খাল সংস্কার প্রকল্পে অনিয়মসহ শত শতগাছ উপড়ে ফেলার অভিযোগ।

শুরু হলো অগ্নিঝরা মার্চ

আপডেট টাইম ০৯:৪০:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ মার্চ ২০২০

মাতৃভূমির খবর ডেস্কঃ বছর ঘুরে আবারও এসেছে আগুনঝরা মার্চ। ১৯৭১ সালের এই মার্চ মাসেই স্বাধীনতার শপথে শুরু হয়েছিল বাঙালির পথচলা। একটি তর্জনির নির্দেশে গর্জে ওঠেছিল গোটা জাতি, মৃত্যুর বিভীষিকা পেরিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপ দেওয়ার অনন্য ইতিহাস রচিত হয়েছিল এই মার্চেই।  এটি অগ্নিঝরা ইতিহাস, বিষাদ ও বেদনার মাস। এই মাসের ২৫ তারিখ থেকে লেখা শুরু হয়েছিল এক অমর মহাকাব্য, যার নাম বাংলাদেশ।

বাঙালির জীবনে ভাষা আন্দোলনের স্মারক মাস ফেব্রুয়ারির পর মার্চের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত লড়াই শুরু হয় এই মার্চেই। এই মাসেই বাঙালি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। উত্তাল একাত্তরে পুরো মার্চ মাসজুড়ে বাঙালির চোখে ছিল স্বাধীনতার স্বপ্ন।

আজকের এই দিনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে ৩ মার্চের গণপরিষদের সাধারণ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। মুহূর্তে গর্জে উঠে পুরো দেশ। পূর্ব বাংলার ছাত্র সমাজ ও সাধারণ মানুষ স্লোগান তুলে ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।

১৯৭১ সালের মার্চে শুরু হয় স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লড়াই-সশস্ত্র সংগ্রাম। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর লাল-সবুজ পতাকার দেশ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। লাখ লাখ প্রাণের বিনিময়ে বিশ্ব মানচিত্রে নতুন একটি দেশের অভ্যুদয় ঘটে।

দীর্ঘদিন ধরে এদেশের শোষিত, নিপীড়িত, অধিকারবঞ্চিত মানুষ স্বাধিকারের জন্য লড়াই করে আসছিল। মহান ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ছিল জাতিসত্তার স্বরূপ অন্বেষার এক একটি মাইলফলক। সত্তরের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে নানা ষড়যন্ত্র ও টালবাহানা করছিল।

১৯৭১ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানি স্বৈরাচারী সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের নির্ধারিত অধিবেশন বাতিল করেন। এ অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল ৩ মার্চ। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ গোটা পাকিস্তানেই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার হীন, কূট ষড়যন্ত্র হিসেবে অধিবেশন বাতিলের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ক্রোধে, ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে।

বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, অধিকারহীন মানুষ ফেটে পড়ে বিক্ষোভে। অফিস-আদালত থেকে সব মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে এই ষড়যন্ত্রের তীব্র প্রতিবাদ করেন। স্লোগান ওঠে- বীর বাঙালি অস্ত্র ধর/বাংলাদেশ স্বাধীন কর।

১৯৭১-এর ৭ মার্চ সাবেক রেসকোর্স ময়দান আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এ সময় পাকিস্তানি শাসকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছিলেন, সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। মরতে যখন শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। রক্ত যখন দিয়েছি, আরো দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।

বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। তার ঘোষণার পর বীর বাঙালি সেই যে ঘর থেকে বেরিয়েছিল, বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত, দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত আর ঘরে ফেরেনি। মুক্তিযুদ্ধে অগণিত প্রাণ উৎসর্গ করতে হয়েছে, অগণিত মা-বোনকে হারাতে হয়েছে সম্ভ্রম। আহত ও পঙ্গু হতে হয়েছে এদেশের অগণিত মানুষকে। লাখো মানুষের অপরিসীম ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

মার্চ মাসেই বাঙালি জাতি তার চেতনাকে নতুন করে শাণিত করে। নতুন শপথে বলীয়ান হয়। অত্যাচার, নিপীড়ন আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্মারক মাস হিসেবে মার্চ প্রতিবারই আমাদের নতুন করে পথ দেখায়। আমরা আজকের দিনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সেই বীর শহীদদের, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের মূল্যবান জীবন দান করে প্রতিরোধ সংগ্রামে প্রেরণা যুগিয়েছিলেন।