মোহাম্মদ রফিক, কুুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে পদ্মার পানি বিপদসীমার কাছা কাছি অবস্থান করেছে। তবে কয়েক দিন আগের তুলনায় পানি বৃদ্ধির পরিমান বর্তমানে কম রয়েছে। তাদের ধারণা দু’এক দিনের মধ্যে পানি কমতে থাকবে।
আরো পড়ুন : লোকমান-শফিকুলের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ
এদিকে হঠাৎ পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের ৩৭ গ্রামের ১০ হাজারেরও বেশী পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। ৩ সহস্রধিক পরিবারের বাড়িঘরের মধ্যে পানি ঢুকে তারা জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে। আকষ্মিক বন্যায় চরাঞ্চলের প্রায় ১৫’শ হেক্টর জমির মাষকলাইসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে। দেরীতে বন্যার হওয়ার কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। সেই সাথে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যাকবলিত অসহায় মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে ধরে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ভারতের ফারাক্কা হয়ে পদ্মায় পড়ছে পানি। তবে গত দু’দিন পানি বৃদ্ধির পরিমান কিছুটা কমেছে। এখন প্রতিদিন গড়ে ০.১২ সেন্টিমিটার করে পানি পাড়ছে। দু’দিন আগেও পানি বৃদ্ধির পরিমান ছিল প্রায় .২৪ সেন্টিমিটার। গতকাল শুক্রবার সকালে পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৩.৮৬ সেন্টিমিটার। বিপদসীমা হল ১৪.২৫ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ বিপদসীমার ০.৩৯ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে পানি প্রবাহি হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আকস্মিক পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে আবাদী ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর লোকালয়ের ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। দু’দিন আগেও যেসব এলাকা শুকনা পানিশুন্য ছিল, এখন সেখানে পদ্মার পানি থৈ থৈ করছে। যেদিনে চোখ পড়ে শুধু পানি আর পানি। চলাচলের সব রাস্তা দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৩৭ গ্রামের প্রায় ১০হাজারেরও বেশী মানুষ পানিবন্দী হয়ে ঘর হতে বের হওয়ার সুযোগ হারিয়েছে। নৌকায় তাদের চলার একমাত্র অবলম্বন হয়ে দাড়িয়েছে। এদিকে রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের সোনাতলা, চরসোনাতলা, চল্লিশপাড়া, সৌদিপাড়া. ঠাকুরপাড়া, চরপাড়া, ইনসাফনগর, চিলমারী, চরচিলমারী, মানিকেরচর, বাংলাবাজার, চরবাহিরমাদী, বাহিরমাদী, ভবনন্দদিয়াড়, আতারপাড়াসহ ৩৭গ্রামের প্রায় ৩ হাজার পরিবারের বসতবাড়ি ও ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। দু’টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ১৪টি প্রাথমিক, ৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দু’টি মাদ্রাসা ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরাসহ পানিবন্দী সাধারণ মানুষ পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, চিলমারী, ফিলিপনগর ও মরিচা এই ৪ ইউনিয়নের চাষকরা আবাদী জমির প্রায় ১৫’শ মাসকলাইসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গিয়ে প্রায় ৯কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। চরাঞ্চলের মাঠগুলো গত এক সপ্তাহ আগেও যেখানে সবুজ ফসলে ভরপুর ছিল। পদ্মার আকস্মিক পানি বৃদ্ধির কারণে তা তলিয়ে গিয়ে সব জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
সোনাতলা এলাকার ঘরের ভেতর এক হাটু পানির মধ্যে বসবাসকরা জয়তুন নেছা (৬৫) নামে এক বৃদ্ধা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, সে দু’দিন ধরে প্রায় না খাওয়া অবস্থায় রয়েছে। একই অভিযোগ চরসোনাতলা এলাকার জমির উদ্দিন নামে পানিবন্দী এক ব্যক্তির। সে জানায় ঘরের মধ্যে হাটুপানি। পরিবারের লোকজন নিয়ে খুব কষ্টে আছি। সেইসাথে পোকা মাকড়ের ভয় ও আতংকও রয়েছে। তবে তারা সরকারী বা বেসরকারী কোন সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করেন।
রামকৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল জানান, তার ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ২৪টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। ২ হাজারেরও বেশী বাড়ি ও ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। তিনি জানান, অর্থকরী ফসল মাসকলাই ডুবে কৃষকরা সর্বশান্ত হয়েছে। তিনি ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও পানিবন্দী মানুষের জন্য সরকারী সহায়তার দাবি জানান।
দৌলতপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সাইদুর রহমান বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ত্রান সামগ্রী প্রস্তুত রয়েছে। পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সাংসদ এ্যাড. সারওয়ার জাহান বাদশা বলেন, পদ্মা নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৪ ইউনিয়নের মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বহু মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। বন্যাকবলিত মানুষের পাশে থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে তিনি জানান।
এছাড়ও তিনি চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে সেখানে বিশেষ প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা জানান। পানিবন্দী হয়ে মানুষ যেন দুর্ভোগে না পড়েন সে জন্য বন্যা পরবর্তী সময়ে স্থায়ী রাস্তাঘাটসহ নানা উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।