মোহাম্মদ রফিক কুষ্টিয়া ::—————–
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পশ্চিম প্রান্তে হালসা রেল স্টেশনের দক্ষিণে নিকটবর্তী পাটিকাবাড়ী গ্রামে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি প্রাচীন মসজিদ ছিল যা এখন পাটিকাবাড়ী খামারপাড়া জামে মসজিদ নামে পরিচিত। মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে ঝাউদিয়ার শাহ্ সুফি সৈয়দ আহাম্মেদ আলী (আদারী মিয়া চৌধুরী) তাঁর কাছারি সংলগ্ন চৌধুরী বাড়িতে মোঘল স্থাপত্য শৈলীতে নান্দনিক ও দৃষ্টিনন্দন এই ক্ষুদ্র মসজিদটি নির্মিত করেছিলেন। ইতিহাসের পাতা থেকে খুব সামান্যই এই মসজিদটি সম্পর্কে জানা যায় যে, মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৩৩ ফুট এবং প্রস্থ ১৩ ফুট। মসজিদের উপরে সমান তিনটি গম্বুজ, চার কোণায় চারটি এবং মাঝের দরজার দুই পার্শ্বে দুটি পিলারের উপরে দুটি ছোট মিনার ছিলো। ছোট টেরাকোটার রূপনক্শা সম্বলিত ইট, চুন ও সুরকির গাঁথুনি এর দেওয়ালের বেড় ৩ ফুট। মসজিদটিতে দুই কাতারে ষোল জন নামাজ আদায় করতে পারতেন। মসজিদটির ভিতরে এবং বাইরের দেওয়ালে লতাপাতা, ফুল অঙ্কিত ছিল; যা অযত্ন, অবহেলায় তা বিনষ্ট হয়ে যায়। দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে এই প্রাচীন মোঘল শিল্পকলার নিদর্শনটি পড়ে ছিল। ঝাউদিয়ার চৌধুরীদের তৈরি এই মসজিদটিরও পূর্ব দিকে তিনটি, উত্তর ও দক্ষিণে একটি দরজা ছিল; তবে পশ্চিমেও একটি দরজা ছিল কিন্তু তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ঝাউদিয়া শাহী মসজিদের মতো এত সুন্দর না হলেও এর প্রাচীনত্ব সমসাময়িক। কিন্তু ভগ্নাদশা সহজেই চোখে পড়লে ১৯১৫ সালে আকবর আলী চৌধুরী মসজিদটি সংস্কার করেছিলেন বলে জানা যায়। মসজিদের পাশেই চৌধুরীদের খননকৃত পুকুর রয়েছে। মসজিদের সম্মুখে দুই খÐ বড় আকারের কালো পাথর ছিল যা এলাকাবাসী পবিত্র মনে করতো। বড় আক্ষেপ ও পরিতাপের বিষয় এই যে, এখানে মসজিদের প্রাচীন ঐতিহ্য স্থাপনা ভেঙে শেষ স্মৃতি ও পবিত্রতার নিদর্শণ স্বরূপ দুইখানা দূর্লভ কালোপাথরের একখানা কিছুদিন আগেও ছিল বর্তমানে এখন আর নেই। পাথর দুটি চুরি হয়ে যায় বলে জনশ্রæতি আছে। ধুলিস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠাতার নাম নিশানা সবকিছু। দাপটে ভূস্বামীদের কাছে ইতিহাস ঐতিহ্যের নির্মম পরাজয়! যে মসজিদের ভূমির অভাব ছিল না তা এখন মাত্র পাঁচ শতক দানের জমির উপর নতুন স্থাপনায় নির্মিত। এলাকাবাসী এই মসজিদে নিয়মিত নামায আদায় করে থাকেন। পাটিকাবাড়ী গ্রামের পান্তাপাড়া নিবাসী জনৈক পলান মেম্বার ১৯৯৫ সালে মুরগীর খামার করার সময় পুরাতন মসজিদের জ্বরা-জীর্ণ দশা দেখে স্বউদ্যেগী হয়ে এলাকাবাসীদের সহযোগীতায় ২০১৪ সালে পুরাতন ঐতিহ্যের স্বাক্ষী স্থাপনাটি ভেঙে নির্বোধের মতো নতুন স্থাপনা করেন। আরও পরিতাপের বিষয় এলাকার যে কয়েকজন শিক্ষিত মুরুব্বী ও যুব সম্প্রদায় ছিলেন, তারা কেউই ইসলামী মহান ঐত্যিহ্যের গুরুত্ব অনুধাবন করেননি, বাঁধাও দেননি! গবেষক মনে করেন এই টেরাকোটা সজ্জিত মসজিদটি অবশ্যই সংরক্ষণ করা যেত, কারণ ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ যদি সংরক্ষণ করা যায় তবে এটাও সম্ভব ছিল।..