“অনেক কেদেঁছি আমি আর কাদঁতে পারব না ” জেমসের একটা গান গত ৪৮ ঘন্টা থেকে আমার মনকে তাড়া করছে । রিফাত কে রামদা দিয়ে কোপাল নয়ন ,সিলেটে কয়েক বছর আগে খাদিজাকে কোপাল বদরুল, নুসরাতকে পোড়াল মাদ্রাসার হুজুর, আর কত? রেল লাইনগুলো যে ছবি দেখছি প্রতিদিন এখন তো ভয় করে কাউকে রেলে যেতে বলতে! পুরো বাংলাদেশটাই কিভাবে আহত হয়ে গেছে! কি হয়ে গেল পুরো বাংলাদেশটায় । সবাইকি সহজলভ্য ইন্টারনেটের জন্য আর দশ হাজার টাকার টাকার স্মার্ট ফোনের কারনে সারা দিন মাথা নিচু করে ডুবে আছেন বিবেক কে এক্সপোর্ট করে । কি ভয়াবহ কথা, বরগুনার এসপি বলছেন, নয়ন ২০ মামলার আসামী , মাদক ব্যবসায়ী, সে সন্ত্রাসী । এর মানে এই সব ছেলেরা জেল থেকে বা জামিন পাবার পর আর কোন নজরদারীতে নেই । ভাগ্য ভাল এখনও সে ছাত্রলীগের নেতা বা বাপ আওয়ামী লীগের লিডার/নেতা বলেন নি?
রামাদা দিয়ে কাকে কোপাবেন ? কোপাতে হবে পুলিশদের । যারা টাকা খেয়ে সন্ত্রাসীদের মামলা হালকা করার জন্য রিপোর্ট দেয় । আর যে সব আইনজীবি জেনে শুনে অপরাধীদের পক্ষে সাফাই গায় , তাদের জামিনের গ্যারান্টি দেয় । আর এজলাসে যে কম বয়সী বিচারক বসে আছেন, তিনি এপিপি , এসপিপি ও পিপির মুখের দিকে তাকিযে রায় দেন । এই তিন শ্রেনীর মানুষকেই কোপাতে হবে ।
আমাদের পদ্মা সেতুর দরকার নেই , আমাদের বিদ্যুতের ও দরকার নেই, আমাদের মেট্ররেলের দরকার নাই, আমাদের চার লেনের মহাসড়ক ও দরকার নেই । আমাদের দরকার একটি নিরাপদ বাংলাদেশের । যেখানে স্বাভাবিক চলাফেরার ও নিরাপদ থাকা যাবে । আমাদের কোপাতে হবে পুরো সিষ্টেমটাকে । আমাদের কোপাতে হবে বিবেক কে । আমাদের কোপাতে হবে কাপুরুষতাটাকে ।
একজন জনবান্ধব প্রধানমন্ত্রী তিনি একাই তিন চারটা মন্ত্রনালয় চালান তাকে প্রতি ঘটনায় সম্পৃক্ত হতে হয় । স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব, আই জি, এস পি, ওসি থাকার দরকার কেন ? চাইলে একজন এস আই সন্ত্রাসীদের ঘুম হারাম করে দিতে পারে ।
প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশে বসেও আড়ংয়ের ঘটনায় অপমানিত একজন ম্যাজিষ্ট্র্যাট এর পক্ষে ব্যবস্থা নিতে হয় । সংসদেও কথা বলেন তিনি একই বিষয়ে । তিনি ৭৪ বছর বয়সে যা করছেন তা ৪০ জন মন্ত্রী মিলেও করতে পারছে না । সবাই মুজিব কোট ইস্ত্রি করে বসে থাকেন তার সাথে ছবি তুলার জন্য । সব মন্ত্রীরা দুর্নীতিবাজ না কিন্তু সঠিক কাজ করার জন্য যে যোগ্যতা তা তাদের নেই । রেল দুর্ঘটনায় মন্ত্রী দু:খ প্রকাশ না করে বিগত সরকারের দোষ দিলেন, তাহলে গত ১১ বছর রেল কে চালিয়েছে?
মানবতার নেত্রী শেখ হাসিনাকে ফেসবুকে বসে সব সময় কোথায় কোন ঘটনা ঘটছে, কি ভাইরাল হচেছ তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে? আগে শুনতাম সবাই বলত, পুলিশের চাকরী ও সরকারী চাকুরীজীবিরা বেতন কম পান, তাই তাদের অনৈতিক আয় করতে হয় । সবার বেতন বাড়িয়ে দেয়া হল , অনেক উৎসব ভাতা দেয়া হচেছ । তারপরও তাদের লাগাম টানা যাচেছ না । হাইকোর্ট বসে প্রতিদিন রুল জারি করছেন, আর প্রধানমন্ত্রী একাই ১৭/১৮ ঘন্টা কাজ করছেন সব বিষয়ে সব ক্ষেত্রে । কোপাতে হবে সেই সব ঠিকাদারদের যারা বাঁশ দিয়ে রাস্তা বানানোর চেষ্টা করে । যারা রেল লাইনে বাঁশ ব্যবহার করে । শুনলাম গতকাল সিলেট ঢাকায় দু লাইনের রেল লাইন হবে , মানে নতুন লাইন ১৫ হাজার কোটি টাকার খাবার ধান্ধা । সিলেট বাসীর উচিত এটা প্রত্যাখ্যান করা । কারন যে লাইনগুলো আছে সেটাই সংস্কার জরুরী । নুতন টাকা লুটে পুটে খাবার চিন্তা । উচিত ভাল দক্ষ লোকদের রেলওয়েতে চাকুরী দেয়া । অদক্ষ লোকদের হাতে পুরো রেল সেক্টর ।
একটা সাফল্য এই সরকারের , এখন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হচেছ না । মানে অবৈধ অস্ত্র কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে । এখন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ( ৭০ /৮০ দশকের ষ্টাইলে ) খুব কাছে এসে আঘাত করে সন্ত্রাসীরা । আর আমরা ছবি তুলি , রেকর্ড করি , লাইভ দেখাই । খাদেজাকে যখন কোপাল তখনও অনেক লোক আশে পাশে ছিল , রিফাতকে যখন কোপাল তখন অনেকে ছিল । আমাদের বিকেটাই এক্সপোর্ট হয়ে গেছে । আমাদের ছাত্র সমাজের মাঝেও একটা নিষ্ক্রিয়তা এসে গেছে , তারা রিয়েক্ট করতে পারে না । সমাজের মাঝে কিছু অনাচার ভয়াবহ আকার ধারন করছে, তারা গাঁ বাচিয়ে চলছে । খাদ্য ভেজাল একটি সামাজিক ক্যান্সার সেখানেও ভাল ভাল ম্যাজিষ্ট্যাটরা নাগরিকদের সাপোর্ট পাচেছন না । কোপাতে হবে এই অপশক্তি কে যারা অধিক মূল্য নিয়ে আমাদের খাদ্য বিষ ডুকিযে বিক্রি করছে । নাগরিকদের মাঝে জেগে উঠার কোন স্পৃহা নেই । তাই আড়ং দু’বার ধরা খেল গ্রাহক প্রতারনা জন্য কেউ কথা বলে না । কেউ প্রতিবাদ করে না । সবাই আড়ংয়ে যায়, ব্যান্ডের জন্য । প্রতারকদের ব্যান্ড পড়ে ইমেজ বাড়াই আমরা ।
আমাদের আপাতত উন্নয়নের মহাসড়ক থেকে নেমে লোকাল সড়কে চলতে হবে, যে সামাজিক সমস্যাগুলো দৃশ্যমান (১) স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি (২) নিরাপদ রেল লাইন ( ৩) খাদ্যে ভেজাল ( ৪) অসাধু ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যব্স্থা (৫) যে আইনজীবিরা সন্ত্রাসীদের জন্য আদালতে দাড়ায় ( ৬) যে সব পুলিশ সন্ত্রাসীদেরে পক্ষে দুর্বল রিপোর্ট দেয় (৭) যে সব বিচারক ভুল বিচার করে এপিপি , এস পিপি, পিপি দের পক্ষ নিয়ে ।
আমাদের ক্রিকেটের বিশ্বকাপ জেতার দরকার নেই । আমাদের মহাকাশেও যাবার দরকার নেই । আমাদের পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশ হবারও দরকার নেই । আমাদের সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বাজেটেরও দরকার নেই , যে টাকার কাজ হবে না , সবাই বিদেশ সফর করবে । আমাদের দরকার সামাজিক মুল্যবোধ জাগ্রত করা । আমাদের মধ্যে একটি সুষ্ট জবাবদিহীতা নিশ্চিত করা । একজন এস পিকে নিয়ে , একজন ডিআইজিকে নিয়ে যে টানা হেচড়া হল তা যেন ভবিষ্যতে না হয় । নুসরাতকে যেমন মৃত্যুর আগেই ওসি মোয়াজ্জেম তার রুমে হেনস্থা করছে এখন মিন্নি কে নিয়ে অনেক লেখালেখি করা হচেছ । আমি বলছি না মিন্নি বেগম রোকেয়া, আমরা প্রকাশ্য একজনকে কুপিয়ে হত্যা করার বিচার চাচিছ । অনলাইনের যুগে অনেক নিউজই বানানো যায়, সন্ত্রাসীদের আইনজীবি বলে দেয় মামলা দুর্বল করতে কিছুটা পক্ষে নিতে বিভিন্ন নিউজ এভিডেন্স হিসাবে কাজ করে । এই কাজগুলো অসাধু আইনজীবিদের পরামর্শ এ হয়ে থাকে । আজ সারাদিন মিন্নি বিরুদ্ধে নিউজ দেখা যাচেছ । নারায়নগঞ্জে আমাদের শিক্ষক ২০ জন ছাত্রীতে ধর্ষন করল মাসের পর মাস, কেউ কিছু বলল না এতদিন । সবাই কি প্রশ্ন পত্র পাওয়ার আশায়? কত কিছুই ঘটছে । নুসরাত , রিফাতের পর মুন্সিগঞ্জ বরগুনার পর আরও কোথাও আগামী মাসে আগামী সপ্তাহে আরেক কাহিনী আসছে । বরগুনার ওসি ও এস পির সখ্যতা ছিল নয়নদের সাথে । ২০১৭ সালে সে মাদক মামলায় গ্রেফতার হল , কে তাকে জামিন দিল? কোন আইনজীবি তার পক্ষে দাড়ালেন তার ছবি দেখতে চাই । রিফাত কে পুলিশ মিথ্যা মামলায় ১৭ দিন জেলে নিল কেন? কতটা দাপটে নয়ন সরকারী দল না করেও কিভাবে এগুলা করল । তার মানে সে টাকা দিয়ে থানা ম্যানেজ করত, করেছে । এই ছবি ভাইরাল না হলে রিফাতের মুত্যৃ একটি দূর্ঘটনা হিসাবে মিডিয়ায় আসত । আমাদের সহজাত বিবেকটাকে কোপানোর জন্য ধারাল রাম দা দরকার ।
বিচিত্র আমাদের দেশ আমাদের মিডিয়া আমাদের অবসরে যাওয়া বিবেক!!!