ঢাকা ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত রাঙ্গুনিয়ায় আ: লীগ নেতার মৃত্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর শোক বরিশালে বৃষ্টি কামনায় নামাজ আদায়। রুপগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে এক দুর্ধর্ষ ডাকাত ওমর ফারুক গ্রেফতার বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার। “কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের আয়োজন করেছে এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা” বরিশালে পথ শিশুদের সহযোগিতায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড টেকপাড়া ও ইয়াকুব নগরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্হদের মাঝে নগর অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ বাস ও ফুটওভার ব্রিজ মুখোমুখি সংঘর্ষ

গাজীপুরে স্পিনিং মিলের অগ্নিকাণ্ডে সহকর্মীদের বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারান – সেলিম

মেহেদী হাসান, ব্যুরো চিফ,গাজীপরঃ গাজীপুরের শ্রীপুরের অটো স্পিনিং মিলের সিনিয়র উৎপাদন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন সেলিম কবির (৪২)। দুপুরের খাবার খেয়ে অফিস কক্ষে বসেছিলেন। এমন সময় অগ্নিকাণ্ডের খবর কানে আসে তার। ছুটে যান তার দায়িত্বে থাকা রিং সেকশনে। সেখানেই শ্রমিকদের নিরাপদে রুম থেকে বের হওয়ার তাগিদ দিচ্ছিলেন। একে একে সবাই বের হয়েছেন, আরও কেউ ভেতরে আছেন কি না তার খোঁজ নিতে কালো ধোয়ার মধ্যে ঢুকে যান তিনি। কিন্তু এরপর আর ফিরে আসেননি।

সেলিম কবির গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়নের ভান্নারা গ্রামের শামসুল হকের ছেলে। তিনি আড়াই বছর ধরে ওই স্পিনিং মিলে কর্মরত ছিলেন। কারখানার অফিস কোয়ার্টারে স্ত্রী সখিনা বেগম, ৯ বছরের ছেলে সাবিদ হোসেন ও ৯ মাস বয়সী সাজিদ হোসেনকে নিয়ে থাকতেন।

সেলিম কবিরের স্ত্রী সখিনা বেগম শোকে স্তব্ধ। স্বামী হারানোর শোকে মূর্ছা যাচ্ছেন। এরই মধ্যে বারবার সন্তান আবদার করছে বাবাকে দেখার। বড় ছেলে সাবিদ হোসেন স্থানীয় অপটিমাল নামের একটি কিন্ডারগার্টেনে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। যেন বাবাই তার কাছে বিশেষ কিছু। বিদ্যালয়ে আনা নেয়া, দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য বাবার দিকেই চেয়ে থাকত। বাবাকে ছাড়া যেন তার চলেই না।

গতকাল যখন বাবা হারানোর সংবাদ পায় তখন থেকেই তার মনে চলছে অন্যরকম আবহ। এখন শুধু বাবাকে দেখার আবদার। তবে আগুনে সেলিম কবিরের দেহ এতটাই অঙ্গার হয়েছে যে সন্তানও শেষ বিদায়ের সময় বাবার মুখটা দেখার সুযোগ বঞ্চিত।

কারখানার জেনারেল ম্যানেজার (এডমিন) হারুনুর রশিদ জানান, সেলিম কবির কারখানার শ্রমিকদের কাছে খুবই আপন ছিলেন। তার ভালোবাসায় আপ্লুত ছিল তার অধিনস্থ শ্রমিকরা। অগ্নিকাণ্ডের সময় তিনি চলতি বি-শিফটে রিং বিভাগে কর্মরত ছিলেন। ইচ্ছে করলেই নিরাপদে সরে যেতে পারতেন তিনি। কিন্তু নিজ স্বার্থের কথা না ভেবে প্রিয় শ্রমিকদের নিরাপদ করতে গিয়ে প্রাণ হারালেন।

উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ওই কারখানার গুদামে আগুন লাগে। পরে দ্রুত পুরো কারখানায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট দীর্ঘ সময় চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সেলিম কবিরসহ ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত

গাজীপুরে স্পিনিং মিলের অগ্নিকাণ্ডে সহকর্মীদের বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারান – সেলিম

আপডেট টাইম ০৬:৩৪:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০১৯
মেহেদী হাসান, ব্যুরো চিফ,গাজীপরঃ গাজীপুরের শ্রীপুরের অটো স্পিনিং মিলের সিনিয়র উৎপাদন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন সেলিম কবির (৪২)। দুপুরের খাবার খেয়ে অফিস কক্ষে বসেছিলেন। এমন সময় অগ্নিকাণ্ডের খবর কানে আসে তার। ছুটে যান তার দায়িত্বে থাকা রিং সেকশনে। সেখানেই শ্রমিকদের নিরাপদে রুম থেকে বের হওয়ার তাগিদ দিচ্ছিলেন। একে একে সবাই বের হয়েছেন, আরও কেউ ভেতরে আছেন কি না তার খোঁজ নিতে কালো ধোয়ার মধ্যে ঢুকে যান তিনি। কিন্তু এরপর আর ফিরে আসেননি।

সেলিম কবির গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়নের ভান্নারা গ্রামের শামসুল হকের ছেলে। তিনি আড়াই বছর ধরে ওই স্পিনিং মিলে কর্মরত ছিলেন। কারখানার অফিস কোয়ার্টারে স্ত্রী সখিনা বেগম, ৯ বছরের ছেলে সাবিদ হোসেন ও ৯ মাস বয়সী সাজিদ হোসেনকে নিয়ে থাকতেন।

সেলিম কবিরের স্ত্রী সখিনা বেগম শোকে স্তব্ধ। স্বামী হারানোর শোকে মূর্ছা যাচ্ছেন। এরই মধ্যে বারবার সন্তান আবদার করছে বাবাকে দেখার। বড় ছেলে সাবিদ হোসেন স্থানীয় অপটিমাল নামের একটি কিন্ডারগার্টেনে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। যেন বাবাই তার কাছে বিশেষ কিছু। বিদ্যালয়ে আনা নেয়া, দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য বাবার দিকেই চেয়ে থাকত। বাবাকে ছাড়া যেন তার চলেই না।

গতকাল যখন বাবা হারানোর সংবাদ পায় তখন থেকেই তার মনে চলছে অন্যরকম আবহ। এখন শুধু বাবাকে দেখার আবদার। তবে আগুনে সেলিম কবিরের দেহ এতটাই অঙ্গার হয়েছে যে সন্তানও শেষ বিদায়ের সময় বাবার মুখটা দেখার সুযোগ বঞ্চিত।

কারখানার জেনারেল ম্যানেজার (এডমিন) হারুনুর রশিদ জানান, সেলিম কবির কারখানার শ্রমিকদের কাছে খুবই আপন ছিলেন। তার ভালোবাসায় আপ্লুত ছিল তার অধিনস্থ শ্রমিকরা। অগ্নিকাণ্ডের সময় তিনি চলতি বি-শিফটে রিং বিভাগে কর্মরত ছিলেন। ইচ্ছে করলেই নিরাপদে সরে যেতে পারতেন তিনি। কিন্তু নিজ স্বার্থের কথা না ভেবে প্রিয় শ্রমিকদের নিরাপদ করতে গিয়ে প্রাণ হারালেন।

উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ওই কারখানার গুদামে আগুন লাগে। পরে দ্রুত পুরো কারখানায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট দীর্ঘ সময় চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সেলিম কবিরসহ ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।