সরকারি বেড়াজলে পড়ে সিডনিতে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন স্থাপনের কাজ হচ্ছে ঢিলে তালে। ‘সিডনিতে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন’, ‘সিডনি-মেলবোর্নে স্থায়ী কনস্যুলেটের পরিকল্পনা’, ‘অস্ট্রেলিয়ার বড় শহরগুলোতে স্থায়ী কনস্যুলেটের উদ্যোগ’—এমন নানা শিরোনামের বিভিন্ন প্রতিবেদন গত দু বছরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। দফায় দফায় হয়েছে হাইকমিশনার, সরকারি নীতি-নির্ধারকদের মতবিনিময় সভা। তবে এতদিনেও অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যিক রাজধানী সিডনিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের স্থায়ী কোনো মিশনই স্থাপন করা হয়নি।
গত বছরের ৭ আগস্ট বাংলাদেশের মন্ত্রীসভার বৈঠকে বাংলাদেশ হাইকমিশনের একটি স্থায়ী মিশন বা কনস্যুলার সার্ভিস চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়। এ বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশিদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই নতুন দপ্তর খোলার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সেই সুবিধা এখনও পায়নি সিডনিতে বসবাসরত প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের কার্যালয়। নিয়ম অনুসারে রাজধানীতে হাইকমিশনের কার্যালয় হলেও প্রায় বেশিরভাগ বাংলাদেশি অভিবাসীদের বাস নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে। এ রাজ্যের সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে বাঙালি কমিউনিটি। আর এ রাজ্যের প্রধান শহর হিসেবে সিডনিতেই সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি অভিবাসীর বাস। নতুন পাসপোর্ট ইস্যু, নবায়ন, ভিসা ইস্যু, ‘নো ভিসা রিকুয়ারমেন্ট’ স্ট্যাম্প প্রদান ও কাগজ সত্যায়িত করার মতো হাইকমিশনের সকল প্রয়োজনে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের বাংলাদেশিদের প্রায় ২৮৬ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হয় ক্যানবেরায়। আর হাইকমিশনে ছোট্ট কোনো কাজের জন্যও এই যাতায়াতে প্রায় সারাদিন সময় আর বাড়তি অর্থ খরচ হয় সিডনিবাসীর। তাই হাইকমিশনের প্রায় সব সুবিধা সংবলিত স্থায়ী মিশন দ্রুত স্থাপনের দাবি সিডনিবাসীর বহুদিনের। বিশ্বের প্রায় বেশিরভাগ দেশের স্থায়ী মিশন রয়েছে সিডনিতে।
দীর্ঘদিন ধরে সিডনিতে স্থায়ী মিশন চালুর পরিকল্পনার কথাই শুনে আসছেন সিডনির বাংলাদেশিরা। জানা গেছে, সিডনির বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের জন্য বিভিন্ন পদে কর্মকর্তা নিয়োগ দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু বছরের পর বছর সরকারি দীর্ঘসূত্রতার আর পরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়নের অভাবে ভোগান্তির কমতি নেই সিডনির প্রবাসী বাংলাদেশিদের। সিডনির রকডেলের বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতার ফলে আমাদের হতাশা বেড়েই চলছে। কবে নাগাদ সিডনিতে হাইকমিশনের কাজ সেরে ফেলতে পারব তাঁর কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। তবে আশা করছি সরকার পক্ষ দ্রুত এ বিষয়টির প্রতি মনোযোগী হবে।’
সিডনির উইলিপার্কের বাসিন্দা জিন্নাতুর রহমান বলেন, ‘সরকারী কাজে নানান জটিলতা থাকে যা যেকোনো পরিকল্পনাকেই সময় সাপেক্ষ করে তোলে। তবে জনগণের ভোগান্তি নিরসনে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের আরও সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন।’
সিডনিতে দ্রুত বাংলাদেশ হাইকমিশনের স্থায়ী মিশন স্থাপনের জোরালো দাবি এখন সিডনির বেশিরভাগ প্রবাসী বাংলাদেশিদের। যদিও ক্যানবেরায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আগামী বছর জানুয়ারির মধ্যে সিডনিতে স্থায়ী মিশন চালু করার জন্য পুরোদমে কাজ চলছে। তবে স্থায়ী মিশন স্থাপনের জন্য সিডনিতে এখনো কোনো অফিস ভাড়া নেওয়া বা প্রস্তুতির খবর পাওয়া যায়নি।