ঢাকা ১১:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।। বরিশালে সুলভ মুল্যে বসুন্ধরা পন্য পেয়ে ক্রেতারা খুশী। বাবুগঞ্জে স্কুল ছুটির পরে বাড়ি যাওয়ার সময় দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজ। আমার বাবাও মায়ের দেওয়া উপদেশ বড়দের সম্মান কর ছোটদের স্নেহ করো। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখী নারী উদ্যোক্তা মেলা শুরু। টাঙ্গাইলে তিনদিন ব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা শুরু বাকেরগঞ্জে প্রধান মন্ত্রীর ছবি ব্যঙ্গক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট করায় হায়দর সিপাই গ্রেফতার। বাকেরগঞ্জে স্ত্রীর দায়ের কৃত মামলায় স্বামী পারভেজ খান গ্রেফতার।। বাকেরগঞ্জে তরমুজ চাষী হত্যা চেষ্টা মামলার আসামী রুদ্র গাজী গ্রেফতার টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড অনুষ্ঠিত

রাফায়েল বিতর্কে নতুন মোড়

ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের স্বীকারোক্তিতে রাফায়েল বিতর্ক নতুন মোড় নিল। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সরাসরি ‘চোর’ আখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, মোদি–আম্বানি জুটি ভারতীয় সেনাদের ওপর ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছে।

ফ্রান্স থেকে ৩৬টি রাফায়েল বিমান কেনা নিয়ে ২০১৫ সালে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে চুক্তি হয়। রাহুল গান্ধী বলছেন, রাফায়েল চুক্তি ভারতীয় অন্তরাত্মার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।

সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মোদি সরকারই তাঁদের বলেছিল অনিল আম্বানির সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করতে।

গত শুক্রবার ফরাসি গণমাধ্যমে ওই সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়। এতে ওলাঁদ বলেন, ‘ভারত সরকারই রিলায়েন্সকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল। আমাদের কাছে কোনো বিকল্প ছিল না।’

ভারত সরকারের কে বা কারা আম্বানিকে তাঁদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল, সেই নাম না বললেও সাক্ষাৎকারে ওলাঁদ যা বলেছেন, তা ভারত সরকারের এত দিনকার দাবির বিপরীত।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদেরা এত দিন ধরে বলেছেন, অনিল আম্বানির সংস্থাকে পছন্দ করা রাফায়েলের প্রস্তুতকারক সংস্থা ডাসল্টের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তাতে দুই দেশের সরকারের কোনো হাত নেই।

ওলাঁদের বান্ধবী ও সঙ্গিনী জুলি গায়েটের সিনেমা প্রযোজনা করেছিল অনিল আম্বানির সংস্থা। অভিযোগ, ডাসল্টের চুক্তি পেতে ওই সিনেমা প্রযোজনায় রাজি হয়েছিলেন অনিল আম্বানি। ফরাসি সংবাদমাধ্যম এই প্রশ্নটিও সাবেক প্রেসিডেন্টকে করেছিল। ওলাঁদ উত্তরে বলেছেন, ‘জুলি গায়েটের সিনেমার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না।’

কংগ্রেস এত দিন ধরে যুগ্ম সংসদীয় কমিটি গঠনের মাধ্যমে ৫৯ হাজার কোটি টাকার রাফাল চুক্তির তদন্ত দাবি করে আসছিল। সিএজি তদন্তের দাবিও তারা জানিয়েছে। ওলাঁদের স্বীকারোক্তির পর এখন দেশের প্রধান বিরোধী দল কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনের (সিভিসি) দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামীকাল সোমবার দলের শীর্ষ নেতারা সিভিসির সঙ্গে দেখা করবেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের পদত্যাগের দাবিতেও কংগ্রেস অটল।

গতকাল শনিবার কংগ্রেস সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন ডেকে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাহুল তাঁর আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্টই বুঝিয়ে দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী অসৎ। তাঁর স্বীকারোক্তিতে এটা পরিষ্কার, এ দেশের ‘চৌকিদার’ (মোদি নিজেই নিজেকে দেশের চৌকিদার বলেছেন) চোর।

রাহুল বলেন, অনিল আম্বানির বিভিন্ন সংস্থার দেনার পরিমাণ ৪৫ হাজার কোটি রুপি। সেই দেনা থেকে মুক্তির জন্যই প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ৩০ হাজার কোটির বরাত পাইয়ে দিলেন।

সাবেক প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হওয়ার পর ফ্রান্সের সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, ‘অফসেট’ চুক্তিতে সরকারের কোনো হাত ছিল না। সেই বিবৃতির পর ওলাঁদ এক বিবৃতিতে জানান, সাক্ষাৎকারে তিনি যা বলেছেন, তা থেকে সরছেন না।

ওলাঁদ প্রেসিডেন্ট থাকা কালে সে দেশ সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালে রাফায়েল চুক্তির কথা ঘোষণা করেছিলেন। পরের বছর পুরোপুরি তৈরি ৩৬টি রাফায়েল ৫৯ হাজার কোটি রুপিতে কেনার চুক্তি সম্পাদিত হয়। যে বিমান পূর্বতন কংগ্রেস সরকার কেনার জন্য তৎপর হয়েছিল, তা বাতিল করে মোদি সরকার নতুন চুক্তি করে।

কংগ্রেসের অভিযোগ, তারা ১২৬টি রাফায়েল কিনতে চেয়েছিল। ১৮টি একেবারে তৈরি অবস্থায়, বাকি ১০৮টি ফরাসি সহায়তা ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে তৈরির কথা ছিল বেঙ্গালুরুর রাষ্ট্রায়ত্ত হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডে (হ্যাল)। এ জন্য খরচ হতো ৭৯ হাজার কোটি টাকা।

কংগ্রেসের অভিযোগ, ১২৬টি যুদ্ধ বিমানের জায়গায় মোদি সরকার কিনছে মাত্র ৩৬টি, সে জন্য বিমানপ্রতি দাম দিচ্ছে তিন গুণ বেশি। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার জায়গায় বেছে নিয়েছে শিল্পপতি অনিল আম্বানির সেই সংস্থাকে, যা চুক্তি সইয়ের মাত্র ১২ দিন আগে গঠিত। যুদ্ধবিমান তৈরির কোনো অভিজ্ঞতাই তাদের নেই।

৩০ বছর আগে ভারতীয় রাজনীতি উথাল–পাতাল হয়েছিল বেফর্স কামান কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে। রাহুলের বাবা রাজীব গান্ধী তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ১৯৮৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের মূল স্লোগান হয়ে দাঁড়িয়েছিল ‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়’। ৩০ বছর পর রাহুল গান্ধী সেই স্লোগানটাই ফিরিয়ে দিলেন তাঁদের, যাঁরা ওই স্লোগানের জন্মদাতা ছিলেন। শনিবার তিনি বললেন, ‘দেশের মানুষ জেনে গেছে, চৌকিদারই চোর।’

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বাকেরগঞ্জে ড. আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলের শুভেচ্ছা।।

রাফায়েল বিতর্কে নতুন মোড়

আপডেট টাইম ০৮:৫৯:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের স্বীকারোক্তিতে রাফায়েল বিতর্ক নতুন মোড় নিল। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সরাসরি ‘চোর’ আখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, মোদি–আম্বানি জুটি ভারতীয় সেনাদের ওপর ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছে।

ফ্রান্স থেকে ৩৬টি রাফায়েল বিমান কেনা নিয়ে ২০১৫ সালে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে চুক্তি হয়। রাহুল গান্ধী বলছেন, রাফায়েল চুক্তি ভারতীয় অন্তরাত্মার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।

সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মোদি সরকারই তাঁদের বলেছিল অনিল আম্বানির সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করতে।

গত শুক্রবার ফরাসি গণমাধ্যমে ওই সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়। এতে ওলাঁদ বলেন, ‘ভারত সরকারই রিলায়েন্সকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল। আমাদের কাছে কোনো বিকল্প ছিল না।’

ভারত সরকারের কে বা কারা আম্বানিকে তাঁদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল, সেই নাম না বললেও সাক্ষাৎকারে ওলাঁদ যা বলেছেন, তা ভারত সরকারের এত দিনকার দাবির বিপরীত।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদেরা এত দিন ধরে বলেছেন, অনিল আম্বানির সংস্থাকে পছন্দ করা রাফায়েলের প্রস্তুতকারক সংস্থা ডাসল্টের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তাতে দুই দেশের সরকারের কোনো হাত নেই।

ওলাঁদের বান্ধবী ও সঙ্গিনী জুলি গায়েটের সিনেমা প্রযোজনা করেছিল অনিল আম্বানির সংস্থা। অভিযোগ, ডাসল্টের চুক্তি পেতে ওই সিনেমা প্রযোজনায় রাজি হয়েছিলেন অনিল আম্বানি। ফরাসি সংবাদমাধ্যম এই প্রশ্নটিও সাবেক প্রেসিডেন্টকে করেছিল। ওলাঁদ উত্তরে বলেছেন, ‘জুলি গায়েটের সিনেমার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না।’

কংগ্রেস এত দিন ধরে যুগ্ম সংসদীয় কমিটি গঠনের মাধ্যমে ৫৯ হাজার কোটি টাকার রাফাল চুক্তির তদন্ত দাবি করে আসছিল। সিএজি তদন্তের দাবিও তারা জানিয়েছে। ওলাঁদের স্বীকারোক্তির পর এখন দেশের প্রধান বিরোধী দল কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনের (সিভিসি) দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামীকাল সোমবার দলের শীর্ষ নেতারা সিভিসির সঙ্গে দেখা করবেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের পদত্যাগের দাবিতেও কংগ্রেস অটল।

গতকাল শনিবার কংগ্রেস সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন ডেকে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাহুল তাঁর আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্টই বুঝিয়ে দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী অসৎ। তাঁর স্বীকারোক্তিতে এটা পরিষ্কার, এ দেশের ‘চৌকিদার’ (মোদি নিজেই নিজেকে দেশের চৌকিদার বলেছেন) চোর।

রাহুল বলেন, অনিল আম্বানির বিভিন্ন সংস্থার দেনার পরিমাণ ৪৫ হাজার কোটি রুপি। সেই দেনা থেকে মুক্তির জন্যই প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ৩০ হাজার কোটির বরাত পাইয়ে দিলেন।

সাবেক প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হওয়ার পর ফ্রান্সের সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, ‘অফসেট’ চুক্তিতে সরকারের কোনো হাত ছিল না। সেই বিবৃতির পর ওলাঁদ এক বিবৃতিতে জানান, সাক্ষাৎকারে তিনি যা বলেছেন, তা থেকে সরছেন না।

ওলাঁদ প্রেসিডেন্ট থাকা কালে সে দেশ সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালে রাফায়েল চুক্তির কথা ঘোষণা করেছিলেন। পরের বছর পুরোপুরি তৈরি ৩৬টি রাফায়েল ৫৯ হাজার কোটি রুপিতে কেনার চুক্তি সম্পাদিত হয়। যে বিমান পূর্বতন কংগ্রেস সরকার কেনার জন্য তৎপর হয়েছিল, তা বাতিল করে মোদি সরকার নতুন চুক্তি করে।

কংগ্রেসের অভিযোগ, তারা ১২৬টি রাফায়েল কিনতে চেয়েছিল। ১৮টি একেবারে তৈরি অবস্থায়, বাকি ১০৮টি ফরাসি সহায়তা ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে তৈরির কথা ছিল বেঙ্গালুরুর রাষ্ট্রায়ত্ত হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডে (হ্যাল)। এ জন্য খরচ হতো ৭৯ হাজার কোটি টাকা।

কংগ্রেসের অভিযোগ, ১২৬টি যুদ্ধ বিমানের জায়গায় মোদি সরকার কিনছে মাত্র ৩৬টি, সে জন্য বিমানপ্রতি দাম দিচ্ছে তিন গুণ বেশি। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার জায়গায় বেছে নিয়েছে শিল্পপতি অনিল আম্বানির সেই সংস্থাকে, যা চুক্তি সইয়ের মাত্র ১২ দিন আগে গঠিত। যুদ্ধবিমান তৈরির কোনো অভিজ্ঞতাই তাদের নেই।

৩০ বছর আগে ভারতীয় রাজনীতি উথাল–পাতাল হয়েছিল বেফর্স কামান কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে। রাহুলের বাবা রাজীব গান্ধী তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ১৯৮৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের মূল স্লোগান হয়ে দাঁড়িয়েছিল ‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়’। ৩০ বছর পর রাহুল গান্ধী সেই স্লোগানটাই ফিরিয়ে দিলেন তাঁদের, যাঁরা ওই স্লোগানের জন্মদাতা ছিলেন। শনিবার তিনি বললেন, ‘দেশের মানুষ জেনে গেছে, চৌকিদারই চোর।’