ঢাকা ১২:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ০১ জুন ২০২৪, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
” অভয়নগর সমিতি ঢাকা’র প্রীতি সম্মেলন ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত “ “র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) দশম মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশিদ” দেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে রয়েছে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত –অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলনকালে রাজধানীর দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ এলাকা হতে চাঁদাবাজ চক্রের অন্যতম মূলহোতা ইকবালসহ মোট ০৮ জন পরিবহন চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০। রাজধানীতে বিড়ি শ্রমিকদের মানববন্ধন ও এনবিআর ঘেরাও চট্টগ্রামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ৫০ জলদস্যুর আত্মসমর্পণ “এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা’র আয়োজনে পেশেন্ট ফোরাম টাঙ্গাইলে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও সাফল্যের প্রচারণা বাকেরগঞ্জে জিয়াউর রহমানের ৪৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত। টাঙ্গাইলে তিন উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান হলেন যারা

এনআইডি জালিয়াতি: সাতকানিয়ার সেলিম রাতারাতি বনে গেলেন বান্দরবানের নাগরিক

সাতকানিয়া প্রতিনিধ:

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা মোঃ সেলিম উদ্দীন জাতীয় পরিচয় পত্র জালিয়াতি করে রাতারাতি বনে গেলেন বান্দরবান জেলার নাগরিক। বান্দরবান জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও বান্দরবান সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর দেওয়া এক লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। কেবল তথ্য প্রযুক্তির অবৈধ ব্যবহারের মাধ্যমে এনআইডি জালিয়াতি করতে পারলেও নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে তার জাল এনআইডি রেকর্ড হয়নি। তবে বান্দরবান পৌরসভা থেকে অনলাইনে রেকর্ডকৃত একটি জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়েছেন তিনি। সেলিম উদ্দীন সাতকানিয়া উপজেলার কেওচিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের তেমুহনি ফকিরবাড়ী এলাকার মৃত আসহাব মিয়ার ছেলে। নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে এই ঠিকানায় তার জাতীয় পরিচয় পত্র রেকর্ড আছে। তবে জাল এনআইডিতে তিনি বান্দরবান মৌজার ৩১৩ নং বনরুপা পাড়ার ঠিকানা ব্যবহার করেছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন আইন ১৯০০ মোতাবেক বান্দরবান জেলায় স্থায়ী নাগরিক ছাড়া কেও জমি ক্রয় করতে পারেনা। সেলিম উদ্দীন মূলত জমি ক্রয় করার উদ্দেশ্যেই এনআইডি এবং জন্ম সনদ জাল করেছেন। গত ১৩/১০/২০২০ ইং তারিখে জাল এনআইডি ব্যবহার করে ৮১০/২০২০ নং মূলে একটি জমি বিক্রয়ের বায়নানামাও করেছেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, সেলিম উদ্দীন মূল এনআইডি নাম্বার ৯১৫৮২৫৫৬৮৮ বদলীয়ে অন্য একটি নাম্বার দিয়ে একটি জাল এনআইডি তৈরি করেন। যার নাম্বার ০৩২১৪১৬২৬০০০৮ ও জন্ম তারিখ ১১/০৬/১৯৭৩। মূল এনআইডি এবং জাল এনআইডির মধ্যে জন্ম তারিখ ও পিতা মাতার নাম মিল রেখে বাকি সব তথ্য জাল করা হয়। এছাড়া বান্দরবান পৌরসভার জন্ম সনদেও (নং—১৯৭৩০৩২৫০০৬১১৭১৮৪) জন্ম তারিখ ও পিতা মাতার নাম মিল রেখে ব্যবহৃত ঠিকানা সরাসরি জন্মস্থান বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া সেলিম উদ্দীন বান্দরবান বোমাং রাজার জাল সনদ তৈরি করেন।

নির্ভরযোগ্য তথ্য মতে, ২৮৪ নং ইয়াংছা মৌজার স্থায়ী বাসিন্দা আব্দুর রশিদের ছেলে আসহাব মিয়া। বিগত ২৪-২৫ বছর আগে সে মৃত্যু বরণ করেন। কিন্তু সেলিম উদ্দীন সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পিতার নাম ব্যবহার করে রাতারাতি বনে যান বান্দরবানের নাগরিক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবান পার্বত্য জেলা হেডম্যান কার্যালয় গত ২ জুলাই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেওচিয়ায় বসবাসকারী সেলিম উদ্দীনের পিতা আসহাব মিয়ার অত্র মৌজায় কোন জমিজমা নেই।

তবে এসব বিষয়ে জানতে সেলিম উদ্দীনকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, বান্দরবানে যারা জমি ক্রয় করে তারা সবাই এভাবেই করে। আর সাংবাদিকরা ফোন দিয়ে টাকা চায়। কে কে টাকা চেয়েছে জানতে চাইলে বলেন, আপনিও চেয়েছেন। প্রমান দেন, আপনার ফোন কল রেকর্ড করা হচ্ছে বললে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

জন্ম নিবন্ধনের বিষয়ে জানতে বান্দরবান পৌরসভার মেয়র ইসলাম বেবিকে ফোন করা হলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৌরভ দাশ বলেন, বান্দরবানে এনআইডি কিংবা জন্ম সনদ দিয়ে জমি ক্রয় করা সম্ভব না। আনুষাঙ্গিক অনেক কাগজ পত্রের দরকার পড়ে। তারপরেও কেউ যদি মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমার এলাকা থেকে জন্ম সনদ নিয়ে থাকে, সেটা আমাদের দৃষ্টিগোচর হলে আমরা ঐ জন্ম সনদ বাতিল করে দিব।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (সহকারী কমিশনার (ভূমি) অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত) সাজিয়া আফরোজ বলেন, অভিযোগটি পাওয়া মাত্রই আমরা তদন্তে পাঠিয়েছি। তদন্তে যদি ঐ ব্যক্তির দোষ প্রমানিত হয় তাহলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

জানতে চাইলে বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাইফুল ইসলাম বলেন, এনআইডি জালিয়াতি সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের কাজ চলমান। তদন্ত সাপেক্ষ পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Tag :

” অভয়নগর সমিতি ঢাকা’র প্রীতি সম্মেলন ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত “

এনআইডি জালিয়াতি: সাতকানিয়ার সেলিম রাতারাতি বনে গেলেন বান্দরবানের নাগরিক

আপডেট টাইম ০৬:৫৮:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২

সাতকানিয়া প্রতিনিধ:

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা মোঃ সেলিম উদ্দীন জাতীয় পরিচয় পত্র জালিয়াতি করে রাতারাতি বনে গেলেন বান্দরবান জেলার নাগরিক। বান্দরবান জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও বান্দরবান সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর দেওয়া এক লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। কেবল তথ্য প্রযুক্তির অবৈধ ব্যবহারের মাধ্যমে এনআইডি জালিয়াতি করতে পারলেও নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে তার জাল এনআইডি রেকর্ড হয়নি। তবে বান্দরবান পৌরসভা থেকে অনলাইনে রেকর্ডকৃত একটি জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়েছেন তিনি। সেলিম উদ্দীন সাতকানিয়া উপজেলার কেওচিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের তেমুহনি ফকিরবাড়ী এলাকার মৃত আসহাব মিয়ার ছেলে। নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে এই ঠিকানায় তার জাতীয় পরিচয় পত্র রেকর্ড আছে। তবে জাল এনআইডিতে তিনি বান্দরবান মৌজার ৩১৩ নং বনরুপা পাড়ার ঠিকানা ব্যবহার করেছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন আইন ১৯০০ মোতাবেক বান্দরবান জেলায় স্থায়ী নাগরিক ছাড়া কেও জমি ক্রয় করতে পারেনা। সেলিম উদ্দীন মূলত জমি ক্রয় করার উদ্দেশ্যেই এনআইডি এবং জন্ম সনদ জাল করেছেন। গত ১৩/১০/২০২০ ইং তারিখে জাল এনআইডি ব্যবহার করে ৮১০/২০২০ নং মূলে একটি জমি বিক্রয়ের বায়নানামাও করেছেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, সেলিম উদ্দীন মূল এনআইডি নাম্বার ৯১৫৮২৫৫৬৮৮ বদলীয়ে অন্য একটি নাম্বার দিয়ে একটি জাল এনআইডি তৈরি করেন। যার নাম্বার ০৩২১৪১৬২৬০০০৮ ও জন্ম তারিখ ১১/০৬/১৯৭৩। মূল এনআইডি এবং জাল এনআইডির মধ্যে জন্ম তারিখ ও পিতা মাতার নাম মিল রেখে বাকি সব তথ্য জাল করা হয়। এছাড়া বান্দরবান পৌরসভার জন্ম সনদেও (নং—১৯৭৩০৩২৫০০৬১১৭১৮৪) জন্ম তারিখ ও পিতা মাতার নাম মিল রেখে ব্যবহৃত ঠিকানা সরাসরি জন্মস্থান বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া সেলিম উদ্দীন বান্দরবান বোমাং রাজার জাল সনদ তৈরি করেন।

নির্ভরযোগ্য তথ্য মতে, ২৮৪ নং ইয়াংছা মৌজার স্থায়ী বাসিন্দা আব্দুর রশিদের ছেলে আসহাব মিয়া। বিগত ২৪-২৫ বছর আগে সে মৃত্যু বরণ করেন। কিন্তু সেলিম উদ্দীন সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পিতার নাম ব্যবহার করে রাতারাতি বনে যান বান্দরবানের নাগরিক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবান পার্বত্য জেলা হেডম্যান কার্যালয় গত ২ জুলাই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেওচিয়ায় বসবাসকারী সেলিম উদ্দীনের পিতা আসহাব মিয়ার অত্র মৌজায় কোন জমিজমা নেই।

তবে এসব বিষয়ে জানতে সেলিম উদ্দীনকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, বান্দরবানে যারা জমি ক্রয় করে তারা সবাই এভাবেই করে। আর সাংবাদিকরা ফোন দিয়ে টাকা চায়। কে কে টাকা চেয়েছে জানতে চাইলে বলেন, আপনিও চেয়েছেন। প্রমান দেন, আপনার ফোন কল রেকর্ড করা হচ্ছে বললে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

জন্ম নিবন্ধনের বিষয়ে জানতে বান্দরবান পৌরসভার মেয়র ইসলাম বেবিকে ফোন করা হলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৌরভ দাশ বলেন, বান্দরবানে এনআইডি কিংবা জন্ম সনদ দিয়ে জমি ক্রয় করা সম্ভব না। আনুষাঙ্গিক অনেক কাগজ পত্রের দরকার পড়ে। তারপরেও কেউ যদি মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমার এলাকা থেকে জন্ম সনদ নিয়ে থাকে, সেটা আমাদের দৃষ্টিগোচর হলে আমরা ঐ জন্ম সনদ বাতিল করে দিব।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (সহকারী কমিশনার (ভূমি) অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত) সাজিয়া আফরোজ বলেন, অভিযোগটি পাওয়া মাত্রই আমরা তদন্তে পাঠিয়েছি। তদন্তে যদি ঐ ব্যক্তির দোষ প্রমানিত হয় তাহলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

জানতে চাইলে বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাইফুল ইসলাম বলেন, এনআইডি জালিয়াতি সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের কাজ চলমান। তদন্ত সাপেক্ষ পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।