ঢাকা ০৪:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন ২০২৪, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা অগ্রিম ঈদউল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মোঃ রানা খাঁন লক্ষ্মীপুরে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেলেন ৭০ জন ভূমিহীন হাটের ও কোরবানিকৃত পশুর বর্জ্য আলাদা আলাদা ব্যবস্থাপনায় অপসারণ করা হবে : মেয়র তাপস মণিরামপুরে ১২৮ টি ভুমিহীন পরিবারের হাতে তুলে দিলেন আশ্রয়ণ প্রকল্প(০২) এর ঘর। বিসিকের উদ্যোগে “উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে বিসিকের ভূমিকা” শীর্ষক আলোচনা সভা মতলব উত্তরে মাদক,ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে অসির সচেতনামূলক সভা নারায়ণগঞ্জের বন্দর ষষ্ঠ উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের শপথ গ্রহন ভূমি সেবা সপ্তাহ-২০২৪ ভূমি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগেএ কর্মসূচির এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে রামগঞ্জে ২টি কিশোরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা

বরিশালের দুর্গাসাগর দীঘির ইতিহাস

আঃ মজিদ খান, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ বরিশালের দুর্গাসাগর দীঘির ইতিহাস। নামের সাথে সাগরের মিশেল থাকলেও দুর্গাসাগর মূলত দীঘি; সাগর নয়। বাংলার ভেনিসখ্যাত জেলা বরিশাল। বরিশাল জেলার বানারীপাড়া নেছারাবাদ সড়কের পাশে বাবুগঞ্জে দুর্গাসাগর দীঘি অবস্থিত। এটি বরিশাল শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জনশ্রুতি আছে, ১৭৮০ সালে চন্দ্রদ্বীপ পরগণার তৎকালীন রাজা শিব নারায়ণ উক্ত এলাকার পানির সংকট নিরসনের লক্ষ্যে এই দীঘিটি খনন করেন।
এই দীঘিটি খনন করতে ব্যয় হয়েছিল তিন লাখ টাকা। আরো জানা যায়, স্ত্রী রানী দুর্গাবতী একবারে যতদূর পর্যন্ত হেঁটে গিয়েছিলেন ততদূর পর্যন্ত এই দীঘিটি খনন করা হয়। রানী দুর্গাবতী দীঘি খননের উদ্দেশ্যে ৬১ কানি জমি পর্যন্ত হেঁটেছিলেন। তাই রানী দুর্গাবতীর নামানুসারে দীঘিটির নাম দুর্গাসাগর রাখা হয়েছে।
দুর্গাসাগর দীঘির তিন দিকে তিনটি ঘাটলা রয়েছে এবং মাঝখানে ছোট্ট দ্বীপ রয়েছে। দুর্গাসাগর দীঘির চারপাশ বেশ সুন্দর ও পরিপাটি। দুর্গাসাগর দীঘি স্থানীয় জনগণের কাছে দুর্গাসাগর মাধবপাশা দীঘি নামেও সুপরিচিত। দীঘির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ না হয়ে পারে না আগত দর্শনার্থীরা। মানুষের তৈরি দীঘিও চমৎকার ও নয়নাভিরাম হতে পারে তা শুধুমাত্র এই দীঘি দেখলেই বোঝা যায়। গাছগাছালিতে ঘেরা দুর্গাসাগর দীঘির চারপাশ। ঘাটলার পাশেও রয়েছে সবুজ বৃক্ষের সারি। অপূর্ব ও মনমাতানো রূপ যেকোনো মানুষকেই আকৃষ্ট করে প্রবলভাবে। এক হিসেব অনুযায়ী, ৪৫ একর ৪২ শতাংশ জমি নিয়ে দীঘির অবস্থান। ২৭ একর ৩৮ শতাংশ আয়তন নিয়ে জলাশয় এবং ১৮ একর ৪ শতাংশ জমি নিয়ে পাড় তৈরি করা হয়েছে। চারপাশে হাঁটার রাস্তা রয়েছে ১.৬ কিলোমিটার। ১৯৯৭-১৯৯৯ সালে দীঘিটির সর্বশেষ সংস্কার করা হয়েছে। তবুও দীঘিটি খুব সুন্দর।
দীঘির চারপাশটা গাছের ছায়ায় ঘেরা। হাঁটার পথ বেশ মনোরম ও সুন্দর। এখানে হাঁটতে গেলে আপনার বেশ প্রশান্তি অনুভব হবে। ৬১ কানির বিস্তৃতি নিয়ে তৈরি এই দীঘিটি ঘুরে আসতে আপনার যথেষ্ট সময় ব্যয় হবে। তাছাড়া দীঘির প্রতিটি বাঁক আপনাকে মোহিত করবে। বারো ভূঁইয়াদের মধ্যে একজন অন্যতম রাজা ছিলেন পঞ্চদশ শিব নারায়ণ। তিনি স্ত্রীকে ভালবেসে স্ত্রীর নামেই এই দীঘিটির নামকরণ করেছেন। এবং স্ত্রীর নামে এই দীঘির নামকরণকে সার্থক বলে মনে করতেন তিনি।
দীঘি নির্মাণের পর ৩০০ বছর কেটে গেছে। অথচ এখনো দীঘির প্রতিটি ঘাট অনেক আধুনিক ও শিল্পসম্মত। দীঘির পানি বেশ স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। স্বচ্ছ জলে মাছেরা জলকেলি খেলে। হাঁসেরা দিনভর সাঁতার কাটে। এছাড়া বক, কাক, চিল, দোয়েল, শ্যামা পাখিরাও এখানকার গাছে বসে প্রাণ জুড়ায়। হাঁটার পথ বসন্তকালে কোকিলের কুহু ডাকে মুখরিত থাকে।
আগত ভ্রমণ পিপাসুরা পাখির কলকাকলিতে মুগ্ধ হন যেকোনো সময়। তবে সব থেকে বেশি পাখির ডাক শোনা যায় বিকেল থেকে সন্ধ্যা অবধি। দুর্গাসাগর দীঘির বিভিন্ন স্থানে মাচা পাতা আছে।
মাচায় বসে মাছ ধরা যায়, জলে পা ডুবিয়ে বসেও থাকা যায়। বাসের মাচায় বসে জলে পা এলিয়ে দিয়ে গান ধরতে পারবেন আপনিও। যদি বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে যান সেখানে তবে তো কথা-ই নেই। দিনভর ছুটোছুটি, হৈ-হুল্লোড়, পাগলামি, মাছ ধরা ইত্যাদির মাধ্যমে সুখময় সময় কাটাতে পারবেন। দীঘির মাঝে খানিক জায়গাজুড়ে রয়েছে একটি ছোট্ট দ্বীপ। বড় বড় গাছের ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে মাটির তৈরি হরিণ, বাঘ ইত্যাদি। চারপাশে নারকেল, মেহগনি, সুপারিসহ অন্যান্য গাছ রয়েছে। বছরের যেকোনো সময় দুর্গাসাগর দীঘি ভ্রমণে যেতে পারবেন তবে শীতকালে গেলে অন্যরকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি অর্জন করতে পারবেন।
শীতকালে অসংখ্য অতিথি পাখির আগমন ঘটে এখানে। বিভিন্ন প্রজাতির শত শত পাখির আগমনে পুরো দীঘি কলকাকলিতে মুখরিত হয়। এই দীঘিতে আশেপাশের অসংখ্য স্কুল পড়ুয়া, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বেড়াতে আসে।এছাড়া এই দীঘির পাড়ে বনভোজন করে দারুণ উপভোগ করা যাবে। বরিশাল শহর থেকে অনেকেই বনভোজনের জন্য এখানে বেড়াতে আসে।

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য অর্থাৎ গাছপালা দেখার পাশাপাশি বনভোজন করা বেশ আনন্দের। বন্ধু- বান্ধবদের নিয়ে আড্ডা ও গানে মধুময় সময় কাটানোর জন্য উপযুক্ত স্থান এটি। দীঘির পানিতে নেমে গোসল করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। চাইলে বড়শি দিয়ে মাছও ধরতে পারবেন। তবে এই দীঘিতে নৌকা দিয়ে ঘোরা যায় না। যদি নৌকা দিয়ে ঘোরা যেত তাহলে চমৎকার অভিজ্ঞতা অর্জন করা যেত।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

বরিশালের দুর্গাসাগর দীঘির ইতিহাস

আপডেট টাইম ১১:১৯:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জুন ২০২২

আঃ মজিদ খান, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ বরিশালের দুর্গাসাগর দীঘির ইতিহাস। নামের সাথে সাগরের মিশেল থাকলেও দুর্গাসাগর মূলত দীঘি; সাগর নয়। বাংলার ভেনিসখ্যাত জেলা বরিশাল। বরিশাল জেলার বানারীপাড়া নেছারাবাদ সড়কের পাশে বাবুগঞ্জে দুর্গাসাগর দীঘি অবস্থিত। এটি বরিশাল শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জনশ্রুতি আছে, ১৭৮০ সালে চন্দ্রদ্বীপ পরগণার তৎকালীন রাজা শিব নারায়ণ উক্ত এলাকার পানির সংকট নিরসনের লক্ষ্যে এই দীঘিটি খনন করেন।
এই দীঘিটি খনন করতে ব্যয় হয়েছিল তিন লাখ টাকা। আরো জানা যায়, স্ত্রী রানী দুর্গাবতী একবারে যতদূর পর্যন্ত হেঁটে গিয়েছিলেন ততদূর পর্যন্ত এই দীঘিটি খনন করা হয়। রানী দুর্গাবতী দীঘি খননের উদ্দেশ্যে ৬১ কানি জমি পর্যন্ত হেঁটেছিলেন। তাই রানী দুর্গাবতীর নামানুসারে দীঘিটির নাম দুর্গাসাগর রাখা হয়েছে।
দুর্গাসাগর দীঘির তিন দিকে তিনটি ঘাটলা রয়েছে এবং মাঝখানে ছোট্ট দ্বীপ রয়েছে। দুর্গাসাগর দীঘির চারপাশ বেশ সুন্দর ও পরিপাটি। দুর্গাসাগর দীঘি স্থানীয় জনগণের কাছে দুর্গাসাগর মাধবপাশা দীঘি নামেও সুপরিচিত। দীঘির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ না হয়ে পারে না আগত দর্শনার্থীরা। মানুষের তৈরি দীঘিও চমৎকার ও নয়নাভিরাম হতে পারে তা শুধুমাত্র এই দীঘি দেখলেই বোঝা যায়। গাছগাছালিতে ঘেরা দুর্গাসাগর দীঘির চারপাশ। ঘাটলার পাশেও রয়েছে সবুজ বৃক্ষের সারি। অপূর্ব ও মনমাতানো রূপ যেকোনো মানুষকেই আকৃষ্ট করে প্রবলভাবে। এক হিসেব অনুযায়ী, ৪৫ একর ৪২ শতাংশ জমি নিয়ে দীঘির অবস্থান। ২৭ একর ৩৮ শতাংশ আয়তন নিয়ে জলাশয় এবং ১৮ একর ৪ শতাংশ জমি নিয়ে পাড় তৈরি করা হয়েছে। চারপাশে হাঁটার রাস্তা রয়েছে ১.৬ কিলোমিটার। ১৯৯৭-১৯৯৯ সালে দীঘিটির সর্বশেষ সংস্কার করা হয়েছে। তবুও দীঘিটি খুব সুন্দর।
দীঘির চারপাশটা গাছের ছায়ায় ঘেরা। হাঁটার পথ বেশ মনোরম ও সুন্দর। এখানে হাঁটতে গেলে আপনার বেশ প্রশান্তি অনুভব হবে। ৬১ কানির বিস্তৃতি নিয়ে তৈরি এই দীঘিটি ঘুরে আসতে আপনার যথেষ্ট সময় ব্যয় হবে। তাছাড়া দীঘির প্রতিটি বাঁক আপনাকে মোহিত করবে। বারো ভূঁইয়াদের মধ্যে একজন অন্যতম রাজা ছিলেন পঞ্চদশ শিব নারায়ণ। তিনি স্ত্রীকে ভালবেসে স্ত্রীর নামেই এই দীঘিটির নামকরণ করেছেন। এবং স্ত্রীর নামে এই দীঘির নামকরণকে সার্থক বলে মনে করতেন তিনি।
দীঘি নির্মাণের পর ৩০০ বছর কেটে গেছে। অথচ এখনো দীঘির প্রতিটি ঘাট অনেক আধুনিক ও শিল্পসম্মত। দীঘির পানি বেশ স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। স্বচ্ছ জলে মাছেরা জলকেলি খেলে। হাঁসেরা দিনভর সাঁতার কাটে। এছাড়া বক, কাক, চিল, দোয়েল, শ্যামা পাখিরাও এখানকার গাছে বসে প্রাণ জুড়ায়। হাঁটার পথ বসন্তকালে কোকিলের কুহু ডাকে মুখরিত থাকে।
আগত ভ্রমণ পিপাসুরা পাখির কলকাকলিতে মুগ্ধ হন যেকোনো সময়। তবে সব থেকে বেশি পাখির ডাক শোনা যায় বিকেল থেকে সন্ধ্যা অবধি। দুর্গাসাগর দীঘির বিভিন্ন স্থানে মাচা পাতা আছে।
মাচায় বসে মাছ ধরা যায়, জলে পা ডুবিয়ে বসেও থাকা যায়। বাসের মাচায় বসে জলে পা এলিয়ে দিয়ে গান ধরতে পারবেন আপনিও। যদি বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে যান সেখানে তবে তো কথা-ই নেই। দিনভর ছুটোছুটি, হৈ-হুল্লোড়, পাগলামি, মাছ ধরা ইত্যাদির মাধ্যমে সুখময় সময় কাটাতে পারবেন। দীঘির মাঝে খানিক জায়গাজুড়ে রয়েছে একটি ছোট্ট দ্বীপ। বড় বড় গাছের ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে মাটির তৈরি হরিণ, বাঘ ইত্যাদি। চারপাশে নারকেল, মেহগনি, সুপারিসহ অন্যান্য গাছ রয়েছে। বছরের যেকোনো সময় দুর্গাসাগর দীঘি ভ্রমণে যেতে পারবেন তবে শীতকালে গেলে অন্যরকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি অর্জন করতে পারবেন।
শীতকালে অসংখ্য অতিথি পাখির আগমন ঘটে এখানে। বিভিন্ন প্রজাতির শত শত পাখির আগমনে পুরো দীঘি কলকাকলিতে মুখরিত হয়। এই দীঘিতে আশেপাশের অসংখ্য স্কুল পড়ুয়া, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বেড়াতে আসে।এছাড়া এই দীঘির পাড়ে বনভোজন করে দারুণ উপভোগ করা যাবে। বরিশাল শহর থেকে অনেকেই বনভোজনের জন্য এখানে বেড়াতে আসে।

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য অর্থাৎ গাছপালা দেখার পাশাপাশি বনভোজন করা বেশ আনন্দের। বন্ধু- বান্ধবদের নিয়ে আড্ডা ও গানে মধুময় সময় কাটানোর জন্য উপযুক্ত স্থান এটি। দীঘির পানিতে নেমে গোসল করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। চাইলে বড়শি দিয়ে মাছও ধরতে পারবেন। তবে এই দীঘিতে নৌকা দিয়ে ঘোরা যায় না। যদি নৌকা দিয়ে ঘোরা যেত তাহলে চমৎকার অভিজ্ঞতা অর্জন করা যেত।