(চৌগাছা,যশোর)যশোরের চৌগাছা উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের হয়াতপুর গ্রামে স্থাপিত আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহ প্লান্টটি প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। ভয়াবহ আর্সেনিক এলাকা হিসেবে পরিচিত ওই এলাকার মানুষ প্লান্টটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম সমস্যায় পড়েছেন।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসী প্লান্ট থেকে আবারও পানি সরবরাহ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জানা গেছে, উপজেলার পাতিবিলা হয়াতপুর গ্রাম এলাকাজুড়ে ভূগর্ভস্থ পানিতে ভয়াবহ আর্সেনিক দেখা দেয়। এলাকাবাসীর মধ্যে আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহের লক্ষ্যে বেসরকারি সংগঠন ঢাকা আহছানিয়া মিশনের উদ্যোগে হয়াতপুর গ্রামে একটি প্লান্ট স্থাপন করা হয়। ২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এর উদ্বোধন করা হয়। প্রায় ৯ বছর ধরে এলাকাবাসী ওই প্লান্ট থেকে পানি সংগ্রহ করে তা খাওয়াসহ সংসারের সব কাজ করতেন। শুধু হয়াতপুর পাতিবিলা এলাকাবাসী নয়, ওই আর্সেনিকমুক্ত পানি সংগ্রহের জন্য চৌগাছা পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ সেখানে যেতেন এবং পানি সংগ্রহ করতেন।
কিন্তু প্লান্টের সব কিছু ঠিক থাকলেও কিছু সমস্যার কারণে প্রায় দুই বছর ধরে সেটি বন্ধ। এলাকাবাসী জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও মেডিসিনের জন্য এটি বন্ধ রয়েছে। ফলে স্থানীয়সহ এলাকার মানুষ চরম সমস্যায় পড়েছেন।
আবারও আর্সেনিকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে মানুষের মাঝে।
সরজমিন গেলে প্লান্টটি বন্ধ দেখা যায়। এ সময় গৃহিণী আবিরন নেছার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রায় ৯-১০ বছর ধরে প্লান্ট থেকে আমরা পানি খেয়ে বেশ সুস্থ ছিলাম। কিন্তু দুই বছর ধরে এখান থেকে আর পানি পাওয়া যায় না। এখন বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে একটি টিউবওয়েল থেকে পানি নিয়ে আসতে হয়। এখন শুনেছি ওই টিউবওয়েলের পানিতেও আর্সেনিক ধরা পড়েছে। বিকল্প নিরাপদ পানির ব্যবস্থা না থাকায় আমরা বাধ্য হয়ে এই বিষ পানি পান করছি।
প্লান্ট স্থাপনের জমিদাতা হয়াতপুর গ্রামের বজলুর রহমান জানান, এলাকাবাসীর স্বার্থে নিজের জমিতে এই প্লান্টটি স্থাপন করতে দিয়েছিলাম। মানুষ এখান থেকে আর্সেনিকমুক্ত পানি সংগ্রহ করত। কিন্তু দুই বছর ধরে প্লান্ট থেকে পানি সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ ও ওষুধের কারণে এটি বন্ধ।
এ বিষয়ে কথা হয় প্লান্ট নির্মাণের সময় দায়িত্বে থাকা বর্তমানে সিটকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপক নূরুল হুদার সাথে। তিনি বলেন, পানি উত্তোলনের জন্য একধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হতো সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন যদি স্থানীয়রা ওই ওষুধ কেনার ব্যবস্থা করেন তাহলে প্লান্টটি পুনরায় চালু করা সম্ভব।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান লাল বলেন, প্লান্টটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ওই এলাকার মানুষের সুপেয় পানি পাচ্ছে না। এটি এখন চালু করতে গেলে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা প্রয়োজন। এত টাকা জোগাড় করা অসম্ভব। বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় আলোচনাও করেছি কিন্তু কোনো ফল পাইনি। যদি সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায় তাহলে ওই প্লান্টটি পুনরায় চালু করা সম্ভব হবে।